জুয়াড়ি, মদ্যপ, বদমেজাজি তো কত লোকই হয়! তাদের নিয়ে কে আর আলোচনা-সমালোচনা করে? তবে পৃথিবী বিখ্যাত লেখক ফিওদর দস্তইয়েফ্​স্কির সেই সাধারণ তালিকায় নিশ্চিতভাবেই পড়বেন না। কারণ, তিনি এমন এক সাহিত্যিক, যাঁর সাহিত্য পাঠকের অনুভবের জগতে দীর্ঘ প্রতিধ্বনি তোলে। তাঁর লেখায় জীবনের বিচিত্র বিষয় এক বিস্তৃত উপত্যকা হয়ে ধরা দেয়। তাঁর উপন্যাসের চরিত্রগুলোর ‘যন্ত্রণা সয়ে যাওয়ার আর্তনাদ’ পাঠকের হৃদয়ে এমন এক অনুরণন তোলে, যা তাঁকে জীবনের অন্য প্রান্তে পৌঁছাতে চায়; এমন জায়গায়, যেটা তাঁর অভ্যস্ত পৃথিবী থেকে দূরের, অথচ তারই অন্তর্গত।

এই দস্তইয়েফ্​স্কিকে নতুন চোখে দেখতে শেখায় মালয়ালম ভাষার অনন্য উপন্যাস ওরু সংকীর্থনম পোলে—পেরুমপদভম শ্রীধরনের লেখা, যা জাভেদ হুসেনের অনুবাদে বাংলায় এসেছে ছাব্বিশ দিন: দস্তইয়েফ্​স্কির জুয়াড়ি লেখার আখ্যান নামে। উপন্যাসটি যেন প্রথম প্রেমের মতো ধীরে ধীরে পাঠকের মননে প্রবেশ করে এবং একসময় তাঁকে দস্তয়েভস্কি ও আন্না গ্রেগরিয়েভনা স্নিতকিনার ঘনিষ্ঠ, করুণ, জেদি ও প্রেমময় জগতে নিয়ে যায়, যেখানে জীবন ও সাহিত্যের সীমানা মিলেমিশে একাকার। কেবল মূল ভাষাতেই তিন লাখের বেশি কপি বিক্রি হওয়া এই বইয়ের ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তারই সাক্ষ্য দেয়।

সময় তখন দস্তইয়েফ্​স্কির বিরুদ্ধে। ঋণ ও হতাশায় জর্জরিত জীবনে হঠাৎ করেই ভর করে এক ভয়াবহ চাপ—নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জুয়াড়ি উপন্যাস না লিখে উঠতে পারলে তাঁর সব রচনার স্বত্ব চলে যাবে চতুর প্রকাশক স্তেল্লোফ্​স্কির হাতে। এই চুক্তির ফাঁদ থেকে বাঁচতে দস্তয়েভস্কি বাধ্য হন একজন স্টেনোগ্রাফারের সাহায্য নিতে। স্টেনোগ্রাফি সে সময়কার রাশিয়ায় একেবারেই নতুন বিষয়। পুরো দেশে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানে স্টেনোগ্রাফি শেখানো হচ্ছে। ফলে দস্তয়েভস্কির মনে সংশয় যে এই অচেনা পদ্ধতিতে কি আদৌ একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লেখা সম্ভব?

লেখালেখি দস্তয়েভস্কির কাছে ‘ধ্যানের মতো ব্যাপার। নীরব প্রার্থনার মতো। করতে হয় খুব গোপনে একা। অন্য কাউকে সঙ্গে নিলে এর পবিত্রতা নষ্ট হয়’। তবু সময়ের দাবিতে নিয়োগ পান এক তরুণী; মাত্র ২০ বছর বয়সী আন্না গ্রেগরিয়েভনা স্নিতকিনা। দস্তয়েভস্কির সব সংশয় ও অনিশ্চয়তা পেরিয়ে এই তরুণীর সহায়তায় শুরু হয় এক অসম লড়াই; মাত্র ২৬ দিনে, ১৮৬৬ সালের ৪ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে লেখা শেষ হয় জুয়াড়ি। এই লেখা শুধু দস্তয়েভস্কির মুক্তি এনে দেয়নি, সঙ্গে নিয়ে এসেছিল ভবিষ্যতের আশ্রয়—আন্না, যিনি পরবর্তীকালে হয়ে ওঠেন দস্তয়েভস্কির জীবনসঙ্গী এবং তাঁর সাহিত্যকর্মের নেপথ্য নায়িকা।

ফিওদর দস্তয়েভস্কির জীবনে এক মোড় ঘোরানো মুহূর্তে এসেছিলেন আন্না। ১৮৬৭ সালে, দস্তয়েভস্কির বয়স ৪৬ আর আন্নার মাত্র ২১। বয়সের এই ফারাক পেরিয়ে আন্না হয়ে উঠেছিলেন দস্তয়েভস্কির জীবনের পরম আশ্রয় ও সৌভাগ্যের প্রতীক। তাঁদের মাত্র ১৪ বছরের দাম্পত্যেই রচিত হয়েছে দস্তয়েভস্কির শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্মগুলো। গ্রন্থটিতে ধরা পড়ে এই মহান লেখকের অন্তরঙ্গ, ব্যক্তিগত এক প্রতিকৃতি। এখানে জানা যায়, নারীদের সঙ্গে তাঁর জটিল সম্পর্ক, বৈষয়িক জীবনের টানাপোড়েন, সংসারে তাঁর অসহায়তা আর সেই অনিবার্য জুয়াসক্তির পেছনের মানসিক দ্বন্দ্ব। সাহিত্যের এই মহান পথিকৃতের অন্তর্জীবনকে বুঝতে এই বই যেন এক স্বপ্নীল দরজা খোলে গভীর, মানবিক ও মর্মস্পর্শীভাবে।

দস্তয়েভস্কির জীবনে প্রেম এসেছে বহুবার। মারিয়া, আলেক্সান্দ্রা শুবার্ট, মার্থা ব্রাউন কিংবা আন্না করভিন ক্রুকোভস্কায়া—সবার সঙ্গেই ছিল তাঁর গভীর টান। তবু প্রতিটি সম্পর্ক শেষে তাঁর হৃদয় তছনছ হয়ে গেছে এক সর্বগ্রাসী শূন্যতায়। প্রেম, বিচ্ছেদ, অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা—সব মিলিয়ে তিনি যেন হয়ে উঠেছিলেন এক চিরঋণী আত্মা। আন্না অনুভব করেছেন, ‘মানুষটা নিজের বুকের মধ্যে একটা আগ্নেয়গিরি বয়ে বেড়াচ্ছে। কারও সঙ্গে কথা বলে না। কারও সঙ্গে বন্ধনে জড়ায়
না। সবার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। সবকিছু থেকে। এমনকি এই পৃথিবী থেকেও।’ তারপরও দস্তয়েভস্কি ছিলেন সৌন্দর্যের অনুরাগী। রুলেতের চাকা ঘুরে শেষ কোপেকটিও হারানোর পর রাতের চাঁদ দেখে তাঁর মনে জাগে—‘নীরবতার সুরে হৃদয় ভরে আছে’। এই হৃদয়ের তালা খোলার চাবি সত্যিই কি কেউ পেয়েছিলেন? পেয়েছিলেন কি আন্না, নাকি সেই তালা চিরকালই রহস্যময় থেকে গেছে? এই উত্তর খুঁজতে হলে পাঠককে এগোতে হবে বইটির শেষ ছত্র পর্যন্ত। জাভেদ হুসেনের ঝরঝরে অনুবাদে উঠে এসেছে সেই অনুরণন, যা আমাদের নিয়ে যায় সেই অন্তর্লোকের দরজায়, যেখানে আন্না স্নিতকিনার ভালোবাসা, সহানুভূতি ও ধৈর্য এক ক্লান্ত সাহিত্যিকের আস্থার আশ্রয়ে রূপ নেয়। প্রেম, যন্ত্রণা ও সাহিত্য মিলে সেখানে গড়ে ওঠে এক অনন্য মানবিক অভিজ্ঞতা। দস্তয়েভস্কির হৃদয়ঘন গল্প যেন আরও স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে, যেখানে প্রতিটি শব্দ জুড়ে থাকে প্রেমের দীর্ঘশ্বাস আর সাহিত্যের অমোচনীয় ছাপ।

ছাব্বিশ দিন: দস্তইয়েফ্​স্কির জুয়াড়ি লেখার আখ্যান

পেরুমপদভম শ্রীধরন

অনুবাদ: জাভেদ হুসেন

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন

প্রচ্ছদ: আরাফাত করিম; মূল্য: ৪৬০

পৃষ্ঠা: ১৭৬; প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৫

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপন য স প রক শ জ বন র

এছাড়াও পড়ুন:

আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

এশিয়া কাপে আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি, নাপোলি, বার্সেলোনা।

সিপিএল: কোয়ালিফায়ার-১

গায়ানা-সেন্ট লুসিয়া
সকাল ৬টা, স্টার স্পোর্টস ২

এশিয়া কাপ ক্রিকেট

আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা
রাত ৮-৩০ মি., টি স্পোর্টস ও নাগরিক

অ্যাথলেটিকস

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ
বেলা ৩টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ

কোপেনহেগেন-লেভারকুসেন
রাত ১০-৪৫ মি., সনি স্পোর্টস ২

ম্যানচেস্টার সিটি-নাপোলি
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ১

নিউক্যাসল-বার্সেলোনা
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ২

ফ্রাঙ্কফুর্ট-গালাতাসারাই
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ