ভারত-পাকিস্তান আরও বিপজ্জনক এক যুগে ঢুকে পড়েছে
Published: 11th, May 2025 GMT
(ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে। আসফান্দয়ার মিরের এই নিবন্ধে সংঘাতের নতুন এই ধরনের পেছনে ভারত ও পাকিস্তান কার কতটা দায় রয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। নিবন্ধটি যুদ্ধবিরতির আগে প্রকাশিত। এরপরও প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় এর বাংলা ভাষান্তর প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো।)
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন সংঘর্ষ বাধে, তখন বিশ্ব সেটিকে ধর্ম ও কাশ্মীরকে ঘিরে বহুদিন ধরে চলে আসা মীমাংসাহীন দ্বন্দ্বযুদ্ধের আরেকটি নতুন পর্ব হিসেবে দেখে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি যেমন এটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘কাশ্মীরে তারা হাজার বছর ধরে যুদ্ধ করে আসছে’ এবং ‘সম্ভবত তার চেয়েও বেশি সময় ধরে’।
এই যুক্তিটা বোধগম্য। কেননা, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান এবং হিন্দুপ্রধান ভারত কয়েকটি যুদ্ধ ও বহুবার সংঘর্ষে জড়ালেও দুই দেশের মধ্যকার সংঘর্ষ শেষ পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা ও কূটনীতির টেবিলে মীমাংসা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তাতে মধ্যস্থতা করেছে। এমনকি দুই দেশের মধ্যে যখন ভীষণ লড়াই বেধেছে, সে সময়েও এই প্রতিষ্ঠিত প্রহরীরা দুই পক্ষকে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের মতো অকল্পনীয় জায়গায় পৌঁছাতে দেয়নি।
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পরিচিত এই চক্রকে এখন অতীত বলে মনে হচ্ছে। গত মাসে কাশ্মীরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, যাতে ২৬ জন নিহত হয়েছেন, পর দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিকতম সামরিক উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। কিন্তু এই উত্তেজনা দ্রুত সামরিক সংঘাতে রূপ পাওয়ায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে ভারত-পাকিস্তান বৈরিতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় ও বিপজ্জনক দিকে মোড় নিয়েছে। দুই প্রতিবেশীকে ধ্বংসাত্মক সংঘর্ষে জড়ানো থেকে নিবৃত্ত রাখার মতো কূটনৈতিক তৎপরতার পরিসর সীমিত হয়ে গেছে।
এই পরিবর্তনটা দুই দেশের একেবারে ভিন্নমুখী পথচলার মধ্যে শনাক্ত করা যায়।
ভারত এখন ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতকে শুধু একটি মহান দেশ হিসেবে নয়, এক সুমহান প্রাচীন সভ্যতার এমন এক গৌরবময় উত্তরসূরি হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করতে চান, বিশ্বমঞ্চে যেটি কিনা তার পদচিহ্ন রেখেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি দিল্লির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটা আপসহীন মনোভাব তৈরি করেছে।
এতে করে পাকিস্তানকে শুধু ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী প্রতিবেশী হিসেবে নয়, বরং ভারতের ন্যায়সংগত জাগরণে বিশাল হুমকি সৃষ্টিকারী দেশ হিসেবে দেখার প্রবণতা বেড়েছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের (মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল, দুই দেশই তাদের নিজেদের অংশ বলে) ওপর পাকিস্তানের দাবি এবং ভারতবিরোধী সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের সমর্থন—ভারত আর সহ্য করবে না।
অন্যদিকে পাকিস্তান তাতে করে চীনের প্রভাব বলয়ে আরও বেশি ঝুঁকে যাবে। এতে করে ২৫ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ আরও কমে যাবে। আর এই জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশটিই এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাজে ফলাফল নিয়ে আসবে এবং ভারতের চ্যালেঞ্জগুলো আরও গভীর হবে।অন্যদিকে পাকিস্তান দুই দশক ধরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাসংকটে জর্জরিত। পাকিস্তানে একটি প্রতিষ্ঠানই সর্বময় ক্ষমতাধারী। দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনী নীতিনির্ধারণে কর্তৃত্ব করে এবং তাদের হাতে রয়েছে উল্লেখ করার মতো প্রচলিত যুদ্ধ ও পারমাণবিক সামরিক শক্তি। বিপর্যয়ের পরও, আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা এখনো রয়েছে পাকিস্তানের। কাশ্মীরের মতো বিষয়গুলো পাকিস্তানের জাতীয় পরিচয়ের একেবারে কেন্দ্রীয় বিষয়, এসব বিষয়ে ইসলামাবাদ দিল্লির সঙ্গে আপস করতে রাজি নয়।
গত কয়েক দশকে, পাকিস্তানের নানা উসকানির মুখেও ভারতকে সাধারণত সংযম প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। একটা সাম্যাবস্থা বজায় রাখতে সেটা সহায়তা করত। এমনকি ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হামলায় ১৬৬ জন নিহত হওয়ার পরও, ভারত শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে সংযত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল।
মোদির আমলে ভারতের আগের অবস্থানটা বদলে গেছে। গত এক দশকে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক পরিসরে একঘরে করার কৌশল তিনি নিয়েছেন। এর পাশাপাশি গোপন অভিযান, অন্তর্ঘাত ও লক্ষ্যবস্তু করে হত্যার ঘটনাও ভারত ঘটাচ্ছে। একই সময়ে পাকিস্তান এবং নির্দিষ্ট করে দেশটির সেনাবাহিনী তাদের ঐতিহ্যের বাইরে বেরিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য ভারতবিরোধী অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিল। ২০১৯ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর পাকিস্তান অনেক বেশি সংযত আচরণ করে, ২০২১ সালে যুদ্ধবিরতি পুনরায় চালু করে। কিন্তু এর পর থেকে ভারত তার পথ বদল করে।
এমনকি যদি দুই পক্ষ বর্তমান উত্তেজনা থেকে সরে আসে, এরপরও ভারত খুব স্পষ্টভাবে পাকিস্তানকে দীর্ঘমেয়াদি চাপের মধ্যে রাখার কৌশল অবলম্বন করবে। ভারতের লক্ষ্য হচ্ছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেওয়া এবং শক্তির মূল কেন্দ্র সেনাবাহিনীর অপূরণীয় ক্ষতি করা। গত মাসে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে, ভারতের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের চূড়ান্ত ধরনের কঠোর অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তাঁরা বলেছেন, পাকিস্তান একটি ব্যর্থ ও উচ্ছৃঙ্খল রাষ্ট্র। ভারতকে অবশ্যই পাকিস্তানকে ধ্বংসের পথ কার্যকরভাবে খুঁজে বের করতে হবে।
ভারতের কৌশলগত এই পরিবর্তন পাকিস্তান বুঝতে পেরেছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আশা ছেড়ে দিয়ে তারা দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অশুভ বিষয় হচ্ছে, এই সংঘাত সেই গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচের ওপর হুমকি তৈরি করছে, এত দিন ধরে যেটা সংঘাতের বৃত্ত তৈরি করতে বাধা দিয়ে এসেছে। গত মাসে ভারত ১৯৬০ সালের করা পানিচুক্তি স্থগিত করে। সিন্ধু নদী পাকিস্তানের পানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পাকিস্তান চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে ঘোষণা দিয়ে ১৯৭২ সালের চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দেয়। এই চুক্তির বলে ভাগ হয়ে যাওয়া কাশ্মীরে একটা সীমান্ত প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
দক্ষিণ এশিয়ার সংকট সমাধানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ক্রমেই কমে আসছে। একসময় ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের কাছেই যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিশ্বাসযোগ্য মধ্যস্থতাকারী। ভারত-পাকিস্তানকে কয়েকবার যুদ্ধের প্রান্তসীমা থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল ওয়াশিংটন। ১৯৯৯ সালে, কাশ্মীরে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ থামাতে ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ২০০১ সালে ভারতের আইনসভায় সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের ত্বরিত কূটনীতিতে উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছিল। ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দুই দেশের মধ্যকার সামরিক উত্তেজনা প্রশমনে এবং এ ঘটনার পেছনে দায়ীদের কয়েকজনকে বিচারের আওতায় আনতে সহায়তা করেছিল।
কিন্তু আজ সেই ‘সৎ মধ্যস্থতাকারী’ ভূমিকার সম্ভাবনা ক্রমেই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন মূলত বেইজিংয়ের প্রভাব মোকাবিলায় নয়াদিল্লিকে আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ হিসেবে পাশে পেতে চাওয়ায় ভারত-পাকিস্তান ইস্যু থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানালেও, তাদের মনোযোগ সীমাবদ্ধ থেকেছে বাণিজ্যযুদ্ধ, ইউক্রেন ও গাজায় সংঘাত এবং ইরানের সঙ্গে কূটনীতিতে। তদুপরি নয়াদিল্লি এখন তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকে পাকিস্তানের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে করে এবং ইসলামাবাদও পশ্চিমা দেশের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতায় সন্দিহান। ফলে একসময়কার কার্যকর যোগাযোগ চ্যানেলগুলোও এখন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
কিন্তু বর্তমানে সেই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করার সম্ভাবনা ক্রমেই ফিকে হয় গেছে। বাইডেন প্রশাসন দিল্লিকে প্রশান্ত রাখার জন্য ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় নিজেদের দূরে রেখেছিল। এর কারণ হলো চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওয়াশিংটন ভারতকে পাশে চেয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন নরেন্দ্র মোদির প্রতি জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করলেও তাদের মূল মনোযোগের কেন্দ্র বাণিজ্যযুদ্ধ, ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ এবং ইরানের সঙ্গে কূটনীতি।
এ ছাড়া তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকে ভারত আর স্বাগত জানাবে না, কারণ সেটাকে পাকিস্তানের প্রতি পক্ষপাত বলে মনে করবে। ভারতের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্ককে পাকিস্তান অবিশ্বাসের চোখে দেখে। ফলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমটাও (যেটা একসময় গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে ভূমিকা পালন করত) এখন অকেজো হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে এখন এটা বুঝতে হবে যে তার গুরুত্বপূর্ণ একটা স্বার্থ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এশিয়াতে আমেরিকার ভবিষ্যতের জন্য ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহে এটা সত্য। মার্কিন প্রশাসনের কেউ কেউ হয়তো ভারতকে আরও একপাক্ষিকভাবে সমর্থন দেওয়ার এবং পাকিস্তানের সঙ্গে পুরোপুরি গুটিয়ে নেওয়ার অবস্থান নিতে পারেন। কিন্তু চীনের সঙ্গে ভারসাম্য, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তায় বড় অবদানকারী এবং বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ভারতের কার্যকারিতা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়বে; যদি ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যয়বহুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনন্তকাল ধরে আটকে থাকে।
অন্যদিকে পাকিস্তান তাতে করে চীনের প্রভাব বলয়ে আরও বেশি ঝুঁকে যাবে। এতে করে ২৫ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ আরও কমে যাবে। আর এই জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশটিই এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাজে ফলাফল নিয়ে আসবে এবং ভারতের চ্যালেঞ্জগুলো আরও গভীর হবে।
আসফান্দয়ার মির যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত স্টিমসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ ফেলো।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ বন দ ব অবস থ ন ক টন ত স ঘর ষ র জন ত র জন য র ওপর ভ রতক
এছাড়াও পড়ুন:
আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা
টেলিভিশনকে বাংলায় বলা হয় ‘দূরদর্শন’। মাত্র কয়েক বছর আগেও এটি সত্যিই ছিল দূরদর্শনের মাধ্যম—দূরের কোনো ঘটনা চোখের সামনে এনে দেওয়ার একটি যন্ত্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে টিভির সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে আজকাল টিভি হয়ে উঠেছে একটি ‘স্মার্ট হাব’, যেখানে সিনেমা দেখা, গেম খেলা, ভিডিও কল করা, এমনকি বাড়ির অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক টিভিগুলোর সুবিধা কেবল ছবি বা সাউন্ডে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এখন ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স।
স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেমবর্তমান প্রজন্মের টিভিগুলো শুধু নাটক কিংবা সিনেমা দেখার একটি স্ক্রিন নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট ডিভাইস। স্মার্ট টিভিতে অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) হিসেবে টাইজেন, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, রোকু টিভি এবং ওয়েবওএস ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই সিস্টেমগুলোর মাধ্যমেই বর্তমান যুগের টিভিগুলো হয়ে উঠছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর। ব্যবহারকারীরা এখন চাইলেই স্মার্ট টিভিগুলোতে নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্পটিফাই, অ্যামাজন প্রাইম কিংবা যেকোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মও সরাসরি উপভোগ করতে পারেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘অ্যাপ স্টোর ইন্টিগ্রেশন’। টিভিতেই এখন মোবাইলের মতো অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। ওয়েদার অ্যাপ, গেমস, নিউজ—এমনকি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপও ব্যবহার করা যায় টিভির বড় স্ক্রিনে।
ভয়েস কন্ট্রোল: কথা বলেই নিয়ন্ত্রণরিমোট খোঁজার ঝামেলা এখন যেন অতীত। আগে টিভির সবকিছু রিমোট দ্বারা পরিচালিত হলেও এখনকার আধুনিক টিভিগুলোতে আছে ভয়েস কন্ট্রোল—যেখানে ব্যবহারকারীর ভয়েস দ্বারাই টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই প্রযুক্তি বিক্সবি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে কাজ করে। এর পাশাপাশি কিছু হাই-এন্ড মডেলে রয়েছে জেসচার কন্ট্রোল—যেখানে হাত নাড়লেই টিভি রেসপন্স করে। টিভি চালু-বন্ধ করা, চ্যানেল পরিবর্তন—এমনকি ভলিউম বাড়ানো-কমানোর মতো কাজও করা যায় হাতের ইশারায়। এ ক্ষেত্রে গ্যালাক্সি ওয়াচের কথা বলা যায়। এটি হাতের নড়াচড়াকে শনাক্ত করে এসব কমান্ড কার্যকর করে।
মাল্টি-ডিভাইস কানেকটিভিটি: এক স্ক্রিনে সব সংযোগবর্তমানে টিভি শুধু সম্প্রচার মাধ্যম নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট। মোবাইল ফোন, স্পিকার, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল—সব ডিভাইস এখন টিভির সঙ্গে সহজেই সংযুক্ত করা যায়।
বেশির ভাগ স্মার্ট টিভিতে রয়েছে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, এইচডিএমআই এআরসি, এয়ার প্লে, মিরাকাস্টসহ বিভিন্ন সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ফোনের ছবি, ভিডিও বা প্রেজেন্টেশন মুহূর্তেই বড় স্ক্রিনে শেয়ার করতে পারেন। সেই সঙ্গে আধুনিক টিভিগুলোতে রয়েছে গেমারদের জন্য এইচডিএমআই ২.১ পোর্ট এবং কম ইনপুট ল্যাগযুক্ত ডিসপ্লে, যা গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে করে তোলে আরও স্মুথ।
আধুনিক টিভিগুলো ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স