ফোরামের বদনাম পিছে নেবে না তো নতুন সংগঠনের
Published: 4th, May 2025 GMT
ক্রীড়া উন্নয়নের স্লোগান তুলে ১৯৯৮ সালে জাফর ইমাম ও গোলাম রসুল মোল্লার নেতৃত্ব গঠিত হয়েছিল জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ, সংক্ষেপে যেটিকে ফোরাম বলা হতো। জাফর ইমাম ছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব, গোলাম রসুল মোল্লা অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।
দুজনই প্রয়াত হয়েছেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠিত সেই সংগঠনের অস্তিত্বও ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে গেছে। যে সংগঠনকে ক্রীড়াঙ্গনে চাপ তৈরি আর সুবিধা আদায়ের সংগঠন মনে করতেন অনেকে।
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গতকাল আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশন। দুটোর মধ্যে নামের দিক থেকে তেমন পার্থক্য নেই। তবে পার্থক্য একটা আছে। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশন সদস্য হতে পারবেন যেকোনো ক্রীড়া সংগঠক, সাবেক খেলোয়াড়। অন্যদিকে ফোরামের সদস্য ছিলেন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকেরা।
‘ছিলেন’ বলতে হচ্ছে, কারণ, ৫ আগস্টের পর দেশের সব জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাই ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কোনো নির্বাচিত কমিটি এখন নেই।
সরকারি নির্দেশনায় জেলা ও বিভাগে ছোট আকারে অ্যাডহক কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা। জেলা ও বিভাগের সাধারণ সম্পাদক না থাকায় ফোরামের কোনো কার্যক্রমও নেই। আবার কখনো জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত কমিটি হলে তখন হয়তো ফোরাম পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।
যদিও আপাতত সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ভাবাপন্নদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদও অনেকটা অকার্যকর। ফলে নবগঠিত বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশনই এখন শুধু মাঠে।
ফোরাম আপাতত না থাকলেও নানা বদনাম রয়ে গেছে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে। ক্রীড়া উন্নয়নের নামে এই সংগঠনকে অনেকে টাকা আয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে—আছে এমন অভিযোগ। ফোরামের হাতে যেহেতু জেলা ও বিভাগের ভোট ছিল, তাই তারা ফেডারেশনের নির্বাচনের হয়ে উঠত নিয়ামক শক্তি। টাকা নিয়ে বিভিন্ন ফেডারেশনে লোক ঢোকানোর নানা অভিযোগ আছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। বিশেষ করে ক্রিকেট, ফুটবলের নির্বাচনের সময় ফোরাম নেতাদের কেউ কেউ নানা জনের কাছ থেকে টাকা নিত, পছন্দের লোকদের নানা পদে পদে বসাতে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুনসাকিবকে বলেছিলাম, যা করো না করো, আওয়ামী লীগ করবা না—মেজর হাফিজ০৩ মে ২০২৫তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন ফোরামের মহাসচিব আশিকুর রহমান (মিকু)। ১২ বছরের বেশি সময় তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘ এই সময়ে কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি দাবি করে আজ প্রথম আলোকে আশিকুর রহমান বলেন, ‘একটা লোকও বলতে পারবে না আমি কোনো টাকা নিয়েছি কারও কাছ থেকে। বলতে পারলে ক্রীড়াঙ্গনে আর মুখ দেখাব না। ক্রীড়ার উন্নয়নের সততার সঙ্গে কাজ করেছি।’
তবে ঢাকার বাইরে থেকে কেউ ভোট দিতে এসে যাতায়াত খরচ নিতে পারেন বলে আশিকুর রহমানের ধারণা, ‘ধরুন, মেহেরপুরের একজন ঢাকায় কোনো ফেডারেশনের নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছেন। তিনি তো গাঁটের পয়সা খরচ করে আসবেন না। যাতায়াত বাবদ হয়তো কিছু টাকা নিয়েছেন। এর বাইরে কিছু নয়।’
তবে আশিকুর রহমান যা–ই বলুন, ফোরামের নাম ভাঙিয়ে ফুটবল-ক্রিকেটের নির্বাচনে পকেট ভারী হয়ে উঠত জেলার নেতাদের। ফোরামের সর্বশেষ সভাপতি ছিলেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি স্বচ্ছ ক্রীড়াঙ্গনের কথা বলতেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক ফেডারেশনের বড় পদে অযোগ্য লোকও বসে গেছেন ফোরামের নাম ভাঙিয়ে, যাঁর খেলাটা সম্পর্কে হয়তো কোনো ধারণাই নেই।
বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
ফোরামের বদনাম পিছে নেবে না তো নতুন সংগঠনের
ক্রীড়া উন্নয়নের স্লোগান তুলে ১৯৯৮ সালে জাফর ইমাম ও গোলাম রসুল মোল্লার নেতৃত্ব গঠিত হয়েছিল জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ, সংক্ষেপে যেটিকে ফোরাম বলা হতো। জাফর ইমাম ছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব, গোলাম রসুল মোল্লা অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।
দুজনই প্রয়াত হয়েছেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠিত সেই সংগঠনের অস্তিত্বও ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে গেছে। যে সংগঠনকে ক্রীড়াঙ্গনে চাপ তৈরি আর সুবিধা আদায়ের সংগঠন মনে করতেন অনেকে।
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গতকাল আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশন। দুটোর মধ্যে নামের দিক থেকে তেমন পার্থক্য নেই। তবে পার্থক্য একটা আছে। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশন সদস্য হতে পারবেন যেকোনো ক্রীড়া সংগঠক, সাবেক খেলোয়াড়। অন্যদিকে ফোরামের সদস্য ছিলেন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকেরা।
‘ছিলেন’ বলতে হচ্ছে, কারণ, ৫ আগস্টের পর দেশের সব জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাই ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কোনো নির্বাচিত কমিটি এখন নেই।
সরকারি নির্দেশনায় জেলা ও বিভাগে ছোট আকারে অ্যাডহক কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা। জেলা ও বিভাগের সাধারণ সম্পাদক না থাকায় ফোরামের কোনো কার্যক্রমও নেই। আবার কখনো জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত কমিটি হলে তখন হয়তো ফোরাম পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।
যদিও আপাতত সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ভাবাপন্নদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদও অনেকটা অকার্যকর। ফলে নবগঠিত বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশনই এখন শুধু মাঠে।
ফোরাম আপাতত না থাকলেও নানা বদনাম রয়ে গেছে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে। ক্রীড়া উন্নয়নের নামে এই সংগঠনকে অনেকে টাকা আয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে—আছে এমন অভিযোগ। ফোরামের হাতে যেহেতু জেলা ও বিভাগের ভোট ছিল, তাই তারা ফেডারেশনের নির্বাচনের হয়ে উঠত নিয়ামক শক্তি। টাকা নিয়ে বিভিন্ন ফেডারেশনে লোক ঢোকানোর নানা অভিযোগ আছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। বিশেষ করে ক্রিকেট, ফুটবলের নির্বাচনের সময় ফোরাম নেতাদের কেউ কেউ নানা জনের কাছ থেকে টাকা নিত, পছন্দের লোকদের নানা পদে পদে বসাতে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুনসাকিবকে বলেছিলাম, যা করো না করো, আওয়ামী লীগ করবা না—মেজর হাফিজ০৩ মে ২০২৫তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন ফোরামের মহাসচিব আশিকুর রহমান (মিকু)। ১২ বছরের বেশি সময় তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘ এই সময়ে কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি দাবি করে আজ প্রথম আলোকে আশিকুর রহমান বলেন, ‘একটা লোকও বলতে পারবে না আমি কোনো টাকা নিয়েছি কারও কাছ থেকে। বলতে পারলে ক্রীড়াঙ্গনে আর মুখ দেখাব না। ক্রীড়ার উন্নয়নের সততার সঙ্গে কাজ করেছি।’
তবে ঢাকার বাইরে থেকে কেউ ভোট দিতে এসে যাতায়াত খরচ নিতে পারেন বলে আশিকুর রহমানের ধারণা, ‘ধরুন, মেহেরপুরের একজন ঢাকায় কোনো ফেডারেশনের নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছেন। তিনি তো গাঁটের পয়সা খরচ করে আসবেন না। যাতায়াত বাবদ হয়তো কিছু টাকা নিয়েছেন। এর বাইরে কিছু নয়।’
তবে আশিকুর রহমান যা–ই বলুন, ফোরামের নাম ভাঙিয়ে ফুটবল-ক্রিকেটের নির্বাচনে পকেট ভারী হয়ে উঠত জেলার নেতাদের। ফোরামের সর্বশেষ সভাপতি ছিলেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি স্বচ্ছ ক্রীড়াঙ্গনের কথা বলতেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক ফেডারেশনের বড় পদে অযোগ্য লোকও বসে গেছেন ফোরামের নাম ভাঙিয়ে, যাঁর খেলাটা সম্পর্কে হয়তো কোনো ধারণাই নেই।
বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক।