আবারও জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই ডাক দেন। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ আমরা এখানে সমাবেশ করছি। আরেকটা সমাবেশ হচ্ছে ঢাকায়। দাবিটা কি, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা। দেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে চায় না। তারা দেশে ফ্যাসিবাদ বাকশাল কায়েম করেছে। প্রথম সংস্কার করেছেন জিয়াউর রহমান। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, অর্থনীতির আজকে যে ভিত্তি গার্মেন্ট খাত সেটিও জিয়াউর রহমানের অবদান। কেয়ারটেকার ব্যবস্থা এনেছেন খালেদা জিয়া। আজকে সবাই সবকিছু ভুলে যায়, বিদেশ থেকে এসে বড় বড় কথা বললে মানুষ ভুলে যাবে, তাই না।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন একটা কঠিন সময় পার করছি। আমি বলি অস্বাভাবিক সময় পার করছি। শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। তাই না! তাঁর প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। তারা চক্রান্ত করছে, যাতে তারা আবার দেশে তাদের রাজত্ব কায়েম করতে পারে। তাদের ষড়যন্ত্র কী সফল হবে? হবে না।’

১৩টি সাংগঠনিক জেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম বিভাগের হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন। তিন সংগঠনের যৌথ আয়োজনে এটিই এবারের প্রথম সমাবেশ। পর্যায়ক্রমে অন্য বিভাগেও এ ধরনের সমাবেশের আয়োজন করা হবে। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা পলোগ্রাউন্ড ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে জনসমাগম। এতে বিভিন্ন সড়কে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। সমাবেশে গানের পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তিও করা হয়। নেতাকর্মীরা বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে বাসে-ট্রাকে করে সমাবেশে যোগ দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর লাখ লাখ মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হাজার হাজার তরুণ প্রাণ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা পুরো জাতির ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। ২০ হাজার মানুষ হত্যা করেছেন। ১৭শ মানুষ গুম করে দিয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনও দেশে ফিরে আসতে পারেননি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারাগারে অন্তরীণ করে রেখেছিলেন। এখন সে অবস্থার অবসান হয়েছে, আমাদের তরুণ ভাইদের কারণে। তারেক রহমানের উদ্দেশ্য একটাই, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে কাউকে কিছু করতে দেব না। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ছেলে ওয়াসিম আকরাম শহীদ হয়েছেন। এই সরকার শহীদদের তালিকা করেছে। দুঃখের বিষয়, সেখানে ওয়াসিমের নাম নেই। তাঁর নাম যেন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে মন্তব্য করে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনের এই হাওয়া কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা শুনি, ৩১ দফার মধ্যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কথা অনেক আগে বলেছে বিএনপি। জনগণ ভোট দিলে আগামীতে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার গঠন করলে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। 

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের সঞ্চালনা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটির মেয়র ডা.

শাহাদাত হোসেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান নাজিম প্রমুখ। 

তামিম বললেন, আবার দেখা হবে

সমাবেশে এক পর্যায়ে মঞ্চে আসেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও চট্টগ্রামের সন্তান তামিম ইকবাল। তাঁকে মঞ্চে দেখে নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত হন। তামিম মূলত খেলাধুলা নিয়ে কথা বলেছেন। বলেন, তরুণদের জমায়েতে এত মানুষ দেখে তিনি খুবই খুশি। আবারও দেখা হবে বলে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম র জ ফখর ল ব এনপ ন ত কর দল র স গঠন ক ফখর ল ব এনপ রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীকে জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কার্যক্রম স্থগিত থাকায়, পরে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করায় (স্থগিত) আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যানের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন, অবৈধ অভিবাসন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিমান ও নৌ খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সম্প্রসারণের ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সময়মতোই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক।

প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, এই নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক নতুন ভোটার প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। গত ১৬ বছরের স্বৈরতন্ত্রের সময়ে টানা তিনটি ‘কাটাছেঁড়া’ নির্বাচনের কারণে তাঁরা ভোট দিতে পারেননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মুহাম্মদ ইউনূস জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় কার্যক্রম স্থগিত থাকায় এবং পরে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল (স্থগিত) করায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে লাখো মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে ‘জুলাই সনদ’ বাংলাদেশে একটি ‘নতুন সূচনা’ করেছে।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন যুক্তরাজ্যের সফররত মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান। তিনি জুলাই সনদ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরেন।

ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের অপব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তিনি নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁর সরকার নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আরও বেশি বাংলাদেশিকে বৈধ পথে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতে উৎসাহিত করছে তাঁর সরকার।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই নেতা মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তরুণেরা আশা-আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। তাঁদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গোপসাগরে গবেষণার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা জাহাজ কিনছে বাংলাদেশ।

ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান দুই দেশের উড়োজাহাজ যোগাযোগ আরও জোরদারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এয়ারবাস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারা কুক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ