(ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে। আসফান্দয়ার মিরের এই নিবন্ধে সংঘাতের নতুন এই ধরনের পেছনে ভারত ও পাকিস্তান কার কতটা দায় রয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। নিবন্ধটি যুদ্ধবিরতির আগে প্রকাশিত। এরপরও প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় এর বাংলা ভাষান্তর প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো।)

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন সংঘর্ষ বাধে, তখন বিশ্ব সেটিকে ধর্ম ও কাশ্মীরকে ঘিরে বহুদিন ধরে চলে আসা মীমাংসাহীন দ্বন্দ্বযুদ্ধের আরেকটি নতুন পর্ব হিসেবে দেখে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি যেমন এটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘কাশ্মীরে তারা হাজার বছর ধরে যুদ্ধ করে আসছে’ এবং ‘সম্ভবত তার চেয়েও বেশি সময় ধরে’।

এই যুক্তিটা বোধগম্য। কেননা, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান এবং হিন্দুপ্রধান ভারত কয়েকটি যুদ্ধ ও বহুবার সংঘর্ষে জড়ালেও দুই দেশের মধ্যকার সংঘর্ষ শেষ পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা ও কূটনীতির টেবিলে মীমাংসা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তাতে মধ্যস্থতা করেছে। এমনকি দুই দেশের মধ্যে যখন ভীষণ লড়াই বেধেছে, সে সময়েও এই প্রতিষ্ঠিত প্রহরীরা দুই পক্ষকে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের মতো অকল্পনীয় জায়গায় পৌঁছাতে দেয়নি।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পরিচিত এই চক্রকে এখন অতীত বলে মনে হচ্ছে। গত মাসে কাশ্মীরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, যাতে ২৬ জন নিহত হয়েছেন, পর দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিকতম সামরিক উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। কিন্তু এই উত্তেজনা দ্রুত সামরিক সংঘাতে রূপ পাওয়ায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে ভারত-পাকিস্তান বৈরিতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় ও বিপজ্জনক দিকে মোড় নিয়েছে। দুই প্রতিবেশীকে ধ্বংসাত্মক সংঘর্ষে জড়ানো থেকে নিবৃত্ত রাখার মতো কূটনৈতিক তৎপরতার পরিসর সীমিত হয়ে গেছে।

এই পরিবর্তনটা দুই দেশের একেবারে ভিন্নমুখী পথচলার মধ্যে শনাক্ত করা যায়।

ভারত এখন ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতকে শুধু একটি মহান দেশ হিসেবে নয়, এক সুমহান প্রাচীন সভ্যতার এমন এক গৌরবময় উত্তরসূরি হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করতে চান, বিশ্বমঞ্চে যেটি কিনা তার পদচিহ্ন রেখেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি দিল্লির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটা আপসহীন মনোভাব তৈরি করেছে।

এতে করে পাকিস্তানকে শুধু ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী প্রতিবেশী হিসেবে নয়, বরং ভারতের ন্যায়সংগত জাগরণে বিশাল হুমকি সৃষ্টিকারী দেশ হিসেবে দেখার প্রবণতা বেড়েছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের (মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল, দুই দেশই তাদের নিজেদের অংশ বলে) ওপর পাকিস্তানের দাবি এবং ভারতবিরোধী সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের সমর্থন—ভারত আর সহ্য করবে না।

অন্যদিকে পাকিস্তান তাতে করে চীনের প্রভাব বলয়ে আরও বেশি ঝুঁকে যাবে। এতে করে ২৫ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ আরও কমে যাবে। আর এই জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশটিই এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাজে ফলাফল নিয়ে আসবে এবং ভারতের চ্যালেঞ্জগুলো আরও গভীর হবে।

অন্যদিকে পাকিস্তান দুই দশক ধরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাসংকটে জর্জরিত। পাকিস্তানে একটি প্রতিষ্ঠানই সর্বময় ক্ষমতাধারী। দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনী নীতিনির্ধারণে কর্তৃত্ব করে এবং তাদের হাতে রয়েছে উল্লেখ করার মতো প্রচলিত যুদ্ধ ও পারমাণবিক সামরিক শক্তি। বিপর্যয়ের পরও, আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা এখনো রয়েছে পাকিস্তানের। কাশ্মীরের মতো বিষয়গুলো পাকিস্তানের জাতীয় পরিচয়ের একেবারে কেন্দ্রীয় বিষয়, এসব বিষয়ে ইসলামাবাদ দিল্লির সঙ্গে আপস করতে রাজি নয়।

গত কয়েক দশকে, পাকিস্তানের নানা উসকানির মুখেও ভারতকে সাধারণত সংযম প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। একটা সাম্যাবস্থা বজায় রাখতে সেটা সহায়তা করত। এমনকি ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হামলায় ১৬৬ জন নিহত হওয়ার পরও, ভারত শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে সংযত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল।

মোদির আমলে ভারতের আগের অবস্থানটা বদলে গেছে। গত এক দশকে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক পরিসরে একঘরে করার কৌশল তিনি নিয়েছেন। এর পাশাপাশি গোপন অভিযান, অন্তর্ঘাত ও লক্ষ্যবস্তু করে হত্যার ঘটনাও ভারত ঘটাচ্ছে। একই সময়ে পাকিস্তান এবং নির্দিষ্ট করে দেশটির সেনাবাহিনী তাদের ঐতিহ্যের বাইরে বেরিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য ভারতবিরোধী অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিল। ২০১৯ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর পাকিস্তান অনেক বেশি সংযত আচরণ করে, ২০২১ সালে যুদ্ধবিরতি পুনরায় চালু করে। কিন্তু এর পর থেকে ভারত তার পথ বদল করে।

এমনকি যদি দুই পক্ষ বর্তমান উত্তেজনা থেকে সরে আসে, এরপরও ভারত খুব স্পষ্টভাবে পাকিস্তানকে দীর্ঘমেয়াদি চাপের মধ্যে রাখার কৌশল অবলম্বন করবে। ভারতের লক্ষ্য হচ্ছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেওয়া এবং শক্তির মূল কেন্দ্র সেনাবাহিনীর অপূরণীয় ক্ষতি করা। গত মাসে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে, ভারতের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের চূড়ান্ত ধরনের কঠোর অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তাঁরা বলেছেন, পাকিস্তান একটি ব্যর্থ ও উচ্ছৃঙ্খল রাষ্ট্র। ভারতকে অবশ্যই পাকিস্তানকে ধ্বংসের পথ কার্যকরভাবে খুঁজে বের করতে হবে।

ভারতের কৌশলগত এই পরিবর্তন পাকিস্তান বুঝতে পেরেছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আশা ছেড়ে দিয়ে তারা দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অশুভ বিষয় হচ্ছে, এই সংঘাত সেই গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচের ওপর হুমকি তৈরি করছে, এত দিন ধরে যেটা সংঘাতের বৃত্ত তৈরি করতে বাধা দিয়ে এসেছে। গত মাসে ভারত ১৯৬০ সালের করা পানিচুক্তি স্থগিত করে। সিন্ধু নদী পাকিস্তানের পানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পাকিস্তান চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে ঘোষণা দিয়ে ১৯৭২ সালের চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দেয়। এই চুক্তির বলে ভাগ হয়ে যাওয়া কাশ্মীরে একটা সীমান্ত প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।

দক্ষিণ এশিয়ার সংকট সমাধানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ক্রমেই কমে আসছে। একসময় ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের কাছেই যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিশ্বাসযোগ্য মধ্যস্থতাকারী। ভারত-পাকিস্তানকে কয়েকবার যুদ্ধের প্রান্তসীমা থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল ওয়াশিংটন। ১৯৯৯ সালে, কাশ্মীরে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ থামাতে ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ২০০১ সালে ভারতের আইনসভায় সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের ত্বরিত কূটনীতিতে উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছিল। ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দুই দেশের মধ্যকার সামরিক উত্তেজনা প্রশমনে এবং এ ঘটনার পেছনে দায়ীদের কয়েকজনকে বিচারের আওতায় আনতে সহায়তা করেছিল।

কিন্তু আজ সেই ‘সৎ মধ্যস্থতাকারী’ ভূমিকার সম্ভাবনা ক্রমেই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন মূলত বেইজিংয়ের প্রভাব মোকাবিলায় নয়াদিল্লিকে আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ হিসেবে পাশে পেতে চাওয়ায় ভারত-পাকিস্তান ইস্যু থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানালেও, তাদের মনোযোগ সীমাবদ্ধ থেকেছে বাণিজ্যযুদ্ধ, ইউক্রেন ও গাজায় সংঘাত এবং ইরানের সঙ্গে কূটনীতিতে। তদুপরি নয়াদিল্লি এখন তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকে পাকিস্তানের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে করে এবং ইসলামাবাদও পশ্চিমা দেশের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতায় সন্দিহান। ফলে একসময়কার কার্যকর যোগাযোগ চ্যানেলগুলোও এখন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

কিন্তু বর্তমানে সেই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করার সম্ভাবনা ক্রমেই ফিকে হয় গেছে। বাইডেন প্রশাসন দিল্লিকে প্রশান্ত রাখার জন্য ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় নিজেদের দূরে রেখেছিল। এর কারণ হলো চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওয়াশিংটন ভারতকে পাশে চেয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন নরেন্দ্র মোদির প্রতি জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করলেও তাদের মূল মনোযোগের কেন্দ্র বাণিজ্যযুদ্ধ, ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ এবং ইরানের সঙ্গে কূটনীতি।

এ ছাড়া তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকে ভারত আর স্বাগত জানাবে না, কারণ সেটাকে পাকিস্তানের প্রতি পক্ষপাত বলে মনে করবে। ভারতের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্ককে পাকিস্তান অবিশ্বাসের চোখে দেখে। ফলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমটাও (যেটা একসময় গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে ভূমিকা পালন করত) এখন অকেজো হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে এখন এটা বুঝতে হবে যে তার গুরুত্বপূর্ণ একটা স্বার্থ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এশিয়াতে আমেরিকার ভবিষ্যতের জন্য ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহে এটা সত্য। মার্কিন প্রশাসনের কেউ কেউ হয়তো ভারতকে আরও একপাক্ষিকভাবে সমর্থন দেওয়ার এবং পাকিস্তানের সঙ্গে পুরোপুরি গুটিয়ে নেওয়ার অবস্থান নিতে পারেন। কিন্তু চীনের সঙ্গে ভারসাম্য, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তায় বড় অবদানকারী এবং বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ভারতের কার্যকারিতা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়বে; যদি ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যয়বহুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনন্তকাল ধরে আটকে থাকে।

অন্যদিকে পাকিস্তান তাতে করে চীনের প্রভাব বলয়ে আরও বেশি ঝুঁকে যাবে। এতে করে ২৫ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ আরও কমে যাবে। আর এই জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশটিই এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাজে ফলাফল নিয়ে আসবে এবং ভারতের চ্যালেঞ্জগুলো আরও গভীর হবে।

আসফান্দয়ার মির যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত স্টিমসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ ফেলো।

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ বন দ ব অবস থ ন ক টন ত স ঘর ষ র জন ত র জন য র ওপর ভ রতক

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইনে ভালো পণ্য কেনার ৮ কৌশল

অনলাইনে কেনাকাটা এখন খুবই জনপ্রিয়। যানজট আর চাকরির ব্যস্ততার কারণে ফেসবুকভিত্তিক পেজ বা ওয়েবসাইট থেকে ঘরে বসে পণ্য কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকে। এমনকি ঘরে বসেই ওই পণ্য হাতে পেয়ে যাচ্ছেন। এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে চাল, ডাল, তেল-নুনের মতো দৈনন্দিন বাজার-সদাইও করছেন। তবে অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধান হতে হয়।

অনলাইন কেনাকাটা সহজ, কিন্তু সচেতন না হলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কেনার আগে যাচাই করুন, বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিন।

এবার দেখা যাক, অনলাইন কেনাকাটার আগে কী কী ভাবতে হবে।

১. বিশ্বস্ততা যাচাই করুন

অনলাইনে পণ্য কেনার আগে প্ল্যাটফর্মটি কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা যাচাই করা জরুরি। পরিচিত ও জনপ্রিয় সাইট যেমন দারাজ, পিকাবু, রকমারি বা আজকেরডিল, চালডাল ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মগুলো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। অপরিচিত ও নতুন ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজ থেকে কেনাকাটায় সাবধানতা দরকার। পরিচিত ও বিশ্বাসযোগ্য ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা করাই ভালো। তাহলে খারাপ পণ্য কেনার ঝুঁকি কম থাকে।

২. গ্রাহক সন্তুষ্টি (রিভিউ) দেখুন

একই প্ল্যাটফর্মে অনেক বিক্রেতা থাকেন। তাই পণ্যের নিচে থাকা গ্রাহকদের রিভিউ ও বিক্রেতার রেটিং দেখে নেওয়া উচিত। খারাপ রিভিউ বা কম রেটিং থাকলে সেই পণ্য এড়িয়ে চলুন।

ফেসবুকে ব্যবসা করা অধিকাংশ পেজের রয়েছে যাদের কোনো ব্যবসায় নিবন্ধন নেই। এমনকি মানসনদও থাকে না। পণ্যের প্রকৃত অবস্থা জানতে চাইলে বিক্রেতার কাছ থেকে আসল ছবি বা ভিডিও চাওয়া যেতে পারে। কারণ, অনেক সময় বিদেশি ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া ছবি ব্যবহার করে বিক্রেতারা নিম্নমানের পণ্য পাঠিয়ে দেন।

৩. টাকা ফেরতের নীতি

অনলাইনে কেনা পণ্য অনেক সময় বাস্তবে ভিন্ন হতে পারে। তাই রিটার্ন এবং টাকা ফেরত পাওয়ার শর্তগুলো ভালো করে জেনে নিন। রিটার্ন পলিসি না থাকলে ঝুঁকি বেশি। কিংবা ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ অর্ডার করতে পারেন।

৪. পণ্যের বিস্তারিত পড়ুন

শুধু ছবি দেখে নয়, পণ্যের ব্র্যান্ড, মডেল, ম্যাটেরিয়াল, ওয়ারেন্টি ইত্যাদি ভালোভাবে পড়ুন। প্রয়োজনে ইউটিউবে রিভিউ দেখুন বা গুগলে খোঁজ করুন। গ্রাহকের রিভিউ আপনাকে পণ্যটি সম্পর্কে একটি ধারণা দেবে।

৫. দাম যাচাই করুন

একই পণ্য একাধিক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মিলতে পারে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ঘুরে তুলনা করে সবচেয়ে ভালো দামে কিনুন। অনেক সময় পণ্যের দামে ছাড় থাকলেও ডেলিভারি চার্জ বেশি হয়—সেটাও খেয়াল রাখুন। আবার কম দামে পণ্য দিলেও মান ভালো নাও হতে পারে। এসব বিবেচনা করেই নিজের সামর্থ্য অনুসারে সবচেয়ে উপযোগী পণ্যটি কিনুন।

৬. মূল্য পরিশোধ পদ্ধতি কতটা নিরাপদ

পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ (পেমেন্ট) পদ্ধতিও অনলাইনে প্রতারণার একটি বড় মাধ্যম। তাই অনলাইনে কেনাকাটার আগে পেমেন্ট চাইলেই সাবধান হতে হবে। ক্যাশ অন ডেলিভারির সুযোগ থাকলে সে পদ্ধতিতে কেনাকাটা করার পদ্ধতি বেছে নেওয়া ভালো। যদি বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হয়, তাহলে ব্যক্তিগত নম্বরের পরিবর্তে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টেই টাকা পাঠানোই নিরাপদ। পাশাপাশি পেমেন্টের রসিদ বা স্ক্রিনশট সংরক্ষণ করে রাখা উচিত। যাতে পরবর্তী সময়ে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রতারণার বড় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে অগ্রিম পেমেন্ট।

৭. ভুয়া অফারে সাবধান

বিভিন্ন পণ্যের ‘ভুয়া অফার’ থাকে। এমন ফাঁদে পা দেবেন না। এসবের পেছনে প্রতারণা লুকিয়ে থাকতে পারে।

৮. ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা

পণ্য কেনাকাটা বা নিবন্ধনের সময় কিছু ওয়েবসাইট অপ্রয়োজনীয়ভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়। এসব তথ্য দেওয়ার আগে নিশ্চিত হোন, এসব ওয়েবসাইট নিরাপদ কি না। এতে পরবর্তী সময়ে আপনি প্রতারিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি যন্ত্রে হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধ, কেন?
  • প্রদীপের নিম্নে অন্ধকার
  • রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত
  • অনলাইনে ভালো পণ্য কেনার ৮ কৌশল
  • মরা গাছগুলো কাটার দ্রুত ব্যবস্থা করুন