ওয়াসিম আকরামের রেকর্ডটি এখন ‘মানুষের আয়ে অবদান রাখা’ বুমরারও
Published: 12th, July 2025 GMT
লর্ডস টেস্টে প্রথম দিনে শুধু হ্যারি ব্রুকের উইকেটটি নিয়েছিলেন যশপ্রীত বুমরা। কাল দ্বিতীয় দিনে আরও ৪ উইকেট নেওয়ায় ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে দারুণ এক রেকর্ড গড়েন ভারতের এই পেসার।
টেস্টে বিদেশের মাটিতে এ নিয়ে ১৩ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন বুমরা। ভারতের বোলারদের মধ্যে টেস্টে বিদেশের মাটিতে সর্বোচ্চবার ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড এখন এই ডানহাতি পেসারের। বুমরা এ পথে কাল পেছনে ফেলেছেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ও কিংবদন্তি পেস অলরাউন্ডার কপিল দেবকে।
আরও পড়ুনটেস্টে ক্যাচের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে যে গল্প বললেন রুট৩ ঘণ্টা আগে১৩১ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৬৬ ম্যাচ বিদেশের মাটিতে খেলেছেন কপিল। এর মধ্যে ১০৮ ইনিংসে বোলিং করে ১২ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নেন তিনি। চলতি লর্ডস টেস্টসহ বুমরা বিদেশের মাটিতে মাত্র ৩৫ টেস্টের ক্যারিয়ারেই তাঁকে টপকে গেলেন। এ পথে তিনি বোলিং করেছেন ৬৬ ইনিংসে। বিদেশের মাটিতে ৬৯ ম্যাচে ১২১ ইনিংস বোলিং করে ১০ বার ৫ উইকেট নিয়ে এ তালিকায় তৃতীয় ভারতের কিংবদন্তি লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে।
ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ২৭ ওভার বোলিং করে ৭৪ রানে ৫ উইকেট নেন বুমরা। এমন পারফরম্যান্সের মাধ্যমে আরও একটি কীর্তি গড়েন তিনি। এশিয়ার বোলারদের মধ্যে ‘সেনা’ (এসইএনএ—দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া) দেশগুলোয় টেস্টে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও এখন যৌথভাবে বুমরার। সেনা দেশগুলোয় ৩২ ম্যাচে ১১ বার ৫ উইকেট নিয়ে এ রেকর্ড এত দিন দখলে রেখেছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম। বুমরা সেনা দেশগুলোয় নিজের ৩৩তম ম্যাচে এসে ছুঁলেন ওয়াসিম আকরামের এ রেকর্ডকে।
কাল ৫ উইকেট নিয়ে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লেখালেও বুমরা কিন্তু উদ্যাপন করেননি। দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বুমরা এর কারণ ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘ক্লান্ত ছিলাম। ভালো লাগছিল না। দীর্ঘ সময় ধরে বোলিং করেছি, কখনো কখনো ক্লান্তও লাগে। সেই ২১–২২ বছর বয়স তো আর নেই যে লাফাব। আমি আদতে তেমন মানুষও নই। অবদান রাখতে পেরে ভালো লাগছে। এর বাইরে নিজের বোলিং মার্কে ফিরে শুধু পরের বলটি করা নিয়েই ভাবি।’
আরও পড়ুনসেঞ্চুরির পর ফিল্ডিংয়ে নেমে রুটের রেকর্ড, লড়াই করছে ভারত১৪ ঘণ্টা আগেক্লান্তির পাশাপাশি ৩১ বছর বয়সী এই পেসারের চোটপ্রবণতাও আছে। এ কারণে তাঁকে বিশ্রাম দিয়ে বেছে বেছে খেলানো হয়। চলতি ইংল্যান্ড–ভারত টেস্ট সিরিজেও যেমন গুঞ্জন চলছে, ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে বুমরা এই সিরিজে তিনটি টেস্ট খেলতে পারেন। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে।
আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে এই বোলার জানিয়েছেন, লোকের মুখ বন্ধ রাখার ক্ষমতা তাঁর নেই, ‘জানি এ আলোচনা চলবেই। এখানে অনেক ক্যামেরা। এমনকি অনুশীলনের সময়েও অনেক ক্যামেরা থাকে। এই যুগ ভিউ ও সাবস্ক্রিপশনের। আলোচনা হয়, এমন কিছু সবাই বানাতে চায়। তবে এসবে আমার কোনো হাত নেই।’
বুমরা এরপর যোগ করেন, ‘আমার মাধ্যমে লোকে আয় করছে, সেটা তো ভালো কথা। ভিউয়ারশিপ এনে দেওয়ায় তারা অন্তত আমাকে আশীর্বাদ করবে। তবে এসব নিয়ে ভাবি না। যত দিন পর্যন্ত এই জার্সি পরব, তত দিন লোকে বিচার করবে। সব ক্রিকেটারকেই এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ৫ উইক ট ন য় র র কর ড
এছাড়াও পড়ুন:
নোবেল শান্তির জন্য ট্রাম্পের চেয়ে আর ‘যোগ্য’ কে আছেন!
আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতির আজব ঘটনাপ্রবাহে যেন আর বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, একের পর এক উদ্ভট ঘটনা ঘটেই চলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন।
গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান গণহত্যায় যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই লোক এখন এমন এক ব্যক্তিকে শান্তির জন্য বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের প্রার্থী করছেন, যিনি কিনা এই গণহত্যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
গত মার্চে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি ইসরায়েলকে ‘গাজায় কাজ শেষ করতে যা কিছু দরকার’ তার জন্য সবকিছু পাঠাবেন। সেই ‘সবকিছুর’ মধ্যে রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মারাত্মক অস্ত্র ও অন্যান্য সহায়তা। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজার এই ছোট্ট ভূখণ্ডে শুধু আনুষ্ঠানিক নথিপত্রের হিসাবমতে, প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে কত মানুষ চাপা পড়ে আছেন, তার কোনো হিসাব নেই।
বিভিন্ন গণমাধ্যম কীভাবে ট্রাম্পের শান্তির নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন নিয়ে গম্ভীর মুখে সিরিয়াস ভঙ্গিতে খবর পরিবেশন করতে পারছে, সেটিই সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সিএনএন তাদের খবরে বলেছে, এই পুরস্কার এখন ট্রাম্পের একধরনের চূড়ান্ত আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে। তিনি মনে করেন, সারা পৃথিবীতে সংঘাত বন্ধে তাঁর প্রচেষ্টার জন্য তিনি এই পুরস্কারের যোগ্য।
গত সোমবার ট্রাম্পকে জানানো হয়, তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। ওই দিনই নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে অংশ নিতে হাজির হন। এটি ছিল ২০২৫ সালে তাঁর ওয়াশিংটনে তৃতীয় সফর। নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘বাহ্…বিশেষ করে আপনার কাছ থেকে আসায় এটি সত্যিই অনেক অর্থবহ হলো।’
নেতানিয়াহু যখন ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেন এবং সেটিকে যখন ট্রাম্প ‘অর্থবহ’ বলে উল্লেখ করেন, তখন তা শুনে হাসি পায়। কারণ, যিনি যুদ্ধ আর গণহত্যায় জড়িত, তাঁকে শান্তির জন্য পুরস্কার দেওয়ার কথা বলা—এটা এতটাই অবাস্তব আর মিথ্যা যে ‘অর্থবহ’ শব্দ দিয়ে সেই হাস্যকর বাস্তবতাকে বোঝানো যায় না।
ট্রাম্প যখন ইরানে চালানো বড় হামলার বিষয়ে কথা বলছিলেন, (যা তাঁকে শান্তির পুরস্কারের মনোনয়ন এনে দিয়েছে) তখন তিনি এটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলে কয়েক লাখ বেসামরিক মানুষ হত্যা করা হামলার সঙ্গে প্রশংসাসূচকভাবে তুলনা করেছেন।২০০৯ সালে এই সম্মানজনক পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল সদ্য দায়িত্ব নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে, যিনি পরে ‘আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে’ আফগানিস্তান, পাকিস্তান, লিবিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া, ইরাক ও সিরিয়াতে বোমাবর্ষণ করেছিলেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কার যাঁদের দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আরেকজন ছিলেন কলম্বিয়ার ডানপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান মানুয়েল সান্তোস।
২০১৩ সালে ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ জানায়, সান্তোস গর্ব করে বলেছিলেন, তাঁর দেশকে ‘লাতিন আমেরিকার ইসরায়েল’ বলা হলে তিনি খুশি হন। অথচ সান্তোসের নাম জড়িয়ে আছে বহুল আলোচিত ‘ফলস পজিটিভ’ কেলেঙ্কারির সঙ্গে, যেখানে কলম্বিয়ার সেনারা প্রায় ১০ হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে তাঁদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চালিয়ে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা কতটা১১ জুলাই ২০২৫নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া আরেকজন হলেন প্রয়াত ইসরায়েলি রাজনীতিক শিমন পেরেজ। ১৯৯৪ সালে তিনি এই পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছিলেন। অথচ এই ঘটনার মাত্র দুই বছর পর, ১৯৯৬ সালে তিনি লেবাননের কানা শহরে জাতিসংঘের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত ১০৬ শরণার্থীকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এখন যখন ফিলিস্তিনে গণহত্যাকেও প্রায় স্বাভাবিক করে ফেলা হয়েছে, ট্রাম্প তখন প্রস্তাব করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন গাজা ভূখণ্ড দখল করে নেয়, সেখানে থাকা ফিলিস্তিনি জনগণকে জোরপূর্বক উৎখাত করে এবং পুরো বিধ্বস্ত অঞ্চলটিকে নতুন করে গড়ে তোলে একেবারে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ (বিলাসবহুল পর্যটনকেন্দ্র) হিসেবে। অর্থাৎ ট্রাম্পের কাছে এই রকম চিন্তা করাও যেন শান্তির নোবেল পুরস্কারের যোগ্যতা।
ওয়াশিংটনে নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের বৈঠক নিয়ে দ্য টাইমস অব ইসরায়েল ‘নেতানিয়াহুর চমক: ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন, দুই নেতার গাজাবাসীকে উৎখাতের আলোচনা’ শিরোনামে খবর ছেপেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইরানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক হামলা ‘মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দিয়েছে’ এবং এর ফলে ‘আব্রাহাম চুক্তি’ আরও সম্প্রসারিত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিন নামক দেশটিকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়াই হয়তো ‘জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্ব’ প্রতিষ্ঠা করার অর্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ট্রাম্প যখন ইরানে চালানো বড় হামলার বিষয়ে কথা বলছিলেন, (যা তাঁকে শান্তির পুরস্কারের মনোনয়ন এনে দিয়েছে) তখন তিনি এটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলে কয়েক লাখ বেসামরিক মানুষ হত্যা করা হামলার সঙ্গে প্রশংসাসূচকভাবে তুলনা করেছেন।
এটি না বললেও বোঝা যায় যে কেউ যদি কয়েক লাখ নিরীহ মানুষের ওপর পারমাণবিক বোমা ফেলার ঘটনার প্রশংসা করেন, তাহলে তিনি কোনোভাবেই শান্তির মতো কোনো গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারের যোগ্য হতে পারেন না। কিন্তু আজকের এমন এক বিশ্বে, যেখানে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার’ অজুহাতে বারবার যুদ্ধ চালানো হয়, সেখানে ট্রাম্পের এই মনোনয়ন হয়তো তাদের ভাষায় ‘খুব বাস্তব’ ও ‘যথার্থ’।
● বেলেন ফার্নান্দেজ সাংবাদিক ও লেখক
আল-জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ