চট্টগ্রামে আক্রান্তদের গুরুতর বিটা রোগী ৮০ শতাংশ
Published: 8th, May 2025 GMT
চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত বাড়ছে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। উদ্বেগের বিষয় হলো– আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ গুরুতর বিটা রোগী; যাদের মধ্যে বেশির ভাগের বয়স ৫ থেকে ২০ বছর। বাহকের সঙ্গে বাহকের বিয়ে হওয়ায় সন্তানরাও আক্রান্ত হচ্ছে এ রোগে। গত এক বছরে নতুন করে শতাধিক রোগীর শরীরে মিলেছে থ্যালাসেমিয়ার অস্তিত্ব। প্রতিনিয়ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না সচেতনতা। যে কারণে আক্রান্ত হলেও অনেকে সঠিক সময় নিচ্ছেন না চিকিৎসা। এ রোগের চিকিৎসা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা বাড়তি চিকিৎসা খরচ।
চিকিৎসকদের মতে, হিমোগ্লোবিন জিনের ধরনের ওপর থ্যালাসেমিয়াকে আলফা-থ্যালাসেমিয়া এবং বিটা-থ্যালাসেমিয়া হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এরমধ্যে বিটা-থ্যালাসেমিয়া মেজর সবচেয়ে গুরুতর। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে দুটি বিটা-থ্যালাসেমিয়া জিন ত্রুটিপূর্ণ থাকে। এর ফলে গুরুতর রক্তস্বল্পতা শুরু হয়, যা ৪-৬ মাস বয়সে শুরু হয়। থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত রোগ। বাবা ও মা দু’জনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সেক্ষেত্রে সন্তানেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। না জানার কারণে থ্যালাসেমিয়ার বাহকের সঙ্গে বাহকের বিয়ে হচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়ছে সন্তানের জীবনও।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের তথ্যমতে, এ বিভাগের আওতায় ৩৬০ জন থ্যালাসেমিয়ার রোগী রয়েছে। যার মধ্যে আড়াইশ জনের ওপরে বিটা মেজর থ্যালাসেমিয়ার রোগী, যা প্রায় ৮০ শতাংশ। মোট রোগীর মধ্যে গত এক বছরে অন্তত ১২০ জনের দেহে নতুন করে রোগটি শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের মধ্যে ৫ থেকে ২০ বছর বয়সীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
বৃহত্তর চট্টগ্রামের রোগীদের সরকারিভাবে ভরসা কেবল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগটি এখনও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি। এখানে সংকট রয়েছে বেশকিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক ও নার্সের। এই রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়ায় চাপাকান্নায় থাকেন বেশির ভাগ রোগী ও তাদের পরিবার।
এ প্রসঙ্গে হেমাটোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার অদিতি গোস্বামী বলেন, চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই বিটা-থ্যালাসেমিয়া মেজর ধরনের রোগী। অন্য ধরনের চেয়ে বিটা-থ্যালাসেমিয়া মেজর সবচেয়ে গুরুতর। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে দুটি বিটা-থ্যালাসেমিয়া জিন ত্রুটিপূর্ণ। চট্টগ্রামে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না সচেতনতা। বিভাগে এখনও অনেক রোগী পাওয়া যায়, যারা শনাক্তের অনেকদিন পর চিকিৎসা নিতে আসছেন। অনেকে আবার জানেনই না তিনি যে আক্রান্ত– বিষয়টি উদ্বেগের।
চট্টগ্রামের বিশিষ্ট হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ ও হেমাটোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা.
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাহমুদ এ চৌধুরী আরজু বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া রোগী কোনো অভিশাপে জন্ম নেয়নি। এটি একটি জন্মসূত্রে পাওয়া রোগ। আমাদের দেশের জন্য থ্যালাসেমিয়ার প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে রক্ত সঞ্চালন করা। তা হতে হবে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন। প্রতিটি রোগী যেন তাঁর চ্যালেঞ্জ, চাহিদা ও অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে সরকারের চুক্তি
লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এই চুক্তি করা হয়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই পক্ষ এ চুক্তিতে সই করে। এতে ডেনমার্ক, বাংলাদেশ সরকার ও বন্দর সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা অংশ নেন।
চুক্তিতে সই করেন এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন ও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
ডেনমার্কের পক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইবিএস এপিএম টার্মিনালসের হেড অব ইনভেস্টমেন্ট ভাস্কর সেনগুপ্ত, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্ডলোসে হ্যানসেন ও বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী, নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) ও নৌপরিবহন সচিব নুরুন্নাহার চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনবলেন, ‘এই চুক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান। যাঁদের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি, আজ তা দূর হবে।’ তাঁর আরও আশা, এই ধারাবাহিকতায় মোংলা সমুদ্রবন্দর পরিচালনায়ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী বলেন, ‘লালদিয়া দেখিয়ে দিয়েছে—পিপিপি শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও কার্যকর। ভবিষ্যতেও আমরা বাস্তবায়ন-কেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নেই মনোযোগ দেব।’ তিনি আরও জানান, আগামী কয়েক বছরে চারটি নতুন সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে আছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও একটি নির্ধারিত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত পাঁচ দশকে দুই দেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সফলতা দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের সম্পর্ক সহায়তা থেকে ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। মাথাপিছু হিসাবে ডেনমার্ক বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য। বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্য পূরণে লালদিয়া প্রকল্প নতুন মাইলফলক।’
পরিবহন কোম্পানি মেয়ার্স্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা বলেন, লালদিয়া হবে অত্যাধুনিক গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল; সেখানে নিরাপত্তা, অটোমেশন ও স্থায়িত্বের সর্বোচ্চ মান থাকবে। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। সেই সঙ্গে লজিস্টিকস খাতের অগ্রযাত্রায় এটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।