মধুখালীর আগাম লিচুতে খরার ধাক্কা, তবু চাষিদের মুখে উৎসবের হাসি
Published: 16th, May 2025 GMT
ফরিদপুরের মধুখালীর জাহাপুরের লিচু রসালো ও সুস্বাদু। এ ছাড়া আবহাওয়াগত কারণে এখানকার লিচু পাকে দেশের অন্য এলাকার আগেই। এর ফলে মৌসুমের শুরুতেই জাহাপুরের লিচুর কদর বাড়ে। এই লিচুর বৈশিষ্ট্য—রং ও মান ভালো, খেতে সুস্বাদু, দামও সহনীয়। জাহাপুর ইউনিয়নের জাহাপুর, দপ্তরদিয়া, টেংরাকান্দি, মনোহরদিয়া, চর মনোহরদিয়া, খাড়াকান্দি ও মির্জাকান্দি গ্রামে লিচুর আবাদ বেশি।
তবে চলতি বছর খরার কারণে লিচুর ফলন আশানুরূপ হয়নি। আকারে ছোট, মিষ্টিও কম। গরমে ফেটে পড়ায় উৎপাদন কমেছে। তবুও এলাকায় লিচু নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার ঘাটতি নেই। জাহাপুর গ্রামে ১০৪ শতাংশ জমিতে লিচুবাগান করেছেন ওয়াদুদ মাতুব্বর (৫৫)। তিনি অন্তত ৩০ বছর ধরে লিচুবাগান করছেন। ১১ মে সরেজমিনে দেখা যায়, স্ত্রী আসমা বেগম (৪৫), ছেলেমেয়ে ও প্রতিবেশীরা বাগানে বসে লিচুর আঁটি বাঁধছেন। এমনকি পাশের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে জামাতা জাহিদ খানও (৩৮) এসেছেন।
জামাতা জাহিদ খান বলেন, ১০ বছর ধরে তিনি লিচু ভাঙার সময় শ্বশুরবাড়িতে আসেন। আঁটি বাঁধা তাঁর কাছে কষ্ট নয়, বরং উৎসবের মতো।
ওয়াদুদ মাতুব্বর জানান, এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়নি। অন্যবারের থেকে ফলন তিন ভাগের এক ভাগ কমে গেছে। লিচু আকারে ছোট হয়েছে, মিষ্টিও তেমন হয়নি। তাঁর স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, অনেকে মনে করেন, লিচু উৎপাদনে কোনো খাটনি নেই, সহজ কাম। কিন্তু লিচুর মুকুল আসার পর থেকে লিচু নামানোর আগপর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক, কীটনাশক, ছত্রাক দূর করতে অন্তত এ জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। খরার জন্য লিচুর ফলন ভালো হয়নি। মাঘ মাসের শেষের দিকে বৃষ্টি হলে এত খারাপ অবস্থা হতো না। ওই সময় লিচুর জন্য বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল, কিন্তু এক ফোটা বৃষ্টিও হয়নি।
পাইকারি বিক্রেতা দোহার এলাকার মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’