বিরাট কোহলির প্রতিভার ঝলক ছেলেবেলাতেই দেখা গিয়েছিল। সেজন্যই ২০০৮ সালে ১৮ বছর বয়সে তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। তখন আরসিবির ড্রেসিংরুম রাহুল দ্রাবিড়, অনীল কুম্বলের মতো কিংবদন্তিদের পদচারণায় মুখর ছিল। কিন্তু টিনএজার কোহলির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিলেন মার্ক বাউচার। পাকা জহুরির চোখে প্রোটিয়া এ উইকেটকিপার–ব্যাটার কোহলিকে চিনে নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, কোহলির দুর্বলতা চিহ্নিত করে সেগুলো শোধরাতে তাঁকে নিয়ে আলাদাভাবে কাজও করেন। সেই পুরোনো দিনের কথা আরসিবির পডকাস্ট ‘বোল্ড অ্যান্ড বিয়ন্ড’-এ নিজেই বর্ণনা করেছেন ভারতীয় এ সুপারস্টার।
পডকাস্টে বাউচারের বেশ প্রশংসা করেন কোহলি, ‘ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি যাদের সঙ্গে খেলেছি, তাদের মধ্যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব মার্ক বাউচারের। তিনি একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ভারতীয় তরুণদের সাহায্য করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতেন। আমার ব্যাটিং পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে কী করতে হবে, সেসব তিনি আমাকে না জানিয়ে নিজে নিজেই পরিকল্পনা করেন। তিনি আমাকে নিয়ে নেটে গেলেন। সেখানে গিয়ে বললেন, তোমাকে শর্ট বলে কাজ করতে হবে। তুমি যদি পুল করতে না পারো, তাহলে কেউ তোমাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ দেবে না। এরপর তিনি নিজে টেনিস বল ছুড়ে আমাকে অনুশীলন করাতেন। আমার মনে আছে, চেন্নাই বা কলকাতায় আমরা একটা ম্যাচ খেলছিলাম, সেদিন তিনি বলেছিলেন, চার বছর পর আমি যখন ভারতে ধারাভাষ্য দিতে আসব, তখন যদি তোমাকে জাতীয় দলে না দেখি, তাহলে সেটা হবে নিজের প্রতি তোমার অবিচার। সেদিন আমার প্রতি তাঁর আত্মবিশ্বাস দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।’
ওই বছরই শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে অভিষেক হয় কোহলির। চোটাক্রান্ত শচীন টেন্ডুলকারের জায়গায় ডাক পেয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিনি সুযোগ পান যুবরাজ সিং চোটে পড়লে। সে আসরে সেঞ্চুরিয়নে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হেরেছিল ভারত। বাজে সে হারও কোহলির ক্যারিয়ারে ভূমিকা রেখেছিল, ‘সে দিন আমি ১৬ রান করে শহীদ আফ্রিদির বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলাম। বাজে সে হারের পর সারারাত ঘুমাতে পারিনি। ভোর ৫টা পর্যন্ত শুয়ে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মনের ভেতরে শুধু ঘুরছিল, এক বছর পর ডাক পেলাম; কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারলাম না! নিজের সামর্থ্যের ওপর সে রাতে সন্দেহ তৈরি হয়ে গিয়েছিল।’
২০২১ সালে জাতীয় দল ও আরসিবির নেতৃত্ব ছাড়ার নেপথ্য কারণ নিয়েও কথা বলেন কোহলি। ‘আমি জাতীয় দলে ৮ বছর ও আরসিবিতে ৯ বছর নেতৃত্ব দিয়েছি। আমি ব্যাট হাতে নামলেই সবাই ভাবত জিতিয়ে ফিরব। লাগাতার এ চাপ সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই দুটি দায়িত্বই ছেড়ে দেই।’ নেতৃত্বের চাপ ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসা কমিয়ে দিয়েছিল বলেও স্বীকার করেন। অধিনায়ক হিসেবে আইসিসি ট্রফি জেতার সবচেয়ে ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন কোহলি ২০১৯ বিশ্বকাপে। ইংল্যান্ডে সে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ৯ ম্যাচের মধ্যে ৭টি জিতে সবার উপরে ছিল ভারত। কিন্তু সেমিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যায় তারা। ‘২০১৯ সেমিফাইনালে হারের ধাক্কা সামলানো কঠিন ছিল। কোনোভাবে দেশে ফিরে বাড়ির ভেতর লুকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিল।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র ট ক হল ক হল র আরস ব
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে ১০ মাসে ২৮ এইডস রোগী শনাক্ত, ওষুধের জন্য যেতে হয় বগুড়া
রাজশাহীতে চলতি বছরের ১০ মাসে নতুন করে আরো ২৮ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস (এইডস) শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গের। এ সময়ের মধ্যে একজন মারাও গেছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
আক্রান্তদের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে একটি এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং (এইচটিসি) সেন্টার রয়েছে। তবে, এখানে কাউন্সেলিং ছাড়া ওষুধ মেলে না। রোগীদের ওষুধ আনতে যেতে হয় বগুড়া। এ অবস্থায় রামেক হাসপাতালে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি চালু হতে পারে।
রামেক হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারের তথ্য বলছে, ২০১৯ সাল থেকে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত রাজশাহীতে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ জন। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন আটজন। চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৫ জন পুরুষ, দুইজন নারী ও একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষে শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ ভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
এইচটিসি সেন্টারে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন আসেন পরীক্ষা করাতে। সেখানে পজিটিভ ফল এলে রোগীদের কাউন্সেলিং দেওয়া হয়। বলা হয়, এইচআইভি পুরোপুরি নিরাময় না হলেও এটি এখন নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। নিয়মিত চিকিৎসা ও ওষুধ সেবনে আক্রান্তরা স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারেন।
এদিকে, রাজশাহীতে এইচআইভির ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) যেতে হয়। সেখানে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। রাজশাহীতে একটি এআরটি সেন্টার (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টার) স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এইচটিসি সেন্টারে গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে গিয়ে দেখা যায়, এক কিশোরসহ চারজন পরীক্ষা করাতে এসেছেন। তাদের মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গর। সবার ফলাফল নেগেটিভ আসে।
২০১৯ সাল থেকে রামেক হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম বছর ৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও কারো দেহে ভাইরাস পাওয়া যায়নি। পরের বছর দুইজন আক্রান্ত হন। ২০২১ সালে ৮ জন, ২০২২ সালে ৮ জন, ২০২৩ সালে ২৪ জন, ২০২৪ সালে ২৭ জন এবং ২০২৫ সালে অক্টোবর পর্যন্ত ২৮ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়।
হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে আক্রান্ত ২৭ জনের মধ্যে সমকামিতার মাধ্যমে সংক্রমিত হন ১৬ জন, যৌনকর্মীর মাধ্যমে ১০ জন এবং রক্ত থেকে একজন। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত শনাক্ত ২৮ জনের মধ্যে সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত হন ১৭ জন। এছাড়া যৌনকর্মীর মাধ্যমে ১০ জন ও রক্ত থেকে একজন আক্রান্ত হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এইচআইভি আক্রান্ত এক ব্যক্তি বলেন, “রোগটি জানার পর প্রথমে মনে হয়েছিল সব শেষ। পরে রামেকে কাউন্সেলিংয়ে এসে বুঝলাম, এটা এখন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত ওষুধ নিলে ভালো থাকা যায়। তবে, রাজশাহীতে ওষুধের ব্যবস্থা না থাকায় বগুড়ায় যাওয়া কষ্টকর। এখানেই যদি ওষুধ পাওয়া যেত, আমরা অনেকটা স্বস্তি পেতাম।”
রামেক হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারের কাউন্সিলর রেজাউল করিম বলেন, “২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৩ জন এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। তাদের নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।”
এইচটিসি সেন্টারের ফোকাল পারসন ডা. ইবরাহীম মো. শরফ বলেন, “অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, হোক নারী-পুরুষের মধ্যে বা পুরুষ-পুরুষের মধ্যে, এইচআইভি ছড়ানোর সবচেয়ে বড় কারণ এটি। এছাড়া গর্ভকালীন সময়, সন্তান জন্ম ও দুধ পান করানোর মাধ্যমেও মা থেকে শিশুর দেহে সংক্রমণ যেতে পারে।”
তিনি বলেন, “সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিবার যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার করা, একাধিক যৌনসঙ্গী এড়িয়ে চলা, রক্ত বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আগে পরীক্ষা করা এবং ব্যবহৃত সুচ পুনরায় ব্যবহার না করাই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।”
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, “আমাদের এখানে এইচআইভি টেস্ট হয়। রোগীদের কাউন্সিলিং করা হয়। এখানেই যেন চিকিৎসা হয়, তার জন্য আমরা একটি ট্রিটমেন্ট সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছি। রুম রেনোভেশন হচ্ছে। খুব শিগগির হবে। আগামী একমাসের মধ্যেই হতে পারে। তখন আক্রান্তদের বগুড়া যেতে হবে না।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ