কলম্বিয়ায় নতুন করে ৬৬ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত: জাতিসংঘ
Published: 17th, May 2025 GMT
কলম্বিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে এই বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থার বরাত দিয়ে শনিবার (১৭ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিসের (ওসিএইচএ) তথ্যানুসারে, নতুন বাস্তুচ্যুতি ২০২৪ সাল থেকে অব্যাহত সহিংসতার কারণে গৃহহীন হওয়া মানুষের মোট সংখ্যার তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।
আরো পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর তাগিদ জাতিসংঘ মহাসচিবের
আজ ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক
ওসিএইচএ জানিয়েছে, “গত বছরের শেষ নাগাদ, সহিংসতা এবং সংঘাতের কারণে ৭.
ওসিএইচএ জানিয়েছে, জাতিসংঘ ও তার অংশীদাররা ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের কেন্দ্রীয় জরুরি তহবিল থেকে ৩.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দের মাধ্যমে সহায়তা সরবরাহ করে। লক্ষ্য হলো, ক্যাটাটুম্বোতে ৫৬ হাজারেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করা, যেখানে ২০২৫ সালে ভয়াবহ লড়াই হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে সিনহুয়া জানুয়ারিতে জানায়, উত্তর-পূর্ব ক্যাটাটুম্বো অঞ্চলে ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (ইএলএন) গেরিলাদের আক্রমণ এবং বিচ্ছিন্ন বিপ্লবী সশস্ত্র বাহিনী (এফএআরসি) এর ভিন্নমতাবলম্বীদের সাথে সংঘর্ষে ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছে।
মার্চের শেষের দিকে, কলম্বিয়ার সামরিক বাহিনী জানায়, কাউকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগে এফএআরসি’র ভিন্নমতাবলম্বীদের বিস্ফোরক হামলায় একজন সৈন্য নিহত হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্চ মাসে সহিংসতা বৃদ্ধির ফলে ৮০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে।
ইএলএন এবং এফএআরসি এর মধ্যে সংঘর্ষকে অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের জন্য তৃণাচ্ছাদিত জমির লড়াই হিসেবে দেখা হয়।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস জানিয়েছে, মানবিক চাহিদার তীব্র বৃদ্ধি সত্ত্বেও, তহবিলের ঘাটতির কারণে মানবিক সংস্থাগুলোর কার্যক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। মানবিক সহায়তা প্রদানকারী অংশীদাররা নির্ধারিত চাহিদার মাত্র ২৫ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ সাহায্য থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
৩৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কলম্বিয়ার মানবিক আবেদনের মাত্র ১৪ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি।
পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।
আরো পড়ুন:
রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন
উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ
আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।
চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”
তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”
যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।
৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত
তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।
তৌকির বিশ্বাস করেন, “স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”
তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।
তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।
তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন
ঢাকা/মাসুদ