Prothomalo:
2025-05-05@15:41:42 GMT

ইসলাম সহজ, কঠিন করবেন না

Published: 5th, May 2025 GMT

ইসলামের মূল বৈশিষ্ট্য মধ্যপন্থা। কোরআন স্পষ্টভাবে বলছে, ‘আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের ওপর সাক্ষী হও এবং রাসুল সাক্ষী হন তোমাদের ওপর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৩)

আরবি শব্দ ‘ওসাত’ কয়েকটিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এর মানে হলো ন্যায়পরায়ণ, সঠিক, মধ্যপন্থী, পরিমিত ও শ্রেষ্ঠ। এই আয়াতটি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে যে মুসলিমদের বিশ্বাস হলো যে আল্লাহ তাদেরকে একটি পরিমিত এবং মধ্যপন্থী জাতি হিসেবে তৈরি করতে চেয়েছেন, যাতে তারা মানবতার জন্য একটি আদর্শ (সাক্ষী) হতে পারে। তাহলে ইসলামে মধ্যপন্থা আসলে কেমন?

তিনজন ব্যক্তি নবীজি (সা.

)–এর স্ত্রীর কাছে তাঁর ইবাদত সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তারা অঙ্গীকার করেছিলেন যে তারা রাতভর নামাজ পড়বেন, প্রতিদিন রোজা রাখবেন অথবা বিয়ে করবেন না। তখন নবী (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের মধ্যে আমি তাঁকে সবচেয়ে ভালো জানি; আমি প্রতিদিন রোজা রাখি না, রাতভর নামাজ পড়ি না এবং আমি স্ত্রীসঙ্গ গ্রহণ করি; যে আমার পথ অনুসরণ করতে চায় না, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,০৬৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৪০১)

আরও পড়ুনইসলাম কি কোনো ধর্ম নাকি জীবনবিধান?১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নবীজি (সা.) তাঁর সাহাবিদের সবকিছুর মধ্যে পরিমিতি অনুসরণ করতে সব সময় উৎসাহিত করেছেন। যখন দুটি বিকল্প দেওয়া হতো, তিনি সব সময় সহজতমটি বেছে নিতেন, যদি তা ইসলামের নিয়মের পরিপন্থী না হয়।

নবীজি (সা.) ইসলামের ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘নিশ্চয়ই এই দীন সহজ। কেউ এই দীনের সঙ্গে কঠোরতা করতে চাইলে, তা তাকে পরাভূত করবে। অতএব তোমরা সঠিক পথে থাকো, মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো, আনন্দিত হও এবং সকাল-সন্ধ্যার কাজে ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদতের মাধ্যমে) সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৯; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৮১৬)

হাদিসের শব্দগুলোর দিকে লক্ষ করুন:

ইসলামের সহজ প্রকৃতি: ‘দীন সহজ’ বাক্যটি ইসলামের মূলনীতির একটি প্রকাশ। ইসলাম মানুষের সামর্থ্যের বাইরে কোনো কঠিন বিধান আরোপ করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান, কঠিন নয়।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)

কঠোরতার পরিণাম: যে ব্যক্তি দীনকে অতিরিক্ত কঠিন করতে চায়, সে নিজেই ক্লান্ত ও পরাভূত হবে। এটি অতিরঞ্জন থেকে সতর্ক করে।

মধ্যম পন্থা: ‘সঠিক পথে থাকো এবং নিজের সাধ্যের মধ্যে আমল করো।’ এটি ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়।

আনন্দিত থাকা: ‘আনন্দিত থাকো’, শব্দটি মুমিনদের আশাবাদী ও ইতিবাচক থাকার নির্দেশ দেয়, কারণ আল্লাহর রহমত অসীম।

ইবাদতের মাধ্যমে সাহায্য: সর্বশেষে বলা হয়েছে, ‘সকাল, সন্ধ্যা ও রাতের কিছু সময়ে নামাজ ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও।’ এটি নিয়মিত ইবাদতের গুরুত্ব তুলে ধরে।

আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনের সার কথা১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পরিমিতি অনুসরণ করুন। আল্লাহ যা মুসলিমদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন, তা অত্যধিক বা অসহনীয় নয়। আল্লাহর একত্বের বিশ্বাস, তাঁর প্রতি প্রার্থনা এবং স্মরণ, অন্যদের প্রতি ভালো ব্যবহার—এইগুলোই আল্লাহর বান্দাদের ওপর মৌলিক দৈনিক দায়িত্ব (এ ছাড়া আরও কিছু দায়িত্ব, যেমন রমজান মাসের রোজা, যা বার্ষিক হয়) যা আল্লাহ তাঁদের ওপর দিয়েছেন। যখন মুসলিমরা এই দায়িত্বগুলো ছাড়াও আরও কিছু বাড়াতে চান, তখন তাদের নবী (সা.)-এর প্রজ্ঞা মনে রাখা উচিত, যিনি বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি শুধু তার ভালো কাজের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সাহাবিরা জানতে চাইলেন, ‘এমনকি আপনি নয়?’ নবীজি (সা.) উত্তর দিলেন, ‘এমনকি আমিও না, যদি না আল্লাহ তাঁর দয়া ও রহমত আমাকে দান করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪৬৭)

আবার আয়েশা (রা.) তাঁকে প্রশ্ন করলেন যে কোন কাজ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়, তিনি বললেন, ‘যে কাজগুলো নিয়মিত এবং ধারাবাহিকভাবে করা হয়, এমনকি যদি তা একটু কমও হয়।’ তারপর তিনি বললেন:

‘তুমি যা পারো তা করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৬৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৮২)

আরও পড়ুনআল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন নবী সোলায়মান (আ.) ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সবশেষে তিনি বলেন, ‘ভালো কাজগুলো সঠিকভাবে, সৎভাবে এবং পরিমিতভাবে করো। সব সময় একটি মাঝারি, পরিমিত, নিয়মিত পথ গ্রহণ করো, যাতে তুমি তোমার লক্ষ্য (জান্নাত) অর্জন করতে পারো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৬৭)

এই নীতিগুলো অনুসরণ করলে, একজন মুসলিম যখন তার ইবাদত বাড়াতে চান, তখন তাকে ধীরে ধীরে শুরু করতে হবে, ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি একটু একটু করে অন্যান্য ইবাদত যোগ করতে হবে এবং ধারাবাহিকভাবে তা করতে চেষ্টা করতে হবে। বাস্তবিকভাবে তার ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে হবে এবং নিজের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপানো উচিত হবে না। তখন ইসলাম পালন হবে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা থেকে, শুধু বাধ্যতা থেকে নয়।

ডিসকভারিং ইসলাম আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুনইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামের ফজিলত১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সহ হ ব খ র আল ল হ ত দ র ওপর ইসল ম র পর ম ত

এছাড়াও পড়ুন:

জাককানইবির আ.লীগপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ ২১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

জুলাই-আগষ্ট আন্দোলনে হামলার ঘটনায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদালয়ে আনুমানিক ২১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। এতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক নেতাকর্মী, আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়।

সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল (দ্রুত বিচার) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারি মো. আজমত আলী সমকালকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল রোববার (৪ মে) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক ও বাংলা বিভাগের প্রথম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান বাদী হয়ে ময়মনসিংহ দ্রুত বিচার আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান তিনি।

মো. আজমত আলী জানান, ভুক্তভোগী বাদী বিজ্ঞ আদালতে এই মামলাটি দায়েরের পর ওইদিন সন্ধ্যায় আদালতের বিচারক মোছা. নাসিমা খাতুন বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।      
 
নথি অনুযায়ী এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার জাকিবুল হাসান রনিকে। এছাড়াও মামলার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য আসামিরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মকর্তা ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আহসান লিমন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাব্বির আহম্মেদ ও নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, তরিকুল ইসলাম রানা, প্রকৌশল শাখার প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জোবায়ের হোসেন, অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আ. হালিম, বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ হুমায়ন কবীর, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সহকারি রেজিষ্ট্রার ইব্রাহীম খলিল শান্ত, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সেকশন অফিসার আপেল মাহমুদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুনতাসির তানভীর জয়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার নুসরাত জাহান শিমু, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোশাররাত শবনম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষক ড. সেলিম আল মামুন, ড. উজ্জল কুমার, অর্থনীতির শিক্ষক ড. মো. নজরুল ইসলামসহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়।    

বাদীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত জুলাই-আগষ্টের সরকার পতনের আন্দোলন দমনে গত বছরের ৩ আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রলীগ ও আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। ওই সমাবেশে তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাসে সশস্ত্র মহড়া দেন। এর পরদিন গত বছরের ৪ আগষ্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে আন্দোলনকারীদের ওপর আসামীদের পরস্পর যোগসাজসে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ছাত্রলীগ। এতে কমপক্ষে ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সময় আসামীরা বেশ কিছু মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ভাঙচুর করে।

বাদী আশিকুর রহমান সমকালকে বলেন, প্রায় ৯ মাস পর দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য মামলা করেছি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে আমার ওপর ছাত্রলীগ একাধিকবার হামলা মামলা করে। এসব ঘটনায় আমি আদালত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করছি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ