আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করাসহ তিন দফা দাবিতে রোববার ভোর রাত ৪টা থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে ছিলেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহতরা। প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর রোববার রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে ব্যারিকেড সরিয়ে রাস্তা খুলে দিয়েছে পুলিশ। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এখনো আন্দোলনকারীদের একটা অংশ রাস্তায় অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যান চলাচল স্বাভাবিক করতে আমরা ব্যারিকেড খুলে দিয়েছি। এখন স্বাভাবিকভাবেই যান চলাচল করছে। আন্দোলনকারীরা কয়েকটা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছে। এখনো কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। তারা যদি রাস্তা না ছাড়ে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’

টানা তিন দিনের বিক্ষোভ–অবরোধের পর গতকাল শনিবার রাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জানায় উপদেষ্টা পরিষদ। এরপর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অন্যান্য দলের নেতা–কর্মীরা শাহবাগ ছাড়লেও সেখানে অবস্থান অব্যাহত রাখেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করা ছাড়াও জুলাই সনদ ঘোষণা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবিতে ভোররাত ৪টা থেকে তাদের এই অবস্থান শুরু হয়। রোববার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, শাহবাগ মোড়ের চারটি প্রবেশপথে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছেন আহত যোদ্ধা ও জুলাইয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সড়কের মাঝখানে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে তাঁরা সেখানে অবস্থান করছেন। এতে শাহবাগ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের যান চলাচল বন্ধ থাকে।

এ সময় শাহবাগ মোড় অবরোধ থাকায় ফার্মগেট থেকে শাহবাগমুখী গাড়িগুলো হেয়ার রোড হয়ে মৎস্য ভবন দিয়ে এবং সায়েন্স ল্যাব থেকে আসা গাড়িগুলো কাঁটাবন দিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। তবে রোববার বুদ্ধপূর্ণিমার সরকারি ছুটি থাকায় সড়কে যানবাহনের চাপ তুলনামূলক কম ছিল।

এর আগে আজ বেলা আড়াইটার দিকে শাহবাগে এসে আহতদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন উপকমিশনার মাসুদ আলম। সে সময় তাঁর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানার ট্রাফিক পরিদর্শক শাহবাগ মোড়ের বাঁ পাশের লেনগুলো ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলেও তা মানেননি আন্দোলনকারীরা।

তখন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত আবু হাসান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘তিন দফা দাবি নিয়ে আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। আমাদের দাবি আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে, জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই সনদ দিতে হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই তিন দাবির বাস্তবায়ন ছাড়া আমরা ঘরে ফিরব না।’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আরেকজন আহত মাসুদ রানা বলেন, ‘জুলাই সনদ না পেলে ভবিষ্যতে আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেওয়ার সুযোগ থেকে যায়। আমরা অবিলম্বে জুলাই সনদের ঘোষণা চাই। একই সঙ্গে আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।’

সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে সেখানে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি আন্দোলনরত আহতদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা দেখলাম সরকার বিচারে কালক্ষেপণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের যারা প্রধান ভূমিকায় ছিল, তাদের গ্রেপ্তার না করে ক্ষেত্রবিশেষ নিরাপদে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের যারা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, তার দায়ভার অবশ্যই অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের বলব না সরকারের সিদ্ধান্ত মানেন। একবারও বলব না এখান থেকে চলে যান। তবে আমি এটা বলব, জুলাই নিয়ে কাজ করছে এমন ২০টি সংগঠন সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রেখেছি। তবে আপনারা না মানলে সেটি আপনাদের সিদ্ধান্ত। সরকার ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র না দেয়, তাহলে আবার আমরা রাজপথে নেমে আসব। প্রয়োজনে আমরা আরও বৃহৎ আন্দোলনে নামব। আমরা সরকারের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই আপস করিনি। আমি আপনাদের কাছে আমার অবস্থান স্পষ্ট করলাম। বাকি সিদ্ধান্ত আপনারা নেবেন।’

এরপরও আন্দোলনকারীরা অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। রাত ৯টার আগে যান চলাচলের জন্য সড়ক খুলে দেয় পুলিশ।

আরও পড়ুনতিন দফা দাবি বাস্তবায়ন ছাড়া শাহবাগ ছাড়বেন না আন্দোলনকারীরা৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর শ হব গ ম ড় জ ল ই সনদ অবস থ ন আহতদ র অবর ধ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ন্যায়বিচার হয়েছে, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ: সালাহউদ্দিন আহমদ

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় যে রায় হয়েছে, তাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই বিচার, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ।

আজ সোমবার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে আসামিদের অপরাধের তুলনায় এই সাজা যথেষ্ট কম। কিন্তু আইনে এর ওপরে কোনো সাজা নাই।

আজ বেলা তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই প্রতিক্রিয়া জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সোমবার এই রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে কয়েকটি জিনিস প্রমাণিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার যত শক্তিশালী হোক, যত দীর্ঘদিনই রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধভাবে পরিচালিত করুক, ক্ষমতা ভোগ করুক, একদিন না একদিন আদালতের কাঠগড়ায় তাঁদের দাঁড়াতেই হবে।

আরও যেসব মামলা আছে, সেই মামলাগুলোতেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই বিচার অপরাধের তুলনায় যথেষ্ট নয়। কিন্তু এটা শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নয়, সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ। ভবিষ্যতে যাতে এই রাষ্ট্রে কেউ আর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম না করতে পারে, ফ্যাসিস্ট না হয়ে উঠতে পারে, একনায়কতন্ত্র যাতে প্রতিষ্ঠা না হয়, তার একটি উদাহরণ। এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা শিক্ষা। শুধু অতীতের জন্য বিচার নয়, এটা মনে রাখতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ