কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখায় ‘বাঙালি বিলাস’
Published: 10th, May 2025 GMT
প্রতি বছরে মতো কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে এবারও থাকছে নানান আয়োজন। এ বছর কানের বাণিজ্যিক এই শাখাতে দেখানো হবে দেশের অন্যতম গুণী লেখক, চলচ্চিত্র সমালোচক ও নির্মাতা এবাদুর রহমানের সিনেমা ‘বাঙালি বিলাস’।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এবাদুর জানিয়েছেন, ১৩ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত তিনি ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বাঙালি বিলাস’ নিয়ে উপস্থিত থাকবেন। ১৮ মে এজেন্ট এবং ডিস্ট্রিবিউটরদেরকে ‘বাঙালি বিলাস’ ছবিটা মর্শে দ্যু ফিল্ম বিভাগে দেখানোর কথাও জানান তিনি।
এবাদুর রহমান পরিচালিত ‘বাঙালি বিলাস’ ছবিটির আন্তর্জাতিক নাম ‘ট্র্যাকটাস বেঙ্গালিয়াম’। সমসাময়িক বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ধারার বাইরে গিয়ে এটি নির্মাণ করেছেন এবাদুর।
বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় নির্মিত ১৯০ মিনিট দৈর্ঘ্যের ‘বাঙালি বিলাস’ ছবিটি যৌনতা, নারীবাদ, বিশ্বাসঘাতকতা এবং রাজনীতিকে একত্র করে গড়ে তুলেছে এক জটিল কিন্তু গভীরভাবে সংবেদনশীল সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা। নির্মাতা বলছেন- এখানে রয়েছে “ফিল্ম-উইদিন-এ-ফিল্ম” কাঠামো। যেখানে দুটি মুসলিম নারী চরিত্র—মিত্রা ও রুশতী—এক পুরুষতান্ত্রিক নির্মাতার হাত থেকে নিজেদের শরীর ও ভাষার নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ে নামে।
‘বাঙালি বিলাস’-এ অভিনয় করেছেন ভারতীয় অভিনেত্রী ঋ সেন। যিনি ভারতীয় নির্মাতা কিউ-এর ‘গান্ডু’-তে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও এবাদুরের এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন ফারহানা হামিদ, নাঈমা তাসনিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, ও আজাদ আবুল কালামসহ অনেকে।
সিনেমাটির চিত্রগ্রহণে ছিলেন রাওয়ান সায়েমা ও মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান। এটি সম্পাদনা করেছেন বার্লিনের অস্কার লোসার এবং ঢাকার ইকবাল কবির জুয়েল। ছবিটির শব্দ পরিকল্পনা করেছেন ফিনল্যান্ডের মিকা নিনিমা।
‘বাঙালি বিলাস’ নিয়ে নির্মাতা এবাদুর রহমান বলেন, ‘বাঙালি বিলাস’ শুধু একটি সিনেমা নয়—এটি একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া। এখানে নারী, শরীর ও বিশ্বাসের প্রশ্নকে নতুনভাবে হাজির করার চেষ্টা করেছি, যেখানে প্রথাগত ‘বাঙালি ছবি’র কাঠামোকে সচেতনভাবেই ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এবাদুর জানান, ‘বাঙালি বিলাস’ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিবেশক ও উৎসব আয়োজকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ন উৎসব চলচ চ ত র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।
নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।
আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।
লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।
শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।