নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়া যাবে না: বাম জোট
Published: 15th, May 2025 GMT
দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত লাভজনক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের পুরোনো রেলস্টেশন চত্বরে বাম জোটের নেতা–কর্মীরা বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালের পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার পরিকল্পনার প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করেন। সমাবেশে বক্তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সম্ভাব্য মানবিক করিডর এবং দেশে কাতারের সমরাস্ত্র কারখানা তৈরির প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেন।
বক্তারা বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারাগারে আটক বাসদ নেতা আল কাদেরি, ছাত্রনেতা মিরাজ উদ্দিন, শ্রমিকনেতা রোকন উদ্দিনের মুক্তি এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর পুলিশের দমন-পীড়ন বন্ধের দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘের পুরস্কার পাওয়ার লোভে দেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশ করিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার মানবিক করিডর দিয়ে আরও রোহিঙ্গা প্রবেশ করাতে চাইছে।
আজ বিকেল পাঁচটার দিকে ব্যানার হাতে দাঁড়ান নেতা-কর্মীরা। ব্যানারে তাঁদের দাবিগুলো লেখা ছিল। সেগুলো হলো, ‘নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়া চলবে না’, ‘কথিত মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়ানোর চক্রান্ত রুখো’, ‘কাতারকে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া যাবে না’ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি অশোক শাহার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাসদ (মার্ক্সবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সমন্বয়ক শফিউদ্দিন কবির, বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ মহিন উদ্দিন প্রমুখ। বক্তারা বলেন, আরাকানে মানবিক করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি স্পর্শকাতর বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এ ধরনের বিষয়ে সরকার একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
চট্টগ্রাম বন্দর প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দিতে চাইছে সরকার। জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ২০০৬ সালে টার্মিনাল পরিচালনা করতে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। অথচ সেই ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতেই অন্তর্বর্তী সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ভার তুলে দিতে চাইছে। এটি কেন, তার জবাব দিতে হবে।
বক্তারা বলেন, কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির খাতে বিনিয়োগ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারের এ ধরনের ব্যবসায়ী উদ্যোগ বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলবে। বিদেশি কোনো দেশের সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা বাংলাদেশে হতে পারে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বক ত র পর চ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন
নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ কর্মসূচির আয়োজন করেন মনোনয়নবঞ্চিত এক প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকেরা।
নওগাঁ-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খানের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী।
খাজা নাজিবুল্লাহর সমর্থকেরা বেলা ১১টার দিকে নজিপুর জিরো পয়েন্ট এলাকায় নওগাঁ-নজিপুর সড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন করেন। এ কর্মসূচিতে পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা থেকে আসা নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। তাঁদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও এতে অংশ নেন। মানববন্ধনের আগে জিরো পয়েন্ট এলাকায় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিতর্কিত ব্যক্তি সামসুজ্জোহা খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি মাঠে ছিলেন না। আওয়ামী লীগের সময়ে হরতালসহ বিভিন্ন আন্দোলনে খাজা নাজিবুল্লাহর নেতৃত্বে তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা মাঠে ছিলেন। তাঁরা নওগাঁ-২ আসনে মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে খাজা নাজিবুল্লাহকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানান।
নজিপুরের সাবেক পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন, নাজিবুল্লাহ ত্যাগী, পরীক্ষিত ও বারবার কারা নির্যাতিত নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই পত্নীতলা ও ধামইরহাট বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। অথচ তৃণমূলের মতামত অগ্রাহ্য করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে। খাজা নাজিবুল্লাহকে প্রার্থী ঘোষণা না করা হলে তৃণমূল বিএনপি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
ধামইরহাট উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগবিরোধী সব আন্দোলনে যাঁরা মাঠে সক্রিয় ছিলেন, তাঁরা সবাই খাজা নাজিবুল্লাহর পক্ষে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হোক—এটি শুধু বিএনপির নেতা–কর্মীদের চাওয়া নয়, দুই উপজেলার সব মানুষের চাওয়া। তাই এখানে মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে আহ্বান জানাতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সামসুজ্জোহা খান বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। যাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’
মনোনয়নবঞ্চিত খাজা নাজিবুল্লাহ বলেন, ‘সব আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে সক্রিয় ছিলাম। দুর্দিনে তৃণমূল নেতাদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব। আমরা কেউ দলের ঊর্ধ্বে নই। দলের জন্য কাজ করছি। পুনর্বিবেচনা হলে মনোনয়ন পেতে পারি। দলই সবার আগে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ার হোসেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান, ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির সদস্য রেজাউল ইসলাম, ধামইরহাট মহিলা দলের সহসভাপতি নাহিদা সুলতানা, জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল ধামইরহাট শাখার আহ্বায়ক রকিবুল হাসান, পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আবু তাহের প্রমুখ।