অপব্যবহারের সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ হতে হবে
Published: 9th, May 2025 GMT
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৭ ধারা দিয়ে শুরু; এরপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩; বিগত স্বৈরাচারী শাসনামলের বিভিন্ন সময়ে এই আইনগুলো হয়ে উঠেছিল সাইবার পরিসরে মতপ্রকাশের জন্য বড় হুমকি এবং ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের শাসনের পতন হয় এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে বহুল আলোচিত-সমালোচিত, দমন-পীড়নমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইনটি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
অবশেষে দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় ৯ মাস পর সাইবার নিরাপত্তা আইন বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ নামে একটি আইন করার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অনেক দিন ধরে আলোচনা ও বেশ কয়েকবার খসড়া পরিবর্তনের পর গত মঙ্গলবার ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে সাইবার নিরাপত্তা আইনের যেসব বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে, তা হলো মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দণ্ডসংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচারসংক্রান্ত ইত্যাদি ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো ইত্যাদি অপরাধ ও দণ্ড এবং আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ ইত্যাদি ধারাও বিলুপ্ত করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বাতিল করা ৯টি ধারাকে ‘কুখ্যাত’ ধারা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯৫ শতাংশ মামলাই এসব ধারায় হয়েছিল। এই মামলাগুলো এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এসব মামলায় যাঁরা ভুক্তভোগী ছিলেন, মামলাগুলো বাতিল করা তাঁদের অনেক দিনের দাবি ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তটি নিশ্চিতভাবেই তাঁদের জন্য একটা স্বস্তির খবর।
‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’-এর খসড়ার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, মতপ্রকাশের অপরাধের ক্ষেত্রে দুটি অপরাধ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক কনটেন্ট প্রকাশ ও হুমকি দেওয়া। আরেকটি হলো ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানোর মধ্য দিয়ে সহিংসতাকে উসকে দেওয়া।
আইন উপদেষ্টার বক্তব্য অনুসারে ধর্মীয় ঘৃণাকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে ভুল-বোঝাবুঝি না হয় এবং কেউ হয়রানি করতে না পারে। ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য বা যেকোনো কনটেন্ট, যেটি সহিংসতা উসকে দিতে পারে, সেটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের রাখার বিধান রয়েছে।
নতুনভাবে এগুলো যুক্ত করার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা যায়। আশা করা যায়, নতুন আইনটি উল্লিখিত অপরাধগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
খসড়া অধ্যাদেশে কনটেন্ট অপসারণের পর আদালতের অনুমতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কনটেন্ট অপসারণের আগেই আদালতের অনুমতি নেওয়ার বিধান রাখলে সেটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য হতো। অনেক দেশে এ রকম বিধান রয়েছে।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে এ অধিকার ক্ষুণ্ন হলে ভুক্তভোগী ব্যক্তি কোনো আইনগত প্রতিকার পাবেন কি না, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এর ফলে ওই অধিকারের কোনো প্রায়োগিক ভিত্তি থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নতুন অধ্যাদেশে পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তার এবং বিচার-পূর্ব আটকের বিধানগুলো রয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। এগুলো বহাল থাকলে নতুন অধ্যাদেশের অপব্যবহারের সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ হবে না। অধ্যাদেশটি কার্যকর হওয়ার আগে এ বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট কনট ন ট সরক র র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
লিওনেল মেসির আজ জন্মদিন: এমন মানবজনম আর কি হবে
শুরুটা হয়েছিল একটা স্যুটকেস থেকে কিংবা একটা ন্যাপকিন পেপার অথবা একটা বাইসাইকেল থেকে। সেসব তখন ছিল বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা। ধীরে ধীরে ঘটনাগুলো জোড়া লেগে রূপান্তরিত হলো একটা পূর্ণাঙ্গ গল্পে। স্মৃতির সেসব পাথরখণ্ড এখন গল্পের জগৎ পেরিয়ে মিথ বা কিংবদন্তিতে রূপ নিয়েছে। কে জানে, হয়তো কোনো এক মনোরম মনোটোনাস সকালে কফির মগ হাতে মনে মনে সেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসেন রূপকথার সেই মহানায়ক, যাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এই অনবদ্য গল্পগাথা।
রূপকথার সেই গল্পের মহানায়কের নামটা যে লিওনেল মেসি, তা বোধ হয় আলাদা করে না বললেও চলে। আজ ৩৮তম জন্মদিনে মেসি কি আরেকবার সেসব রূপকথার দিকে ফিরে তাকাবেন? হয়তো তাকাবেন, হয়তো না। কিন্তু আমরা তো কাঁটায় হেঁটে মুকুটের সন্ধান পাওয়া সেই গল্পটার দিকে ফিরে তাকাতেই পারি।
একজন মানুষের দেবদূত হয়ে ওঠার যাত্রাটা আরেকবার দেখে নিয়ে বলতে পারি, ‘এমন মানবজনম আর কি হবে।’ নাহ, এমনটা সব সময় হয় না। কখনো কখনো হয়, কদাচিৎ কেউ কেউ আসেন প্রকৃতির বর নিয়ে। যাঁর হাতে প্রকৃতি তুলে দেয় হ্যারি পটারের সেই জাদুর ছড়ি, যা মুহূর্তেই মাটিকে বদলে দিতে পারে হীরকখণ্ডে।
আরও পড়ুনফ্রি–কিকের সময় কী ভাবেন মেসি? গোল হয় কোন কৌশলে২১ জুন ২০২৫‘মেসি’ নামের এই মহাকাব্যটা লেখা শুরু হয়েছিল ৩৮ বছর আগে আজকের এই দিনে। কিন্তু এই গল্প যেন আর কখনোই শেষ হওয়ার নয়। অনন্তকাল ধরে বিনি সুতার মালায় গাঁথা হতে থাকবে সেই গল্পটা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে বেড়াবে এক অলৌকিক জাদুকরের গল্প, যে গল্পে একজন মানুষ ভীষণ কঠিন এক লড়াই শেষে পান করবেন অমরত্বের সঞ্জীবনী।
কিন্তু অমরত্বের পর আর কী? আর্জেন্টাইন সাহিত্যিক রবার্তো ফুনতানারোজার ‘এন আর্জেন্টাইন’স হেভেন’ নামক গল্পে একদল মানুষ মৃত্যুর পরে কীভাবে ফুটবল খেলা দেখার মধ্য দিয়ে স্বর্গে আরোহণ করেছিলেন সেটা দেখিয়েছিলেন। ফুটবলীয় সেই স্বর্গ কাতারে আড়াই বছর আগেই পেয়ে গেছেন মেসি। আঙুলের ইশারায় পুরো পৃথিবীকে একাই নাচিয়ে তুলেছিলেন ট্যাঙ্গোর তালে। কিন্তু এরপর? অমরত্বের পর সত্যিই কি কিছু থাকে? হ্যাঁ থাকে। অমরত্বের পর থাকে উপভোগ। অমরত্বের পর থাকে বয়ে যাওয়া।
বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে লিওনেল মেসি