চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে টয়োটা প্রাডো জিপের পরিবর্তে বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানি করা হয়। নানা জালিয়াতি করে সেই গাড়ি খালাসের চেষ্টা করা হয়। এক গাড়ি খালাসে ৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা হয়। মেসার্স এইচকে ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির চিত্র উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি ও জাল-জালিয়াতির ঘটনায় মেসার্স এইচকে ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো.

কামরুল হাসানের নামে দুর্নীতি মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে। কামরুল লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ঘনেশ্যামপুর গ্রামের আবদুল্যা পাটওয়ারী বাড়ির আবদুল্যা মিয়ার ছেলে। নগরের ৬ জুবিলী রোডের আজিজ চেম্বারের তৃতীয় তলায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির অফিস। ঘটনাটি ২০২২ সালের।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার নাহিদ রওসন বলেন, ‘জালিয়াতি করে বিএমডব্লিউ খালাসের চেষ্টার ঘটনায় দুদক আমাদের কাছে যেসব তথ্য-উপাত্ত চেয়েছে তা সরবরাহ করেছি। গাড়ি খালাসে জালিয়াতির চেষ্টা করেছে আমদানিকরক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি দুদক দেখছে।’ 
দুদক চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক আবুল হোসেনকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। দুদকের এক সহকারী পরিচালক নাম প্রকাশ না করে জানান, জাল-জালিয়াতি করে প্রায় ৫ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। সেই আলোকে মেসার্স এইচকে ইন্টারন্যাশনালের মালিক কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে। কামরুলই এ ঘটনার মাথা। চলতি  মাসের প্রথম সপ্তাহে মামলা করার সুপারিশ চট্টগ্রাম থেকে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মেসার্স এইচকে ইন্টারন্যাশনালের মালিক কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি এ জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে এটি একটি ষড়যন্ত্র। আমি সৎভাবে ব্যবসা করেছি। আমরা আগে ঢাকার ওই আমদানিকারকের কোনো পণ্য খালাসের কাজ করিনি। বিষয়টি কাস্টমসকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম। তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ও কাগজ ব্যবহার করে এ জাল-জালিয়াতি করে থাকতে পারে।’ 
দুদক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, গাড়ি আমদানিকারকের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স এইচকে ইন্টারন্যাশনাল টয়োটা প্রাডো জিপ আমদানির ঘোষণা দিয়ে একটি আমদানি চালান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দাখিল করে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত কনটেইনারের কায়িক পরীক্ষায় দেখতে পায় সেখানে টয়োটা প্রাডো জিপের পরিবর্তে একটি বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ গাড়ি ও একটি ৪০ ইঞ্চি এলসিডি টেলিভিশন রয়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা কাগজপত্র ঘেঁটে দেখেন গাড়ি খালাসের আগে কাস্টমসে জমা দেওয়া শুল্কায়ন নোটিশ, শুল্ক কর জমা দেওয়ার ছাড়পত্র পুরোপুরি জাল। এ ঘটনায়  প্রায় ৫ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিল অব এন্ট্রিতে একটি টয়োটা প্রাডো জিপ আমদানির ঘোষণা দিলেও অন্তরালে আমদানিকারক শহিদুর রহমানের আমদানি করা একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি খালাসের চেষ্টা করেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স এইচকে ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী কামরুল। তিনি প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা, জাল ডকুমেন্ট ব্যবহার করে সরকারের শুল্ককর ৪ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার টাকার ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, ঢাকার জসিমউদদীন অ্যাভিনিউর ইমা টেক্স ট্রেন্ডিং নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গাড়ির আমদানিকারক। তাদের পক্ষে স্থানীয় এজেন্ট হয়ে কাজ করে নগরীর জুবিলী রোডের আজিজ মেম্বারের এইচকে ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা আমদানি চালানের কাগজ কাস্টম হাউসে দাখিল করে। কিন্তু জালিয়াতির বিষয়টি পরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে ধরা পড়ে।  জমা দেওয়া কাগজ ও কাস্টম বন্দর কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরও নকল ছিল। পরে কায়িক পরীক্ষা করা হয়। এভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি দুদকের নজরে আসে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এমডব ল উ ক স টমস ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

এক গাড়ি খালাসে ৫ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে টয়োটা প্রাডো জিপের পরিবর্তে বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানি করা হয়। নানা জালিয়াতি করে সেই গাড়ি খালাসের চেষ্টা করা হয়। এক গাড়ি খালাসে ৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা হয়। মেসার্স এইচকে ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির চিত্র উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি ও জাল-জালিয়াতির ঘটনায় মেসার্স এইচকে ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. কামরুল হাসানের নামে দুর্নীতি মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে। কামরুল লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ঘনেশ্যামপুর গ্রামের আবদুল্যা পাটওয়ারী বাড়ির আবদুল্যা মিয়ার ছেলে। নগরের ৬ জুবিলী রোডের আজিজ চেম্বারের তৃতীয় তলায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির অফিস। ঘটনাটি ২০২২ সালের।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার নাহিদ রওসন বলেন, ‘জালিয়াতি করে বিএমডব্লিউ খালাসের চেষ্টার ঘটনায় দুদক আমাদের কাছে যেসব তথ্য-উপাত্ত চেয়েছে তা সরবরাহ করেছি। গাড়ি খালাসে জালিয়াতির চেষ্টা করেছে আমদানিকরক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি দুদক দেখছে।’ 
দুদক চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক আবুল হোসেনকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। দুদকের এক সহকারী পরিচালক নাম প্রকাশ না করে জানান, জাল-জালিয়াতি করে প্রায় ৫ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। সেই আলোকে মেসার্স এইচকে ইন্টারন্যাশনালের মালিক কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে। কামরুলই এ ঘটনার মাথা। চলতি  মাসের প্রথম সপ্তাহে মামলা করার সুপারিশ চট্টগ্রাম থেকে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মেসার্স এইচকে ইন্টারন্যাশনালের মালিক কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি এ জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে এটি একটি ষড়যন্ত্র। আমি সৎভাবে ব্যবসা করেছি। আমরা আগে ঢাকার ওই আমদানিকারকের কোনো পণ্য খালাসের কাজ করিনি। বিষয়টি কাস্টমসকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম। তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ও কাগজ ব্যবহার করে এ জাল-জালিয়াতি করে থাকতে পারে।’ 
দুদক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, গাড়ি আমদানিকারকের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স এইচকে ইন্টারন্যাশনাল টয়োটা প্রাডো জিপ আমদানির ঘোষণা দিয়ে একটি আমদানি চালান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দাখিল করে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত কনটেইনারের কায়িক পরীক্ষায় দেখতে পায় সেখানে টয়োটা প্রাডো জিপের পরিবর্তে একটি বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ গাড়ি ও একটি ৪০ ইঞ্চি এলসিডি টেলিভিশন রয়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা কাগজপত্র ঘেঁটে দেখেন গাড়ি খালাসের আগে কাস্টমসে জমা দেওয়া শুল্কায়ন নোটিশ, শুল্ক কর জমা দেওয়ার ছাড়পত্র পুরোপুরি জাল। এ ঘটনায়  প্রায় ৫ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিল অব এন্ট্রিতে একটি টয়োটা প্রাডো জিপ আমদানির ঘোষণা দিলেও অন্তরালে আমদানিকারক শহিদুর রহমানের আমদানি করা একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি খালাসের চেষ্টা করেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স এইচকে ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী কামরুল। তিনি প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা, জাল ডকুমেন্ট ব্যবহার করে সরকারের শুল্ককর ৪ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার টাকার ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, ঢাকার জসিমউদদীন অ্যাভিনিউর ইমা টেক্স ট্রেন্ডিং নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গাড়ির আমদানিকারক। তাদের পক্ষে স্থানীয় এজেন্ট হয়ে কাজ করে নগরীর জুবিলী রোডের আজিজ মেম্বারের এইচকে ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা আমদানি চালানের কাগজ কাস্টম হাউসে দাখিল করে। কিন্তু জালিয়াতির বিষয়টি পরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে ধরা পড়ে।  জমা দেওয়া কাগজ ও কাস্টম বন্দর কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরও নকল ছিল। পরে কায়িক পরীক্ষা করা হয়। এভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি দুদকের নজরে আসে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ