৩০৯৭ কোটি টাকা—আবারও আয়ের শীর্ষে রোনালদো, মেসির কত
Published: 16th, May 2025 GMT
টানা তিন বছর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয় করা ক্রীড়াবিদের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সব মিলিয়ে পাঁচবার এই তালিকার সবার ওপরে তাঁর নাম উঠল।
৪০ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি ফুটবলার গত এক বছরে আয় করেছেন ২৭ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩০৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
রোনালদোর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল খেলোয়াড় স্টিফেন কারি। তাঁর উপার্জন ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার (১৮২২ কোটি ২০ লাখ টাকা)।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার লিওনেল মেসি নেমে গেছেন পাঁচে। গত এক বছরে মেসি আয় করেছেন ১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার (১৫৭৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা)। এই সমপরিমাণ অর্থ আয় করেই ২০২৪ সালের তালিকায় তিনি ছিলেন তিনে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যবিষয়ক বিখ্যাত সাময়িকী ফোর্বসের সর্বশেষ হালনাগাদ তালিকায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ফোর্বস এই তালিকা করেছে খেলোয়াড়দের বেতন, বোনাস, পৃষ্ঠপোষক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সব আয়ের উৎস বিবেচনায় নিয়ে।
গত এক বছরে রোনালদোর আয় বেড়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিশাল সংখ্যক অনুসারী, যা অনেক আগেই ১০০ কোটি ছাড়িয়েছে।
তবে অর্থনৈতিক দিক থেকে সবার ওপরে থাকলেও মাঠে এখন আর সেভাবে সাফল্যের দেখা পাচ্ছেন না রোনালদো। ২০২৩ সালের শুরুতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল নাসরে যোগ দিলেও এখন পর্যন্ত বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেননি এই পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।
আয়ের তালিকায় শীর্ষ দুইয়ে উঠে আসা স্টিফেন কারি গত মার্চে এনবিএ বাস্কেটবল ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৪০০০ বারের মতো ৩ পয়েন্ট তোলেন।
তিনে থাকা বক্সার টাইসন ফিউরি গত ডিসেম্বরে ওলেক্সান্ডার ইউসিকের কাছে বিশ্ব হেভিওয়েটের শিরোপা হারালেও মাল্টার পর্যটন প্রচার ও নেটফ্লিক্স রিয়েলিটি শো থেকে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন।
লিওনেল মেসির আয় গত এক বছরে আগের অবস্থাতেই আছে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনীতির ‘হৃৎপিণ্ড’ সক্রিয় করবে ডাকসু নির্বাচন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বাংলাদেশের রাজনীতির হৃৎপিণ্ড’ উল্লেখ করে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, সেই হৃৎপিণ্ডকে সক্রিয় করার যে ঘটনাটা ঘটতে যাচ্ছে, সেটা হলো ডাকসু নির্বাচন। এই নির্বাচন স্থির করবে সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লবের কালপর্ব তরুণেরা অতিক্রম করতে পারবেন কি না। রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও সংবিধান বাতিলের কাজটি তরুণেরা করতে পারবেন কি না, তা–ও নির্ধারিত হবে আগামী ডাকসু নির্বাচনে।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ফরহাদ মজহার। ‘শিক্ষা, গবেষণা ও রাজনীতি: আসন্ন ডাকসু নির্বাচন’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চিন্তাচর্চার সংগঠন ‘ভাববৈঠকী’।
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন ফরহাদ মজহার। এক. সব ধরনের বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানচর্চার একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবারের ডাকসু নির্বাচনের আগেই কিছু বিষয় সবাই মিলে নির্ধারণ করা। দুই. যদি কোনো শিক্ষক বছরে ন্যূনতম একটি গবেষণাপত্র ‘পিয়ার রিভিউড জার্নালে’ (যে জার্নালের প্রতিটি গবেষণাপত্র বিশেষজ্ঞরা মূল্যায়ন করেন) প্রকাশ করতে না পারেন, তাহলে সেই শিক্ষকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোনো অধিকার থাকা উচিত নয়। তিন. মৌলিক বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া।
‘আপনাদের হুঁশ নেই’
তরুণদের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ৮ আগস্ট (২০২৪ সাল) একটা সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে, সংবিধানের নামে ছাত্র-তরুণ-সৈনিকদের পরাস্ত করা হয়েছে। তরুণদের যে শক্তি, ক্ষমতা ও গণসার্বভৌমত্ব কায়েমের স্পৃহা ছিল, সেটাকে নস্যাৎ করা হয়েছে আইন ও সংবিধানের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান কায়েম করে। এখন তরুণদের ফাঁসিতে ঝোলানোর প্রক্রিয়া চলছে। যদি জাতীয় নির্বাচন হয় এবং নির্বাচনের পরে এই সংবিধানের অধীনে সরকার গঠিত হয়, তাহলে সেই সরকার তরুণদের বিচার করবে। তিনি বলেন, ‘যে জুলাই ঘোষণাপত্র শুনলাম সেখানে পরিষ্কার বলা আছে আপনাদের (তরুণদের) আইনি সাহায্য দেওয়া হবে, আর কিছু দেওয়া হবে না। অথচ এগুলো নিয়ে আপনাদের হুঁশ নেই।’
‘শিক্ষকদের ক্ষেত্রে পরিবর্তন নেই’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৯০ জন শিক্ষককে শিক্ষার্থীরা বর্জন করেছেন বলে অনুষ্ঠানে জানান অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন, এখন ৭ জন শিক্ষক দিয়ে তাঁর বিভাগ (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) চালানো হচ্ছে। এখানে শিক্ষকপ্রতি শিক্ষার্থী ২০০ জন। এমন অবস্থায় কোনো শিক্ষকের পক্ষে গবেষণার কাজ করা সম্ভব নয়।
অভ্যুত্থানের পরও দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ প্রসঙ্গে সামিনা লুৎফা বলেন, ‘সম্প্রতি একটি দলের শিক্ষকেরা সহ-উপাচার্যের (শিক্ষা) কাছে গিয়ে বলেছেন যে তাঁদের দল থেকে নিয়োগ দিতে হবে। তাহলে তো আমরা সেই আগের জায়গায় ফেরত গিয়েছি। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগে আওয়ামী লীগ না করলে সব দরজা বন্ধ ছিল। অন্য কিছুর মূল্য দেওয়া হয়নি, একমাত্র যোগ্যতা ছিল রাজনৈতিক পরিচয়। ৫ আগস্টের পরে শুনলাম, যাঁদের বিভিন্ন পদে বসানো হবে, তাঁদেরও মূল যোগ্যতা রাজনৈতিক পরিচয়। এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি।’
ভাববৈঠকীর প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ রোমেল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহমান মৈশান, খোরশেদ আলম ও যোবায়ের আল মাহমুদ।
ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা দাবি
আলোচনায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারাও বক্তব্য দেন। তাঁদের বক্তব্যে ছাত্ররাজনীতিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উঠে আসে। তাঁরা বলেছেন, পুরোনো সন্ত্রাস-দখলদারির রাজনীতি ফিরতে দেওয়া যাবে না। ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হবে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনের জন্য বয়সসীমা তুলে দেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে বলে মনে করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহিদ আহসান। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একাংশের উদ্যোগে গঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক শিক্ষার্থীকে পুনর্ভর্তির (লেখাপড়ায় বিরতির কারণে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির সুযোগ) সমালোচনা করেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ।
ডাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।
গেস্টরুম-গণরুমকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে অনেকে পুরো ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে বলে মন্তব্য করেন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আরমানুল হক।
ডাকসু নির্বাচন ও সংগঠনভিত্তিক রাজনীতিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সহকারী সাধারণ সম্পাদক খায়রুল এহসান বলেন, শিক্ষকদের রাজনীতি চিরতরে নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। তাহলে ছাত্ররাজনীতিও ঠিক হয়ে যাবে।
আয়োজকেরা জানান, এই আলোচনায় বক্তব্য দিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শীর্ষ এক নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি আসেননি। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক একজন নেত্রীকেও আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তিনিও আসেননি।