নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দলগুলোর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতি ইতিমধ্যেই সরব হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ ও স্বার্থের সংঘাত দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নবীন ও প্রবীণ—সব রাজনৈতিক দলই নিজেদের সুবিধা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল গ্রহণ করছে।

জাতীয় বনাম স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে তীব্র রাজনৈতিক মেরুকরণ তৈরি হয়েছে, তা নতুন কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা বা বন্দোবস্তের সম্ভাবনাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিতে পারে। কেননা বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, এখানে রাজনৈতিক বিরোধ অনেক সময়ই দ্রুত সংঘাতে রূপ নেয়। এমন সম্ভাবনা এবারও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

গত পাঁচ দশকে রাজনীতি ও সংঘাত যেন রেলের সমান্তরাল দুটি লাইন হয়ে একসঙ্গে এগিয়েছে। এর ফলে রাজনীতিতে যেমন অসৎ ও সহিংস প্রবণতাসম্পন্ন লোকজনের প্রভাব বেড়েছে, তেমনি নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী শিষ্টজনেরা ধীরে ধীরে ছিটকে পড়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতি একধরনের ‘মাস্তানতান্ত্রিক’ সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে, যা কার্যত অতীতে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।

তাই এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জাতীয় স্বার্থে একটি ন্যূনতম মতৈক্যের ভিত্তিতে সব রাজনৈতিক পক্ষকে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে একটি যৌথ প্ল্যাটফর্মে আনার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা এবং দেশে যেন এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া।

এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম যা করতে পারে, তা হলো একটি স্পষ্ট, গ্রহণযোগ্য ও সময়োপযোগী জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা। এই তারিখ এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে একদিকে স্থানীয় সরকারের কিছু স্তরের নির্বাচন আয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে এবং অন্যদিকে রাজনৈতিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচারপ্রক্রিয়াকে কিছুটা দৃশ্যমান করার জন্যও কার্যকর সুযোগ সৃষ্টি হয়। কেননা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজন যেমন তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, তেমনি জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করাও একইভাবে জরুরি। এ দুই বিষয়ে ভারসাম্য রেখে একটি উপযুক্ত জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণ এবং কিছু নির্দিষ্ট পর্যায়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনই হতে পারে রাজনৈতিক আস্থার একটি নতুন ভিত্তি।

স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির আশঙ্কা ও কিছু প্রশ্ন

বিএনপি ও তাদের সমমনা কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনকে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য মনে করছে না। তাদের দৃষ্টিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ আওয়ামী লীগের জন্য একটি কার্যকর রাজনৈতিক পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বক্তব্যে বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে যাঁরা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছেন, তাঁদের বলতে চাই—লুটপাট ও দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা হাতে নিয়ে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরেরা সারা দেশে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন তাঁদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। যাঁরা এই নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে কথা বলছেন, হয়তো বিষয়টিকে এ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেননি। আমি অনুরোধ করব, বিষয়টিকে এভাবে বিবেচনা করতে।’

তারেক রহমানের এই আশঙ্কা পুরোপুরি অমূলক নয়। কারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হওয়ায় আওয়ামী লীগ এর মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিকে নতুন করে পুনর্গঠনের সুযোগ পেতে পারে। এই নির্বাচনে তারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ব্যবহার করে স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে। এর ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা নিজেদের রাজনৈতিক ভিত্তিকে আরও মজবুত করে তুলতে সক্ষম হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনভিত্তি পুনরুদ্ধারের পথ তৈরি করতে পারে।

বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে ‘আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের সুযোগ’ হিসেবে বিবেচনা করলেও তাদের এ অবস্থান কিছু মৌলিক প্রশ্নের জন্ম দেয়। যদি বিএনপি বিশ্বাস করে যে আওয়ামী লীগ একটি গণবিরোধী, ফ্যাসিবাদী ও গণহত্যাকারী দল এবং রাজনৈতিকভাবে তাদের পুনর্বাসন দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক, তাহলে তারা তা মোকাবিলা করার জন্য সম্ভাব্য কৌশল এখনো কেন প্রকাশ করছে না?

পাশাপাশি যদি বিএনপি মনে করে যে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করলে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পাবে, তাহলে এ প্রশ্নও ওঠে—ভবিষ্যতে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে এবং তখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করলে, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কি তৃণমূল পর্যায়ে পুনর্গঠিত হয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না? যদি উত্তর ‘না’ হয়, তাহলে সেই কার্যকর মডেল বা কৌশল কেন তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই প্রয়োগে সহযোগিতা করছে না? অথবা কেন জনগণকে তা জানার সুযোগ করে দিচ্ছে না?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, শুধু স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনেই আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হবে—এই দাবি আদৌ কতটা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত? জাতীয় নির্বাচন, যা অনেক বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে এবং যেখানে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও চাপ অনেক বেশি, সেই নির্বাচন আয়োজন করলেই আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ঠেকানো যাবে—এই নিশ্চয়তা কোথায়?

বস্তুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইতিমধ্যেই পার্শ্ববর্তী একটি দেশের পক্ষ থেকে চাপ আসতে শুরু করেছে। অনেক বিশ্লেষক ধারণা করছেন, এই নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের পেছনে অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আওয়ামী লীগকে আবারও রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় করার সুযোগ করে দেওয়া। অথচ এই সম্ভাব্য পুনর্বাসন ঠেকাতে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো কোনো স্পষ্ট বক্তব্য সামনে আসেনি। ভারত তার সরকারি ভাষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলে আসছে, যার মূল লক্ষ্য হলো জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের এক-দুটি মিছিল প্রতিহত করাকে যদি পুনর্বাসন ঠেকানোর সফলতা হিসেবে ধরা হয়, তবে তা নিছক একটি রাজনৈতিক বিভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়। বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পুনর্বাসন রুখতে হলে গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিটি অংশীদারকে রাজনৈতিক, আইনগত এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও সক্রিয় ও সুসংগঠিত ভূমিকা পালন করতে হবে।

পাশাপাশি বিএনপি আরও মনে করে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পেছনে সরকারের একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। তাদের দাবি, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার একদিকে নিজেদের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে চায়। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করার ক্ষেত্র তৈরি করছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এই আশঙ্কাকে অমূলক প্রমাণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি শুরুতেই একটি স্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে এবং মধ্যবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট কিছু স্তরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে, তাহলে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে যে অনাস্থা ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তা অনেকটাই লাঘব হওয়া সম্ভব।

নির্দিষ্ট কিছু স্থানীয় নির্বাচন যে সুবিধা দিতে পারে

বর্তমান বাস্তবতায় স্থানীয় সরকারের সব স্তরে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব না–ও হতে পারে। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি শুধু উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তাহলে একদিকে এটি শহর ও গ্রাম—উভয় অঞ্চলের স্থানীয় সরকার–কাঠামোকে অন্তর্ভুক্ত করবে। অন্যদিকে সরকারের জন্য তা বাস্তবায়ন করা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে।

এই পটভূমিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি নির্ধারিত এই দুই স্তরের (উপজেলা ও সিটি করপোরেশন) নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং দক্ষতার সঙ্গে আয়োজন করতে পারে, তবে তা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রেও প্রস্তুতি ও আস্থা তৈরির সুযোগ এনে দিতে পারে। এর মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের প্রশাসনিক সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা যাচাইয়ের একটি বাস্তব ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে, যা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে জনগণের আস্থা গঠনে সহায়ক হতে পারে।

কেননা বর্তমান সরকার এমন এক সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, যখন রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ এবং দুর্নীতিতে ভেতর থেকে ক্ষয় হয়ে পড়েছে। বিগত সরকারের সময়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়েছিল, যার ফলে সুশাসন এবং স্বচ্ছতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

অভ্যুত্থান-পরবর্তী আট মাসের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা এখনো যথাযথভাবে পরীক্ষিত হয়নি। অধিকাংশ দপ্তর ও বিচারালয়ে এখনো সেই সব আমলা ও কর্মকর্তা বহাল রয়েছেন, যাঁরা বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ফলে এই প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার না করেই যদি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তাহলে সেই নির্বাচন কতটা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে গুরুতর সংশয় থেকেই যায়। সরকার যদি আগে নির্দিষ্ট কিছু স্তরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে, তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসনিক দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার প্রকৃত অবস্থা যাচাই করার একটি সুযোগ হতে পার।

পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নির্মম বাস্তবতা হলো যে রাজনৈতিক দলগুলোর অধীনে স্থানীয় নির্বাচন পরিচালনার সময় প্রায়ই কারচুপি, ভোট ডাকাতি, প্রশাসনের অপব্যবহার ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে থাকে। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, নিজেদের দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, হয়রানি বা গ্রেপ্তারের মাধ্যমে নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এসব যুক্তি সামনে রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অন্য দলগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে আয়োজনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে । তাদের মতে, রাজনৈতিক দলের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন হলে অন্য দলের প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনে ভালো ফল অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম থাকবে, যা একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, যা স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে অগ্রাধিকারযোগ্য করে তোলে, তা হলো জনগণের দুর্ভোগ লাঘব। আওয়ামী লীগের পতনের পর দেশের প্রায় প্রতিটি স্তরের স্থানীয় সরকারব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে অনেক এলাকায় প্রশাসনের মাধ্যমে অথবা প্যানেল চেয়ারম্যান ও মেয়রদের দ্বারা স্থানীয় সরকার পরিচালিত হলেও সেটি কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং এতে সরকারি সেবা কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যার কারণে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নাগরিকদের একটিমাত্র সেবা গ্রহণের জন্যও দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। ফলে এ মুহূর্তে একটি কার্যকর স্থানীয় সরকারব্যবস্থা পুনরায় গড়ে তোলা জনগণের স্বার্থে অত্যন্ত জরুরি।

পরিশেষে জাতীয় নির্বাচনের আগে উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি বাস্তবিক ও কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে বলা আশা করা যায়। কেননা এটি যেমন অন্তর্বর্তী সরকারের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা যাচাইয়ের সুযোগ তৈরি করবে, তেমনি স্থানীয় সরকার কার্যক্রম সচল করে জনগণের ভোগান্তি লাঘবেও ভূমিকা রাখবে।

অধিকন্তু এই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক আস্থার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব, যদি তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটিকে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার কার্যকর মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করাই হতে পারে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নির্মাণের একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তবে এই উদ্যোগের পূর্বশর্ত হিসেবে বর্তমান সরকারকে অবশ্যই প্রথমে একটি স্পষ্ট ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে।

এস কে তৌফিক হক অধ্যাপক ও ডিরেক্টর, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

সৈয়দা লাসনা কবীর অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মোহাম্মাদ ঈসা ইবন বেলাল গবেষণা সহযোগী, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

(মতামত লেখকদের নিজস্ব)

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ রহণয গ য পর ব শ ত র র জন ত ক প র র জন ত ক ন শ চ ত কর ন র ব চনক র র জন য ন সরক র ক র যকর ব যবস থ সরক র র জনগণ র পর য য় ন র জন পর চ ল বন দ ব ব এনপ র একট ক ষমত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আড়ালে দেশে সাজানো নাটকীয়তা চলছে: মির্জা আব্বাস

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের আড়ালে দেশে সাজানো নাটকীয়তা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এছাড়া ডিএমপির নিষিদ্ধ এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিক্ষোভ করার ঘটনায় সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দীন পিন্টুর স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, নাসির উদ্দিন পিন্টুকে আজ যেভাবে স্মরণ করা হচ্ছে, এই নাসির উদ্দিনদের মতো হাজারো নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে আজকের এই বিএনপি।

এসময় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে লাগাতার আন্দোলনকে নাটক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, কোনো অপকর্মের আগে শেখ হাসিনাও মানুষের দৃষ্টি সরাতে এমন কৌশল অবলম্বন করতেন। বিএনপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিরোধিতা না করলেও একটি অজনপ্রিয় দল শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপিকে হেয় করছে।

তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে চায় তারা দেশ ও জনগণের শত্রু। কারণ আওয়ামী লীগকে বিএনপি কখনো আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না। ১৭ বছর যাদের কাছে নির্যাতিত হয়েছে বিএনপি তাদের পুনর্বাসন করবে; এটি যারা বলে তারা বিএনপিকে হিংসা করে।

মির্জা আব্বাস বলেন, ভিআইপি ট্রিটমেন্ট নিয়ে দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, অথচ সরকার কিছু জানে না; তারা কী জানে?

তাছাড়া, প্রশাসনে বিএনপি নিধন করে আওয়ামী-জামাতপন্থিদের স্থলাভিষিক্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস।

তিনি বলেন, অনেক উপদেষ্টা যারা দেশের নাগরিক না, তারাই দেশ পরিচালনা করছে। মনে হচ্ছে ঔপনিবেশিক শাসন চলছে দেশে। করিডর নিয়ে জামায়াত-এনসিপি কেউ কথা বলছে না।

সেন্টমার্টিন, সাজেক নিয়ে এনসিপি কেন কথা বলছে না— দলটির কাছে এমন প্রশ্ন রেখে মির্জা আব্বাস বলেন, বিশ্বের ডিকশনারিতে মানবিক করিডর বলে কিছু নেই। প্রয়োজনে একেকটা নাম দিয়ে এসব বানানো হচ্ছে। আমরা কেন সেন্টমার্টিন যেতে পারবো না, আমি এনসিপির ভাইদের বলতে চাই আপনারা এই বিষয় নিয়ে কথা বলেন না কেন। দেশ ভালো অবস্থানে নেই। আবার আমরা শুনতে পাচ্ছি মানবিক করিডর দেওয়া হবে, কেন কার স্বার্থের জন্য করিডোর, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোনও করিডর দেওয়ার অধিকার এই সরকারের নেই।

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, দেশে সন্দেহভাজন বিদেশিদের আগমন বেড়েছে। বিভিন্ন মিশন চালু হচ্ছে। সব অপকর্ম ইচ্ছাকৃতভাবে করছে সরকার, সরকার কারও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে, এটি দেশপ্রেমিক সরকার নয়।

এসময় মানবিক করিডোর নিয়ে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নীরবতা তুলে ধরে বিস্ময় প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। বিএনপি ছাড়া করিডর নিয়ে কেউ কথা বলছে না। জামায়াত, চরমোনাই কেউ কথা বলছে না। বিএনপিকে শেষ করতে পারলেই আওয়ামী লীগের মত দেশ লুটেপুটে খাওয়া যাবে।

নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে সংগঠনের আহ্বায়ক সাইদ হাসান মিন্টুর সভাপতিত্বে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ওলামা দলের মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একটা ‘ঘৃণা নিয়ন্ত্রণ কমিশন’ এখন সময়ের দাবি: সায়ান
  • ‘জবাইয়ের হুমকি কোনো সমাজেই গ্রহণযোগ্য নয়’, ফেসবুকে সায়ান
  • ‘নগদে’ প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে রিট খারিজের রায় স্থগিত
  • বাঁচতে হলে পাকিস্তানকে সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে: মোদি
  • সম্প্রতি দেশের সমাজ ও রাজনীতিতে অনেক কিছুই অনাকাঙ্ক্ষিত-অগ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়: জামায়াত আমির
  • সম্প্রতি দেশের সমাজ ও রাজনীতিতে অনেক কিছুই অনাকাঙ্ক্ষিত-অগ্রহণযোগ্য: জামায়াত আমির
  • আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আড়ালে দেশে সাজানো নাটকীয়তা চলছে: মির্জা আব্বাস
  • ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান কী হবে
  • নারী কমিশনের সংস্কার-ভাবনা কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক