প্রসূতির মৃত্যু: রাজবাড়ীতে রতন ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার সাময়িক বন্ধের নির্দেশ
Published: 7th, May 2025 GMT
রাজবাড়ী শহরের বড়পুল এলাকার সজ্জনকান্দায় অবস্থিত ডা. রতন ক্লিনিকে সাময়িকভাবে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ বিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়।
সিভিল সার্জন স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ক্লিনিকটিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অপারেশন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপারেশন চালুর বিষয়ে পরবর্তী সময়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিদর্শন কমিটির মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নোটিশের অনুলিপি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক এবং বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন এস এম মাসুদ আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ এপ্রিল রাতে ডা.
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট রত্না পোদ্দার। অন্য দুই সদস্য ছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট প্রদীপ কান্তি পাল এবং সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার সোহেল শেখ। তাঁদের প্রতিবেদনে ক্লিনিকের নোংরা পরিবেশ, অনুন্নত অপারেশন থিয়েটারসহ নানা অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়।
প্রসূতি শাহানা খাতুন রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের বেথুলিয়া মুন্সিপাড়ার খালেক সরদারের মেয়ে এবং পাবনার আমিনপুর থানার ঢালারচর ইউনিয়নের খদ্দেরকান্দি গ্রামের ফারুক মণ্ডলের স্ত্রী। শাহানার স্বামী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলেছেন।
এর আগেও এই ক্লিনিকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আম্বিয়া আক্তার বীণা নামের এক অন্তঃসত্ত্বার অস্ত্রোপচারের পর মৃত্যু হয়। সেই অস্ত্রোপচার করেন ক্লিনিকের মালিক চিকিৎসক রইসুল ইসলাম। ২০২২ সালের ৮ জুলাই টনসিলের অস্ত্রোপচারের পর ফিরোজ কাজী নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় পরদিন ফিরোজের স্ত্রী মর্জিনা বেগম ক্লিনিক মালিকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এসব ঘটনায় একাধিকবার ক্লিনিকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ভ ল স র জন কম ট র প রস ত উপজ ল ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিককে মামলায় জড়ালো পুলিশ
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল এলাকায় জমি বিরোধের জেরে দুইপক্ষের দ্বন্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চাঁদাবাজি মামলার আসামি হয়েছেন মোল্লা ফারুক হাসান নামে এক সাংবাদিক।
তবে থানা পুলিশ অভিযোগের তদন্ত না করেই মামলাটি এজাহারভূক্ত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আরো পড়ুন:
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতিকে নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ
‘সিভিক ডিফেন্ডারস অব বাংলাদেশ’ ওয়েব পোর্টাল উদ্বোধন
ভুক্তভোগী মোল্লা ফারুক হাসান গৌরনদী প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকা এবং সময়ের কন্ঠস্বর অনলাইন নিউজ পোর্টালের স্থানীয় প্রতিনিধি।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে ভুক্তভোগী মোল্লা ফারুক হাসান অভিযোগ করে বলেন, “গত কয়েকদিন আগে কটকস্থল বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন আরিফ ফিলিং স্টেশনের সামনে স্থানীয় হারুন-অর রশিদ বেপারী ও মো. হিরা মাঝি গংদের মধ্যে উত্তেজনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন থানা পুলিশ। এরপর সেখানে আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য যাই। পরবর্তীতে পুরো ঘটনা নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।”
তিনি বলেন, “ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হারুন-অর রশিদ বেপারী তার প্রতিপক্ষ মো. হিরা মাঝিসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সংবাদ প্রকাশের জেরে ওই অভিযোগের মধ্যে আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারনে থানা পুলিশ ওই অভিযোগের কোনো তদন্ত না করেই আমাকে আসামি করে ফিলিং স্টেশনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে এজাহারভূক্ত করেন।”
তিনি আরো বলেন, “যেখানে সাধারণত হুমকি-ধামকির বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে আগে তদন্ত প্রসঙ্গটি উত্থাপণ করে থানা পুলিশ। সেখানে ঘটনার সময় থানা পুলিশ ওই ফিলিং স্টেশনে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও মনগড়াভাবে হামলা, ভাঙচুর ও চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তদন্ত ছাড়া তড়িঘড়ি করে আমাকে জড়িয়ে মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ রহস্যজনক।” মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে তিনি (সাংবাদিক) সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে মামলার বাদি হারুন-অর রশিদ বেপারীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সাংবাদিককে আসামি করার বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “একটা মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরনদী সার্কেল) শারমিন সুলতানা রাখি বলেন, “পেট্রোল পাম্প নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষ সংবাদকর্মীদের দিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে এবং গৌরনদী থানার ওসির বিরুদ্ধে মিথ্যা মনগড়া সংবাদ প্রকাশিত করিয়েছে। একটি পক্ষ ওই ঘটনা নিয়ে প্রথমে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটির এজাহার দায়ের করা হয়।”
তিনি বলেন, “তদন্ত করার আগেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসার কারণে মামলাটি এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে এক সাংবাদিক রয়েছে বলে জানা গেছে। সাংবাদিক মোল্লা ফারুক যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকে, তাহলে তার কিছুই হবে না।”
তিনি আরো বলেন, “ওই সাংবাদিক (মোল্লা ফারুক) আমার কাছে এসেছিল। তাকে আমি বলেছি, আপনি যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকেন, তাহলে আপনাকে পুলিশ খোঁজবেও না, আপনি নিশ্চিত থাকেন।”
অপরদিকে, তদন্ত ছাড়া গৌরনদী প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক মোল্লা ফারুক হাসানকে মামলায় আসামি করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর ও বরিশাল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি নিকুঞ্জ বালা পলাশ, সাধারণ সম্পাদক শাহিন হাসানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা। তারা অনতিবিলম্বে ওই সাংবাদিককে মামলা থেকে অব্যাহতি ও দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন।
এছাড়াও পৃথক বিবৃতিতে একই দাবি করেছেন বাংলাদেশ গ্রামীণ সাংবাদিক সংগঠন, গৌরনদী প্রেসক্লাব, কালকিনি সাংবাদিক ফোরাম, আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দরা।
ঢাকা/পলাশ/মেহেদী