সরকার হয়তো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছে: তারেক
Published: 9th, May 2025 GMT
সংস্কারের নামে সময় ক্ষেপণ করে অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ ওঠার কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সরকার পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রও তৈরি করতে চাইছে কি না, এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো অত্যন্ত সুকৌশলে নানা ইস্যু সৃষ্টি করে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদবিরোধী যে রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে ছিল, তাদের ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর একটা ক্ষেত্র তৈরি করতে চাইছে। পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রও হয়তো তৈরি করতে চাইছে; এসব বিষয় ঘুরেফিরে মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলে গুম হওয়া সুমনের বাসায় পুলিশ যাওয়ার বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনকে গুম করা হয়। আজও তাঁর হদিস পাওয়া যায়নি। স্বৈরাচারের শাসনকালে সারা দেশের এ রকম অসংখ্য সুমনদের গুম, খুন, অপহরণ করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুমনের বোনের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল সামাজিক সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। আশ্চর্য ও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গুম হওয়া সুমনকে ধরার জন্য গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় ঢাকায় সুমনের বোনের বাসায় অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। প্রশাসন বলছে, তারা নাকি সুমন সম্পর্কে জানত না।
তারেক রহমান বলেন, ‘তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম প্রশাসন সুমন সম্পর্কে হয়তো জানত না, কিন্তু পলাতক স্বৈরাচার সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এখন বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার নাকি দেশত্যাগের ব্যাপারে কিছুই জানে না। এ নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাহলে জানেটা কী?’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি প্রতিটা ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি এখনো তাদের সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারছে কি না, এ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, কে সংখ্যালঘু বা কে সংখ্যাগুরু, কোনো সভ্য রাষ্ট্রে এভাবে কোনো নাগরিকের পরিচয় নির্ধারিত হয় না। আধুনিক রাষ্ট্র এবং সমাজে দেশের জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু হিসেবে বিবেচিত করা বৈষম্য সৃষ্টি এবং অমার্জনীয় অপরাধ।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংশয়বাদী, সবাই মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। গত দেড় দশকে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনেও সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। ২০২৪ সালেও ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ছাত্র-জনতা মিলেই বীর জনতা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করেছে। এ দেশটা কোনো ব্যক্তি কিংবা দলের নয়, দেশের জনগণের। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও ইনসাফভিত্তিক মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রতিটি ধর্মই মানুষকে ভালো হতে শেখায়। ধর্ম দিয়ে কোনো বিভাজন করা ঠিক নয়। প্রতিটি ধর্মই ঐক্যের কথা বলে। স্বাধীনতাযুদ্ধে সব ধর্মের মানুষ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিল, সেই চেতনা ধরে রাখতে হবে। যাতে কোনো শক্তি এই ঐক্য বিভক্ত করতে না পারে।
বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের সভাপতি জন গমেজের সভাপতিত্বে ইস্টার পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ত্রুজ ওএমআই, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের মহাসচিব অনিল লিও কস্তা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন দ শত য গ ব এনপ র জনগণ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নার্সদের অমর্যাদাকর অবস্থানে রাখা হয়েছে: ফরহাদ মজহার
বাংলাদেশে জনগণের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করাটা অত্যন্ত জরুরি হলেও এখানে পেশা হিসেবে নার্সদের অমর্যাদাসম্পন্ন একটা অবস্থানে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘নার্সদের ডাক্তারি ব্যবস্থার অধীন একটা পেশা হিসেবে যে দেখা হয়, আমরা মনে করি এটা ভুল। এখান থেকে মুক্ত হতে হবে। নার্স সেবাটা স্বাস্থ্যসেবার একটা মৌলিক দিক। ফলে তাঁদের স্বাধীনভাবে এই পেশাকে চর্চা করবার সুযোগ–সুবিধা দিতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ফরহাদ মজহার। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ও স্বাস্থ্য আন্দোলন। স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য দেন ফরহাদ মজহার।
সরকার স্বাস্থ্যকে এখন আর জনগণের অধিকার হিসেবে স্বীকার করছে না বলে অভিযোগ করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘এখন স্বাস্থ্যকে অধিকার নয়, বাজারজাত পণ্য বানানো হয়েছে। টাকা থাকলে চিকিৎসা পাবেন, টাকা না থাকলে নয়।’
নার্সদের স্বাধীন পেশাগত চর্চা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন ও মর্যাদা নিশ্চিতের জন্য জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সদেরকে ডাক্তারদের হুকুমমতো চলতে হবে—এই ধারণা ভাঙতে হবে। স্বাস্থ্য মানে শুধু প্রেসক্রিপশন নয়, প্রতিরোধও একটি বড় দিক। নার্সদের মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে জনগণ প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সিং স্বাস্থ্যসেবার এক মৌলিক দিক। কিন্তু আমাদের সমাজে চিকিৎসাকে ডাক্তারিকরণ বা মেডিক্যালাইজেশন করা হয়েছে। অনেক রোগে ডাক্তার কিংবা ওষুধের প্রয়োজনই হয় না। এ জায়গায় নার্সরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম। এক মাসের মধ্যে নার্সিং কমিশন গঠনের এক দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন বিএনএর সহসভাপতি মাহমুদ হোসেন তমাল। এতে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপারসন জরিনা খাতুন, সহসভাপতি মনির হোসেন ভূঁইয়া এবং সংগঠনের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মী।