আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁকে ভয় করা দুটিই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার বীজ আমাদের আধ্যাত্মিক হৃদয়ে তখন থেকেই রোপিত হয়েছে, যখন আল্লাহ নিজেকে সব আত্মার কাছে প্রকাশ করেছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’ এবং প্রতিটি আত্মাই উত্তর দিয়েছিল, হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী দিলাম।’ (সুরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৭২)

আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং ভয়, উভয়টিই আমাদের সিরাতুল মুস্তাকিমের ওপর রাখার জন্য এবং তিনি আমাদের জন্য যে উপযুক্ত জীবনব্যবস্থা নির্ধারণ করেছেন, তা অনুসরণ করার জন্য। তবু এটা তো ঠিক যে আপাতদৃষ্টে এই দুটি অনুভূতিকে মনে হয় বিপরীত ধরনের। তাই উভয়ের মধ্যে কীভাবে ভারসাম্য রাখা যায়? আসুন, দেখি।

মুমিনদের ভালোবাসা

আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, মুমিনদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা দৃঢ়তর। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৬৫)

 এখানে ‘দৃঢ়তর’ মানে হলো, অন্য যেকোনো ভালোবাসার তুলনায় শক্তিশালী। আমাদের আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা আমাদের ভালো কাজ করতে, নামাজ পড়তে এবং আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তৈরি করতে অনুপ্রাণিত করে। যদি আমরা আমাদের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার বীজটি চর্চা করি, তবে আমাদের ভালোবাসা আরও শক্তিশালী হবে।

আরও পড়ুনবান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কীভাবে সেই চর্চা করব? এটা বোঝার জন্য প্রিয় নাতি হোসাইন (রা.

)-এর সঙ্গে মহানবীর একটি সুন্দর কাহিনি রয়েছে। হোসাইন তখন ছোট ছিলেন, তিনি তাঁর বাবা আলী (রা.)-এর কাছে ভালোবাসা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর বাবা কি আল্লাহকে ভালোবাসেন এবং আলী উত্তর দিয়েছিলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। এরপর তিনি জানতে চাইলেন, তাঁর বাবা কি তাঁর মাতার পিতা, মানে মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসেন। আলী আবারও বলেছিলেন, হ্যাঁ। তারপর তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তাঁর বাবা কি তাঁর মা, মানে ফাতিমা (রা.), নিজেকে এবং তাঁর ভাইকে ভালোবাসেন। এবং আলী বললেন, তিনি সবার সঙ্গে ভালোবাসা অনুভব করেন। তখন ছোট্ট হোসাইন একটি নিরীহ প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বাবা, আপনি কীভাবে আপনার হৃদয়ে এতগুলো ভালোবাসা একত্রে জায়গা দেন?’

 আলী (রা.) এই চতুর প্রশ্নে আনন্দিত হন এবং উত্তর দেন, ‘তোমার মাতার পিতা, তোমার মা, তোমাকে এবং তোমার ভাইকে আমি আল্লাহর প্রতি আমার ভালোবাসার কারণেই ভালোবাসি, যিনি আমাকে তোমাদের সবার প্রতি এই ভালোবাসা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।’

 আল্লাহর প্রতি আমাদের ভালোবাসাই ভালো কাজ করতে এবং ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুনযুবকের সৎ কাজ এবং পাথর সরে যাওয়া০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আল্লাহর প্রতি ভয়

আসলে শক্তিশালী ভালোবাসা থেকেই আল্লাহর প্রতি ভয়ের অনুভূতি জন্ম নেয়। আলেমগণ বলেন যে আল্লাহর প্রতি ভয় এমন ভয় নয়, যা আমরা সৃষ্টির কাছে অনুভব করি। অর্থাৎ আমরা ভালোবাসার কারণেই ভয় পাই যে এমন কিছু যেন করে না বসি, যার কারণে আমাদের প্রিয় আল্লাহ আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও ভয় গভীরভাবে সম্পর্কিত। ভালোবাসা সরাসরি আশার সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা আল্লাহর দয়া আশা করি এবং আমরা তাঁর দয়া ও ভালোবাসা পেতে ভালো কাজ করার চেষ্টা করি। আশা করি যে তিনি আমাদের ছোট ছোট অপরাধ আমলে নেবেন না উপেক্ষা করবেন। এবং একই সঙ্গে আমরা বড় অপরাধ থেকে বিরত থাকি। কারণ, আমরা আল্লাহর শাস্তির ভয় পাই। (সুরা বনি ইসরায়েল, আয়াত: ৫৭)

এই ভালোবাসা, আশা এবং আল্লাহর প্রতি ভয়কে দৈনন্দিন জীবনের একটি উদাহরণ দিয়ে বর্ণনা করা যায়। ধরা যাক, সামনে আমার চাকরির একটি পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে, আমাদের ভয় হয়, টেনশন হয় যে পাস করতে পারব কি পারব না। আবার এই ভয় আমাদের ভালো প্রস্তুতি নিতে অনুপ্রাণিত করে। এই প্রস্তুতিকে আমরা ভালো কাজ করার এবং গুনাহ থেকে দূরে থাকার সঙ্গে তুলনা করতে পারি। আমরা যে প্রস্তুতি নিয়েছি এবং পড়াশোনা করতে সময় ব্যয় করেছি, তার কারণে আমরা আশা করি যে আমরা ভালো মার্ক পেয়ে পাস করব।

মনে রাখতে হবে, শুধু আশা ও ভালোবাসা যেমন পরীক্ষায় সফল হতে যথেষ্ট নয়, বরং ভয় ও প্রস্তুতি দরকার। তেমনি আল্লাহর প্রতি শুধু ভালোবাসা দুনিয়ার পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।

ইসলাম বেত্তাগণ একমত যে এই দুনিয়া একটি পরীক্ষা এবং আল্লাহর চিরকালীন সন্তুষ্টি লাভের জন্য এই পরীক্ষায় আমাদের পাস করতে হবে। তাই আল্লাহর দেওয়া বিধিনিষেধ জানা ও মানার কোনো বিকল্প নেই।

‘ডিসকভারিং ইসলাম’ আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুনযেভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এল১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র ভ ল প রস ত ত কর ছ ল ন পর ক ষ ক জ কর আল ল হ র জন য র একট

এছাড়াও পড়ুন:

ন্যায়বিচার হয়েছে, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ: সালাহউদ্দিন আহমদ

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় যে রায় হয়েছে, তাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই বিচার, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ।

আজ সোমবার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে আসামিদের অপরাধের তুলনায় এই সাজা যথেষ্ট কম। কিন্তু আইনে এর ওপরে কোনো সাজা নাই।

আজ বেলা তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই প্রতিক্রিয়া জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সোমবার এই রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে কয়েকটি জিনিস প্রমাণিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার যত শক্তিশালী হোক, যত দীর্ঘদিনই রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধভাবে পরিচালিত করুক, ক্ষমতা ভোগ করুক, একদিন না একদিন আদালতের কাঠগড়ায় তাঁদের দাঁড়াতেই হবে।

আরও যেসব মামলা আছে, সেই মামলাগুলোতেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই বিচার অপরাধের তুলনায় যথেষ্ট নয়। কিন্তু এটা শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নয়, সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ। ভবিষ্যতে যাতে এই রাষ্ট্রে কেউ আর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম না করতে পারে, ফ্যাসিস্ট না হয়ে উঠতে পারে, একনায়কতন্ত্র যাতে প্রতিষ্ঠা না হয়, তার একটি উদাহরণ। এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা শিক্ষা। শুধু অতীতের জন্য বিচার নয়, এটা মনে রাখতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ