খুলনায় খাল ইজারা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ৯
Published: 13th, May 2025 GMT
খুলনার দাকোপে খালের ইজারাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ৩ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আজ মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলার চালনা পৌর এলাকার চালনা বাজারে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ইটের আঘাতে দাকোপ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আজাহার উদ্দিনের মাথার হাড় ভেঙে যায়। আহত অন্য দুই পুলিশ সদস্য হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) মনোয়ার তালুকদার ও পুলিশ সদস্য শুভ চৌধুরী বিশ্বাস।
এ ছাড়া বিএনপির উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইব্রাহীম বিশ্বাস, সোহেল সরদার, বাচ্চু ফকির, মিজানুর রহমান, মাহাবুর শেখ ও রতন রায় আহত হন। তাঁদের সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দাকোপ উপজেলা বিএনপিতে বর্তমানে দুটি পক্ষ। একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন চালনা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অসিত কুমার সাহা ও সদস্যসচিব আবদুল মান্নান খান। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খুলনা জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাকিল আহমেদ, চালনা পৌর বিএনপির সদস্যসচিব আল আমিন সানা ও যুগ্ম আহ্বায়ক আইয়ুব আলী কাজী। গতকাল দুপুরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে বাজুয়া ইউনিয়নের বিল ডাকাতিয়া ও খলিশা খালের ইজারাকে কেন্দ্র করে মূলত সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। যদিও বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সেখানে থেমে গেলেও উভয় পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল।
খাল ইজারার বিষয়ে দাকোপের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জুবায়ের জাহাঙ্গীর বলেন, গতকাল দাকোপের সব খাস খালের উন্মুক্ত ডাক ছিল। এর মধ্যে ডাকাতিয়া খালের ইজারাকে ঘিরে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত ইজারা কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।
এদিকে গতকাল দিনভর দাকোপের পাঁচটি কলেজ ছাত্রদলের কমিটি গঠনের জন্য বাজুয়া ইউনিয়নের বাজুয়া এসএন কলেজে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচন নিয়েও উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়। নির্বাচন শেষে চালনায় ফিরে আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ, যা পরবর্তী সময় ব্যাপক আকার ধারণ করে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চালনা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘শাকিল এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের পুনর্বাসিত করছেন। তাঁর ভাই পানখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামী লীগের কিছু লোক আমাদের মধ্যে ঝামেলা বাঁধানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’
শাকিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল দুপুরের দিকে দলীয় কার্যালয়ের ওখানে আমাদের সামনেই এক দফা মারামারি হয়, আমরা যতটুক সম্ভব ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলাম। বিকেলে বাজুয়া এসএন কলেজ থেকে যখন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা চালনায় ফিরছিলেন, তখন মোজাফফর হোসেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই দলবল নিয়ে ব্যারিকেড দেযন। এরপর মারামারি শুরু হয়। এগুলোর সব ভিডিও ফুটেজ আছে।’
খুলনা জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা মিটিংয়ে বসেছি। সিদ্ধান্ত পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আজাহার উদ্দিনকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। বর্তমানে এলাকাটির পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। সেখানে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গতক ল দ স ঘর ষ উপজ ল সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
দুঃখ প্রকাশ না করা পর্যন্ত শান্তি পাবে না, আওয়ামী লীগকে শফিকুল আলম
আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, সদস্য ও সমর্থকরা যতক্ষণ না জুলাই বিপ্লবে নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো শুরু করে, দুঃখ প্রকাশ না করে-ততক্ষণ পর্যন্ত তারা শান্তি পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার (১ জুলাই) শফিকুল আলম আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন।
তিনি লেখেন, “আমরা মাটি থেকে আপনাদের কুৎসিত প্রভাবের দাগ মুছে ফেলব এবং তা রক্ত দিয়ে ধুয়ে ফেলব। আপনারা কখনও শান্তি পাবেন না—যতক্ষণ না শহীদ ও আহতদের প্রতি সম্মান দেখান। যতক্ষণ না আপনি ‘দুঃখিত’ বলেন।”
প্রেস সচিব বলেন, “আমরা অপেক্ষা করেছি প্রায় দশ মাস—যাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, সদস্যবৃন্দ এবং তাদের সমর্থকরা দুঃখ প্রকাশ করে এবং একটি বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টায় আমাদের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু গত বছরের জুলাই থেকে আপনারা যা করেছেন তা হল শহীদদের নিয়ে উপহাস, আমাদের সংগ্রামকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং ১৭ কোটি মানুষকে ‘জঙ্গি’ বলে কলঙ্কিত করেছেন—এই আশায় যে, আপনার ঔপনিবেশিক প্রভুরা এসে আবারো আপনাদের হাতে দেশ তুলে দেবে, যেন লুণ্ঠন ও বিশৃঙ্খলার আরেকটি অধ্যায় শুরু করতে পারেন।”
“দুঃখিত, এবার আর তা হবে না। জুলাই আমাদের সাহসী করেছে। জুলাই আমাদের শিখিয়েছে প্রতিকূলতার মুখেও মাথা তুলে দাঁড়াতে। জুলাই আমাদের ডিএনএ-তে স্থায়ীভাবে এক বিরল সাহসের জিন প্রবেশ করিয়েছে। আমরা আর আগের মতো নই।”
শফিকুল আলম বলেন, “জুলাই আমাদের শিখিয়েছে হাল না ছেড়ে ঝড়ের মতো গুলির মধ্যেও দাঁড়িয়ে থাকার দৃঢ়তা। জুলাই আমাদের ভুলতে দেয় না আমাদের শহীদদের, যাদের আপনারা নির্মমভাবে হত্যা করেছেন; যাদের চোখ উপড়ে নিয়েছেন, যাদের আত্মাকে ছিন্নভিন্ন করেছেন।”
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, “আপনাদের সঙ্গে কখনও শান্তি হবে না—যতক্ষণ না আপনি ‘দুঃখিত’ বলেন, যতক্ষণ না আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার হাতে রক্ত দেখতে পান।”
মানবতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শফিকুল আলম বলেন, “আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে লড়ব—আমাদের জমিতে, নদীতে, পাহাড়ে। আমরা লড়ব ভার্চুয়াল জগতেও। আপনারা গণহত্যার সহযোগী ও মানবাধিকারের ডাকাত, আমরা আপনাদের মুখোশ খুলে ফেলব।”
ঢাকা/ইভা