অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন দেশের শীর্ষ গবেষক, আমৃত্যু শিক্ষাব্রতী, প্রাবন্ধিক, অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রসারে অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। ১৪ মে ছিল তাঁর ষষ্ঠ প্রয়াণদিবস। তাঁকে স্মরণ করে স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হলো সাহিত্য–সংস্কৃতির পত্রিকা কালি ও কলম–এর আয়োজনে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কালজয়ী গবেষণাগ্রন্থ মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য–এর আলোকে আয়োজন করা হয়েছিল এই স্মারক বক্তৃতা। শিরোনাম ছিল ‘উনিশ শতকের মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’। স্মারক বক্তৃতা দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।

দীর্ঘ আলোচনার উপসংহারে মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘আনিসুজ্জামানের মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে এ কথা বলা যায়, তিনি সেকালের প্রভাবশালী মতামত দ্বারাই চালিত হয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁর বড় কৃতিত্ব আছে। তিনি কেবল সেই মতামতের ভোক্তা ছিলেন না, নিজেও সেই মতামতের পোষকতা করেছেন এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নতুন ভাষা জোগান দিয়েছেন। তাঁর অর্জনের যথার্থ ব্যবহার হবে তখনই, যখন তার ওপর ভিত্তি করে, ব্যবহার করে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, কৌশল আর তথ্য–উপাত্তের নিরিখে নতুনতর সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে শ্রোতাদের স্বাগত জানিয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত তুলে ধরেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আনিসুজ্জামানের কাজ ছিল বহুমাত্রিক। তিনি বাঙালির স্বরূপের অনুসন্ধান ও বহুত্ববাদী সংস্কৃতির চিন্তা করেছেন। এ দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেছেন। চিন্তা ও কাজের ভেতর দিয়ে তিনি বাঙালি মনীষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর চরিত্র মাধুর্য ও বিনয় তাঁকে অনন্য করে তুলেছিল। স্নেহ ও ভালোবাসার উজ্জ্বল প্রকাশ ছিল তাঁর মধ্যে। বহু লেখক, শিক্ষক, শিল্পী, শিক্ষার্থীকে দেশচেতনায় উদ্দীপিত করেছেন। জাতীয় ও সামাজিক সংকটকালে সক্রিয়ভাবে উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন তিনি।

কালি ও কলম সম্পাদক সুব্রত বড়ুয়া অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের স্মৃতিচারণা করে বলেন, আমৃত্যু তিনি কালি ও কলম–এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেকের কাছে তিনি ছিলেন প্রিয় শিক্ষক ও গবেষক। তবে শুধু গবেষক ও শিক্ষক হিসেবেই নয়, মানুষ হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ। ছিলেন অনেকের কাছের মানুষ। তাঁর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।

অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামানের ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে আগ্রহী শ্রোতারা ছাড়াও অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের স্ত্রী সিদ্দিকা জামান ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বেশ কয়েকটি পর্বে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের উনিশ শতকের মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য বইটির বক্তব্য বিষয়, রচনাশৈলী, তথ্য–উপাত্তের বিশ্লেষণ এবং ইতিহাস ও বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গিতে পর্যালোচনা করেছেন। বেশ কয়েকটি ধাপে তিনি তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত এই বই ধ্রুপদি গ্রন্থ হিসেবে পরিণত হয়েছে। বিগত কয়েক দশকের জ্ঞানতাত্ত্বিক চিন্তাচেতনার পরিবর্তন সত্ত্বেও এই বই একটি বহুল উদ্ধৃত গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

চাশতের নামাজের ওয়াক্ত কখন হয়

চাশতের নামাজ, যা সালাতুদ দুহা নামে পরিচিত, একটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ নফল নামাজ। এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, গুনাহ মাফ এবং আধ্যাত্মিক শান্তি লাভের একটি বিশেষ মাধ্যম। রাসুল (সা.) নিজে এই নামাজ আদায় করতেন এবং সাহাবিদের এটি পড়তে উৎসাহিত করেছেন।

চাশতের নামাজের সময়

চাশতের নামাজের সময় সূর্যোদয়ের পর থেকে শুরু হয় এবং জোহর নামাজের সময় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত চলে। এটি সাধারণত সকালের প্রথমাংশে আদায় করা হয়। বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:

শুরুর সময়: সূর্যোদয়ের প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর, যখন সূর্যের লাল আভা চলে যায় এবং সূর্য কিছুটা উপরে উঠে। এই সময়টি নিষিদ্ধ নামাজের সময়ের বাইরে।

শেষের সময়: সূর্য মাথার উপরে মধ্যাহ্নে পৌঁছানোর ঠিক আগে, অর্থাৎ জোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত।

সর্বোত্তম সময়: হাদিস অনুযায়ী, সকালের মাঝামাঝি সময়, যখন সূর্য বেশ উঁচুতে উঠে যায় এবং দিনের তাপ বাড়তে শুরু করে, তখন চাশতের নামাজ পড়া উত্তম। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে চাশতের নামাজ সকালে সূর্য উঁচু হওয়ার পর পড়ার কথা বলা হয়েছে। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৪)

বাংলাদেশে সূর্যোদয় যদি সকাল ৫:৩০ এ হয় এবং জোহরের ওয়াক্ত দুপুর ১২:০০ টায় শুরু হয়, তবে চাশতের নামাজের সময় সকাল ৫:৫০ থেকে ১১:৫০ পর্যন্ত। সর্বোত্তম সময় হতে পারে সকাল ৮:০০ থেকে ১০:০০ এর মধ্যে।

আরও পড়ুনসালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম১১ আগস্ট ২০২৫চাশতের নামাজের নিয়ম

চাশতের নামাজ দুই থেকে বারো রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়, তবে সাধারণত দুই বা চার রাকাত পড়া হয়। নিচে এর নিয়ম দেওয়া হলো:

নিয়ত করা

নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে চাশতের নামাজের নিয়ত করতে হবে। উদাহরণ:
“আমি দুই/চার রাকাত সালাতুদ দুহা নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি।”
নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট।

নামাজ আদায়

রাকাত সংখ্যা: সর্বনিম্ন দুই রাকাত এবং সর্বোচ্চ বারো রাকাত। প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফিরিয়ে পড়া উত্তম।

পড়ার পদ্ধতি: সাধারণ নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সুরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়ার কথা কোথাও কোথাও বর্ণিত হয়েছে। তবে যেকোনো সুরা পড়া যায়।

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজের সময়সূচি ও বিধান০৬ আগস্ট ২০২৫চাশতের নামাজের ফজিলত

চাশতের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে। প্রতিদিন তোমার শরীরের প্রতিটি জোড়ার জন্য সদকা দেওয়া উচিত। আর চাশতের দুই রাকাত নামাজ এই সদকার পরিবর্তে যথেষ্ট।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯৮২)

মনে রাখতে হবে

সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং মধ্যাহ্নের সময় চাশতের নামাজ পড়া যাবে না।

নামাজে মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে এর আধ্যাত্মিক উপকার পাওয়া যায়।

চাশতের নামাজ নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, কারণ এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।

আরও পড়ুন‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ একটি ফজিলতপূর্ণ তাসবিহ২৬ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ