করোনাকালে একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সদরের বাসিন্দা সানজিদা আফরিন রীমা। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে পড়েন দুশ্চিন্তায়। তবে অর্থসংকটে থাকা ওই নারী হতাশার মাঝেও হাল ছাড়েননি। 
নিজ বাসায় বসে কেক, মিষ্টি, রসমালাই, পিঠাসহ হাতের তৈরি নানা পণ্য বাজারজাত করছেন। অনলাইন ও অফলাইনে সানজিদার পণ্যের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। সফল এ নারী উদ্যোক্তা বছরে আয় করছেন অন্তত ১০ লাখ টাকা। তিনি যাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তারাও আজ স্বনির্ভর। সানজিদার সফলতার গল্প এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে।
জানা গেছে, সানজিদা আফরিন রীমা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে ঢাকার উত্তরায় একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু করোনা মহামারির সময় সেই চাকরি হারান তিনি। হঠাৎ বেকারত্বে হতাশায় পড়েন সানজিদা। শূন্য হাতে গ্রামে গিয়ে ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে বাসায় কেকসহ বিভিন্ন মানসম্মত খাদ্যসামগ্রী তৈরি। শুরুতেই ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করেন। সেই থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁর মানসম্মত খাদ্যসামগ্রী ধীরে ধীরে এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাঁর তৈরি খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কেক, মিষ্টি, সুস্বাদু চিকেন মোমোসহ নানা ধরনের বিলাসী খাবার। খাদ্যসামগ্রী তৈরির পাশাপাশি বেকার নারীদের স্বাবলম্বী করতে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। সানজিদার হাত ধরে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে।
অপর নারী বিউটি আক্তার বলেন, ‘সানজিদা আপুর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমিসহ এ পর্যন্ত দুই শতাধিক নারী স্বাবলম্বী হয়েছি। তিনি এলাকায় একজন মডেল। বহু নারী এখন তাঁকে ফলো (অনুসরণ) করছে।’
উদ্যোক্তা সানজিদা আফরিন রীমার ভাষ্য, চাকরি চলে যাওয়ার পর কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। তাই বিকল্প আর চাকরির চিন্তা না করে নিজেই উদ্যোক্তা হয়েছেন। অল্প পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এ পর্যন্ত চার শতাধিক নারীকে বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছেন। তাঁর প্রত্যাশা অবহেলিত নারীসমাজ যেন আত্মনির্ভরশীল হয়। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

যৌতুকের টাকা না পেয়ে সন্তানকে বিক্রি

যৌতুকের টাকা না পেয়ে নবজাতক সন্তানকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বাবার বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ করায় স্ত্রীকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। গুরুতর আহত ওই নারীকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী গ্রামে। 

অভিযুক্ত স্বামী জয়শ্রী গ্রামের হাতেম আলী সরদারের ছেলে মনজুর আলম সরদার (৪৪)। ভুক্তভোগী নারীর নাম রোজিনা বেগম (৩০)। 

রোজিনা বেগম জানান, বিয়ের পর থেকেই মনজুর আলম তাকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে বাবার বাড়ি থেকে কয়েক দফায় মোটা অঙ্কের যৌতুক আদায় করেন। সর্বশেষ বাবার বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আনার জন্য চাপ দেন। 

তিনি আরও জানান, তিন মাস পূর্বে তাদের ছেলে হয়। কিন্তু স্বামী তাকে জানায়, ছেলে নয়, মেয়ে হয়েছে এবং অসুস্থ হওয়ায় তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর সে মারা গেছে। লাশ দেখতে চাইলে তার স্বামী বলেন, লাশ আনা হয়নি।

রোজিনা বেগম জানান, গত ৩০ জুন বিকেলে তিনি জানতে পারেন মনজুর আলম নবজাতক ছেলেকে আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় মনজুর আলম তাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।

প্রতিবেশীদের কাছে রোজিনার স্বজনরা খবর পেয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে উজিরপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন।

স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে মনজুর আলম সরদার বলেন, ‘‘আমি মারধর করিনি। উল্টো সে আমাকে মারধর করেছে।’’

নবজাতক বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওই সময় আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তির কাগজে আমি স্বাক্ষর করিনি, তাই এ বিষয়ে আমি দায়ী নই। নবজাতক সন্তানের কি হয়েছে  আমি জানি না।’’

উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুস সালাম জানান, এ বিষয়ে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা/পলাশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ