চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত বাড়ছে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। উদ্বেগের বিষয় হলো– আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ গুরুতর বিটা রোগী; যাদের মধ্যে বেশির ভাগের বয়স ৫ থেকে ২০ বছর। বাহকের সঙ্গে বাহকের বিয়ে হওয়ায় সন্তানরাও আক্রান্ত হচ্ছে এ রোগে। গত এক বছরে নতুন করে শতাধিক রোগীর শরীরে মিলেছে থ্যালাসেমিয়ার অস্তিত্ব। প্রতিনিয়ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না সচেতনতা। যে কারণে আক্রান্ত হলেও অনেকে সঠিক সময় নিচ্ছেন না চিকিৎসা। এ রোগের চিকিৎসা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা বাড়তি চিকিৎসা খরচ। 

চিকিৎসকদের মতে, হিমোগ্লোবিন জিনের ধরনের ওপর থ্যালাসেমিয়াকে আলফা-থ্যালাসেমিয়া এবং বিটা-থ্যালাসেমিয়া হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এরমধ্যে বিটা-থ্যালাসেমিয়া মেজর সবচেয়ে গুরুতর। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে দুটি বিটা-থ্যালাসেমিয়া জিন ত্রুটিপূর্ণ থাকে। এর ফলে গুরুতর রক্তস্বল্পতা শুরু হয়, যা ৪-৬ মাস বয়সে শুরু হয়। থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত রোগ। বাবা ও মা দু’জনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সেক্ষেত্রে সন্তানেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। না জানার কারণে থ্যালাসেমিয়ার বাহকের সঙ্গে বাহকের বিয়ে হচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়ছে সন্তানের জীবনও। 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের তথ্যমতে, এ বিভাগের আওতায় ৩৬০ জন থ্যালাসেমিয়ার রোগী রয়েছে। যার মধ্যে আড়াইশ জনের ওপরে বিটা মেজর থ্যালাসেমিয়ার রোগী, যা প্রায় ৮০ শতাংশ। মোট রোগীর মধ্যে গত এক বছরে অন্তত ১২০ জনের দেহে নতুন করে রোগটি শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের মধ্যে ৫ থেকে ২০ বছর বয়সীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। 

বৃহত্তর চট্টগ্রামের রোগীদের সরকারিভাবে ভরসা কেবল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগটি এখনও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি। এখানে সংকট রয়েছে বেশকিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক ও নার্সের। এই রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়ায় চাপাকান্নায় থাকেন বেশির ভাগ রোগী ও তাদের পরিবার।

এ প্রসঙ্গে হেমাটোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার অদিতি গোস্বামী বলেন, চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই বিটা-থ্যালাসেমিয়া মেজর ধরনের রোগী। অন্য ধরনের চেয়ে বিটা-থ্যালাসেমিয়া মেজর সবচেয়ে গুরুতর। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে দুটি বিটা-থ্যালাসেমিয়া জিন ত্রুটিপূর্ণ। চট্টগ্রামে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না সচেতনতা। বিভাগে এখনও অনেক রোগী পাওয়া যায়, যারা শনাক্তের অনেকদিন পর চিকিৎসা নিতে আসছেন। অনেকে আবার জানেনই না তিনি যে আক্রান্ত– বিষয়টি উদ্বেগের।

চট্টগ্রামের বিশিষ্ট হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ ও হেমাটোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা.

মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, থ্যালাসেমিয়া রক্তের লোহিত কনিকার অস্বাভাবিক ভাঙনজনিত এক প্রকার রক্ত শূন্যতাজনিত রক্তরোগ। এতে দেহের স্বাভাবিক কার্যকারিতা সচল রাখতে নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হয়। বিশ্বের ১০ কোটি মানুষের অনেকেই জানেই না সে বংশানুক্রমে থ্যালাসেমিয়ার জিনের বাহক। 

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাহমুদ এ চৌধুরী আরজু বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া রোগী কোনো অভিশাপে জন্ম নেয়নি। এটি একটি জন্মসূত্রে পাওয়া রোগ। আমাদের দেশের জন্য থ্যালাসেমিয়ার প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে রক্ত সঞ্চালন করা। তা হতে হবে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন। প্রতিটি রোগী যেন তাঁর চ্যালেঞ্জ, চাহিদা ও অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।’

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গভর্নরের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়লেন চাকরিচ্যুত নারী কর্মী

চাকরি ফেরতের দাবিতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএমএসএমই নারী উদ্যোক্তা মেলার সামনে আন্দোলন করেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এই মনসুর অনুষ্ঠান শেষ করে বের হওয়ার সময় তার গাড়ি আটকিয়ে অবরোধ করেন তারা। এ সময় একজন নারী কর্মী গভর্নরের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। পরে নিরাপত্তা সদস্যরা তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেন।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে বাংলা একাডেমির গেটে এই ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্র্যাক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কয়েকজন জানান, ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মীরা সকাল থেকে বাংলা একাডেমির সামনে অবস্থান করেন। গভর্নর বের হওয়ার সময় তারা তার গাড়ির চারদিকে ঘিরে চাকরি ফিরিয়ে দিতে স্নোগান দেয়। এ সময় চাকরিচ্যুত একজন নারী কর্মী গভর্নরের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। এ সময় অন্যান্য নারীর সহায়তায় নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে সরিয়ে নেন। পরে গভর্নর বাংলা একাডেমি এলাকা ত্যাগ করেন।

আরো পড়ুন:

এনআরবিসি ব্যাংকের নতুন এমডি ড. তৌহিদ

এপ্রিলে রেমিট্যান্স এলো ২৭৫ কোটি ডলার

আন্দোলনরত কর্মীদের একজন বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্র্যাক ব্যাংকের সেবা দিয়ে আসছি। আমাদের পরিশ্রমের কারণে ব্র্যাক ব্যাংক আজ এই অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ আমাদের কোনো নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করেছে। আমরা আমাদের চাকরি ফেরত চাই।”

ব্র্যাক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মীরা জানান, করোনা ও করোনা পরবর্তী সময়ে আড়াই হাজারের বেশি কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে ব্রাক ব্যাংক। ওই সময় কোনো নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। 

এর আগে, চাকরি ফেরতের দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে আসছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মীরা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনেও আন্দোলন করেন তারা। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত ২ হাজার ৬৬৮ জন কর্মকর্তাকে পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন হয়।

ঢাকা/এনএফ/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ