বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ মানুষ মনে করে, অনলাইন নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের
Published: 7th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। উদ্বেগ থাকলেও নিরাপত্তাচর্চায় ব্যক্তিগত সচেতনতা কম। ব্যবহারকারীদের ৫০ শতাংশই মনে করেন, অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। এ ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ পরিচয় জালিয়াতি ও ‘ডিপফেক’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গ্রামীণফোনের মূল প্রতিষ্ঠান টেলিনর এশিয়া অঞ্চলে তাদের ‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড’ গবেষণার তৃতীয় পর্বে এসব কথা জানিয়েছে। আজ বুধবার ‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড’ প্রতিবেদনের বাংলাদেশ পর্ব তুলে ধরেছে গ্রামীণফোন। রাজধানীর একটি হোটেলে এই প্রতিবেদন প্রকাশ–সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান জিডব্লিউআইয়ের সহায়তায় বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জরিপ পরিচালনা করে টেলিনর। প্রতিবেদনের জন্য বাংলাদেশের ১৬ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ১ হাজার জনের ওপর গত বছরের ২৩ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত জরিপ করা হয়।
টেলিনরের জরিপের উত্তরদাতাদের ৫০ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মনে করেন, তাঁদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার। এক-তৃতীয়াংশ ব্যবহারকারী মনে করেন, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব রয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে আছে নিজস্ব সচেতনতা।
টেলিনরের এই জরিপে আরও বলা হয়, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জনেরই অনলাইনে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। উত্তরদাতাদের ৪২ শতাংশ পরিচয় জালিয়াতি এবং ৪০ শতাংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে বানানো ডিপফেক নিয়ে উদ্বিগ্ন। জেনজি ও মিলেনিয়াল প্রজন্ম ডিপফেক নিয়ে বেশি চিন্তিত।
এ ছাড়া আর্থিক জালিয়াতি, তথ্য চুরি, ম্যালওয়ার ও নেটওয়ার্কে হামলার মতো উদ্বেগের বিষয়ও উঠে এসেছে।
তবে বাংলাদেশি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা গোপনীয়তা সুরক্ষা টুলের চেয়ে ওয়েবসাইটের নিরাপত্তার ওপর বেশি ভরসা করে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় নিজের সক্ষমতা নিয়ে ৭৫ শতাংশ মানুষ আত্মবিশ্বাসী। জেনজি ও মিলেনিয়ালদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি।
টেলিনর বলছে, বাংলাদেশ অনলাইন নিরাপত্তা অনুশীলনে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার চেয়ে পিছিয়ে আছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কমই আনসাবস্ক্রাইব করেন, ব্রাউজিং ইতিহাস মুছে ফেলেন, ওয়েবসাইট কুকিজ কম প্রত্যাখ্যান করেন এবং অ্যাড-ব্লকার ব্যবহার করেন।
অর্থাৎ বাংলাদেশে অনলাইন ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ারের ঝুঁকি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতার অভাব রয়েছে। এখানে ডিজিটাল সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন অফারের বিনিময়ে নিজের ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশাধিকার দেবে। আর ৪৯ শতাংশ এআই ছবি বা ফিল্টারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপগুলোকে ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশাধিকারের সুযোগ দেবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দেশের মানুষ লোকেশন ট্র্যাকিং নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও প্রযুক্তিনির্ভর সুবিধা ছাড়তে রাজি নয়।
বাংলাদেশে এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি এআই ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রেও এআইয়ের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার রয়েছে। এই প্রবণতা জেনজিদের চেয়ে মিলেনিয়ালদের মধ্যে বেশি।
এআইভিত্তিক স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারে ৪৩ শতাংশ ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহারের আশঙ্কা করে। এ ছাড়া চিন্তা করা ও সমস্য সমাধানের দক্ষতাকে কমিয়ে দেওয়ার আশঙ্কাও রয়ছে।
মোবাইলফোন ব্যবহারের সুবিধার ক্ষেত্রে হালনাগাদ খবর ও তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সবচেয়ে বেশি মানুষ। এ ছাড়া প্রতি ১০ জনে ৬ জন অনলাইনে শিক্ষার সুবিধার কথা জানিয়েছে। যা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে ৫২ শতাংশ মানুষ মোবাইলফোন ব্যবহার দ্বারা নিরাপদ বোধ করেন। যা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার চেয়ে বেশি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে সহায়তা পাওয়া, বন্ধু–স্বজনদের কাছে নিজের অবস্থান জানানো এবং মোবাইলফোনের মাধ্যমে লেনদেন সুবিধা থাকা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান মো.
টেলিনর এশিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব এক্সটার্নাল রিলেশনস অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি মনীষা ডোগরা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, মোবাইল প্রযুক্তি মানসম্মত ডিজিটাল জীবনধারার বিকাশ ঘটিয়েছে। ডিজিটাল সেবাকে আরও সমৃদ্ধ করা এবং ডিজিটাল লিটারেসিকে আরও এগিয়ে নেওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্রামীণফোনের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিষ্ঠানটির চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ বলেন, প্রয়োজনীয় ডিজিটাল দক্ষতা প্রদান এবং অনলাইন নিরাপত্তাবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও তাঁরা কাজ করছেন। মানুষ যেন ডিজিটাল জগতে নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে বিচরণ করতে পারে, সে লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেনসহ টেলিনর ও গ্রামীণফোনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে থাকা লালনের গানের পাণ্ডুলিপি ফেরত চাইলেন কুষ্টিয়ার ডিসি
কুষ্টিয়ার আশ্রম থেকে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ৩১৪টি গানের মূল পাণ্ডুলিপি ভারতের কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন শিলাইদহের তৎকালীন জমিদার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঐতিহাসিক সেই গানের পাণ্ডুলিপি বর্তমানে দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার ভোলপুর শহরে অবস্থিত শান্তি নিকেতন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পাণ্ডুলিপি ফেরত আনার দাবি জানাচ্ছিলেন লালন ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও গবেষকরা। তবে তা ফেরত পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন একাডেমিতে পাণ্ডুলিপিগুলো ফেরত চেয়েছেন। এ জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন তিনি। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এ আবেদন পাঠানো হয়েছে।
লিখিত আবেদনে ডিসি উল্লেখ করেছেন, কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন আশ্রম থেকে লালন শাহের গানের একটি খাতা কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহের তৎকালীন জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যা বর্তমানে শান্তি নিকেতনে সংরক্ষিত আছে। প্রায় ১৩৫ বছরের পুরোনো উক্ত খাতায় লালন শাহের ৩১৪টি গান রয়েছে। ইতোপূর্বে শান্তি নিকেতন থেকে লালন শাহের গানের পাণ্ডুলিপির একটি অনুলিপি প্রেরণ করা হলেও, মূল পাণ্ডুলিপি সেখানেই রয়ে গেছে।
প্রতি বছর লালন তিরোধান দিবস ও লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে লক্ষ লক্ষ দেশ-বিদেশি লালন ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও লালন গবেষকদের আগমন ঘটে। তাদের সবার পক্ষ থেকে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের গানের মূল পাণ্ডুলিপি শান্তি নিকেতন থেকে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে ফেরত আনার দাবি উঠেছে। তদুপরি সরকার ১৭ অক্টোবর লালন তিরোধান দিবসকে ‘ক’ শ্রেণির দিবস হিসেবে ঘোষণা এবং জাতীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় লালন তিরোধান দিবসের গুরুত্ব আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও লালন গবেষকদের দাবির প্রেক্ষিতে লালন গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য ফকির লালন শাহের গানের মূল পাণ্ডুলিপি শান্তি নিকেতন থেকে সংগ্রহ করে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
এমতাবস্থায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের গানের মূল পাণ্ডুলিপি শান্তি নিকেতন থেকে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে ফেরত এনে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, “লালনের ৩১৪টি গানের মূল পাণ্ডুলিপি ফেরত আনার জন্য আমরা সার্বিকভাবে চেষ্টা করছি। আমরা কলকাতা থেকে সেগুলো দ্রুত কুষ্টিয়ায় ফেরত আনতে চাই। এ জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ