খরা-তাপপ্রবাহে বরিশালে আমড়া চাষে বিপর্যয়ের শঙ্কা
Published: 8th, May 2025 GMT
খরা ও অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কারণে বরিশালে আমড়া চাষে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সদ্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ঐতিহ্যবাহী এ ফলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক হাজার চাষি।
আমড়াচাষিরা বলছেন, জিআই স্বীকৃতি পাওয়া আনন্দের হলেও ফলনহানির শঙ্কায় এখন তাঁরা উদ্বিগ্ন। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তেমন বৃষ্টি হয়নি। তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক বেশি। এতে আমড়ার ফুল ঝরে গেছে। বৈশাখে সামান্য বৃষ্টি হলেও মে মাসের শুরু থেকে তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী। এমন প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ফলের গোটা (গুটিযুক্ত ছোট ফল) ঝরে পড়বে।
গত ৩০ এপ্রিল বিশ্ব মেধাস্বত্ব দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বরিশালের আমড়াসহ দেশের কয়েকটি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এই স্বীকৃতি ঘিরে গর্ব ও উৎসাহের আবহ থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ চাষি জিআই স্বীকৃতির বিষয়টি জানেন না।
বরিশালের আমড়া শুধু একটি ফল নয়; দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশেষ স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও বহুমুখী ব্যবহারের কারণে দেশের নানা অঞ্চলে বরিশালের আমড়ার চাহিদা অনেক। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাস করা আত্মীয়স্বজনের কাছে এই আমড়া পাঠান বরিশালবাসী। অন্য অঞ্চলের মানুষও বরিশালের আমড়াকে স্বাদ ও গুণগত মানে আলাদা করে চেনেন।
বিভাগের ছয় জেলাতেই কমবেশি আমড়া চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া, মদরা, ঈদেলকাঠি, কুড়িয়ানা, সোহাগদল, জলাবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায়। এসব অঞ্চলে শত শত আমড়াবাগান আছে। স্থানীয় চাষিরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাণিজ্যিকভাবে আমড়া চাষ করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগে ১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আমড়া চাষ হয়। বার্ষিক গড় উৎপাদন ২৪ হাজার ৬৮৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় পিরোজপুরে (৮ হাজার ৬৭৭ মেট্রিক টন), এরপর ঝালকাঠিতে (৪ হাজার ৫৭৮ মেট্রিক টন) এবং বরিশালে (৩ হাজার ৩৮৪ মেট্রিক টন)। চাষের জমির পরিমাণে অবশ্য শীর্ষে আছে ঝালকাঠি—৬০২ হেক্টর। চাষিরা জানান, পেয়ারার মৌসুম শেষে আমড়ার মৌসুম শুরু হয়, সাধারণত ভাদ্র মাস থেকে শুরু হয়ে চলে দুই মাস।
বাঁশের মাথায় জাল বেঁধে আমড়া পাড়ছেন এক চাষি।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ট র ক টন
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে থাকা লালনের গানের পাণ্ডুলিপি ফেরত চাইলেন কুষ্টিয়ার ডিসি
কুষ্টিয়ার আশ্রম থেকে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ৩১৪টি গানের মূল পাণ্ডুলিপি ভারতের কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন শিলাইদহের তৎকালীন জমিদার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঐতিহাসিক সেই গানের পাণ্ডুলিপি বর্তমানে দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার ভোলপুর শহরে অবস্থিত শান্তি নিকেতন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পাণ্ডুলিপি ফেরত আনার দাবি জানাচ্ছিলেন লালন ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও গবেষকরা। তবে তা ফেরত পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন একাডেমিতে পাণ্ডুলিপিগুলো ফেরত চেয়েছেন। এ জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন তিনি। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এ আবেদন পাঠানো হয়েছে।
লিখিত আবেদনে ডিসি উল্লেখ করেছেন, কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন আশ্রম থেকে লালন শাহের গানের একটি খাতা কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহের তৎকালীন জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যা বর্তমানে শান্তি নিকেতনে সংরক্ষিত আছে। প্রায় ১৩৫ বছরের পুরোনো উক্ত খাতায় লালন শাহের ৩১৪টি গান রয়েছে। ইতোপূর্বে শান্তি নিকেতন থেকে লালন শাহের গানের পাণ্ডুলিপির একটি অনুলিপি প্রেরণ করা হলেও, মূল পাণ্ডুলিপি সেখানেই রয়ে গেছে।
প্রতি বছর লালন তিরোধান দিবস ও লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে লক্ষ লক্ষ দেশ-বিদেশি লালন ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও লালন গবেষকদের আগমন ঘটে। তাদের সবার পক্ষ থেকে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের গানের মূল পাণ্ডুলিপি শান্তি নিকেতন থেকে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে ফেরত আনার দাবি উঠেছে। তদুপরি সরকার ১৭ অক্টোবর লালন তিরোধান দিবসকে ‘ক’ শ্রেণির দিবস হিসেবে ঘোষণা এবং জাতীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় লালন তিরোধান দিবসের গুরুত্ব আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও লালন গবেষকদের দাবির প্রেক্ষিতে লালন গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য ফকির লালন শাহের গানের মূল পাণ্ডুলিপি শান্তি নিকেতন থেকে সংগ্রহ করে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
এমতাবস্থায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের গানের মূল পাণ্ডুলিপি শান্তি নিকেতন থেকে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে ফেরত এনে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, “লালনের ৩১৪টি গানের মূল পাণ্ডুলিপি ফেরত আনার জন্য আমরা সার্বিকভাবে চেষ্টা করছি। আমরা কলকাতা থেকে সেগুলো দ্রুত কুষ্টিয়ায় ফেরত আনতে চাই। এ জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ