প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল শুরু
Published: 11th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করাসহ তিন দফা দাবিতে রোববার ভোর রাত ৪টা থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে ছিলেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহতরা। প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর রোববার রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে ব্যারিকেড সরিয়ে রাস্তা খুলে দিয়েছে পুলিশ। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এখনো আন্দোলনকারীদের একটা অংশ রাস্তায় অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যান চলাচল স্বাভাবিক করতে আমরা ব্যারিকেড খুলে দিয়েছি। এখন স্বাভাবিকভাবেই যান চলাচল করছে। আন্দোলনকারীরা কয়েকটা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছে। এখনো কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। তারা যদি রাস্তা না ছাড়ে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’
টানা তিন দিনের বিক্ষোভ–অবরোধের পর গতকাল শনিবার রাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জানায় উপদেষ্টা পরিষদ। এরপর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অন্যান্য দলের নেতা–কর্মীরা শাহবাগ ছাড়লেও সেখানে অবস্থান অব্যাহত রাখেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করা ছাড়াও জুলাই সনদ ঘোষণা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবিতে ভোররাত ৪টা থেকে তাদের এই অবস্থান শুরু হয়। রোববার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, শাহবাগ মোড়ের চারটি প্রবেশপথে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছেন আহত যোদ্ধা ও জুলাইয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সড়কের মাঝখানে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে তাঁরা সেখানে অবস্থান করছেন। এতে শাহবাগ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের যান চলাচল বন্ধ থাকে।
এ সময় শাহবাগ মোড় অবরোধ থাকায় ফার্মগেট থেকে শাহবাগমুখী গাড়িগুলো হেয়ার রোড হয়ে মৎস্য ভবন দিয়ে এবং সায়েন্স ল্যাব থেকে আসা গাড়িগুলো কাঁটাবন দিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। তবে রোববার বুদ্ধপূর্ণিমার সরকারি ছুটি থাকায় সড়কে যানবাহনের চাপ তুলনামূলক কম ছিল।
এর আগে আজ বেলা আড়াইটার দিকে শাহবাগে এসে আহতদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন উপকমিশনার মাসুদ আলম। সে সময় তাঁর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার ট্রাফিক পরিদর্শক শাহবাগ মোড়ের বাঁ পাশের লেনগুলো ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলেও তা মানেননি আন্দোলনকারীরা।
তখন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত আবু হাসান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘তিন দফা দাবি নিয়ে আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। আমাদের দাবি আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে, জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই সনদ দিতে হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই তিন দাবির বাস্তবায়ন ছাড়া আমরা ঘরে ফিরব না।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আরেকজন আহত মাসুদ রানা বলেন, ‘জুলাই সনদ না পেলে ভবিষ্যতে আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেওয়ার সুযোগ থেকে যায়। আমরা অবিলম্বে জুলাই সনদের ঘোষণা চাই। একই সঙ্গে আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।’
সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে সেখানে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি আন্দোলনরত আহতদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা দেখলাম সরকার বিচারে কালক্ষেপণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের যারা প্রধান ভূমিকায় ছিল, তাদের গ্রেপ্তার না করে ক্ষেত্রবিশেষ নিরাপদে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের যারা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, তার দায়ভার অবশ্যই অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের বলব না সরকারের সিদ্ধান্ত মানেন। একবারও বলব না এখান থেকে চলে যান। তবে আমি এটা বলব, জুলাই নিয়ে কাজ করছে এমন ২০টি সংগঠন সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রেখেছি। তবে আপনারা না মানলে সেটি আপনাদের সিদ্ধান্ত। সরকার ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র না দেয়, তাহলে আবার আমরা রাজপথে নেমে আসব। প্রয়োজনে আমরা আরও বৃহৎ আন্দোলনে নামব। আমরা সরকারের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই আপস করিনি। আমি আপনাদের কাছে আমার অবস্থান স্পষ্ট করলাম। বাকি সিদ্ধান্ত আপনারা নেবেন।’
এরপরও আন্দোলনকারীরা অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। রাত ৯টার আগে যান চলাচলের জন্য সড়ক খুলে দেয় পুলিশ।
আরও পড়ুনতিন দফা দাবি বাস্তবায়ন ছাড়া শাহবাগ ছাড়বেন না আন্দোলনকারীরা৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর শ হব গ ম ড় জ ল ই সনদ অবস থ ন আহতদ র অবর ধ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
র্যাব পুনর্গঠন হচ্ছে, উপদেষ্টার নেতৃত্বে কমিটি
এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) পুনর্গঠন পুনর্গঠন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য একজন উপদেষ্টার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার (১২ মে) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “আজকের বৈঠকে অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। র্যাব পুনর্গঠন নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। র্যাব পুনর্গঠন কিভাবে হবে, এটা এ নামে থাকবে কিনা, এই ফোর্স থাকবে কিনা, কিভাবে অর্গানাইজ করা হবে-সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এজন্য আমরা একটা কমিটি করে দিয়েছি।”
আরো পড়ুন:
পুলিশের হাতে আর মারণাস্ত্র থাকবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ
দায়ীদের শাস্তি পেতেই হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
উপদেষ্টা বলেন, “জেনারেল হাফিজের নেতৃত্বে একটা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সদস্য করে দেওয়া হয়েছে কমিটিতে। পাঁচ সদস্যের কমিটি থাকবে। প্রয়োজনে এতে কো-অপ্ট করতে পারবে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: রাইজিংবিডি
পুলিশের হাতে আর মারণাস্ত্র থাকবে না
এখন থেকে পুলিশের হাতে আর মারণাস্ত্র থাকবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুলিশের হাতে যাতে আর কোনো মারণাস্ত্র না থাকে। এগুলো তাদের জমা দিতে হবে। কোনো মারণাস্ত্র পুলিশের হাতে থাকবে না। অস্ত্র থাকবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যদের হাতে। তাদের কাজ কিন্তু অন্য পুলিশের থেকে একটু ভিন্ন।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ