নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে লক্ষ্য করে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১১০ জন নাগরিক। তাঁরা বলেছেন, এই কমিশনের প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে সমাজে নারীর অবস্থান ও অধিকার সম্পর্কে যে ধরনের আদর্শিক বয়ান ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পাচ্ছে, সেগুলো অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

বিবৃতিদাতারা সরকারকে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে এবং কমিশনকে সমর্থন ও সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে যে বা যারা কুরুচিপূর্ণ ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিচ্ছে, সরকারকে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন।

আজ সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে এই যৌথ বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। ১১০ জন নাগরিকের পক্ষ থেকে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন প্রকাশনা ও থিয়েটারকর্মী নাজিফা তাসনিম খানম তিশা।

বিবৃতিতে বলা হয়, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর কমিশন ও এর প্রতিবেদন পুরোপুরি বাতিল করার জোরালো দাবি পেশ করছে কোনো কোনো সংগঠন ও ব্যক্তি। এর শুরুটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হলেও দ্রুত কয়েকটি রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও গোষ্ঠী সভা-সমাবেশ করে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করছে। সব নারীর প্রতি অপমানসূচক, বিদ্বেষমূলক, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি নারীদের ওপর সহিংসতার উসকানিও দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের বিবেচনাবর্জিত দাবি এবং প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে কমিশনের সদস্য ও নারীর প্রতি অযাচিত আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, কমিশনের প্রতিবেদনের নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আদর্শিক অবস্থানসহ বিভিন্ন কারণে জনমনে ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে সেসব বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা ও বিতর্কের নিশ্চিত সুযোগ এখানে রয়েছে। তা না করে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি শুধু অযৌক্তিক নয়, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যেকোনো বিষয়ে কোনো গোষ্ঠীর দ্বিমত থাকতেই পারে। সে ক্ষেত্রে বিদ্বেষপূর্ণ, সহিংসতাপূর্ণ বা হুমকিস্বরূপ না হয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে, যৌক্তিক উপায়ে উপস্থাপন করা সম্ভব। কিন্তু তা না করে অগণতান্ত্রিক উপায়ে ভয়ভীতি সৃষ্টির অপকৌশল গ্রহণ তীব্রভাবে নিন্দনীয়।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ‘পশ্চিমা বিশ্ব’ থেকে আমদানি করা বলে এমন অভিযোগের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এই অভিযোগ ‘আমাদের আদর্শিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার’ সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। প্রতিবেদনে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, বিদ্যমান আইন, নীতি, তাত্ত্বিক ও মাঠ গবেষণার ফলাফল ও উপাত্ত পর্যালোচনা ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনসহ সাধারণ মানুষের মতামতও নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে এসব সভা আয়োজনে অংশ নিয়েছেন প্রশাসন ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

বিবৃতিতে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলোর ওপর বিস্তারিত ও গঠনমূলক আলোচনা করে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে সরকারকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়। কমিশনের প্রস্তাব ও এর সদস্যদের প্রতি অপমানজনক ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিন্দা জানানোর পাশাপাশি যারা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করছে, তাদের বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক মহাসচিব আইরিন খান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির ও হানা শামস আহমেদ, অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা, ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির প্রতিষ্ঠাতা শামারুহ্ মির্জা, নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাদাফ সায্‌, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, সেলিম রায়হান, আসিফ মোহাম্মদ শাহান, কাজী মারুফুল ইসলাম, কাজলী সেহরীন ইসলাম ও দীপ্তি দত্ত, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং ফেলো সাবহানাজ রশীদ দিয়া, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোশতাক চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, ইমরান মতিন ও মোস্তাফিজুর রহমান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, প্রকাশক মাহ্‌রুখ মহিউদ্দীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও শরমিন্দ নীলোর্মি, আইনজীবী মানজুর আল মতিন, যুক্তরাষ্ট্রের কলগেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নাভিন মুর্শিদ, সাংবাদিক জাফর সোবহান, সিমু নাসের, আকিব মো.

শাতিল ও রাফিয়া তামান্না।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এক দিনে তাপমাত্রা কমলো ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঠান্ডা বাতাসে স্বস্তি জনজীবনে

টানা ছয় দিন ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় তাপপ্রবাহের পর সোমবার সকাল থেকে স্বস্তির বৃষ্টির দেখা পেতে শুরু করেছেন দেশবাসী। এতে এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেছে। ফলে মুক্তি মিলেছে তীব্র তাপদাহ থেকে। ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকায় কিছুটা স্বস্তি এসেছে জনজীবনে।

এদিকে তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি মিললেও ঢাকাসহ ২১ জেলায় বজ্রপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বজ্রপাত হলে ঘরের মধ্যে থাকা, ভ্রমণ এড়িয়ে চলা ও গাছের নিচে আশ্রয় না নেওয়াসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যেসব এলাকায় হঠাৎ তাপমাত্রা কমে গেছে, সেখানকার মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রহমান জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গতকাল বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছে। আজ মঙ্গলবারও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। 

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, খুলনা বিভাগ বাদ দিয়ে দেশের প্রায় সর্বত্র ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে গেছে। রাজশাহীতে এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে কমেছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ২১ জেলায় বজ্রপাতের আভাস রয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পরবর্তী ৪ ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন জেলায় অস্থায়ীভাবে প্রতি ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বা তার বেশি বেগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি এবং বজ্রপাত হতে পারে। জেলাগুলো হলো– রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, নরসিংদী, রংপুর, গাইবান্ধা, শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, রাঙামাটি ও বান্দরবান।

বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু
বরগুনার আমতলীতে মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কহিনুর নামে এক গৃহবধূ প্রাণ হারিয়েছেন। উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ডালাচারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিন দক্ষিণ গুলিশাখালী গ্রামে বজ্রপাতে শামীম চৌকিদার নামে একজন আহত হয়েছেন। সকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মোহাম্মদ ফিরোজ নামে এক কৃষক মারা গেছেন। এ ছাড়া গতকাল হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সুজনপুর গ্রামে বজ্রপাতে আজগর আলী নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ