‘মারণাস্ত্র’ কী, পুলিশের হাতে কেন এই অস্ত্র রাখতে চায় না সরকার
Published: 13th, May 2025 GMT
পুলিশের হাতে ‘মারণাস্ত্র’ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল সোমবার আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মারণাস্ত্র থাকবে শুধু এপিবিএনের (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) কাছে। পুলিশ তাদের কাছে থাকা মারণাস্ত্র জমা দেবে।
কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে মারণাস্ত্র বলতে আসলে কী বোঝানো হয়েছে। পুলিশের হাতে কোন অস্ত্র থাকবে? উত্তর হলো, পুলিশের হাতে কোন অস্ত্র থাকবে, তা ঠিক করবে সরকার গঠিত একটি কমিটি।
সাধারণভাবে মারণাস্ত্র বলতে এমন অস্ত্রকে বোঝায় যা মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।
সামরিক বাহিনী ও পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অস্ত্র ব্যবহারের ব্যাপারে দুই ক্ষেত্রে দুই ধরনের নীতি নেওয়া হয়। সামরিক বাহিনী উচ্চক্ষমতার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে, যাতে শত্রুপক্ষের মৃত্যু ঘটানো যায়। সেখানে রাইফেল, মেশিনগানসহ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র যেমন থাকে, তেমনি থাকে ক্ষেপণাস্ত্র, গোলাবারুদসহ আরও ভারী অস্ত্র।
অন্যদিকে পুলিশের উদ্দেশ্য সাধারণত মৃত্যু ঘটানো নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা এমন অস্ত্র ব্যবহার করে, যা দিয়ে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে।
এখন পুলিশ বেশি ব্যবহার করে শটগান। শটগানে রাবার ও সিসার দুই ধরনের গুলি ব্যবহৃত হয়। এটাকে অনেকে ছররা গুলিও বলে থাকেন। এর কার্তুজের মধ্যে ছোট ছোট বল (স্প্লিন্টার) থাকে। বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতামূলক ঘটনা দমনে প্রথমে লাঠিপেটা এবং কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারের চর্চা রয়েছে। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে শটগানের গুলি ছোড়া হয়। এই গুলিতে মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে।
তবে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে রাইফেল, পিস্তল এবং ক্ষেত্রবিশেষ এসএমজির (সাবমেশিন গান) মতো অস্ত্রও আছে। এসব অস্ত্রের গুলি বা বুলেট প্রাণঘাতী। রাইফেল ও এসএমজির গুলি মানুষের শরীরের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে।
তবে অনেক সময় ছররা গুলিও কাছ থেকে লাগলে বা মাথা, বুকসহ শরীরের সংবেদনশীল অংশে বিদ্ধ হলে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। আবার কার্তুজের ধরনের ওপর নির্ভর করে শটগানের গুলি ৪০ থেকে ৫০ মিটারের মধ্যে লাগলে প্রাণনাশের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যু পর দেখা যায়, ছররা গুলিতে তাঁর বুক ও পেট ঝাঁঝরা হয়ে গেছে।
আবু সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, পুলিশের ছররা গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে। ১০ মিটারের মধ্যে গুলি করায় তাঁর (সাঈদ) শরীরের ভেতরের কিছু অঙ্গ ফুটা হয়ে গিয়েছিল। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়।
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। গত ১৬ জুলাই (২০২৪) শিক্ষার্থীদের মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্কের মোড়ে এলে তিনি ছিলেন সবার আগে। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করলেও সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁর এক হাতে ছিল লাঠি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর শটগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে জামায়াতের আপত্তি নেই: তাহের
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, ‘‘জামায়াত নির্বাচনের পক্ষে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তাতে জামায়াতের আপত্তি নেই।’’
বরিবার (১০ আগস্ট) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ সব কথা বলেন।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচনে যাব, এটা বলে দিয়েছি। সংসদের উচ্চ ও নিম্ন, উভয়কক্ষেই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) বাস্তবায়নে আমাদের দাবি আমরা জানিয়ে যাব। প্রয়োজনে আন্দোলনে যাবে জামায়াত।’’
আরো পড়ুন:
‘ফ্যাসিস্ট ফিরে আসলে দাড়ি-টুপিওয়ালা মানুষ বাড়িতে ঘুমাতে পারবে না’
টাঙ্গাইলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে জামায়াতের গণমিছিল
বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতির অভিজ্ঞতা সুখকর নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পিআর পদ্ধতি প্রয়োজন। পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য নতুন কিন্তু বিশ্বে নতুন নয়। এতে জনগণের ভোটাধিকারের সঠিক মূল্যায়ন করা যাবে।’’
জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন জনগণের দাবি। অতীতের তিনটি নির্বাচন দেখে মানুষের শঙ্কা আছে স্বচ্ছ হবে কি-না? জনগণের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।’’
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলার সীমাবদ্ধতা আছে। সিইসি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। জামায়াত বলছে, নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সিইসি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জীবনের বিনিময়ে হলেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের।’’
এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে জামায়াতের আপত্তি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ড শেষ হয়েছে। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে কী করে সেটা পর্যবেক্ষণ করবে জামায়াত।’’
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে।
ঢাকা/রায়হান/বকুল