ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম হলো হজ। (বুখারি: ৭) আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)
হজ ও ওমরাহর আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা, সফর করা, ভ্রমণ করা। পরিভাষায় হজ মানে হলো নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত স্থানে বিশেষ কিছু কর্ম সম্পাদন করা। হজের নির্দিষ্ট সময় হলো আশহুরে হুরুম বা হারাম মাসসমূহ তথা শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ; বিশেষত ৮ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন।
হজের নির্ধারিত স্থান হলো: মক্কা মুকাররমায় কাবা, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ইত্যাদি এবং মদিনা মুনাওয়ারায় রাসুলুল্লাহ (সা.
হজের পাঁচ দিন ছাড়া বছরের যেকোনো সময় ওমরাহ হজ করা যায়। ইহরামসহ কাবাঘর তাওয়াফ করা ও সাফা-মারওয়া সাঈ করা এবং মাথা মুণ্ডন করা বা চুল কাটা ওমরাহ হজের অংশ।
সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য উমরাহ পালন করা সুন্নত। উমরাহর ফরজ দুটি: ইহরাম ও তাওয়াফ; ওয়াজিব দুটি: সফা-মারওয়া সাঈ করা এবং মাথা মুণ্ডন করা বা চুল কাটা। উমরাহ সম্পাদনকারীকে ‘মুতামির’ বলা হয়।
প্রাণী হত্যা, জীবের ক্ষতি, ক্ষৌরকর্ম, সুগন্ধি ব্যবহার, যৌন সংসর্গ, অন্যায় আচরণ, কলহ–বিবাদ ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধশারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ ফরজ। হজ সম্পন্নকারীকে ‘হাজি’ বলা হয়। হজের নিয়তকে ইহরাম বলে। সম্পাদনপদ্ধতি অনুসারে হজ তিন প্রকার—১. ইফরাদ, ২. কিরান ও ৩. তামাত্তু।
ইফরাদ হজ: শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পন্ন করলে একে ‘ইফরাদ হজ’ বা একক হজ বলা হয়। ইফরাদ হজ পালনের জন্য ঢাকা থেকে শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফে পৌঁছার পর তাওয়াফ ও সাঈ করে ইহরাম না ছেড়ে ১০ জিলহজ হজ সম্পাদন হওয়ার পর ইহরাম ছাড়তে হবে।
কিরান হজ: উমরাহ ও হজের জন্য একত্রে ইহরামের নিয়ত করে প্রথমে উমরাহ কাজ সম্পন্ন করে ইহরাম না ছেড়ে একই ইহরামে হজ সম্পন্ন করলে তাকে ‘কিরান হজ’ বা যৌথ হজ বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর জীবনের একমাত্র হজ ছিল ‘কিরান হজ’।
তামাত্তু হজ: একই সফরে প্রথমে ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে, তা সম্পন্নপূর্বক ৭ জিলহজ হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে ১০ জিলহজ তা সমাপ্ত করাকে ‘তামাত্তু হজ’ বা ‘সুবিধাজনক হজ’ বলা হয়। বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ হাজি তামাত্তু হজ করে থাকেন।
কিরান ও তামাত্তু হজে দমে শোকর (হজের কোরবানি) দেওয়া ওয়াজিব। এতে অপারগ হলে ১০টি রোজা পালন করতে হবে। এর মধ্যে অন্তত তিনটি রোজা হজকালীন মক্কা শরিফে রাখতে হবে।
হজ সম্পাদনরত হাজিরা ৯ জিলহজ (হজের বা আরাফাতের দিন) ও ১০ জিলহজ (কোরবানির ঈদের দিন) ছাড়া হজের অন্য দিনগুলোতে রোজা পালন করতে পারবেন। যাঁরা হজ পালনরত নন, তাঁরা ৯ জিলহজ রোজা রাখা সুন্নত এবং ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ রোজা রাখা নিষেধ।
হজের ফরজ তিনটি—১. ইহরামের নিয়ত বা ইচ্ছা করা, ২. অকুফে আরাফা করা, ৯ জিলহজ জোহর থেকে ১০ জিলহজ ফজরের আগপর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা, ৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা, ১০ জিলহজ ভোর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় কাবাঘর তাওয়াফ।
পুরুষদের ইহরাম অবস্থায় খোলা চাদর পরিধান করতে হয়, মাথা খালি রাখতে হয়, পায়ের পাতা উন্মুক্ত থাকে এমন স্যান্ডেল পরতে হয়। নারীদের ইহরামের বিশেষ কোনো পোশাক নেই; তবে মুখমণ্ডল খোলা রাখতে হবে।
প্রাণী হত্যা, জীবের ক্ষতি, ক্ষৌরকর্ম, সুগন্ধি ব্যবহার, যৌন সংসর্গ, অন্যায় আচরণ, কলহ–বিবাদ ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৯৭)
হজের ওয়াজিব সাতটি—১. আরাফাত থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফায় ১০ জিলহজ ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কিছু সময় অবস্থান করা, ২. রমিয়ে জিমার, ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ জামরায় শয়তানকে পাথর মারা, ৩. দমে শোকর (কোরবানি) করা (তামাত্তু ও কিরান হজে), ৪. মাথার চুল কামিয়ে বা কেটে ইহরাম সমাপ্ত করা, ৫. সাফা ও মারওয়া সাঈ করা বা দৌড়ানো, ৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা (বিদেশিরা), ৭. মদিনা শরিফ রওজাতুন নবী (সা.) জিয়ারত করা। (আসান ফিকাহ, ইউসুফ ইসলাহী, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৫১)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক র ন হজ র জন য স ঈ কর আর ফ ত ওমর হ ম রওয় উমর হ অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আদেশে বিপাকে সুপ্রিম কোর্ট
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার সীমিত করে দেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ নিয়ে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে তুমুল বিতর্ক হয়েছে। প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই সই হওয়া ওই আদেশ অনুযায়ী, যেসব শিশুর বাবা-মায়ের কেউ মার্কিন নাগরিক বা গ্রিন কার্ডধারী নন, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মালেও তারা আর নাগরিকত্ব পাবে না।
রয়টার্স জানায়, ট্রাম্প চাচ্ছেন নাগরিকত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে দেওয়া প্রচলিত ব্যাখ্যায় বড় পরিবর্তন আনতে। তাঁর এ চেষ্টা সফল হলে তা প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া লাখো শিশুর নাগরিকত্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। ট্রাম্পের ওই আদেশ বাস্তবায়নে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন মেরিল্যান্ড, ওয়াশিংটন ও ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল বিচারকরা। ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে, এ বিচারকদের ক্ষমতা খর্ব করতে যেন তাদের আদেশ দেশজুড়ে কার্যকর না হয়।
ট্রাম্পের আদেশ আটকে দেওয়া স্থগিতাদেশগুলো প্রত্যাহারে প্রশাসনের জরুরি আবেদন নিয়ে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে দুই ঘণ্টার বেশি শুনানি হয়েছে। সরকার পক্ষের যুক্তি হচ্ছে, ফেডারেল বিচারকরা দেশজুড়ে একসঙ্গে স্থগিতাদেশ দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না। সেজন্য তাদের স্থগিতাদেশগুলো বাতিল করে প্রশাসনকে প্রেসিডেন্টের আদেশ বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিতে হবে।
প্রশাসনের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল ডি জন সাওয়ার বলেন, বিচারকদের দেশজুড়ে স্থগিতাদেশ জারির ক্রমবর্ধমান প্রবণতা ‘বিকারে’ পরিণত হয়েছে।অন্যদিকে লিবারেল বিচারক সোনিয়া সোটোমেয়র বলেছেন, ‘আমরা যদি সেই হাজার হাজার শিশুর কথা চিন্তা করি, নাগরিকত্বের কাগজপত্র ছাড়া জন্মগ্রহণ করায় যারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়তে পারে এবং তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধাও পাবে না, তাহলে অবশ্যই আদালতের এই (নির্বাহী) আদেশের বৈধতা বিবেচনা করা উচিত।’
ট্রাম্পের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যারা মামলা করেছেন তারা বলছেন, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ কার্যকর হলে প্রতি বছর দেড় লাখের বেশি নবজাতক নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হবে। মামলাকারীদের তালিকায় ২২টি অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি জেনারেলের পাশাপাশি অভিবাসন অধিকার কর্মী ও অন্তঃসত্ত্বা অভিবাসীরাও আছেন।