আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সচেতন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। গত মঙ্গলবারের প্রেস ব্রিফিংয়ে এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপমুখপাত্র (প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন) টমি পিগট এ কথা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মতপ্রকাশ, সমাবেশ এবং সংগঠনের স্বাধীনতার প্রতি বাংলাদেশকে সম্মান জানাতে বলেছেন তিনি।

ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অধ্যাদেশ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এটি কার্যত দলটির রাজনৈতিক পরিচয় মুছে ফেলা এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনে অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করবে। এ বিষয়টিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কীভাবে দেখছে?’ প্রশ্নকারী উল্লেখ করেন, ‘আগের ব্রিফিংয়ে ট্যামি ব্রুস (মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র) বাংলাদেশে নির্বাচন ও গণতন্ত্র, বিশেষ করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছিলেন। এখন তারা দলটিকেই কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করল। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?’

এই প্রশ্নের উত্তরে পিগট বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং এর নেতাদের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আমরা সচেতন। আমরা বাংলাদেশের কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে অন্যটির চেয়ে বেশি সমর্থন করি না। আমরা একটি অবাধ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সব ব্যক্তির জন্য সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া সমর্থন করি। আমরা বাংলাদেশসহ সব দেশকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং সংগঠনের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানাই।’

তখন প্রশ্নকারী ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উগ্রপন্থি মতাদর্শকে উৎসাহিত করা’র বিষয়ে জানতে চান। জবাবে পিগট বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমাদের ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সম্পর্ককে গুরুত্ব দিই। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা। আর আপনার অন্য প্রশ্নের বিষয়ে আমি এরই মধ্যে মন্তব্য করেছি, এর বেশি কিছু বলার নেই।’

গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম র ক ন য ক তর ষ ট র র স ব ধ নত ন ষ দ ধ কর র জন ত ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ