অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের সবচেয়ে বড় কাঠামোগত সমস্যা হলো মানসম্পন্ন শিক্ষাকাঠামো না থাকা। বর্তমানে শিক্ষিতদের মধ্যে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন বেকার। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বহু কমিশন গঠন করলেও শিক্ষা সংস্কারে কোনো কমিশন গঠন করেনি। বৈষম্য নিরসনের এ সরকার শিক্ষাবৈষম্য দূর করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

আজ শুক্রবার সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উদ্যোগে ঢাকা মহানগরের স্কুলপর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের বইপড়া কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির সহযোগিতায় রয়েছে গ্রামীণফোন। অনুষ্ঠানের আয়োজক বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।

অগ্রসর হতে হলে মানসম্পন্ন শিক্ষাকাঠামোর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ বলি কিংবা বিশ্বায়নের বাংলাদেশ, অগ্রসর হতে হলে মানসম্পন্ন শিক্ষাকাঠামোর কোনো বিকল্প নেই। সরকার পাঠক্রম পুনর্বিবেচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করলেও পরবর্তীতে সেখান থেকে পিছু হটে গেল। এটা আমাদের আফসোসের জায়গা।

শিক্ষায় সবচেয়ে বড় বৈষম্য বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, কেউ ভালো শিক্ষা পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না। যার সামর্থ্য আছে, তিনি মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়ছে। কিন্তু যার সক্ষমতা নেই, তারা ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কাজেই সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষদের কথা ভেবে এগোতে হবে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে মানুষ গণতান্ত্রিক চেতনা ও কোটাবিরোধী আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়। কিন্তু এ আন্দোলনের একটা অন্যতম কারণ ছিল বেকারত্ব। বিগত সময়ে বাংলাদেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ছিল না। ব্যক্তি খাতে কোনো কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। ফলে বেকারত্বে হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তরুণেরা বেকার থাকায় তাঁরা চাকরির খোঁজে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নবীজির (সা.) ইন্তেকালের ইঙ্গিত

নাসর মানে সাহায্য। সুরা নাসর পবিত্র কোরআনের ১১০তম সুরা। রাসুল (সা.)-এর বিদায় হজের সময় সুরাটি অবতীর্ণ হয়। আল্লাহর সহায়তায় ইসলামের পরিপূর্ণ জয়ে পৌত্তলিকেরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। আল্লাহর প্রশংসাকীর্তন ও তাঁর ক্ষমা ভিক্ষা করা উচিত। এই সুরা নাজিল হওয়ার কিছুদিন পরেই রাসুল (সা.) ইন্তেকাল করেন।

সুরা নাসরের অর্থ আবার দেখে নিই:

 পরম করুণাময় পরম দয়াময় আল্লাহর নামে। ১. যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়। ২. আর তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর ধর্ম গ্রহণ করতে দেখবে, ৩. তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসায় তাঁর পবিত্র মহিমা ঘোষণা করো ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি তো ক্ষমাপরবশ।

সুরা নাসরের সারকথা:

সুরা নাসর ৩ আয়াতের একটি ছোট্ট সুরা। প্রথম অংশে বিজয়ের জন্য যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং বিজয়, দ্বিতীয় অংশে বিজয়ের ফলাফল এবং তৃতীয় অংশে বিজয় এবং বিজয়ের ফল লাভ করার পর করণীয় বিষয়ে বলা হয়েছে।

 মুহাম্মদ (সা.) তাঁর উম্মতদের নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন। তিনি ভাবতেন, তাঁর দাওয়াত কি কাজে আসছে? মানুষ ইসলামে প্রবেশ করবে তো? প্রথম আয়াতে ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়’ বলে মূলত ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে ইসলামের বিজয় আসন্ন। এমন অনেক ভবিষ্যদ্বাণী আছে সুরা আর রুম, সুরা লাহাবে।

আরও পড়ুনসুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের বিশেষ ফজিলত০৭ মার্চ ২০২৫

এ ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত যে এখানে বিজয় বলে মক্কা বিজয় বোঝানো হয়েছে। আর বিজয় মানে কোনো একটি সাধারণ যুদ্ধে বিজয় নয়, বরং এর মানে হচ্ছে এমন একটি চূড়ান্ত বিজয়, যার পরে ইসলামের সঙ্গে সংঘর্ষ করার মতো আর কোনো শক্তির অস্তিত্ব হিজাজ অঞ্চলে থাকবে না এবং এ কথাও সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে বর্তমানে আরবে এ ধর্মই প্রাধান্য বিস্তার করবে।

হিজরতের পূর্বে মক্কায় নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ইসলাম গ্রহণের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে একজন–দুজন করে ইসলাম গ্রহণ করার যুগ শেষ হয়ে যাবে। তখন এমন এক যুগের সূচনা হবে, যখন একটি গোত্রের সবাই এবং একেকটি বড় এলাকার সব অধিবাসী কোনো প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ ও চাপ প্রয়োগ ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুসলিম হয়ে যেতে থাকবে। মক্কা বিজয়ের পূর্বে এমন লোকের সংখ্যাও প্রচুর ছিল, যারা ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাসের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু কুরাইশদের ভয়ে অথবা অন্য কোনো কারণে তারা ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত ছিল।

মক্কা বিজয় তাদের সেই বাধা দূর করে দেয়। একটি অনুকূল পরিবেশ পেয়ে সে সময়ে দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে; যা দ্বিতীয় আয়াতের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিফলন। ফলে সমগ্র আরবে ইসলাম বিজয়ী জীবনব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। (সহিহ বুখারি, আয়াত: ৪,৩০২)

একাধিক হাদিসে আছে, এ সুরায় রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকাল নিকটবর্তী হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত আছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এটা তো রাসুলের মৃত্যুর সময়, যা তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে যাবে’, আর এটাই হবে আপনার জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার আলামত, ‘সুতরাং আপনি আপনার রবের সপ্রশংস তাসবিহ পাঠ করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চান; কেননা তিনিই তো তাওবা কবুলকারী।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,৯৭০)

আরও পড়ুনআল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন নবী সোলায়মান (আ.) ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সুতরাং সুরার অর্থ হচ্ছে, আপনার দুনিয়াতে অবস্থান করার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে গেছে, ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালিত হয়েছে। অতএব, আপনি তাসবিহ ও ক্ষমা প্রার্থনায় মনোনিবেশ করুন। (ইবনুল কায়্যিম, ইলামুল মুয়াক্কিয়িন, ১/৪৩৬)

আয়েশা (রা.) বলেন, এই সুরা অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসুল (সা.) প্রতি নামাজের পর বলতেন, ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া-বিহামদিকা আল্লাহুম্মা-গ্‌ফিরলি (হে আল্লাহ, আপনি পবিত্র, হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার প্রশংসাসহ আপনি পবিত্র। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন)। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৯৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৮৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৮৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৮৮৯)

আরও পড়ুনবিপদে হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল পাঠের মাহাত্ম্য০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ