গাড়ির অভ্যন্তরীণ নকশায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এলজি। গত মঙ্গলবার গাড়িতে ব্যবহার-উপযোগী নতুন প্রযুক্তির ব্যতিক্রমী এক ডিসপ্লে প্রদর্শন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন প্রযুক্তির ডিসপ্লেটি প্রয়োজনে সমতল স্ক্রিন থেকে বাটনে রূপান্তরিত হতে পারে। গাড়ির জন্য বিশেষভাবে তৈরি এই ডিসপ্লে প্রযুক্তিকে ‘ড্রাইভিং দ্য ফিউচার’ বলে অভিহিত করেছে এলজি।

নতুন প্রযুক্তির ডিসপ্লেটি গাড়িতে সহজেই স্থাপন করা যায় এবং এটি কাজের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত প্রসারিত করা সম্ভব। প্রসারিত হলেও ডিসপ্লেটির পর্দার রেজল্যুশন ও রঙের মান পরিবর্তন হয় না। এতে রয়েছে প্রতি ইঞ্চিতে ১০০ পিক্সেলের রেজল্যুশন এবং পূর্ণ আরজিবি মানের রং প্রদর্শন সক্ষমতা। ব্যবহারকারীর স্পর্শ পেলে এই ডিসপ্লের নির্দিষ্ট অংশ উঁচু হয়ে উঠে যায় এবং সেটি বাটনের মতো ব্যবহার করা যায়। ফলে সমতল স্ক্রিনই হয়ে ওঠে একটি পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট।

এলজির দাবি, নতুন প্রযুক্তির ডিসপ্লে ব্যবহার করলে গাড়ির ভেতরে আলাদা কোনো স্ক্রিন বা বাটনের প্রয়োজন হবে না। এক স্ক্রিনেই গাড়ির ভেতরে থাকা সব সুবিধা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বর্তমানে ডিসপ্লে প্রযুক্তিটির উন্নয়নে ‘সুইচেবল প্রাইভেসি মোড’ নিয়ে কাজ চলছে। নতুন এ সুবিধা যুক্ত হলে গাড়ির সামনে থাকা যাত্রীরা যেসব ভিডিও বা অ্যাপ ব্যবহার করবেন, তা চালক স্পষ্টভাবে দেখতে পারবেন না। এর ফলে চালকের মনোযোগ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা কমবে, বাড়বে সড়ক নিরাপত্তা।

নতুন প্রযুক্তির ডিসপ্লের পাশাপাশি গাড়ির পেছনের যাত্রীদের জন্য ১৮ ইঞ্চি পর্দার স্লাইডযোগ্য ওএলইডি স্ক্রিন তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে এলজি। নতুন প্রযুক্তির ওএলইডি স্ক্রিনটি মাইনাস ৪০ থেকে ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় সচল থাকবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

কাছের মানুষ পাশে থাকলে কঠিন যুদ্ধেও জেতা যায়, তার প্রমাণ বিসিএস ক্যাডার মালিহা

মালিহার মা আসমা বেগমের কথা না বললেই নয়। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কলমা গ্রামে। ঢাকায় বড় হয়েছেন। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।

১৯৯৩ সালে জগন্নাথ কলেজে (সে সময় কলেজ ছিল, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়) ভর্তি হন। এর এক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।

একঝটকায় ঢাকার শিক্ষার্থী থেকে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের গৃহবধূ হয়ে গেলেন। আসমা বেগমের খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার।

স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাট চুকে গেল। চাকরির স্বপ্নের সমাপ্তি। মালিহা তাঁর মাকে সারাটা জীবন কেবল অন্যের জন্য করে যেতে দেখেছেন। বিনিময়ে মা পেয়েছে কেবল উপেক্ষা আর অবহেলা।

নতুন জীবন নতুন সংগ্রাম

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরই বিয়ে হয়ে যায় মালিহার। বিয়েতে মালিহার মায়ের কেবল একটা অনুরোধ ছিল পাত্র ও তাঁর মা-বাবার কাছে—তাঁর কন্যার লেখাপড়ার যাতে কোনো ত্রুটি না হয়। বিয়ের পর মায়ের ইচ্ছায়, স্বামীর পরামর্শে মালিহা ভর্তি হন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেনারি কলেজে।

মালিহা এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। তখন কলেজটি ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বর্তমানে কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের মার্চে ইন্টার্ন চলাকালীন মা হন মালিহা। মা হয়েও ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর সময় নষ্ট না করে শুরু করেন চাকরির পড়াশোনা।

সারা জীবন কেবল চেয়েছি মায়ের কষ্টের ভাগ নিতে। কী করলে আমার মা একটু স্বস্তি পাবে। আমার স্বামী সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন, “তুমি কেবল আবেগ নিয়ে কখনোই মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবা না। এ জন্য তোমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে হবে।” আমাকে আরও বলত, “আমার মতো স্টুডেন্টের যদি সরকারি চাকরি (ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার) হয়, তোমার কেন হবে না। তুমি আমার চেয়ে বেশি যোগ্য, বেশি পরিশ্রমী, তোমার আরও ভালো চাকরি হবে।”মুলকে সাদ মালিহা, লাইভস্টক ক্যাডার, ৪৪তম বিসিএসযে কান্না আনন্দের

মালিহার মামি শিক্ষা ক্যাডার হন। সে সময় থেকে তাঁর রঞ্জু মামা তাঁকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। মালিহা ২০২০ সাল থেকে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেন। ২০২৫ সালে এসে প্রথম সরকারি চাকরি পান। যোগ দেন সরকারি ব্যাংকের অফিসার পদে।

এর কিছুদিন পর ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে। তবে তখন ক্যাডার পদ আসেনি মালিহার। বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন।

লাইভস্টক ক্যাডারে ৬৮জন ‘রিপিট ক্যাডার’ ছিল। সেসব পুনর্মূল্যায়ন করে আবার যখন ৬ নভেম্বর নতুন ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে নাম আসে মালিহার। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় তাঁর।

মালিহার মা আসমার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন যেন মেয়ের ভেতর দিয়ে সত্য হয়ে ধরা দেয়। মালিহা যখন চাকরির সুখবর জানাতে মাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ‘আম্মুউউউ’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছেন, মা আসমা বেগম ভয়েই অস্থির! নিশ্চয়ই মেয়ের কোনো বিপদ হয়েছে। এরপরই শুনলেন খবরটা। মা-মেয়ে দুজনেই ফোনের দুই পাশে কাঁদছেন, যে কান্না আনন্দের, প্রাপ্তির, সফলতার।

মামির শাড়ি আর ব্লেজার পরে বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন মালিহা

সম্পর্কিত নিবন্ধ