জুনে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দুটি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা। ৫ জুন চিলির মাঠে আতিথেয়তা নেবে তারা। ১০ জুন তাদের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া। এই দুই ম্যাচের জন্য একাদশ সাজানো নিয়ে হিমশিম খেতে হবে বিশ্বকাপজয়ী কোচ লিওনেল স্কালোনিকে। ক্লাব বিশ্বকাপের ব্যস্ততার কারণে জাতীয় দলের হয়ে খেলার ছাড়পত্র না–ও পেতে পারেন ১৪ আর্জেন্টাইন ফুটবলার।

১৪ জুন ৩২ দল নিয়ে শুরু হবে ক্লাব বিশ্বকাপের ২১তম আসর। যেখানে ১৪ আর্জেন্টাইনের মধ্যে ৭ জন তো জাতীয় দলে নিয়মিতই—আতলেতিকো মাদ্রিদের হুলিয়ান আলভারেজ, রদ্রিগো ডি পল, নাহুয়েল মলিনা, ইন্টার মিলানের লাওতারো মার্তিনেজ, বেনফিকার নিকোলাস ওতামেন্দি, চেলসির এনজো ফার্নান্দেজ ও ইন্টার মায়ামির লিওনেল মেসি।

এই সাতজন ছাড়াও হুলিয়ান সিমিওনে, আনহেল কোরেয়া, নিকোলাস গনজালেস, গনজালো মন্তিয়েল, মার্কোস আকুনিয়া, জার্মান পেৎসেয়া, লুকাস মার্তিনেজও জুনে ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। সব মিলিয়ে এই ১৪ জনকে ছাড়াই বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে হতে পারে আর্জেন্টিনার।

আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস লিখেছে, স্কালোনি শেষ পর্যন্ত তাঁদের জন্য অপেক্ষা করবেন। ১৪ জনের মধ্যে কেউ যদি ক্লাবের অনুমতি নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে চিলি ও কলম্বিয়া ম্যাচে দেখা যাবে। না হলে এ সুযোগে বেঞ্চের শক্তিটাই পরখ করে দেখবেন আর্জেন্টাইন কোচ। কারণ, ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট আগেই কেটে রেখেছে আর্জেন্টিনা। সে ক্ষেত্রে এই দুই ম্যাচের ফলাফল তাদের বাছাইয়ে খুব একটা প্রভাব ফেলার কথাও নয়।

তবে দুই ম্যাচে খারাপ করলে র‌্যাঙ্কিংয়ে একটা প্রভাব তো পড়বেই। ফিফার সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, ১৮৮৬.

১৬ পয়েন্ট নিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষেই আছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। র‌্যাঙ্কিংয়ের পরবর্তী হালনাগাদ হবে ৫৮ দিন পর, ১০ জুলাই। স্কালোনি নিশ্চয়ই চাইবেন না, দুই ম্যাচে বাজে কিছু হোক। কারণ, দুইয়ে থাকা স্পেনের সঙ্গে আর্জেন্টিনার পয়েন্টের খুব একটা তফাত নেই। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনের পয়েন্ট ১৮৫৪.৬৪।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ল ব ব শ বক প আর জ ন ট ন র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনীতির ‘হৃৎপিণ্ড’ সক্রিয় করবে ডাকসু নির্বাচন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বাংলাদেশের রাজনীতির হৃৎপিণ্ড’ উল্লেখ করে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, সেই হৃৎপিণ্ডকে সক্রিয় করার যে ঘটনাটা ঘটতে যাচ্ছে, সেটা হলো ডাকসু নির্বাচন। এই নির্বাচন স্থির করবে সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লবের কালপর্ব তরুণেরা অতিক্রম করতে পারবেন কি না। রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও সংবিধান বাতিলের কাজটি তরুণেরা করতে পারবেন কি না, তা–ও নির্ধারিত হবে আগামী ডাকসু নির্বাচনে।

শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ফরহাদ মজহার। ‘শিক্ষা, গবেষণা ও রাজনীতি: আসন্ন ডাকসু নির্বাচন’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চিন্তাচর্চার সংগঠন ‘ভাববৈঠকী’।

আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন ফরহাদ মজহার। এক. সব ধরনের বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানচর্চার একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবারের ডাকসু নির্বাচনের আগেই কিছু বিষয় সবাই মিলে নির্ধারণ করা। দুই. যদি কোনো শিক্ষক বছরে ন্যূনতম একটি গবেষণাপত্র ‘পিয়ার রিভিউড জার্নালে’ (যে জার্নালের প্রতিটি গবেষণাপত্র বিশেষজ্ঞরা মূল্যায়ন করেন) প্রকাশ করতে না পারেন, তাহলে সেই শিক্ষকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোনো অধিকার থাকা উচিত নয়। তিন. মৌলিক বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া।

‘আপনাদের হুঁশ নেই’

তরুণদের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ৮ আগস্ট (২০২৪ সাল) একটা সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে, সংবিধানের নামে ছাত্র-তরুণ-সৈনিকদের পরাস্ত করা হয়েছে। তরুণদের যে শক্তি, ক্ষমতা ও গণসার্বভৌমত্ব কায়েমের স্পৃহা ছিল, সেটাকে নস্যাৎ করা হয়েছে আইন ও সংবিধানের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান কায়েম করে। এখন তরুণদের ফাঁসিতে ঝোলানোর প্রক্রিয়া চলছে। যদি জাতীয় নির্বাচন হয় এবং নির্বাচনের পরে এই সংবিধানের অধীনে সরকার গঠিত হয়, তাহলে সেই সরকার তরুণদের বিচার করবে। তিনি বলেন, ‘যে জুলাই ঘোষণাপত্র শুনলাম সেখানে পরিষ্কার বলা আছে আপনাদের (তরুণদের) আইনি সাহায্য দেওয়া হবে, আর কিছু দেওয়া হবে না। অথচ এগুলো নিয়ে আপনাদের হুঁশ নেই।’

‘শিক্ষকদের ক্ষেত্রে পরিবর্তন নেই’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৯০ জন শিক্ষককে শিক্ষার্থীরা বর্জন করেছেন বলে অনুষ্ঠানে জানান অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন, এখন ৭ জন শিক্ষক দিয়ে তাঁর বিভাগ (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) চালানো হচ্ছে। এখানে শিক্ষকপ্রতি শিক্ষার্থী ২০০ জন। এমন অবস্থায় কোনো শিক্ষকের পক্ষে গবেষণার কাজ করা সম্ভব নয়।

অভ্যুত্থানের পরও দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ প্রসঙ্গে সামিনা লুৎফা বলেন, ‘সম্প্রতি একটি দলের শিক্ষকেরা সহ-উপাচার্যের (শিক্ষা) কাছে গিয়ে বলেছেন যে তাঁদের দল থেকে নিয়োগ দিতে হবে। তাহলে তো আমরা সেই আগের জায়গায় ফেরত গিয়েছি। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগে আওয়ামী লীগ না করলে সব দরজা বন্ধ ছিল। অন্য কিছুর মূল্য দেওয়া হয়নি, একমাত্র যোগ্যতা ছিল রাজনৈতিক পরিচয়। ৫ আগস্টের পরে শুনলাম, যাঁদের বিভিন্ন পদে বসানো হবে, তাঁদেরও মূল যোগ্যতা রাজনৈতিক পরিচয়। এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি।’

ভাববৈঠকীর প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ রোমেল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহমান মৈশান, খোরশেদ আলম ও যোবায়ের আল মাহমুদ।

ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা দাবি

আলোচনায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারাও বক্তব্য দেন। তাঁদের বক্তব্যে ছাত্ররাজনীতিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উঠে আসে। তাঁরা বলেছেন, পুরোনো সন্ত্রাস-দখলদারির রাজনীতি ফিরতে দেওয়া যাবে না। ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হবে।

এবারের ডাকসু নির্বাচনের জন্য বয়সসীমা তুলে দেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে বলে মনে করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহিদ আহসান। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একাংশের উদ্যোগে গঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।

ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক শিক্ষার্থীকে পুনর্ভর্তির (লেখাপড়ায় বিরতির কারণে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির সুযোগ) সমালোচনা করেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ।

ডাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।

গেস্টরুম-গণরুমকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে অনেকে পুরো ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে বলে মন্তব্য করেন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আরমানুল হক।

ডাকসু নির্বাচন ও সংগঠনভিত্তিক রাজনীতিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সহকারী সাধারণ সম্পাদক খায়রুল এহসান বলেন, শিক্ষকদের রাজনীতি চিরতরে নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। তাহলে ছাত্ররাজনীতিও ঠিক হয়ে যাবে।

আয়োজকেরা জানান, এই আলোচনায় বক্তব্য দিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শীর্ষ এক নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি আসেননি। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক একজন নেত্রীকেও আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তিনিও আসেননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ