মির্জাপুরে চুরি যাওয়া গাভি ফেরত দিতে পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ
Published: 9th, May 2025 GMT
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় চুরির পর পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হওয়া বাছুরসহ গাভি ফিরিয়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাভির মালিক ফজলু শেখের ভাগনে উজ্জ্বল সিকদার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী হাসান বলেন, আদালতের মাধ্যমে গাভি ফেরত নিতে মালিককে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তিনি কী করেছেন তাঁর জানা নেই।
পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের ফজলু শেখের গোয়ালঘর থেকে তাঁর বাছুরসহ একটি গাভি চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার কদিমধল্যা এলাকা থেকে আল-আমিন (৩৫) নামের এক চোরকে আটক করে। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার মালতি গ্রামের দক্ষিণপাড়া এলাকায়। এ সময় পুলিশ তাঁর হেফাজতে থাকা একটি পিকআপ থেকে বাছুরসহ গাভিটি উদ্ধার করে। খবর পেয়ে ফজলু শেখ চুরি যাওয়া গাভি ও বাছুর নিজের বলে শনাক্ত করলে পুলিশ তাঁর করা অভিযোগে আটক আল আমিনকে গ্রেপ্তার দেখায়।
এদিকে এসআই আলী হাসানের কাছে গাভি ও বাছুর ফেরত দিতে অনুরোধ করেন গাভির মালিক ফজলু শেখ ও তাঁর স্বজনেরা। কিন্তু নানা অজুহাতে এসআই গড়িমসি করছিলেন বলে অভিযোগ। পরে স্থানীয় বিএনপির নেতাদের মাধ্যমে গতকাল দুপুরে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় উজ্জ্বল সিকদারের সামনে এক বিএনপি নেতা তাঁর মুঠোফোন দিয়ে আলী হাসানের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় এসআই আলী হাসান ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তখন ওই বিএনপি নেতার মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি (আলী হাসান) দাবিতে অনড় থাকেন।
উজ্জ্বল সিকদার বলেন, ‘আমরা তাঁর (আলী হাসান) কাছে অনুরোধ করছিলাম, গরুটা দিয়া দেন। তিন দিন ধইর্যা না খাইয়া রইছে। বাড়িতে নিয়ে গোসল করাইগ্যা, খাওয়াইগ্যা। দুধ না পানাইলে গাইয়ের বান নষ্ট অয়্যা যাইব। উনি ঘারই পাতে না। ওনি ৫০ হাজার টাকা চায়। আমি কইছি গাই আপনি রাইখা দেন। বাছুর আমারে বাগি (বর্গা) দেন। ওই কয় ট্যাহা দিলে অহনই থানায় থিক্যা গরু দিয়া দিব। না দিলে থানায় থিকা দিব না। কোর্টে যাওন লাগব।’ তিনি বলেন, ‘দুই বিএনপি নেতার উপস্থিতিতে লাউড স্পিকার দিয়ে ফোনে কথা বলার সময়ও তিনি টাকা চাইছেন। আমরা কথা বলার সময় তাঁর কথা শুনছি।’
অভিযোগের বিষয়ে এসআই আলী হাসান বলেন, ‘ওনাদের বলে দিছি। ওনারা কোর্টের মাধ্যমে আবেদন করবে। আমাদের গরু অমুক মামলায় উদ্ধার হইছে, আমরা ফেরত চাই। কোর্ট তখন আমাকে লিখবে মালিকানা যাচাই করে প্রতিবেদন দিন। ওইটা আসলে আমি প্রতিবেদন দিব। ওইটা কোর্টে যাবে। তখন কোর্ট গরু ফেরত দিতে বলবে।’ ঘুষ দাবির বিষয়ে বলেন, ‘কার কাছে টাকা চাইছি, তাঁকে আমার সামনে আসতে বলেন।’
তবে মধ্যস্থতাকারী স্থানীয় ভাওড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফারুক হোসেন ও ভাতগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বজলুর রহমান বলেন, গাভি ফেরত দিতে পুলিশ ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল। এর মধ্যে তাঁরা (উজ্জ্বল সিকদাররা) ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের ওই কর্মকর্তা মানেননি।
জানতে চাইলে মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গরুর মালিকসহ আত্মীয়দের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখানে কারও টাকা চাওয়ার কথা না। কেউ চাইলে তাঁরা তাঁর (ওসি) সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। পরে আজ শুক্রবার দুপুরে ওসি বলেন, তিনি টাকা চাওয়ার বিষয়ে এসআই আলী হাসানকে জিজ্ঞাসা করছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, গরু ছাড়ার বিষয়ে কারও কাছে টাকা চাননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ৫০ হ জ র ট ক কর মকর ত ব এনপ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জয়পুরহাটে রিমান্ডে নিয়ে আসামিকে নির্যাতন, এসআইকে থানা থেকে প্রত্যাহার
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পুলিশি হেফাজতে (রিমান্ড) নির্যাতনের ঘটনায় চিকিৎসক দিয়ে আসামির শরীর পরীক্ষা করে আঘাতসংক্রান্ত প্রতিবেদন এবং সিভিল সার্জনকে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জয়পুরহাটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এ আদেশ দেন।
আক্কেলপুর থানার উপপরির্দশক (এসআই) গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে পুলিশি হেফাজতে থাকা ওই আসামিকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের আদেশের পর গোলাম রব্বানীকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আক্কেলপুর থানা সূত্রে জানা যায়, গত মার্চে ইসলামী ব্যাংকের আক্কেলপুর এজেন্ট শাখায় গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে। এ ঘটনায় থানা ও আদালতে পৃথক আটটি মামলা করা হয়। এসব মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়। তাঁরা হলেন এজেন্ট শাখার মালিক জাহিদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক রিজওয়ানা ফারজানা ও ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা। তিন আসামি কারাগারে ছিলেন। ৪ আগস্ট তিন আসামিকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আসামি সোহেল রানা পুলিশি হেফাজতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোলাম রব্বানী গতকাল আদালতে মাসুদ রানাকে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রের্কডের আবেদন করেন এবং আরও পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতের নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। তবে আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করে একটি আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, আসামি জাহিদুল ইসলাম ও রিজওয়ানা ফারজানাকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন বলে দোষ স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান। অপর আসামি মাসুদ রানাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ৪ আগস্ট তাঁকে পুলিশি হেফাজতে এনে এসআই গোলাম রব্বানী জানালার সঙ্গে হাতকড়া লটকায়ে বেধড়ক মারপিট করেছেন। তাঁর শরীরের ক্ষতচিহ্ন আদালতের পরীলক্ষিত হয়। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক নন। এ ছাড়া পুলিশি হেফাজতে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করায় তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আইনগত সুযোগ নেই।
আদালত একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দিয়ে মাসুদ রানার দেহ পরীক্ষা করে শরীরের আঘাতসংক্রান্ত প্রতিবেদন জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে আগামী ১০ আগস্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, আসামি মাসুদ রানার জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আক্কেলপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আসামির শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ না করেই পুলিশের কথা শুনে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। এটি দায়িত্বের চরম অবহেলা। ঘটনাটি তদন্ত করে ১৭ আগস্ট সিভিল সার্জনকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে এসআই গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তিনজন আসামির কাউকেই পুলিশি হোফাজতে নির্যাতন করিনি। আসামি মাসুদ রানা টাকা আত্মসাতের কথা গ্রাহকদের সামনে স্বীকার করেছেন। এখন মামলাগুলো অভিযোগপত্র প্রস্তুতের পর্যায়ে রয়েছে। মাসুদ রানা মামলা থেকে বাঁচতে কৌশল খুঁজছেন।’
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এসআই গোলাম রব্বানী পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করেছেন। এ কারণে তাঁকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।