মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন করে যে শুল্কারোপ করেছেন, পরোক্ষ করের চরিত্র অনুযায়ী তার চূড়ান্ত দায়ভার যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ওপর পড়বে। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প কেন এই উদ্যোগ নিলেন? এটা নিয়ে নানা ধরনের বিশ্লেষণ আছে।

নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান, জোসেফ স্টিগলিটজসহ অন্যান্য অর্থনীতিবিদ ট্রাম্পের এই নীতির সমালোচনা করেছেন। সম্প্রতি তাঁদের লেখা ও টক শোতে প্রচারিত আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে এ রকম, ট্রাম্পের এই নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হ্রাস পাবে, ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে, প্রবৃদ্ধি থমকে যাবে, রাজস্ব হ্রাস পাবে, মার্কিন কর্তৃত্ব খর্ব হবে এবং সর্বোপরি বিশ্ব অর্থনীতিতে মহামন্দা দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশসহ ৫৭টি দেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হারে এই শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ও অন্যান্য দেশে কী ক্ষতি বয়ে আনতে পারে, তা জেনেশুনেই ট্রাম্প প্রশাসন সেই পথে হেঁটেছে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণা বাহ্যিকভাবে ‘খ্যাপাটে’ মনে হতে পারে। তবে এতে অন্তর্নিহিত মার্কিন বাণিজ্য স্বার্থের বিষয়টি (প্রধানত ১.

৩ ট্রিলিয়ন ডলারের ঘাটতি দূর করা) বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।

২.

গত ৯০ এপ্রিল ট্রাম্প এই পাল্টা শুল্ক চীন ব্যতীত অন্যান্য দেশের জন্য তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন এবং বাড়তি ১০ শতাংশ বেশি শুল্ক আরোপ করেছেন। এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ আগামী ৮ জুলাই শেষ হওয়ার কথা। সেই হিসাবে হাতে মাত্র দুই মাসের কম সময় রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য সমাধানের পথ কী হতে পারে?

এই নির্ধারিত সময়ে বাণিজ্য আলোচনার মাধ্যমে উভয়ের জন্য একটা গ্রহণযোগ্য (উইন-উইন) পন্থা বের করা জাতীয় অগ্রাধিকার। এর মূল কারণ হচ্ছে, মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১৭ শতাংশ এবং এর সঙ্গে নারীসহ প্রায় আট লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান জড়িত। ট্রাম্পের স্থগিতাদেশ একটা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে, দর–কষাকষির মাধ্যমে যে দেশ যত ‘গ্রহণযোগ্য’ সমাধান বের করতে পারবে, তার জন্য এই শুল্কের বোঝা তত নমনীয় হবে। সফলভাবে আলোচনা সম্পন্ন করতে পারলে নতুন বাস্তবতায় স্বস্তি ফিরবে; এমনকি আরও নতুন সুযোগ সৃষ্টিও হতে পারে।

দুই দেশের বাণিজ্য আলোচনার সুবিধার জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মূল উদ্বেগের জায়গা চিহ্নিত করা এবং একই সঙ্গে এ–সংক্রান্ত নানা তথ্যাদিও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের বড় আপত্তির জায়গাটি হচ্ছে ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভের (ইউএসটিআর) রিপোর্ট ২০২৫-এ উল্লেখিত বাণিজ্য বাধা। এতে শুল্ক ও অশুল্ক নিয়ে মোট আটটি সমস্যার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাংলাদেশে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে প্রবেশ করতে পারছে না।

বাংলাদেশে আমদানি পর্যায়ে ছয় ধরনের শুল্ক–কর রয়েছে। এগুলো হলো আমদানি শুল্ক (সিডি), নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি), সম্পূরক শুল্ক (এসডি), ভ্যাট, আগাম আয়কর (এআইটি), আগাম কর (এটি)। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এই ছয়টি আহরিত করের অংশ হচ্ছে যথাক্রমে ২৭, ১, ৭, ৩১, ১৮ এবং ১৫ শতাংশ।

প্রথম তিনটি হচ্ছে শুল্কবন্দরে প্রবেশে শুল্ক ও ছায়া শুল্ক (প্যারা ট্যারিফ) সংক্রান্ত; অন্য তিনটি অভ্যন্তরীণ কর, যা বাণিজ্য নিরপেক্ষ কর হিসেবে বিবেচিত। শুল্ক ও ছায়া শুল্কসংক্রান্ত মোট করের হার প্রায় ৩৬ শতাংশ এবং ৬৪ শতাংশ দেশীয় কর। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় এই ৩৬ শতাংশ অংশের শুল্ক–কর হ্রাস করার প্রসঙ্গ বিবেচনায় আসতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশের ট্যারিফ লাইনে প্রায় সাত হাজার পণ্য রয়েছে। এতে ০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারিত আছে। তবে আমদানি শুল্কের পাশাপাশি ছায়া শুল্ক হিসাবে ১৪টি ধাপে এসডি, ৮টি স্তরে আরডি রয়েছে। উল্লেখিত মার্কিন প্রতিবেদন ২০২৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশের আমদানি শুল্কের সহজ গড় (সিম্পল অ্যাভারেজ) প্রায় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। ছায়া শুল্কের হিসাব অন্তর্ভুক্ত করলে এই গড় দাঁড়ায় প্রায় ২৭ শতাংশ। আমদানি স্থলে অন্যান্য কর যুক্ত করে সামগ্রিক সহজ গড় হয় ৫৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে এই সহজ গড় ৫৪ শতাংশ।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য তথ্য অনুযায়ী, দুই দেশের (বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের) মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করে প্রায় ৮ বিলিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আসে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের তথ্যাদি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ২ হাজার ৫৭৬টি এইচএইচ (পণ্য চিহ্নিতকরণের শুল্ক কোড) লাইনের (আট ডিজিট পর্যায়ে) মার্কিন পণ্য আমদানি হয়। এদের মধ্যে ৯৮টি কোডের পণ্যের ওপর কোনো ধরনের শুল্ক–কর (সিডি, আরডি ও এসডি) নেই। এদের মধ্যে অন্যতম তুলা।

এই ৯৮টি পণ্য বাংলাদেশে মার্কিন পণ্য রপ্তানির মোট ৫৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আরও ৩২২টি পণ্যের ক্ষেত্রে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য। তবে এদের মধ্যে বেশির ভাগ মূলধনি যন্ত্রপাতি। অধিকন্তু ৫ শতাংশ সিডি, ৩-২০ শতাংশ আরডি এবং ২০-৪৫ শতাংশ এসডি রয়েছে ৩৫০টি পণ্যে। এগুলোর অধিকাংশ প্রাথমিক কৃষিপণ্য বা শিল্পের কাঁচামাল। তবে উচ্চ হারের শুল্ক–কর প্রযোজ্য আছে—এমন পণ্যের পরিমাণ ১ হাজার ১৬১টি। এতে সিডি ৫-২৫ শতাংশ, আরডি ৩-৪০ শতাংশ, এসডি ১০-৫০০ শতাংশ রয়েছে। এই স্তরে ভোগ্যপণ্য, মোটরগাড়ি ও মদজাতীয় পানীয় রয়েছে, যা মোট আমদানির প্রায় ৪ শতাংশ।

৩.

শুল্ক–করের পাশাপাশি অশুল্ক বাধাও আলোচনার টেবিলে আসতে পারে। এসবের মধ্যে রয়েছে সরকারি কেনাকাটায় জটিলতা ও অনিয়ম, বিনিয়োগ–সংক্রান্ত মূলধন প্রত্যাবাসনে বিলম্ব, ডব্লিউটিওর শুল্কমূল্য বাস্তবায়নে অপূর্ণতা, মেধাসম্পদ সুরক্ষার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের দুর্বলতা, ই-কমার্স ও সাইবার নিরাপত্তার প্রশ্নবিদ্ধ মানদণ্ড, বিনিয়োগের নানা স্তরের দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা, শ্রম অধিকার রক্ষায় ঘাটতি এবং ঘুষ ও দুর্নীতির বিস্তার। মার্কিন প্রতিবেদনে উল্লেখিত এসব অশুল্ক বাধা অনেকটা গুণগত এবং এগুলোর কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা দরকার। তবে এই বিষয়ে সরকার কর্তৃক ইতিমধ্যে যেসব ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোকে ত্বরান্বিত করা গুরুত্বপূর্ণ।  

প্রশ্ন হলো, শুল্ক ও অশুল্ক প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করতে কী ধরনের বিকল্প পন্থা নিয়ে অগ্রসর হওয়া যায়? যেহেতু সীমিত সময়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রস্তাবনা দিতে হবে, তাই শুল্ক–করসংক্রান্ত দিকগুলো নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোকপাত করা শ্রেয়। ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাব হচ্ছে, আলোচনায় মার্কিন অংশীদারেরা এমন কিছু বাস্তব পদক্ষেপ দেখতে চায়, যেখানে মার্কিন বাণিজ্যের মৌলিক স্বার্থগুলো বিবেচনায় আনা হয়েছে; যার মূল হচ্ছে মার্কিন পণ্যের রপ্তানির প্রসার ঘটানো। সেই হিসাবে বাংলাদেশের জন্য চারটি বিকল্প পথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৯৮টি মার্কিন পণ্যে কোনো রকম শুল্ক–কর নেই; আরও ৩২২টি পণ্যে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। মার্কিন পণ্যের আমদানি বাড়াতে এই ৩২২টিসহ অন্যান্য পণ্যে যে শুল্ক–কর আরোপ করা আছে, সেগুলোতে ব্যাপকভাবে ছাড় প্রদান একটি সহজ পথ হতে পারে। কিন্তু ডব্লিউটিওর সদস্য হিসেবে  এককভাবে কোনো দেশের জন্য বাংলাদেশ কোনো শুল্ক–কর ছাড় দিতে পারে না। যেকোনো শুল্ক–কর ছাড় ‘মোস্ট ফেভারড ন্যাশনস (এমএফএন)’-এর ভিত্তিতে সব দেশের জন্য সমানভাবে আরোপ করতে হবে।

অন্যদিকে যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয় সেগুলোতে (এমএফএন ভিত্তিতে) ছাড় দিলে মার্কিন পণ্যের আমদানি যে বেড়ে যাবে, তার নিশ্চয়তাও নেই। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, ব্যক্তি উদ্যোগে কোনো পণ্য আমদানি উৎসাহিত হবে কেবল পণ্যের দাম ও গুণগতমান তাদের চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলে। যেমন মার্কিন তুলার দাম প্রতি কেজি ১ দশমিক ৯৩ ডলার; অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ায় ১ দশমিক ১৯, আর্জেন্টিনায় ১ দশমিক ৫৮, অস্ট্রেলিয়ায় ১ দশমিক ৮৫, ব্রাজিলে ১ দশমিক ৭৪ ও ভারতে ১ দশমিক ৮৩ ডলারে তুলা পাওয়া যায়।

অন্য কোনো উৎসাহ না থাকলে দাম বেশি হওয়ায় শুল্ক ছাড় দিলেও দেশীয় আমদানিকারকেরা পণ্যটির আমদানিতে আগ্রহ দেখাবে না। আবার ডব্লিউটিওর নীতি অনুসারে, মার্কিন পণ্যসমূহের ওপর শুল্ক–কর সাধারণ ছাড়ের সুযোগ অন্য দেশও নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে দাম, পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বিবেচনায় মার্কিন পণ্যে আমদানি বাড়ার সুযোগ কম। তাই এই সহজ বিকল্প নিয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি আসার সুযোগ ক্ষীণ।

দ্বিতীয় বিকল্প হচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পন্ন করা। এটি হলে উভয় দেশের মধ্যে অধিকাংশ পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে শুল্ক–কর ব্যতীত অথবা হ্রাসকৃত হারে বাণিজ্য সম্পন্ন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জর্ডান, ইসরায়েল, চিলি, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডাসহ ২০টি দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের এই ধরনের দ্বিপক্ষীয় কোনো চুক্তি নেই।

সম্প্রতি জাপানের সঙ্গে ‘অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ)’ সম্পন্নের জন্য বাণিজ্য আলোচনা চলমান রয়েছে। এ–জাতীয় চুক্তি সম্পন্নের জন্য দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন হয়। এটিতে উভয় দেশের বিভিন্ন ধরনের অংশীজন থাকে এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থকে বিবেচনায় আনতে হয়। এ ধরনের আলোচনা সফলভাবে সম্পন্ন করতে অনেক দেশ ১০ বছরও সময় ব্যয় করেছে। ট্রাম্পের স্থগিতাদেশ দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে। এফটিএর সম্ভাবনা উজ্জ্বল নয়, তবে তা শুরু করা যায়।

তৃতীয় বিকল্প পথ হচ্ছে, আংশিক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সম্পন্ন করা। এটির সুবিধা হলো, দুই দেশের মধ্যে কেবল যেসব পণ্য আমদানি বা রপ্তানি হবে, তার একটি ‘পজিটিভ লিস্ট’ তৈরি করা। উভয় দেশ যে পণ্যগুলোকে গুরুত্ব দেয়, কেবল সেগুলোকে শুল্ক–করছাড়ের আওতায় আনা এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য। এই আংশিক চুক্তি সম্পন্নের জন্য সময়টা তুলনামূলক কম প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের এই জাতীয় দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘টিকফা’ নামের (২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত) চুক্তি থাকায় এর দফা ৩ অনুসারে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। তবে এর সীমাবদ্ধতা হলো, ডব্লিওটিওর ১৯৭৯ সালে গৃহীত ‘এনাব্লিং ক্লজ’ অনুসারে পিটিএ সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে দুটি ‘লেস ডেভেলপড’ দেশের মধ্যে। এখানে বাংলাদেশ এই মানদণ্ডে পড়লেও যুক্তরাষ্ট্র না থাকায় এই আংশিক আয়োজনের সুযোগ সীমিত। তবে বর্তমান বাস্তবতায় উভয় দেশ এই শর্তকে অগ্রাহ্য করবে কি না, তা আলোচনা হতে পারে।

চতুর্থত, ট্রাম্পের মূল ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ চীনের ওপর ১৪৫ শতাংশ (আলোচনাধীন), ভিয়েতনাম ৪৬ শতাংশ, কম্বোডিয়া ৪৯ শতাংশ, ভারত ২৬ শতাংশ ও পাকিস্তান ২৯ শতাংশ হারে অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে। এই হার স্থগিতাদেশের পর তা বজায় থাকলে বাংলাদেশ চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার তুলনায় এগিয়ে থাকলেও অন্যতম প্রতিযোগী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভারতের পণ্যের মান বাংলাদেশের কাছাকাছি ও একই সঙ্গে তাদের সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধিও লক্ষণীয়।

৪.

এ রকম প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে প্রতিযোগী দেশগুলোর হারের সমান বা কম হারের আওতায় থাকা। এর প্রধান যুক্তি হচ্ছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতির অনুপাত বেশি হলেও মোট পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। যেমন ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি প্রায় ৪৯ বিলিয়ন, চীনের ৩১৯ বিলিয়ন, ভিয়েতনামের ১৩৯ বিলিয়ন, কম্বোডিয়ার ১৩ বিলিয়ন। আর বাংলাদেশের সঙ্গে এই ঘাটতি মাত্র ছয় বিলিয়ন ডলার। আলোচনায় এই বিষয়টি সামনে এনে সর্বনিম্ন স্তরে অন্তর্ভুক্ত করাতে পারলে বাংলাদেশ বরং তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সুবিধাপ্রাপ্ত হবে।

অন্যদিকে চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় অধিক শুল্কারোপের ফলে ওই সব দেশের বিনিয়োগ স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বাংলাদেশ লাভবান হবে। এ প্রসঙ্গে মার্কিন তুলা ব্যবহার করে পোশাক তৈরি ও ওই তুলা ব্যবহার করে রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক শুল্কছাড়ের বিষয়েও আলোচনার টেবিলে আনা যায়। এতে মার্কিন তুলার দাম বেশি হলেও যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক প্রবেশের সময় শুল্কছাড়ের সুবিধার কারণে বেসরকারি পর্যায়ে তুলার আমদানি বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।

বৃহৎ অর্থে এই বিশ্লেষণ উভয় দেশের মধ্যে কার্যকর বাণিজ্য আলোচনার খোরাক হতে পারে। এটি এখন বাস্তবতা যে ১৯৩০–এর দশকের অনুরূপ শুল্ক আরোপে সৃষ্ট মহামন্দার অভিজ্ঞতার আলোকে দীর্ঘ মেয়াদে ট্রাম্পের এই শুল্কারোপ টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে তাদের স্বার্থকে আদায় করে নিতে। বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সংবেদনশীল হতে হবে। বাংলাদেশকে যেহেতু প্রাথমিক কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে হয়, তাই মার্কিন সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোতে বর্ণিত পদ্ধতিতে অর্থবহ ছাড় দিলে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা করা যায়।

ড. মইনুল খান বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান

মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প দ শ র জন য র শ ল ক কর অন য ন য র জন য স কম ব ড য় উভয় দ শ ১ দশম ক র আমদ ন পর ম ণ ব কল প কর ছ ন অন য য় র প কর র ওপর ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

বিমানের চাকা খুলে যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি

কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটের চাকা খুলে নিচে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যদিও পরবর্তীকালে বিমানটি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে জরুরি অবতরণ করে।

এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এবিএম রওশন কবীর এ তথ্য জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

সিলেট থেকে মদিনার পথে প্রথম হজ ফ্লাইট

বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিদর্শন করলেন তিন উপদেষ্টা

তিনি জানান, এ বিষয়ে বিমানের চিফ অব সেফটি ক্যাপ্টেন এনাম তালুকদারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিজি ৪৩৬ (ড্যাশ ৮-৪০০) বিমানটিতে শিশুসহ মোট ৭‌১ জন আরোহী ছিলেন। কক্সবাজার থেকে শুক্রবার বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে উড্ডয়ন করে বিমানটি। আকাশে ওড়ার পরই বিমানটির পেছনের একটি চাকা খুলে নিচে পড়ে যায়। পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহর নেতৃত্বে দুপুর ২টা ২২ মিনিটে বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপদে অবতরণ করে। যাত্রী ও ক্রুরা সবাই সুস্থ ও নিরাপদ রয়েছেন।

এর আগে উড্ডয়নের পরপরই ক্যাপ্টেন জামিল ঢাকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি) জানান, তিনি জরুরি অবতরণ করতে চাচ্ছেন। পাইলটের বার্তা পাওয়ার পরপরই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর জরুরি অবতরণের প্রস্তুতি নেয়। প্রস্তুত রাখা হয়েছিল ফায়ার সার্ভিসও।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ