দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত লাভজনক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের পুরোনো রেলস্টেশন চত্বরে বাম জোটের নেতা–কর্মীরা বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালের পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার পরিকল্পনার প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করেন। সমাবেশে বক্তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সম্ভাব্য মানবিক করিডর এবং দেশে কাতারের সমরাস্ত্র কারখানা তৈরির প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেন।

বক্তারা বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারাগারে আটক বাসদ নেতা আল কাদেরি, ছাত্রনেতা মিরাজ উদ্দিন, শ্রমিকনেতা রোকন উদ্দিনের মুক্তি এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর পুলিশের দমন-পীড়ন বন্ধের দাবি জানান।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘের পুরস্কার পাওয়ার লোভে দেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশ করিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার মানবিক করিডর দিয়ে আরও রোহিঙ্গা প্রবেশ করাতে চাইছে।

আজ বিকেল পাঁচটার দিকে ব্যানার হাতে দাঁড়ান নেতা-কর্মীরা। ব্যানারে তাঁদের দাবিগুলো লেখা ছিল। সেগুলো হলো, ‘নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়া চলবে না’, ‘কথিত মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়ানোর চক্রান্ত রুখো’, ‘কাতারকে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া যাবে না’ ইত্যাদি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি অশোক শাহার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাসদ (মার্ক্সবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সমন্বয়ক শফিউদ্দিন কবির, বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ মহিন উদ্দিন প্রমুখ। বক্তারা বলেন, আরাকানে মানবিক করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি স্পর্শকাতর বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এ ধরনের বিষয়ে সরকার একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

চট্টগ্রাম বন্দর প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দিতে চাইছে সরকার। জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ২০০৬ সালে টার্মিনাল পরিচালনা করতে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। অথচ সেই ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতেই অন্তর্বর্তী সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ভার তুলে দিতে চাইছে। এটি কেন, তার জবাব দিতে হবে।

বক্তারা বলেন, কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির খাতে বিনিয়োগ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারের এ ধরনের ব্যবসায়ী উদ্যোগ বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলবে। বিদেশি কোনো দেশের সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা বাংলাদেশে হতে পারে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বক ত র পর চ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পুতিনকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে না

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৩ সালের মার্চে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে সময় পুতিনকে একজন ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যায়িত করে বলেছিলেন, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ন্যায়সংগত। তবে যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য কোনো দেশ নয়।

২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, ওই সংবিধির আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কখনো ওই চুক্তিকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করার জন্য অনুসমর্থনের জন্য পদক্ষেপ নেয়নি।

বিল ক্লিনটন রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরের দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সম্পৃক্ততার অবসান ঘটান। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।

সে কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কার্যকারিতা আমেরিকার মাটিতে নেই।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যে আইসিসির প্রতি বৈরিতা করছে। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত এই আদালতের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা যুদ্ধাপরাধ করেছেন, এমন অভিযোগের তদন্ত করায় আইসিসির ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন।

আইসিসির এখতিয়ারের এই ঘাটতিই পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আজকের বৈঠকের স্থান হিসেবে আলাস্কাকে বেছে নেওয়ার একটি কারণ হতে পারে।

অবশ্য আইসিসির স্বাক্ষরকারী দেশ মঙ্গোলিয়ায় ২০২৩ সালের আগস্টে সফর করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সে সময় তাঁকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের অনুরোধ করা হলেও তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল দেশটি। সে জন্য মঙ্গোলিয়াকে কোনো পরিণতি ভোগ করতে হয়নি।

শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আইন কেবল ততটাই কার্যকর হয়, যতটা দেশগুলোর সরকার এবং তাদের নেতারা কার্যকর করতে চান। আর এই ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে চান এবং এই সাক্ষাৎ তাঁর পছন্দ মতো করতে তাঁকে আটকানোর মতো কিছুই নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ