শখের সেই মিশ্র ফল বাগান এখন আয়ের দারুণ উৎস
Published: 13th, May 2025 GMT
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের বরাইয়া (ভূঁইয়া বাড়ি) গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক আতিকুল্লাহ ভূঁইয়া। অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কৃষির প্রতি ভালবাসা দিয়ে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
মাটি ও প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে শুরু হলেও তিনি আজ তার চাষাবাদ, সৃজনশীলতা এবং পরিশ্রম দিয়ে নিজেকে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার মিশ্র ফল চাষ ও নার্সারি নিয়ে পুরো এলাকা জুড়ে প্রশংসা হচ্ছে। তার শখের বাগান এখন হয়ে দাঁড়িয়েঠে আয়ের দারুণ উৎস।
আতিকুল্লাহ ভূঁইয়া তার কৃষি জীবন শুরু করেন শখের বসে। সেসময় তিনি জানতেন না- ইউটিউবে দেখানো ভিডিওগুলো তাকে জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাবে। একসময় বিদেশি ফল আঙুর ও রামভুটান নিয়ে তার আগ্রহ শুরু হয়। জানতেন না কীভাবে চাষ করতে হয়। কিন্তু একাগ্রতা আর শেখার আগ্রহ তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।
২০২২ সালে তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে ৫৫০ টাকা দামে বিভিন্ন জাতের ১০টি আঙুরের চারা সংগ্রহ করেন। প্রথমে তার চাষ ভালো হয়নি। তবে, তিনি হাল ছাড়েননি। দ্বিতীয়বার ৫০টি চারা রোপণের পর গাছে ফল আসা শুরু হয়। এটি ছিল তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।
বর্তমানে তার বাগানে আঙুরের পাশাপাশি ৩৫ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে মাল্টা, কমলা, লিচু, বরই, বিভিন্ন জাতের আম, রামভুটান, পেয়ারাসহ আরও অনেক ফল।
সরেজমিনে দেখা যায়, আতিকুল্লাহ ভূঁইয়া তার বাগানে যে বিশাল বৈচিত্র্য নিয়ে ফলের চাষ করছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার বাগানে বর্তমানে ৩৫ প্রজাতির ফল চাষ হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে আঙুর, রামভুটান, কুল, জামরুল, লিচু, আম, মাল্টা, কমলা, ভিয়েতনামি কাঁঠাল, বিভিন্ন জাতের আমলক্ষী, কালো জাম, সফেদা, লটকন, নারিকেল, পেয়ারা, লেবু, খুরমা খেজুর, আলু বোখরা, আপেলসহ আরও অনেক বিদেশি ফল।
এসব ফলের চারা ও ফল স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, যা আতিকুল্লাহকে এক সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আতিকুল্লাহ শুধু এখন কৃষি কাজই করেন না, তিনি একটি সফল নার্সারি পরিচালনা করছেন। তার বাগান থেকে এলাকার হাজারো কৃষক ও সাধারণ মানুষ বিভিন্ন ফলের চারা কিনতে আসেন। তার সফলতার গল্প শুনে এখন অনেকেই মিশ্র ফল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। একদিকে যেমন আতিকুল্লাহ ফল চাষের মাধ্যমে আয়ের উৎস তৈরি করেছেন, তেমনি তার বাগানটি একটি শিক্ষামূলক স্থান হয়ে উঠেছে।
আতিকুল্লাহ ভূঁইয়া তার বাগানে ফলের চাষে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন। তিনি পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে ফেরোমন ফাঁদ ও কালার টেপ ব্যবহার করেন। ফলে তার বাগানের ফলগুলিও বিষমুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর।
গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা তার বাগান থেকে ফল ও চারা কিনে নিয়ে যান। তার বাগানের আঙুর ও রামভুটান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এলাকার কৃষকরা তার কাছ থেকে পরামর্শ নেন এবং নিজের জমিতে মিশ্র ফল চাষ শুরু করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আতিকুল্লাহ ভূঁইয়ার জীবনপ্রবাহ এক উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার পরিশ্রম, অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং শখকে পেশায় পরিণত করার মনোবল এখন অনেক কৃষক ও উদ্যোক্তার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তার সফলতার পেছনে শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রম ও উদ্যম নয়, বরং প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং নতুন কিছু শিখতে আগ্রহ তার মূল চালিকাশক্তি।
আতিকুল্লাহ বলেন, “আমার ছেলেরা বিদেশে থাকেন। তারা কৃষি কাজ করতে নিষেধ করেন কিন্তু আমি শখের বশেই কাজ করি।”
আতিকুল্লাহ ভূঁইয়ার স্ত্রী নূর আক্তার বেগম তার স্বামীর সফলতার বিষয়ে বলেন, “আমার স্বামী কৃষির প্রতি গভীর ভালোবাসা রয়েছে। তার সফলতায় আমরা সবাই আনন্দিত। আমি যতটুকু পারি তার কাজে সহযোগিতা করি।”
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম জানান, আতিকুল্লাহ ভূঁইয়ার মিশ্র ফল চাষে এখনকার কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। আমাদের অফিস থেকে নিয়মিত তাকে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম শ র ফল চ ষ র সফলত কর ছ ন ফল র চ
এছাড়াও পড়ুন:
জ্যাকুলিন মার্স: ক্যান্ডি সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী, পোষা প্রাণীর খাবার ও দাতব্য কাজে বিশ্বখ্যাত
বিশ্বের সেরা ধনী নারীদের একজন জ্যাকুলিন মার্স। তিনি মার্স কনফেকশনারি সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বের অন্যতম নিভৃতচারী ধনকুবেরও। ১৯৩৯ সালে ফরেস্ট মার্স সিনিয়র ও অড্রি রুথ মায়ারের ঘরে জন্ম নেওয়া জ্যাকুলিন বেড়ে ওঠেন এমন এক পরিবারে, যাদের সাফল্যের কাহিনি আমেরিকার ব্যবসায়িক ইতিহাসে অনন্য।
মার্সের পিতামহ দাদা ফ্রাঙ্ক সি. মার্স ১৯১১ সালে মার্স ইনকরপোরেটেড প্রতিষ্ঠা করেন। সাধারণ ক্যান্ডির রেসিপি দিয়ে এই ব্যবসার সূত্রপাত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ছোট ব্যবসা থেকে তৈরি হয় মিল্কি ওয়ে, স্নিকার্সের মতো জনপ্রিয় চকলেট। ধীরে ধীরে তা বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ক্যান্ডির পাশাপাশি পোষা প্রাণীর খাবার, সাধারণ খাদ্যপণ্য ও চুইংগামের মতো বহুবিধ খাতে এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে। খবর ফোর্বস।
ফোর্বসের তালিকা অনুসারে, জ্যাকুলিন এখন বিশ্বের ৪৩তম শীর্ষ ধনী। এখন তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৪০ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৯০ কোটি ডলার। কিন্তু অনেক উত্তরাধিকারীর মতো তিনি নিছক মালিক হয়ে চুপচাপ বসে থাকেননি।
১৯৬১ সালে ব্রিন মাওর কলেজ থেকে নৃতত্ত্বে ডিগ্রি অর্জনের পর জ্যাকুলিন মার্স ইনকরপোরেটেডে যোগ দেন। প্রায় দুই দশক সেখানে কাজ করেছেন তিনি। কোম্পানির ফুড প্রোডাক্টস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পরবর্তীকালে পরিচালনা পর্ষদে জায়গা করে নেন। ২০১৬ সালে পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে তাঁর করপোরেট অধ্যায়ের ইতি ঘটে। কোম্পানির ভেতরে তাঁর উত্তরাধিকার অবশ্য অক্ষুণ্ন থেকে যায়।
১৯৯৯ সালে জ্যাকুলিনের বাবা মারা গেলে মার্স ইনকরপোরেটেডের বিশাল অংশীদারত্ব তিন ভাইবোনের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। সেই সময় থেকে জ্যাকুলিন কোম্পানির এক-তৃতীয়াংশ মালিকানা ধরে রেখেছেন। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সেই শেয়ার এবং কোম্পানির ব্যবসায়িক সফলতার সূত্রে এখন তিনি ৪ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থের মালিক।
সাধারণ জীবনজ্যাকুলিন মার্স অন্যান্য ধনকুবেরের মতো জমকালো জীবন যাপন করেন না। তিনি সচরাচর কাউকে সাক্ষাৎ দেন না, সংবাদমাধ্যম থেকেও দূরে থাকেন। তাঁর নিজের নামের চেয়ে বেশি পরিচিত মার্স ব্র্যান্ড। তিনি বরং জনসমক্ষে পরিচিত হয়েছেন দাতব্য কাজ ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে। তিনি ছিলেন স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের ট্রাস্টি। সেই সঙ্গে ন্যাশনাল স্পোর্টিং লাইব্রেরি অ্যান্ড মিউজিয়ামের সঙ্গে জড়িত। ওয়াশিংটন ন্যাশনাল অপেরার পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। ছিলেন ন্যাশনাল আর্কাইভস ফাউন্ডেশনের পর্ষদ সদস্য। পরিবেশ রক্ষায়ও তিনি সক্রিয়। ভার্জিনিয়ায় নিজের জমি সংরক্ষণ ট্রাস্টের আওতায় দিয়েছেন, পরিচালনা করছেন একটি জৈব কৃষিখামার। অশ্বারোহণ সব সময় তাঁর নেশা। যুক্তরাষ্ট্রের ইকুয়েস্ট্রিয়ান টিমে তাঁর সম্পৃক্ততা থেকে বোঝা যায়, ব্যক্তিগত আগ্রহ ও জনকল্যাণকে তিনি কীভাবে একসূত্রে মিলিয়েছেন।
আজও জ্যাকুলিন মার্স জনসমক্ষে নেই, বরং গোপনেই চালিয়ে যাচ্ছেন দাতব্য কাজ, সংস্কৃতি ও অশ্বারোহণ কার্যক্রম। তাঁর ছেলে স্টিফেন ব্যাজার বর্তমানে মার্সের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। ফলে পরিবারের ব্যবসায়িক ঐতিহ্য অব্যাহত আছে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, মার্স ইনকরপোরেটেড যক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল পারিবারিক বেসরকারি কোম্পানিগুলোর একটি। এই কোম্পানির সফলতা প্রমাণ করে, গোপনীয়তা ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করে প্রকাশ্যে শেয়ারবাজারের বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব।
একমাত্র বিতর্কজ্যাকুলিনের জীবন অবশ্য বিতর্কহীন নয়। ২০১৩ সালে ভার্জিনিয়ায় তিনি এক মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। তাঁর গাড়ি উল্টো লেনে চলে গিয়ে একটি মাইক্রোভ্যানকে ধাক্কা দিলে এক যাত্রী মারা যান এবং কয়েকজন আহত হন। তিনি নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালনার দায় স্বীকার করেন। শাস্তি হিসেবে আদালত তাঁকে জরিমানা করেন এবং তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। এই ঘটনাই হয়তো একমাত্র উপলক্ষ, যখন তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও সংবাদমাধ্যমের প্রধান শিরোনামে চলে আসেন।
অনেকে বলেন, জ্যাকুলিন মার্স নিজের প্রচেষ্টা ও পারিবারিক উত্তরাধিকারের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। একদিকে তিনি সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী, অন্যদিকে কোম্পানিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব শ্রম এবং অংশগ্রহণও রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি শিল্প-সংস্কৃতি, পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষায় সমাজে অবদান রেখেছেন। প্রচারমুখর বা সেলিব্রেটি ধনকুবেরদের ভিড়ে তিনি আলাদা—অপরিসীম ধনী ও প্রভাবশালী, কিন্তু পাদপ্রদীপের আলোয় না থাকা নিস্তরঙ্গ জীবন যাপনকারী শীর্ষ ধনী।