জুলাই গণহত্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটি কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। 

এর পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকের পর গত রাতে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই অভ্যুত্থানের নেতাকর্মীর নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে বিএনপি দূরত্ব বজায় রাখলেও, চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল, এবি পার্টি, লেবার পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ জুলাই অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন খোলাখুলি সমর্থন দিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়। এনসিপির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা গণঅধিকার পরিষদ পল্টন মোড়ে গতকালও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। 

জামায়াতে ইসলামীর মধ্যম সারির নেতা এবং কর্মী-সমর্থক ব্যাপক সংখ্যায় অংশ নিলেও, দলটি আগের দু’দিন আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানায়নি। গতকাল রাত ১০টার দিকে দলটির আমির ডা.

শফিকুর রহমান ফেসবুক পোস্টে জানান, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তি ঐক্যবদ্ধ। জনতা দাবি আদায় করে ঘরে ফিরবে। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি শাহবাগে গিয়ে উল্লাসকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। 

আগের রাতে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল বিকেলে শাহবাগে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে হয় গণজমায়েত। একই দাবিতে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় একই কর্মসূচি পালন করা হয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি আদায়ে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে এলাকায় আগের রাতে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করা হলেও, এনসিপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের আহ্বানে তা তুলে নেওয়া হয়।

নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের বিরোধী বিএনপির সমমনা দলগুলোও সরাসরি  শাহবাগে যোগ দেয়নি। গত আগস্ট থেকেই বিএনপি আইন সংশোধনের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি করছিল। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, এখন যারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুলছে, কয়েক দিন পর তারাই যে বিএনপিকে নিষিদ্ধের দাবি করবে না, নিশ্চয়তা কী! তবে চট্টগ্রামে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৮ কোটি মানুষের কেউ আওয়ামী লীগকে চায় না। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি যতটা না আইনগত, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বিষয়। তাই রাজনৈতিক দল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের মতৈক্য প্রয়োজন। নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সংকটের সমাধান করবে না।

জানা যায়, এর আগে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা এসেছিল। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার পর দলটিকে নিষিদ্ধ করেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এবারই প্রথম আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা এলো।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ জ ম য় ত ইসল ম এনস প র জন ত ন ষ দ ধ কর উপদ ষ ট গতক ল আওয় ম ব এনপ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে তুরস্ক যাচ্ছেন জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ইস্তাম্বুলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ‘ব্যক্তিগতভাবে’ দেখা করতে প্রস্তুত।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তুরস্কে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনার জন্য পুতিনের প্রস্তাবে ইউক্রেনকে সম্মত হতে বলার কিছুক্ষণ পরেই এক্সে এক পোস্টে জেলেনস্কি একথা বলেন।

তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ড দীর্ঘায়িত করার কোনো অর্থ নেই। আমি বৃহস্পতিবার তুর্কিতে পুতিনের জন্য অপেক্ষা করব। ব্যক্তিগতভাবে”।

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি বসতে প্রস্তুত ইউক্রেন: জেলেনস্কি

কিয়েভের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব পুতিনের

তবে এর আগে জেলেনস্কি বলেছিলেন, তার দেশ রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত, তবে কেবল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরেই।

শনিবার ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের নেতারা ইউক্রেনে বৈঠকের পর সোমবার থেকে রাশিয়াকে নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। অন্যথায় নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলেন। 

এরপর রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন আগামী ১৫ মে তুরস্কে কিয়েভের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন। 

রবিবার ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বলেন, “ইউক্রেনের ‘অবিলম্বে’ এই বিষয়ে সম্মত হওয়া উচিত এবং এটি যুদ্ধের অবসানের কোনো উপায় আছে কিনা তা স্পষ্ট করে দেবে।”

তিনি আরো বলেন, “অন্তত তারা (ইউক্রেন) নির্ধারণ করতে সক্ষম হবে যে কোনো চুক্তি সম্ভব কিনা এবং যদি তা না হয়, তবে ইউরোপীয় নেতারা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সবকিছু কোথায় দাঁড়িয়েছে তা জানতে পারবে এবং সেই অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারবে।

জেলেনস্কিকে উদ্দেশ্যে করে ট্রাম্প আরো বলেন, “এখনই বৈঠক করুন!”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ