কাকরাইলে জবি শিক্ষার্থীদের সমাবেশ শুরু
Published: 16th, May 2025 GMT
চার দফা দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর দুপুর ২টার দিকে কাকরাইল মোড়ে তৃতীয় দিনের মতো পূর্বঘোষিত সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে এই সরকারের কিসের সমস্যা। এই দাবি আদায় করতে গিয়ে আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি সাংবাদিকরাও আহত হয়েছেন। জাতীয় বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছেন। কিন্তু এই সরকারের আমাদের রক্তের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও তারা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার মেনে নিতে চাইছে না।
সমাবেশে শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সামসুল আরেফিন বলেন, আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সব রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়ে যে নজির স্থাপন করেছে; তা ইতিহাসে বিরল। আমাদের মধ্যে মতামতের পার্থক্য থাকতে পারে। তবে আমরা জবি প্রশ্নে সর্বদা এক।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই আন্দোলনে উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি। কিন্তু জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হলে আমরা দেখেন না, আপনারা ঘুমান। আমাদের ষ্পষ্ট দাবি, বাজেটে ৩০৬ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে। আমরা এই স্থান ছেড়ে যাব না।
এর আগে আজ শুক্রবার সকাল থেকে কাকরাইল মোড়ে বাসে বাসে করে জমায়েত হতে শুরু করেন জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বেলা পৌনে ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে রওয়ানা হয়। পদযাত্রা প্রথমে গুলিস্তান মাজার গেটে বাধার মুখে পড়েন। পরে মৎস ভবনে ফের পুলিশের বাধা অতিক্রম করে যমুনা অভিমুখে এগিয়ে যেতে থাকেন জবি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড়ে যেতেই অতর্কিত টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, গরম পানি নিক্ষেপ করতে শুরু করে পুলিশ। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন। এরপর রাতে আলোচনার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মাসিক নিয়ে অসচেতনতা এসডিজি অর্জনে বাধা
মাসিক নিয়ে অসচেতনতা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। ১৭টির মধ্যে অন্তত ৬টি লক্ষ্য ব্যাহত হচ্ছে। উন্নয়নকর্মীরা মনে করেন, মাসিক নিয়ে সমাজে যে ট্যাবু আছে, তা ভাঙতে হবে।
মাসিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ। এ সংস্থার উপপরিচালক শাহনাজ সুমি জানান, মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার চিহ্নিত সমস্যাগুলো দূর করতে না পারলে এসডিজির বেশ কয়েকটি লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হতে পারে। এর মধ্যে ৩ (সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ), ৪ (মানসম্মত শিক্ষা), ৫ (লিঙ্গ সমতা), ৬ (নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন), ৮ (শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) এবং ১২ (পরিমিত ভোগ ও উৎপাদন) নম্বর ধারা উল্লেখযোগ্য। এসব লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।
মাসিক হলেই বিয়ে
আদমশুমারি অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাক্ষরতার হার ৪৫ দশমিক ৩ ভাগ। কন্যাশিশুরা বাল্যবিয়ের শিকার। মাসিক শুরু হলে কয়েকটি গ্রামে কন্যাশিশুদের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য করা হয়। মেরকুটার আসমার বিয়ে হয় ১১ বছর বয়সে। বর্তমানে তিন সন্তানের মা তিনি। আসমা সমকালকে বলেন, ‘লেখাপড়া কইরা চাকরি করার ইচ্ছা ছিল; কিন্তু বাবা-মা সেই সুযোগ দেন নাই। কারণ মাইয়া মাইনষের মাসিক অইলে নাকি তারে আর ঘরে রাখতে নাই। বিয়া দিওন লাগে।’
শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়; সিলেট, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা ও জামালপুরে মাসিক নিয়ে এমন কুসংস্কার ধারণ করা হয়। এসব জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাসিক শুরু হলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সমাজে ট্যাবু
মাসিকের সময় আদিবাসী নারীদের মধ্যে ট্যাবু কাজ করে। অপবিত্র ও ধর্মীয় কাজে অংশগ্রহণের অনুপযোগী বিবেচনা করা হয়। ডিম খাওয়া নিষেধ। খাবার স্পর্শ করতে পারে না। খোলা চুলে বাইরে বের হওয়া যায় না। মাসিক চলাকালে ঘরে কোণঠাসা করে রাখা হয়। স্যানিটারি ন্যাপকিন নয়, তারা পুরোনো কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করেন।
আদিবাসী অধিকারকর্মী ডালিয়া চাকমা বলেন, আদিবাসীদের মধ্যে এখনও ৪০ ভাগ কিশোর-কিশোরী মাসিক সম্পর্কে জানেন না। এ সময় কী ধরনের স্বাস্থ্যসেবা বা যত্ন নিতে হয়, তাও জানেন না। মাসিক নিয়ে অসচেতনতা ও ট্যাবুর কারণে এ জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ কন্যাশিশু ও কিশোরী দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
হতে পারে জরায়ুমুখে ক্যান্সার
মাসিক হলো নারীর শারীরবৃত্তীয় প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে শরীরে নিঃসৃত হরমোনের সরাসরি যোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শেহরিন এফ সিদ্দিকা সমকালকে বলেন, ‘মাসিকের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নারীর জরায়ু (ইউটেরাস) ও ডিম্বাশয় (ওভারি)। এটি শুধু নারীর যৌনতা ও সন্তান ধারণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বরং নারীর সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বিপাকক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করে যেসব হরমোন, তার উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। মাসিক স্বাস্থ্যের অব্যবস্থাপনার ফলে এসব প্রাকৃতিক কর্মপ্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়।’
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, ‘মাসিকের সময় কেবল পরিচ্ছন্নতা এবং সচেতনতার অভাবে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দীর্ঘদিন অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহারের ফলে নারীদের জরায়ুমুখের ক্যান্সার, ইনফেকশন, যৌনাঙ্গে ঘা, চুলকানি, অস্বাভাবিক সাদা স্রাব প্রভৃতি শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। শারীরবৃত্তীয় এসব নানা জটিলতায় দেশে প্রতিবছর ১৩ হাজার নারী মারা যাচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে।’
স্কুল থেকে ঝরে পড়ে কিশোরী
পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধার অপর্যাপ্ততার কারণে কিশোরী ও নারীরা প্রজননতন্ত্রের নানা সংক্রমণে ভোগেন। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ওয়াটারএইডের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, দেশের ৮২ শতাংশ স্কুলে মাসিক ব্যবস্থাপনায় যথাযথ সুযোগ নেই। এদিকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন বেজলাইন জরিপ অনুযায়ী, ৪০ শতাংশ মেয়েশিক্ষার্থী তাদের মাসিককালে স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। পারিবারিক পর্যায়েও কিশোরী ও নারীরা অনেক টয়লেট বা বাথরুমে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করার সুযোগ পান না। মাসিকের কাপড় প্রায়ই শুধু পানিতে ধুয়ে ব্যবহার করেন, যা সাবান ও পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানো উচিত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো লুকিয়ে শুকানো হয়। ফলে যথাযথভাবে শুকায় না। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
এদিকে কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য ও সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতকরণে ২০২১ সাল থেকে কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। তাদের ২০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভলান্টিয়ার পিয়ার লিডার মডেল যুক্ত করেছে সিরাক-বাংলাদেশ।
এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত জানান, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় ইউএসএইড সুখী জীবন প্রকল্পের অধীনে সিরাক বাংলাদেশ ২০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা করে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে কেন্দ্রগুলোর আশপাশের এলাকা ও বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীর মধ্যে কৈশোরবান্ধব প্রজনন ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে।
প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ
২০২১ সালের জাতীয় ঋতুকালীন স্বাস্থ্য কৌশল প্রণয়ন করে সরকার। তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রথা, সংস্কার, ভ্রান্ত ও নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা নারী ও কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় বাধা। এ ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী, মানসম্পন্ন, নিরাপদ ও পুনঃব্যবহারযোগ্য পণ্যের অভাব রয়েছে। সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। পানি ও স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জাতীয় কৌশল ২০১৭-২০৩০-এ কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য,
পুষ্টি, সহিংসতা ও মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব
দিলেও কার্যকর বাস্তবায়ন নেই। এ জন্য বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জাতীয় কৌশল পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।