বাংলাদেশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। উদ্বেগ থাকলেও নিরাপত্তাচর্চায় ব্যক্তিগত সচেতনতা কম। ব্যবহারকারীদের ৫০ শতাংশই মনে করেন, অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। এ ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ পরিচয় জালিয়াতি ও ‘ডিপফেক’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

গ্রামীণফোনের মূল প্রতিষ্ঠান টেলিনর এশিয়া অঞ্চলে তাদের ‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড’ গবেষণার তৃতীয় পর্বে এসব কথা জানিয়েছে। আজ বুধবার ‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড’ প্রতিবেদনের বাংলাদেশ পর্ব তুলে ধরেছে গ্রামীণফোন। রাজধানীর একটি হোটেলে এই প্রতিবেদন প্রকাশ–সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান জিডব্লিউআইয়ের সহায়তায় বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জরিপ পরিচালনা করে টেলিনর। প্রতিবেদনের জন্য বাংলাদেশের ১৬ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ১ হাজার জনের ওপর গত বছরের ২৩ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত জরিপ করা হয়।

টেলিনরের জরিপের উত্তরদাতাদের ৫০ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মনে করেন, তাঁদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার। এক-তৃতীয়াংশ ব্যবহারকারী মনে করেন, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব রয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে আছে নিজস্ব সচেতনতা।

টেলিনরের এই জরিপে আরও বলা হয়, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জনেরই অনলাইনে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। উত্তরদাতাদের ৪২ শতাংশ পরিচয় জালিয়াতি এবং ৪০ শতাংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে বানানো ডিপফেক নিয়ে উদ্বিগ্ন। জেনজি ও মিলেনিয়াল প্রজন্ম ডিপফেক নিয়ে বেশি চিন্তিত।

এ ছাড়া আর্থিক জালিয়াতি, তথ্য চুরি, ম্যালওয়ার ও নেটওয়ার্কে হামলার মতো উদ্বেগের বিষয়ও উঠে এসেছে।

তবে বাংলাদেশি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা গোপনীয়তা সুরক্ষা টুলের চেয়ে ওয়েবসাইটের নিরাপত্তার ওপর বেশি ভরসা করে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় নিজের সক্ষমতা নিয়ে ৭৫ শতাংশ মানুষ আত্মবিশ্বাসী। জেনজি ও মিলেনিয়ালদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি।

টেলিনর বলছে, বাংলাদেশ অনলাইন নিরাপত্তা অনুশীলনে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার চেয়ে পিছিয়ে আছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কমই আনসাবস্ক্রাইব করেন, ব্রাউজিং ইতিহাস মুছে ফেলেন, ওয়েবসাইট কুকিজ কম প্রত্যাখ্যান করেন এবং অ্যাড-ব্লকার ব্যবহার করেন।

অর্থাৎ বাংলাদেশে অনলাইন ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ারের ঝুঁকি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতার অভাব রয়েছে। এখানে ডিজিটাল সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন অফারের বিনিময়ে নিজের ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশাধিকার দেবে। আর ৪৯ শতাংশ এআই ছবি বা ফিল্টারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপগুলোকে ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশাধিকারের সুযোগ দেবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দেশের মানুষ লোকেশন ট্র্যাকিং নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও প্রযুক্তিনির্ভর সুবিধা ছাড়তে রাজি নয়।

বাংলাদেশে এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি এআই ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রেও এআইয়ের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার রয়েছে। এই প্রবণতা জেনজিদের চেয়ে মিলেনিয়ালদের মধ্যে বেশি।

এআইভিত্তিক স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারে ৪৩ শতাংশ ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহারের আশঙ্কা করে। এ ছাড়া চিন্তা করা ও সমস্য সমাধানের দক্ষতাকে কমিয়ে দেওয়ার আশঙ্কাও রয়ছে।

মোবাইলফোন ব্যবহারের সুবিধার ক্ষেত্রে হালনাগাদ খবর ও তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সবচেয়ে বেশি মানুষ। এ ছাড়া প্রতি ১০ জনে ৬ জন অনলাইনে শিক্ষার সুবিধার কথা জানিয়েছে। যা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশে ৫২ শতাংশ মানুষ মোবাইলফোন ব্যবহার দ্বারা নিরাপদ বোধ করেন। যা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার চেয়ে বেশি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে সহায়তা পাওয়া, বন্ধু–স্বজনদের কাছে নিজের অবস্থান জানানো এবং মোবাইলফোনের মাধ্যমে লেনদেন সুবিধা থাকা।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান মো.

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মানুষের হাতে সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা যেন নিরাপদ ও দায়িত্বশীল হয়ে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, তা নিশ্চিত করাটা সবার সম্মিলিত অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

টেলিনর এশিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব এক্সটার্নাল রিলেশনস অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি মনীষা ডোগরা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, মোবাইল প্রযুক্তি মানসম্মত ডিজিটাল জীবনধারার বিকাশ ঘটিয়েছে। ডিজিটাল সেবাকে আরও সমৃদ্ধ করা এবং ডিজিটাল লিটারেসিকে আরও এগিয়ে নেওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।

গ্রামীণফোনের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিষ্ঠানটির চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ বলেন, প্রয়োজনীয় ডিজিটাল দক্ষতা প্রদান এবং অনলাইন নিরাপত্তাবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও তাঁরা কাজ করছেন। মানুষ যেন ডিজিটাল জগতে নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে বিচরণ করতে পারে, সে লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেনসহ টেলিনর ও গ্রামীণফোনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবিতে প্রভাষক পদে ফাইজুল হক ঈশানকে নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে এস এম ফাইজুল হক ঈশানকে আগামী এক মাসের মধ্যে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে তিনজন প্রভাষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে এস এম ফাইজুল হক ঈশান আবেদন করেন। পরে ওই বছরের ১৩ আগস্ট  নির্বাচনী বোর্ড সভায় তাকে প্রভাষক পদে উপযুক্ত বিবেচনায় নির্বাচিত করে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। তবে পরবর্তীতে সিন্ডিকেট বোর্ড ফাইজুল হক ঈশানকে নিয়োগ না দেওয়ায় তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আদালত তখন রুল জারি করে স্থিতি আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতা গতকাল ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলুট রায় দেন হাইকোর্ট।

আদালত বাদী ঈশানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ, আইনজীবী সঞ্জয় মণ্ডল ও সেলিম রেজা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহমেদ ইসতিয়াক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ