খানাখন্দে ভরা সড়কে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি৷
Published: 12th, July 2025 GMT
সড়কে খানাখন্দ। কোথাও পিচঢালাই আছে, কোথাও নেই। বৃষ্টিতে পানি-কাদায় একাকার। দিন দিন এসব খানাখন্দ বড় আকার ধারণ করছে। তাতে প্রতিদিন উল্টে পড়ছে যানবাহন। আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। কাদাপানি ছিটকে কাপড়চোপড় নষ্ট হচ্ছে। এমন দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।
এ চিত্র ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার অংশের। স্থানীয় ব্যক্তিরা সড়কটি সংস্কারে বারবার দাবি জানালেও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কয়েকদিনের টানা বর্ষণে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে সড়কটি।
সরেজমিন দেখা যায়, ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা, নগরকান্দা উপজেলার মহিলা রোড, তালমা ও পুখুরিয়া এলাকার সড়কের বেশি নাজুক অবস্থা। গাড়ি চালানোর কোনো উপায় নেই। রাস্তা গর্তে ভরা। গর্তে চাকা পড়ে প্রায়ই বিকল হয় যানবাহন। এর পরও বিকল্প না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে বাস, ট্রাক, লরি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত যানবাহনসহ থ্রি-হুইলার।
শনিবার ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে ফরিদপুরে এসেছিলেন অ্যাম্বুলেন্স চালক কাশেম বেপারী। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে গেছে। রাস্তা এমনই বেহাল যে, ঝাঁকুনিতে রোগী আরও অসুস্থ পড়ে। বড় বড় গর্ত বৃষ্টির কারণে চোখে পড়ে না। রাতের বেলা গাড়ি চালাতে ভয় লাগে।
একই দিন নগরকান্দার মহিলা রোড এলাকায় দেখা যায় মালবাহী একটি লরি বিকল হয়ে পড়ে আছে। লরিটির সামনের দুটি চাকা পুরোপুরি নষ্ট। গাড়িটি বগুড়া থেকে বরিশালের দিকে যাচ্ছিল।
চালক আকবর হোসনে বলেন, রাস্তার জঘন্য অবস্থা। গাড়ি চালানোর কোনো কায়দা নেই। গর্তে পড়ে ঝাঁকুনি খেয়ে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। মিস্ত্রি আসবে, তারপর গাড়ি ঠিক করা হবে। এতে ৩০ হাজার টাকা লেগে যাবে। দুপুরে আরও একটি অটোরিকশা উল্টে কয়েকজন যাত্রী আহত হন।
স্থানীয় বাসিন্দা ফয়েজুল বারী জানান, এই এলাকায় প্রতিদিন অটোরিকশা উল্টে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত রাস্তা সংস্কারসহ চার লেনের দাবি জানান।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়কটির সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সংস্কারকাজ শুরু করা হয়নি। বাখুন্ডা এলাকায় ইট-বালু দিয়ে গর্ত ভরাট করতে দেখা যায় সড়ক বিভাগকে।
সড়কটি সংস্কারের পাশাপাশি দ্রুত চার লেনে করার দাবিতে সরব হয়ে উঠেছে জেলার সর্বস্তরের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সপক্ষে প্রচারণা। ‘ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়ক চার লেন দ্রুত বাস্তবায়ন’ নামে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ১৩ জুলাই রোববার বেলা ১১টায় ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, দুটি প্যাকেজের আওতায় সড়ক মেরামতের জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে জরুরি ভিত্তিতে সড়কের খানাখন্দ ভরাটের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ৩২ কিলোমিটারের এই মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটুপানি, দুর্ভোগে ২০ হাজার মানুষ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভায় একটি সড়কের উন্নয়নকাজ নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে চলাচলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আস্করিয়া এলাকার প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত বছর জুলাইয়ে নেওয়া প্রকল্পটি চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঠিকাদার ও পৌরসভার কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ হয়নি। খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা সড়কে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটুসমান জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বাঁশখালী পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ তিন কিলোমিটার সড়কটির উন্নয়নে ১৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০২৪ সালে প্রকল্পের টেন্ডার হয়। এতে কার্যাদেশ পায় ইউনূস অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে ঢিমেতালে কাজ করছে। যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় পথচারী ও এলাকাবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আলী আহমদ জানান, কাজ শেষ না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে আস্করিয়া সড়কটি মিনি পুকুরে পরিণত হয়েছে। গত এক বছরে এখানে পথচারীরা অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
বাঁশখালী পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আরাফাতের ভাষ্য, রাস্তার পাশে ড্রেনের জন্য ২১ থেকে ২২ ইঞ্চি জায়গা খালি দরকার। সড়কটির পাশে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠার কারণে ড্রেনের কাজ করতে ঠিকাদারের কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
বাঁশখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন জটিলতার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরোদমে কাজ করতে পারেনি। শিগগির সড়কটির কাজ শেষ হবে বলে ঠিকাদার তাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. ইউনুস বলেন, সড়কটির কাজ কখন শেষ হবে, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। কাজের বিষয়ে জানতে প্রকল্প সাইটে থাকা তাঁর প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন তিনি।