হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা ও ছবি নিরাপদ রাখতে এই ৬ সুবিধা ব্যবহার করছেন তো
Published: 4th, May 2025 GMT
আদান-প্রদান করা তথ্যসহ ব্যবহারকারীদের সাইবার হামলা থেকে রক্ষার জন্য একাধিক নিরাপত্তা–সুবিধা রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। এসব সুবিধা ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট অনেকটাই সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। নিচে হোয়াটসঅ্যাপে গোপনীয়তা রক্ষায় কার্যকর ৬ সুবিধা দেখে নেওয়া যাক।
১. চ্যাট এক্সপোর্ট নিয়ন্ত্রণব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তায় ‘অ্যাডভান্সড চ্যাট প্রাইভেসি’ নামের একটি সেটিংস রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। অ্যাডভান্সড চ্যাট প্রাইভেসি সুবিধা চালু থাকলে একক বা গ্রুপ চ্যাটের বার্তা হোয়াটসঅ্যাপের বাইরে শেয়ার, সংরক্ষণ বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এর ফলে চ্যাট অপশনে আদান-প্রদান করা তথ্য বর্তমানের তুলনায় আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। শুধু তা-ই নয়, পাঠানো কোনো ছবি, ভিডিও বা অডিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাপকের যন্ত্রে সংরক্ষণ হবে না।
২.চ্যাট লক
হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাট লক-সুবিধা কাজে লাগিয়ে ব্যবহারকারীরা আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে আদান-প্রদান করা তথ্য ‘লক’ করে রাখা যায়। ফলে ব্যবহারকারীদের অজান্তে অন্য কেউ ফোন ব্যবহার করলেও সেই বার্তা বা ছবি দেখতে পারে না। চ্যাট লক করার জন্য যে চ্যাটটি লক করতে হবে, সেটির ওপরে ট্যাপ করে কিছুক্ষণ ধরে রাখতে হবে। এরপর তিনটি ডট মেনুতে ট্যাপ করে লক চ্যাট অপশন নির্বাচন করলেই সেটি লক হয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে আঙুলের ছাপ বা চেহারা চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তির (ফেসিয়াল রিকগনিশন) মাধ্যমে সহজেই চ্যাটটি আনলক করা যাবে।
আরও পড়ুনহোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ হতে পারে যে ৫ কারণে০৩ এপ্রিল ২০২৫৩. বায়োমেট্রিকস্মার্টফোন চুরি হলে বা অন্য কেউ ব্যবহার করলে সহজেই হোয়াটসঅ্যাপে থাকা সব তথ্য জানতে পারে। তবে বায়োমেট্রিক-সুবিধা ব্যবহার করলে আঙুলের ছাপ ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে প্রবেশ করা যায় না। এ সুবিধা চালুর জন্য হোয়াটসঅ্যাপের সেটিংস থেকে প্রাইভেসি অপশনে যেতে হবে। এরপর নিচে স্ক্রল করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক নির্বাচনের পর আনলক উইথ ফিঙ্গারপ্রিন্ট টগল অপশন চালু করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হোয়াটসঅ্যাপের পর্দা লকের সময় নির্বাচন করতে হবে।
৪. এন্ড–টু–এন্ড এনক্রিপশনহোয়াটসঅ্যাপে এন্ড–টু–এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা চালু থাকলে পাঠানো বার্তা প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ পড়তে পারেন না। ফলে আদান-প্রদান করা সব তথ্য নিরাপদ থাকে। হোয়াটসঅ্যাপে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা চালুর জন্য হোয়াটসঅ্যাপের সেটিংসে প্রবেশ করে চ্যাটস অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর চ্যাট ব্যাকআপে গিয়ে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড ব্যাকআপ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৫. টু-স্টেপ ভেরিফিকেশনঅ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বাড়াতে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করা জরুরি। এটি চালু থাকলে নতুন কোনো যন্ত্রে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে ছয় সংখ্যার একটি গোপন পিন দিতে হয়। এর ফলে ফোন হারিয়ে বা চুরি হলেও অন্য কেউ সহজে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করতে পারে না।
৬. ডিজঅ্যাপিয়ারিং মেসেজগোপনীয়তা বজায় রাখতে ডিজঅ্যাপিয়ারিং মেসেজ সুবিধা বেশ কার্যকর। এটি চালু থাকলে নির্দিষ্ট সময় পর হোয়াটসঅ্যাপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আদান-প্রদান করা বার্তা ও মাল্টিমিডিয়া ফাইল মুছে যায়। এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে ১ দিন, ৭ দিন বা ৯০ দিন আগে নির্দিষ্ট বার্তা বা ফাইল মুছে যাওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা যায়।
সূত্র: দ্য ভার্জ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ য় টসঅ য প র ব যবহ র কর অন য ক উ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’