পুলিশের হাতে ‘মারণাস্ত্র’ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল সোমবার আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মারণাস্ত্র থাকবে শুধু এপিবিএনের (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) কাছে। পুলিশ তাদের কাছে থাকা মারণাস্ত্র জমা দেবে।

কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে মারণাস্ত্র বলতে আসলে কী বোঝানো হয়েছে। পুলিশের হাতে কোন অস্ত্র থাকবে? উত্তর হলো, পুলিশের হাতে কোন অস্ত্র থাকবে, তা ঠিক করবে সরকার গঠিত একটি কমিটি।

সাধারণভাবে মারণাস্ত্র বলতে এমন অস্ত্রকে বোঝায় যা মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।

সামরিক বাহিনী ও পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অস্ত্র ব্যবহারের ব্যাপারে দুই ক্ষেত্রে দুই ধরনের নীতি নেওয়া হয়। সামরিক বাহিনী উচ্চক্ষমতার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে, যাতে শত্রুপক্ষের মৃত্যু ঘটানো যায়। সেখানে রাইফেল, মেশিনগানসহ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র যেমন থাকে, তেমনি থাকে ক্ষেপণাস্ত্র, গোলাবারুদসহ আরও ভারী অস্ত্র।

অন্যদিকে পুলিশের উদ্দেশ্য সাধারণত মৃত্যু ঘটানো নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা এমন অস্ত্র ব্যবহার করে, যা দিয়ে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে।

এখন পুলিশ বেশি ব্যবহার করে শটগান। শটগানে রাবার ও সিসার দুই ধরনের গুলি ব্যবহৃত হয়। এটাকে অনেকে ছররা গুলিও বলে থাকেন। এর কার্তুজের মধ্যে ছোট ছোট বল (স্প্লিন্টার) থাকে। বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতামূলক ঘটনা দমনে প্রথমে লাঠিপেটা এবং কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারের চর্চা রয়েছে। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে শটগানের গুলি ছোড়া হয়। এই গুলিতে মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে।

তবে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে রাইফেল, পিস্তল এবং ক্ষেত্রবিশেষ এসএমজির (সাবমেশিন গান) মতো অস্ত্রও আছে। এসব অস্ত্রের গুলি বা বুলেট প্রাণঘাতী। রাইফেল ও এসএমজির গুলি মানুষের শরীরের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে।

তবে অনেক সময় ছররা গুলিও কাছ থেকে লাগলে বা মাথা, বুকসহ শরীরের সংবেদনশীল অংশে বিদ্ধ হলে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। আবার কার্তুজের ধরনের ওপর নির্ভর করে শটগানের গুলি ৪০ থেকে ৫০ মিটারের মধ্যে লাগলে প্রাণনাশের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যু পর দেখা যায়, ছররা গুলিতে তাঁর বুক ও পেট ঝাঁঝরা হয়ে গেছে।

আবু সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, পুলিশের ছররা গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে। ১০ মিটারের মধ্যে গুলি করায় তাঁর (সাঈদ) শরীরের ভেতরের কিছু অঙ্গ ফুটা হয়ে গিয়েছিল। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়।

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। গত ১৬ জুলাই (২০২৪) শিক্ষার্থীদের মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্কের মোড়ে এলে তিনি ছিলেন সবার আগে। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করলেও সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁর এক হাতে ছিল লাঠি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর শটগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে বিরোধের জেরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগ

পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটি ঘাটে লোড-আনলোডে শ্রমিক সরবারহ নিয়ে বিরোধের জেরে শাহিন মৃধা নামে এক ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

মঙ্গলবার (১৩ মে) সকাল ১১টার দিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের মরিচবুনিয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম শাহিন মৃধা। তিনি ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার। তিনি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

আরো পড়ুন:

নাসিক ভবনে অটোরিকশাচালকদের হামলার অভিযোগ

রাতে আবার ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলা

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সার্ভিস জেটি ঘাটে লোড-আনলোডের শ্রমিক সরবারহকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে শাহিন মৃধা ও আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছে। এরই জেরে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৫০-৬০ লোক শাহিন মৃধার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় শাহিন মৃধা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ছিলেন। পরে স্থানীয়রা তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন।

ঘটনা সম্পর্কে শাহীন মৃধার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে, তার ভাই রুবেল মৃধা বলেন, ‍“এক নেতার নির্দেশে কিছু দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে আমার ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। মহসিন তালুকদার কলাপাড়া থেকে শতাধিক লোক ভাড়া করে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। আমরা বিচার দাবি করছি।”

কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার বলেন, “আমি ১২ লাখ টাকার একটি কাজ পেয়েছি। মানে বার্জ আর পেলুডার ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়েছি। কাজ পাওয়ার পরই শাহিন মৃধা আমার কাছে চাঁদা দাবি করেন। তাকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছি। পরে আরো ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে, ওই টাকা না দেওয়ায় গতকাল সোমবার রাতে আমার লোকজনকে মেরে বার্জ আর পেলুডার ছিনতাই করেছে। সেগুলো কোথায় আছে তা জানি না।”

তিনি বলেন, “আজ সকালেও আমার লোকজনকে মারধর করা হয়েছে। আমি থানায় পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে অভিযোগ করেছি, কিন্তু পুলিশ কোনো ভূমিকা নেয়নি। আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি। আগুনের ঘটনার সঙ্গে আমি কোনভাবেই জড়িত না। তিনি (শাহিন মৃধা) নিজেই নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছেন।” 

কলাপাড়া থানার ওসি জুয়েল ইসলাম বলেন, ‍“ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।”

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুলনার ১৭ থানায় ৩০৯ মামলা দায়ের
  • শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে বিরোধের জেরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগ
  • র‌্যাব পুনর্গঠন হচ্ছে, উপদেষ্টার নেতৃত্বে কমিটি
  • র‍্যাব পুনর্গঠন করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • পুলিশের হাতে থাকবে না কোনো মারণাস্ত্র: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নোয়াখালী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ