ক্যাম্পে বসবাসকারী উর্দুভাষী বাংলাদেশিদের পুনর্বাসন দাবি করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, উর্দুভাষীরা এই দেশের নাগরিক। তারা ক্যাম্পে থাকবে কেন, সরকারি উদ্যোগে তাদের পুনর্বাসন করতে হবে।

আজ শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘সার্কেল অব মাইনোরিটিজ’ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন বক্তারা। বাংলাদেশের উর্দুভাষী নাগরিকদের পুনর্বাসনের উপায় নিয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, প্রায় তিন লাখ উর্দুভাষী মানুষ ক্যাম্পে বসবাস করেন। তারা এই দেশের নাগরিক এবং ভোটার। তারা ক্যাম্পে থাকবে কেন, তাদের পুনর্বাসন করতে পারে সরকার। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় একসময় জমিও অধিগ্রহণ করেছিল। সারা বাংলাদেশে ১১৬টি ক্যাম্প রয়েছে, এসব ক্যাম্পে যারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, এসব নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে সরকার।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ঐতিহাসিক বাস্তবতার কারণে রাজনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয়ের অংশ হিসেবে তারা জেনেভা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন জেলায় এতগুলো ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন, যা পরবর্তীতে তাদের স্থায়ী আবাসন হয়ে যায়। রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও গোষ্ঠীগত ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে তারা একপ্রকার রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল। এই জনগোষ্ঠী কখনোই তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব হারায়নি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, তাদের ভোটাধিকার আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়েছে। ২০০৩ ও ২০০৮ সালের উচ্চ আদালতের রায়ে উর্দুভাষী বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব তথা ভোটার হওয়ার সব সংশয় দূর হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় লেখক ও গবেষক গওহর নাঈম ওয়ারা, লেখক জাভেদ হুসেন, সাংবাদিক রমেন বিশ্বাস, ভজন কুমার বিশ্বাস, আনোয়ার পারভেজ, রজত কান্তি রায়, নিখিল ভদ্র, শাকিলা পারভীন রোমা, মাসুদ রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

রাত জেগে সীমান্ত পাহারা দিল বিজিবি-জনতা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে গত বৃহস্পতিবার রাতে পুশইনের (ঠেলে পাঠানো) চেষ্টা করেছে ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। এ খবর পেয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সীমান্তে জড়ো হন স্থানীয়রা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে রাত জেগে পাহারা দেয় জনতা। এ নিয়ে সীমান্তে উদ্বেগ-উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে যায় বিএসএফ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা বিমানবন্দরের পাশের গেটের কাছে প্রায় ১৫০ ভারতীয় নাগরিককে জড়ো করা হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি জানার পর বিজিবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সতর্কতা অবলম্বন করে। রাতভর টহল জোরদার করে।

অন্য একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে ৭৫০ নারী-পুরুষকে পুশইন করতে জড়ো করে বিএসএফ। খবর পেয়ে সতর্ক অবস্থান নেয় বিজিবি। তখন স্থানীয় মসজিদগুলোতে মাইকিং করা হয়। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা শুনে সিঙ্গারবিল, বিষ্ণুপুর, নলঘরিয়া, মেরাসানী, নোয়াবাদী সীমান্তে কয়েকশ লোক দেশি অস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়। অনেকে ফেসবুকে লাইভে এসে লোকজনকে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। কয়েকশ লোক জড়ো হলে পিছু হটে বিএসএফ।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, বিজিবির টহল তৎপরতা বেড়ে গেলে সীমান্ত এলাকার গ্রামবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় কয়েকটি মসজিদ থেকে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। 

এ ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ রাত ৩টা ৩৩ মিনিটে ফেসবুকে সিঙ্গারবিল ইউনিয়নে যাদের যা কিছু আছে, তা নিয়ে সীমান্তে চলে আসার আহ্বান জানান। পাশাপাশি বিজিবিকে সহায়তা করার অনুরোধ করেন।

নোয়াবাদী গ্রামের আনিস মিয়া ও নলগড়িয়া গ্রামের ফজলুল হক জানান, বিজিবির টহল তৎপরতা বেড়ে গেলে সীমান্ত এলাকায় গ্রামবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় কয়েকটি মসজিদ থেকে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। এটি বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ঘটে। এর পরপর ফেসবুকে ঘটনাস্থলের ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাধনা ত্রিপুরা বলেন, ‘সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। পুশইনের চেষ্টার খবরে জনগণ বিজিবির সঙ্গে থেকে প্রতিহত করেছে। এখনও সতর্ক অবস্থানে আছেন সবাই।’

২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে আমরা সীমান্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছি। বিএসএফ পুশইন করবে বলে খবর আসে। এ অবস্থায় বিজিবি সতর্ক অবস্থান নেয়। পাশাপাশি স্থানীয় জনতা সীমান্তে জড়ো হয়। এখন পর্যন্ত এ সীমান্ত দিয়ে কোনো অনুপ্রবেশ ঘটেনি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে।’
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারতের নানা রাজ্যে অনুপ্রবেশকারী খোঁজার অভিযান শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারীদের আটক করা হয়। এদের অনেককে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। ফিরে আসার পর অনেকে নির্যাতনের অভিযোগও করছেন। ৪ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের পাঁচ জেলার সীমান্ত দিয়ে ৩১৮ জনকে ঠেলে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪ মে মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ১০ জন, ৭ মে খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরা দিয়ে যথাক্রমে ৬৬ ও ৭৮, মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে ৭, ৮, ১৪ ও ১৫ মে ১৪৮ এবং ১৪ মে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ