ক্রীড়া উন্নয়নের স্লোগান তুলে ১৯৯৮ সালে জাফর ইমাম ও গোলাম রসুল মোল্লার নেতৃত্ব গঠিত হয়েছিল জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ, সংক্ষেপে যেটিকে ফোরাম বলা হতো। জাফর ইমাম ছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব, গোলাম রসুল মোল্লা অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।

দুজনই প্রয়াত হয়েছেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠিত সেই সংগঠনের অস্তিত্বও ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে গেছে। যে সংগঠনকে ক্রীড়াঙ্গনে চাপ তৈরি আর সুবিধা আদায়ের সংগঠন মনে করতেন অনেকে।

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গতকাল আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশন। দুটোর মধ্যে নামের দিক থেকে তেমন পার্থক্য নেই। তবে পার্থক্য একটা আছে। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশন সদস্য হতে পারবেন যেকোনো ক্রীড়া সংগঠক, সাবেক খেলোয়াড়। অন্যদিকে ফোরামের সদস্য ছিলেন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকেরা।

‘ছিলেন’ বলতে হচ্ছে, কারণ, ৫ আগস্টের পর দেশের সব জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাই ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কোনো নির্বাচিত কমিটি এখন নেই।

সরকারি নির্দেশনায় জেলা ও বিভাগে ছোট আকারে অ্যাডহক কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা। জেলা ও বিভাগের সাধারণ সম্পাদক না থাকায় ফোরামের কোনো কার্যক্রমও নেই। আবার কখনো জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত কমিটি হলে তখন হয়তো ফোরাম পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।

যদিও আপাতত সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ভাবাপন্নদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদও অনেকটা অকার্যকর। ফলে নবগঠিত বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশনই এখন শুধু মাঠে।

ফোরাম আপাতত না থাকলেও নানা বদনাম রয়ে গেছে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে। ক্রীড়া উন্নয়নের নামে এই সংগঠনকে অনেকে টাকা আয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে—আছে এমন অভিযোগ। ফোরামের হাতে যেহেতু জেলা ও বিভাগের ভোট ছিল, তাই তারা ফেডারেশনের নির্বাচনের হয়ে উঠত নিয়ামক শক্তি। টাকা নিয়ে বিভিন্ন ফেডারেশনে লোক ঢোকানোর নানা অভিযোগ আছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। বিশেষ করে ক্রিকেট, ফুটবলের নির্বাচনের সময় ফোরাম নেতাদের কেউ কেউ নানা জনের কাছ থেকে টাকা নিত, পছন্দের লোকদের নানা পদে পদে বসাতে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুনসাকিবকে বলেছিলাম, যা করো না করো, আওয়ামী লীগ করবা না—মেজর হাফিজ০৩ মে ২০২৫

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন ফোরামের মহাসচিব আশিকুর রহমান (মিকু)। ১২ বছরের বেশি সময় তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘ এই সময়ে কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি দাবি করে আজ প্রথম আলোকে আশিকুর রহমান বলেন, ‘একটা লোকও বলতে পারবে না আমি কোনো টাকা নিয়েছি কারও কাছ থেকে। বলতে পারলে ক্রীড়াঙ্গনে আর মুখ দেখাব না। ক্রীড়ার উন্নয়নের সততার সঙ্গে কাজ করেছি।’

তবে ঢাকার বাইরে থেকে কেউ ভোট দিতে এসে যাতায়াত খরচ নিতে পারেন বলে আশিকুর রহমানের ধারণা, ‘ধরুন, মেহেরপুরের একজন ঢাকায় কোনো ফেডারেশনের নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছেন। তিনি তো গাঁটের পয়সা খরচ করে আসবেন না। যাতায়াত বাবদ হয়তো কিছু টাকা নিয়েছেন। এর বাইরে কিছু নয়।’

তবে আশিকুর রহমান যা–ই বলুন, ফোরামের নাম ভাঙিয়ে ফুটবল-ক্রিকেটের নির্বাচনে পকেট ভারী হয়ে উঠত জেলার নেতাদের। ফোরামের সর্বশেষ সভাপতি ছিলেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি স্বচ্ছ ক্রীড়াঙ্গনের কথা বলতেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক ফেডারেশনের বড় পদে অযোগ্য লোকও বসে গেছেন ফোরামের নাম ভাঙিয়ে, যাঁর খেলাটা সম্পর্কে হয়তো কোনো ধারণাই নেই।

বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পুতিনকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে না

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৩ সালের মার্চে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে সময় পুতিনকে একজন ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যায়িত করে বলেছিলেন, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ন্যায়সংগত। তবে যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য কোনো দেশ নয়।

২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, ওই সংবিধির আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কখনো ওই চুক্তিকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করার জন্য অনুসমর্থনের জন্য পদক্ষেপ নেয়নি।

বিল ক্লিনটন রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরের দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সম্পৃক্ততার অবসান ঘটান। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।

সে কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কার্যকারিতা আমেরিকার মাটিতে নেই।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যে আইসিসির প্রতি বৈরিতা করছে। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত এই আদালতের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা যুদ্ধাপরাধ করেছেন, এমন অভিযোগের তদন্ত করায় আইসিসির ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন।

আইসিসির এখতিয়ারের এই ঘাটতিই পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আজকের বৈঠকের স্থান হিসেবে আলাস্কাকে বেছে নেওয়ার একটি কারণ হতে পারে।

অবশ্য আইসিসির স্বাক্ষরকারী দেশ মঙ্গোলিয়ায় ২০২৩ সালের আগস্টে সফর করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সে সময় তাঁকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের অনুরোধ করা হলেও তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল দেশটি। সে জন্য মঙ্গোলিয়াকে কোনো পরিণতি ভোগ করতে হয়নি।

শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আইন কেবল ততটাই কার্যকর হয়, যতটা দেশগুলোর সরকার এবং তাদের নেতারা কার্যকর করতে চান। আর এই ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে চান এবং এই সাক্ষাৎ তাঁর পছন্দ মতো করতে তাঁকে আটকানোর মতো কিছুই নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ