টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় চুরির পর পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হওয়া বাছুরসহ গাভি ফিরিয়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাভির মালিক ফজলু শেখের ভাগনে উজ্জ্বল সিকদার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী হাসান বলেন, আদালতের মাধ্যমে গাভি ফেরত নিতে মালিককে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তিনি কী করেছেন তাঁর জানা নেই।

পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের ফজলু শেখের গোয়ালঘর থেকে তাঁর বাছুরসহ একটি গাভি চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার কদিমধল্যা এলাকা থেকে আল-আমিন (৩৫) নামের এক চোরকে আটক করে। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার মালতি গ্রামের দক্ষিণপাড়া এলাকায়। এ সময় পুলিশ তাঁর হেফাজতে থাকা একটি পিকআপ থেকে বাছুরসহ গাভিটি উদ্ধার করে। খবর পেয়ে ফজলু শেখ চুরি যাওয়া গাভি ও বাছুর নিজের বলে শনাক্ত করলে পুলিশ তাঁর করা অভিযোগে আটক আল আমিনকে গ্রেপ্তার দেখায়।

এদিকে এসআই আলী হাসানের কাছে গাভি ও বাছুর ফেরত দিতে অনুরোধ করেন গাভির মালিক ফজলু শেখ ও তাঁর স্বজনেরা। কিন্তু নানা অজুহাতে এসআই গড়িমসি করছিলেন বলে অভিযোগ। পরে স্থানীয় বিএনপির নেতাদের মাধ্যমে গতকাল দুপুরে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় উজ্জ্বল সিকদারের সামনে এক বিএনপি নেতা তাঁর মুঠোফোন দিয়ে আলী হাসানের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় এসআই আলী হাসান ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তখন ওই বিএনপি নেতার মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি (আলী হাসান) দাবিতে অনড় থাকেন।

উজ্জ্বল সিকদার বলেন, ‘আমরা তাঁর (আলী হাসান) কাছে অনুরোধ করছিলাম, গরুটা দিয়া দেন। তিন দিন ধইর‍্যা না খাইয়া রইছে। বাড়িতে নিয়ে গোসল করাইগ্যা, খাওয়াইগ্যা। দুধ না পানাইলে গাইয়ের বান নষ্ট অয়্যা যাইব। উনি ঘারই পাতে না। ওনি ৫০ হাজার টাকা চায়। আমি কইছি গাই আপনি রাইখা দেন। বাছুর আমারে বাগি (বর্গা) দেন। ওই কয় ট্যাহা দিলে অহনই থানায় থিক্যা গরু দিয়া দিব। না দিলে থানায় থিকা দিব না। কোর্টে যাওন লাগব।’ তিনি বলেন, ‘দুই বিএনপি নেতার উপস্থিতিতে লাউড স্পিকার দিয়ে ফোনে কথা বলার সময়ও তিনি টাকা চাইছেন। আমরা কথা বলার সময় তাঁর কথা শুনছি।’

অভিযোগের বিষয়ে এসআই আলী হাসান বলেন, ‘ওনাদের বলে দিছি। ওনারা কোর্টের মাধ্যমে আবেদন করবে। আমাদের গরু অমুক মামলায় উদ্ধার হইছে, আমরা ফেরত চাই। কোর্ট তখন আমাকে লিখবে মালিকানা যাচাই করে প্রতিবেদন দিন। ওইটা আসলে আমি প্রতিবেদন দিব। ওইটা কোর্টে যাবে। তখন কোর্ট গরু ফেরত দিতে বলবে।’ ঘুষ দাবির বিষয়ে বলেন, ‘কার কাছে টাকা চাইছি, তাঁকে আমার সামনে আসতে বলেন।’

তবে মধ্যস্থতাকারী স্থানীয় ভাওড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফারুক হোসেন ও ভাতগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বজলুর রহমান বলেন, গাভি ফেরত দিতে পুলিশ ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল। এর মধ্যে তাঁরা (উজ্জ্বল সিকদাররা) ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের ওই কর্মকর্তা মানেননি।

জানতে চাইলে মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গরুর মালিকসহ আত্মীয়দের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখানে কারও টাকা চাওয়ার কথা না। কেউ চাইলে তাঁরা তাঁর (ওসি) সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। পরে আজ শুক্রবার দুপুরে ওসি বলেন, তিনি টাকা চাওয়ার বিষয়ে এসআই আলী হাসানকে জিজ্ঞাসা করছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, গরু ছাড়ার বিষয়ে কারও কাছে টাকা চাননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৫০ হ জ র ট ক কর মকর ত ব এনপ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে আসামি ধরতে গিয়ে ওসিসহ পুলিশের ৭ সদস্য হামলার শিকার

যশোরের চৌগাছায় আসামি ধরতে গিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) পুলিশের সাত সদস্য হামলার শিকার হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার মাকাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত মামলার আসামি ধরতে উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান মারুফ ও এসআই উত্তমের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা মাকাপুর গ্রামে যান। সেখান থেকে তাঁরা সিয়াম নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে ওসি আনোয়ার হোসেন পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এরপর আসামিকে নিয়ে ফেরার পথে আবারও ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা হয়। এতে ওসিসহ সাতজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লাভলু আহত হন। তাঁকে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা আনোয়ারুল আবেদীন গতকাল রাতে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের সাত সদস্য চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসেন। তাঁদের মধ্যে একজন মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, আসামি সিয়ামকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়েছে। হামলায় তিনিসহ সাতজন আহত হয়েছেন। সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপি নেতার বাড়িতে যাওয়া এসআই প্রত্যাহার
  • গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুলের বাসায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে যাওয়ায় এসআই প্রত্যাহার
  • নিখোঁজ বিএনপি নেতার বাসায় পরোয়ানা নিয়ে পুলিশ, এসআইকে প্রত্যাহার
  • কিশোরগঞ্জের এসপি প্রত্যাহার
  • আবদুল হামিদের ব্যাংকক যাওয়ার ঘটনা তদন্তে কমিটি
  • কিশোরগঞ্জের এসপিও প্রত্যাহার
  • পুলিশের এসআই’র বাসা থেকে পিস্তল-গুলি চুরি, সাসপেন্ড
  • যশোরে আসামি ধরতে গিয়ে ওসিসহ পুলিশের ৭ সদস্য হামলার শিকার