ভারতে ইউটিউবে বন্ধ যমুনাসহ বাংলাদেশি চার টিভি চ্যানেল
Published: 9th, May 2025 GMT
ভারত সরকারের অনুরোধে ইউটিউব থেকে বাংলাদেশি অন্তত চারটি টেলিভিশন চ্যানেল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা ডিসমিসল্যাব। ব্লক হওয়া চ্যানেলগুলো হলো— যমুনা টেলিভিশন, একাত্তর টিভি, বাংলাভিশন এবং মোহনা টিভি।
বিবিসি লিখেছে, এই চারটি চ্যানেল বর্তমানে ভারতের ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে দেখা যাচ্ছে না। যদিও বাংলাদেশের অন্যান্য টিভি চ্যানেল ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে।
এই চারটির ক্ষেত্রে ইউটিউব ব্যবহারকারীরা পাচ্ছেন একটি বার্তা: ‘এই কনটেন্টটি সরকারি নির্দেশে জাতীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার কারণে ভারতে উপলব্ধ নয়।’
আরো পড়ুন:
রাতে আবার ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলা
ভারতে ‘দ্য ওয়্যার’ নিউজ সাইট বন্ধ
ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, তারা ভিপিএনের মাধ্যমে মোট ৩৮টি বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল পর্যবেক্ষণ করে এই চারটি চ্যানেলকে ব্লক অবস্থায় পেয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, যমুনা টেলিভিশন ইউটিউব থেকে একটি অফিসিয়াল নোটিশ পেয়েছে, যেখানে তাদের চ্যানেল ব্লক করার বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায়, দেশটির সরকার যদি কোনো কনটেন্টকে জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব কিংবা জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি মনে করে, তবে ইউটিউবকে তা ব্লক করতে নির্দেশ দেওয়ার আইনগত ক্ষমতা রয়েছে।
এর আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বে টুইটার) জানায়, ভারতের অনুরোধে তাদের প্রায় ৮ হাজারটি অ্যাকাউন্ট সেদেশে ব্লক করা হয়েছে।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আমরা গিয়েছিলাম প্রথম আলো ভ্রমণে’
একদিন দেখি আইইআরে আমাদের ব্যাচের সব মেয়ে সেজেগুজে এসেছে। একেকটা ডানাকাটা পরি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ক্লাসের দিকে তাদের মন নেই।
কী ব্যাপার?
আমার তৎকালীন সহপাঠী মিতু বলল, আজ ডিপার্টমেন্টের সব মেয়ে ঘুরতে যাবে। তাদের নিয়ে যাবে নওরোজ ইমতিয়াজ।
নওরোজ আমাদের ব্যাচেরই ছাত্র। তাকে আমি পছন্দ করতাম না। কারণ, সে দেখতে সুন্দর। বড়লোক। গাড়ি চালিয়ে ক্লাস করতে আসে। তার হাতে থাকে বিশাল আকৃতির ডিএসএলআর ক্যামেরা। সেটা দিয়ে সে অক্লেশে মেয়েদের ছবি তোলে। আর সব মেয়ে তার পেছন পেছন ঘোরে।
এ রকম ছেলেকে পছন্দ করার কোনো কারণ নেই।
আমি মিতুকে বললাম, ‘নওরোজ একটা ফাউল পোলা। ওর পাল্লায় অ্যাটলিস্ট তুমি পইড়ো না।’
মিতু মাথা কাত করে আমার কথা মেনে নিল।
কিন্তু দুপুরবেলায় এক কাণ্ড হলো। আমরা সবাই মিলে ক্লাস ‘বাং’ করলাম।
‘বাং’ শব্দটার মানে ঠিক জানি না। এর প্রচলিত অর্থ হচ্ছে, পারস্পরিক যোগসাজশে ক্লাস বর্জন করা।
আমরা সবাই মিলে ক্লাস বর্জন করলাম। আমাদের যেহেতু করার কিছু নেই, ব্যাচের সবাই রওনা দিল নওরোজের সঙ্গে এবং এটা আজও রহস্য, কেন আমিও সেই দলে ঢুকলাম। ফাউল নওরোজের সঙ্গে হাঁটা দিলাম।
নওরোজ আমাদের নিয়ে গেল একটা অফিসে। সেই অফিসে লিফট বেয়ে উঠতে হয়। কারওয়ান বাজারের সিএ বিল্ডিং। টেবিল–চেয়ার ঠিকমতো সেট হয়নি। লাইন ফিটিং আর এসি লাগানোর কাজ চলছে।
শুনলাম, নতুন একটা পত্রিকা বের হবে। নাম: দৈনিক একুশে।
যা–ই হোক। নওরোজ সেই অফিসের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে দলবল নিয়ে রাউন্ড মারছে। দলে যেহেতু নারীর সংখ্যা বেশি, কাজেই সে বেশ খাতির পাচ্ছে।
এর মধ্যে একটা টেবিলে বসে আছেন একজন লোক। দেখতে অনেকটা হিন্দি সিনেমার নায়ক গোবিন্দর মতো। শুনলাম, তাঁর নাম সুমন্ত আসলাম।
আরে...এই লোককে তো আমি চিনি! ‘চলতিপত্রে’ আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছিল। এই সুমন্ত আসলাম সেই লেখা ছেপেছিলেন। আমি তাঁকে গিয়ে বললাম, আমার নাম অমুক। আমার একটা লেখা...
আমার নাম শুনে সুমন্ত.... বলতে লজ্জা লাগছে, মোটামুটি লাফ দিয়ে উঠলেন। বললেন, ‘আরে আপনারেই তো খুঁজছি।’
এই কথা বলে তিনি আমার হাত ধরে নিয়ে গেলেন আরেক ভদ্রলোকের কাছে।
তাঁর নাম আনিসুল হক।
আনিসুল হক ও সুমন্ত যৌথভাবে জানালেন, তাঁরা ‘ফান ডে’ নামে একটি ফান ম্যাগাজিন বের করবেন। ‘উন্মাদ’ পত্রিকার আদলে। রম্যলেখকের বড়ই অভাব।
এই কথা বলে তাঁরা আমাকে কাগজ ধরিয়ে দিলেন। নিউজপ্রিন্টের ছোট ছোট টুকরা। বললেন, ‘এই সাবজেক্টে এখনই একটা লেখা লিখে দেন। এই যে, এই কোনায় বসেন। তারপর লেখেন। চা খাবেন? এই, এরে একটা চেয়ার দাও।’
আমার মনে আছে, ওই দিন আমি সেই অফিস থেকে বের হয়েছিলাম, রাত ১০টার কিছু পরে।
খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হচ্ছে, সুমন্ত তখন থাকতেন মিরপুরে। এবং তিনি তখন ব্যাচেলর। এবং আমার বাসাও মিরপুরে। এবং সুমন্ত খুবই আঠালো টাইপের লোক। এবং তিনি প্রতিদিন অলমোস্ট ভোরবেলায় আমার বাসায় এসে হাজির হতেন। এবং আমাকে নিয়ে বের হতেন। এবং কারওয়ান বাজারে গিয়ে পরোটা ডিম দিয়ে নাশতা করাতেন। এবং লিখতে বসিয়ে দিতেন। এবং রাত ১০টার আগে ছাড়তেন না। এবং তারপর ১১টার দিকে আমাকে নিয়ে রিকশায় করে মিরপুরে ফিরতেন। এবং আমাকে বসাতেন রিকশার ডান দিকে। বলতেন, ‘কিছু মনে করবেন না, আমার ওপরে অনেক বড় দায়িত্ব। রিকশায় অ্যাকসিডেন্ট ডান দিকে হয়। এ জন্য আপনি ডানে। আমি বাঁয়ে। আমার বেঁচে থাকা দরকার ভাই।’
সে সময় আমি দুই হাতে লিখতাম। রাশিফল, সিনেমা সমালোচনা, রাজনীতি—কী নেই সেখানে। সব লেখা আমার নামে যেত না। কোনো লেখা আমার নামে। কোনো লেখা আমার ছোট ভাইয়ের নামে। কোনো লেখা মিতুর নামে। এবং কোনো কোনো লেখা মিতুর মায়ের নামে।
তত দিন সবকিছু সেটল হয়ে গেছে। পত্রিকার নাম: প্রথম আলো। আর ফান ম্যাগাজিনের নাম: আলপিন।
তখন প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক ছিলেন আনিসুল হক। তিনি বসতেন ফিচার বিভাগে। তাঁর একটা বড় টেবিল ছিল। পুরো ফিচার বিভাগের একটা টেলিফোন সেট ছিল। সেটা তার সেই বড় টেবিলে। আমি প্রায়ই সেই ফোনে মিতুর সঙ্গে কথা বলতাম।
আমি যখন মিতুর সঙ্গে ফোনে কথা বলতাম, আড়চোখে আনিস ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আনিস ভাই তখন গভীর মনোযোগে ঘোরগ্রস্ত সময় পার করছেন, ফিচার বিভাগের কোনো লেখা এডিট করছেন। কিন্তু আজ বুঝতে পারি, কিসের লেখা এডিট। তিনি আড়ি পেতে আমার সব কথা শুনতেন। কেননা একদিন, ফোন রাখার আগে তিনি বললেন, ‘দাঁড়ান, লাইন কাইটেন না। ফোনটা দ্যান।’
তারপর ফোন নিয়ে মিতুকে বললেন, ‘আপনি রবির হুমকিতে ভয় পাইয়েন না। আপনার সাথে আমি সুমনা শারমীনের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এই রকম সিচুয়েশনে তাঁর সাথে পরিচয় থাকা দরকার।’
যথাসময়ে সুমনা শারমীনের সকাশে মিতুর বৈঠক হলো। এর ফল হলো মারাত্মক। মিতুর সঙ্গে কথা বলার আগে আমাকে হিসাব করে নিতে হয়। ২০ বছর পার হয়ে গেল। আজও।
এভাবেই একদিন কোরবানির ঈদ এল। আমি বাসা থেকে পালালাম। মিতুকে নিয়ে। মিতুর পরিবার ও আমার পরিবার হন্যে হয়ে আমাদের দুজনকে খুঁজছে। তখন প্রথম আলোতে ঈদের ছুটি চলছে। আমি অজ্ঞাত স্থান থেকে আনিস ভাইকে ফোন দিলাম, ‘মিটুনদা, আমি কয়েক দিন অফিসে আসতে পারব না, কাহিনি হলো, একটু আগে আমি মিতুকে নিয়ে পালিয়েছি...’
আনিসুল হক সম্পর্কে তৎকালীন সময়ে প্রচলিত ধারণা ছিল, তিনি ঝামেলা এড়িয়ে চলতে ভালোবাসেন। কিন্তু তিনি একটা অদ্ভুত কাজ করলেন। আমাকে বললেন, ‘আপনি কোথায় আছেন? রাত্রে কোথায় থাকবেন? যাবেন কোথায়? খাবেন কী?’
সেই রাতে মিতু আর আমি তাঁর এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিলাম। আনিসুল হক, আমাদের মিটুনদা তাঁর স্টাডিরুম আমাদের দুজনের জন্য ছেড়ে দিলেন। অফিশিয়ালি এই রেকর্ড মোছার কোনো উপায় নেই যে মিতু আর আমার দুই যুগের দাম্পত্য জীবনের বাসররাত উদ্যাপিত হয়েছিল—আনিসুল হকের বাসায়।
দুই পলাতক প্রেমিক–প্রেমিকার সন্ধানে মিতুর পরিবার শেষমেশ হাজির হয়েছিল প্রথম আলোতে। আনিস ভাইয়ের টেবিলে। তিনি তাঁদের সামলেছিলেন। কীভাবে, আজও জানি না।
তবে এরপর আমাদের দুই পরিবারের সেটেলমেন্ট পজিটিভ দিকেই আগাতে লাগল।
মিতু আর আমি সংসার শুরু করলাম, আমার মিরপুরের বাসায়।
তখন আনিস ভাইয়ের পরামর্শে আমি প্রথম আলো ছাড়লাম। তিনিই আমাকে বললেন, ‘অ্যারোমেটিক সাবান কোম্পানি একটা পত্রিকা বের করছে। আপনি ওদের সাথে যোগাযোগ করেন...’
প্রথম আলোর বাঁধা লেখক ছিলাম আমি। ভেবেছিলাম, হয়তো এখানেই চাকরি করে থিতু হব। কিন্তু প্রফেশনাল ঝুঁকির ব্যাপারে আনিস ভাই আমাকে সতর্ক করলেন। প্রথম আলোতে চাকরি করলে সবাই বলবে রবি তো মিটুনদার লোক...
যা–ই হোক। সাবান কোম্পানির পত্রিকা যুগান্তরে আমি অবিশ্বাস্য অফার পেলাম। সাব–এডিটর হিসেবে যাত্রা শুরু করলাম। আমার হাতে জন্মাল ‘বিচ্ছু’।
তবে প্রথম আলোতে আমার চাকরি হলো না, এই ক্ষোভ আমার মধ্যে রয়ে গেল অনেক দিন। বিচ্ছু ম্যাগাজিনের একদম মাঝের পাতা, যেটাকে বলা হয় সেন্টার ফোল্ড—ওখানে আমি একটা নতুন স্যাটায়ার পত্রিকা বের করা শুরু করলাম। নাম দিলাম—লাল বাত্তি। হুবহু প্রথম আলোর লোগো। এর মূল লক্ষ্য ছিল—প্রথম আলো পত্রিকাকে ব্যঙ্গ করা।
আমি সগর্বে ঘোষণা করছি, স্যাটায়ারের একদম একটি নতুন ধারণা ছিল এটা। আপনারা যাঁরা মতিকণ্ঠ পড়তেন বা এখন আনোয়ার টিভি দেখেন, বা যাঁরা ওনিয়ন ফলো করেন, তাঁরা এটা বুঝতে পারবেন। অবিকল খবরের মতো করে একদম ফালতু কিছু সংবাদ দেওয়া। যেটা পড়ে আপনি হাসবেন। আবার অনেক খবর পেয়েও যাবেন।
সার্ফ এক্সেলের একটা বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, দাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তাহলে দাগই ভালো। লাল বাত্তির ক্ষেত্রে কথাটা একই রকম: রাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তাহলে রাগই ভালো।
লাল বাত্তি কি লেভেলের ফাইজলামি করত, তার একটা উদাহরণ দিই। তখন প্রথম আলো পত্রিকার লোগোর পাশে লেখা থাকত, আজ প্রথম আলো ছাপা হলো ১ লাখ ৮৮ হাজার কপি। লাল বাত্তির ক্ষেত্রে একই কথা লেখা থাকত। আজ লাল বাত্তি ছাপা হলো ১ লাখ ৮৮ হাজার। এরপর একটা বাড়তি লাইন যোগ করতাম আমি। এটাই ছিল পাঞ্চ লাইন—অবিক্রীত কপি ফেরত এসেছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯ শত ৯৯ কপি।
আজ এত বছর পর বলতে হয়, লাল বাত্তি টিকে নেই। মতিকণ্ঠও বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু টিকে আছে প্রথম আলো। সগর্বে, সদর্পে।
মতি ভাইয়ের কথা মনে পড়ে। একদিন, বোধ হয় সুমন্তের একটা প্রমোশন আটকে আছে। এ জন্য তিনি রাত ১২ পর্যন্ত কাজ করেন। ভোর থেকে তাঁর কাজ শুরু। আমাকেও একই রুটিন ফলো করতে হয়।
অথচ ফিচার বিভাগ সন্ধ্যার পরই ফাঁকা হয়ে যায়। তখন ভিড় বাড়তে থাকে নিউজ রুমে। একদিন মতি ভাই দেখলেন, ফিচার বিভাগে লাইট জ্বলছে। আমি তখন আনমনে কিছু লিখছি। হঠাৎ মাথায় কেউ হাত দিলেন। ওমা, মতি ভাই। এই প্রথম মতি ভাইকে এত কাছ থেকে দেখছি। আমি উঠে দাঁড়ালাম। মতি ভাই বললেন, ‘এত রাতে কী করো? কোথায় পড়ালেখা করো? ক্লাস করো? নাকি খালি পত্রিকা নিয়েই আছো?’
সুমন্ত আসলাম আশপাশেই ছিলেন। তিনি সুমন্তকে একটা ১০০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলেন। বললেন, ‘তোমরা কাবাব খেয়ো। এই ছেলে তো মনে হয়, সারা দিন কিছু খায় নাই।’
মতি ভাই, আপনার ১০০ টাকার মধ্য থেকে সুমন্ত মাত্র ৯০ টাকা দিয়ে আমাকে কাবাব খাইয়েছে। সে নিজেও খেয়েছে। এখনো ১০ টাকার হিসাবে গরমিল আছে। ২০ বছর আগের কথা। তখন ১০ টাকার অনেক দাম।
এবার একটু সিরিয়াস কথা বলি। যেকোনো পদার্থ তৈরি হয় অসংখ্য অণু-পরমাণু নিয়ে। প্রথম আলো তৈরি হয়েছে দুটি পরমাণু মিলে। একটির নাম লতিফুর রহমান, আরেক পরমাণু মতিউর রহমান।
বাংলাদেশের ইতিহাস আপনি ঘেঁটে দেখেন। আমাদের দেশে ‘সেই রকম’ কোনো ব্র্যান্ড তৈরির ইতিহাস নেই। শক্তিশালী ও একই সঙ্গে সব বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কোনো ব্র্যান্ড এই দেশে দাঁড়ায়নি। লতিফুর রহমান ও মতিউর রহমান—সেই রকম একটা ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন।
আপনি যখন আপনার দুরবস্থার জন্য আর কাউকে দায়ী করতে পারছেন না, তখন আপনার হাতে একটা নিরাপদ অপশন আছে। যাকে আপনি নির্দ্বিধায় ব্লেইম করতে পারেন। আপনি বলতে পারেন, আজকের এই দুরবস্থার জন্য দায়ী প্রথম আলো গং।
আবার আপনি ডুবছেন ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে। চারদিকে কোনো কূলকিনারা নাই। তখন আল্লাহর পর আপনি একজনকেই খুঁজবেন। ভাই, প্রথম আলোর কোনো সাংবাদিকের লিংক আছে। তাঁরা যদি এ বিষয়ে নিউজ করেন, তাইলেই সব সমস্যার সমাধান।
প্রথম আলো কী করেছে এই দেশের জন্য?
একটা উদাহরণ দিই। যাঁরা আমার মতো বয়স্ক, তাঁরা জানেন, একসময় বাংলাদেশের মেয়েদের গায়ে অ্যাসিড ছুড়ে মারা হতো। প্রথম আলো এই সিঙ্গেল ইস্যুকে নিয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস যেভাবে কাজ করেছে, এখন এই রকম খবর আমরা আর দেখি না।
প্রথম আলোর দুর্বলতা কী?
দুইটা।
এক নম্বর হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে মানুষের অবচেতন মনের আশা–আকাঙ্ক্ষা আকাশচুম্বী।
দ্বিতীয় দুর্বলতা। এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যম স্তরের অনেক কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
আর দ্বিতীয় দুর্বলতায় প্রথম আলোর সবলতা। মধ্যম স্তরে বা হাই লেভেলের কেউ কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করলেও দুজন মানুষ কখনো পাওয়ারকে মিস হ্যান্ডেল করেননি বা অ্যাডভানটেনজ নেননি। মতি ভাই ও লতিফুর রহমান। তাঁরা সৎ।
লেখা শেষ করি।
খুবই কাকতালীয়ভাবে, গত রাতে আমি আনিসুল হককে স্বপ্নে দেখেছি। (জানি, লেখার এই প্রান্তে এসে সবাই হাসাহাসি শুরু করবেন)।
স্বপ্নে দেখলাম, আনিস ভাই ও মেরিনা আপা আমাদের এলাকায় বেড়াতে এসেছেন। সবাই খুব খাতির করছেন। উনাকে কবিতা পড়ে শোনাচ্ছেন। কেউ কেউ উনাদের লেখা বই উপহার দিচ্ছেন।
আমি সেখানে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। কেননা, আমার পোশাক খারাপ। পকেটে পয়সা নেই।
আমি গেলাম আমার মায়ের কাছে। (স্বপ্ন বলেই এটা সম্ভব। আমার মা থাকেন মানিকগঞ্জে, ভার্জিনিয়া থেকে অনেক দূরে।) বললাম, আম্মু আমাকে এক হাজার টাকা দাও।
এই রকম কথা শুনলে আমার মা খেপে যান, ‘তুই যে আমার কাছে টাকা চাস, আমি টাকা কই পাই? আর এইভাবে উল্টাসিধা খরচ করোস ক্যান?’
আশ্চর্যের ব্যাপার আনিস ভাই, স্বপ্নে আমার মা একটা কথাও বললেন না। শুধু বললেন, ‘আচ্ছা এই যে এক হাজার টাকা। সাবধানে খরচ করিস।’
টাকা আমি নিলাম।
তারপর আপনার জন্য একটা খাবার কিনতে বের হলাম।
আনিস ভাই, মেরিনা আপা, আমার ঘুমটা ভেঙে গেল।
আমি আপনাদের আপ্যায়ন করতে পারলাম না।
আমার ভয়ংকর কষ্ট হচ্ছে।