পাকিস্তানের ‘পরমাণু বোমার জনক’ ড. আবদুল কাদির খান
Published: 18th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন বিজ্ঞানী ড. আবদুল কাদির খান। তিনি একিউ খান নামেও পরিচিত। বিশ্বের প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তানের পরমাণু বোমার অধিকারী হওয়ার পেছনে তাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। আবার উত্তর কোরিয়া এবং ইরানের কাছে পরমাণু বোমার তথ্য পাঁচারের জন্য অভিযোগও রয়েছে এই বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে। একদিকে তিনি বিশ্বব্যাপী পাকিস্তানের ‘পরমাণু বোমার জনক’ হিসেবে পরিচিত, আবার ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কাছে তার পরিচয় ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘গডফাদার’।
১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল ডা.
তিনি ২০০৩ সালের ১১ ডিসেম্বর এমআইসিক্স- কর্মকর্তাদের একটি বিমানে লিবিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সামরিক সমঝোতার গোপন মিশনে যান। প্রায় অর্ধশতাব্দি ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক প্রযুক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। যাদের কাছে এই প্রযুক্তিগুলো ছিল এবং যারা এই প্রযুক্তি চাইতো দুই পক্ষের কাছেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন একিউ খান।
আরো পড়ুন:
হামলার আগে পাকিস্তানকে জানিয়েছিল দিল্লি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যে তোলপাড় ভারতে
যুদ্ধে ইসলামাবাদ-দিল্লি দুর্ভোগ ছাড়া কিছুই পায়নি: শাহবাজ শরিফ
তিনি উনিশশো সত্তুরের দশকে নেদারল্যান্ডে কাজ করছিলেন। সেই সময় মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় এবং ভারতের পরমাণু অগ্রগতির আশঙ্কার বোমা তৈরির জন্য নতুন করে প্রচেষ্টা শুরু করেন। তিনি ইউরোপে একটি সেন্ট্রিফিউজ ডিজাইন নকল করতে সক্ষম হন। এবং তারপরে তিনি দেশে ফিরে যান। তিনি একটি গোপন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। যে সংগঠনের সদস্যরা ইউরোপিয়ান ব্যাবসায়ী। এবং যারা মূলত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করত।
এ কিউ খান খুব সাবধানে কাজ করেছেন যা তাকে নায়ক করে তুলেছিল। তিনি ভারতের হুমকির মুখে পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন বলে ধরা হয়। তিনি তার গোপন নেটওয়ার্ককে আমদানির পরিবর্তে রফতানির কাজে ব্যবহার করতে শুরু করেন। তিনি এমন কয়েকটি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন যেগুলোকে পশ্চিমারা দুবৃত্ত রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। ইরান যে সেন্ট্রিফিউজ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে সেটি যে নকশা এবং দ্রব্য দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সেগুলো একিউ খান সরবরাহ করেছিলেন। একিউ খান উত্তর কোরিয়ায় ১২ বারেও বেশি বার সফর করেছেন। ধারণা করা হয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির বিনিময়ে পরমাণু প্রযুক্তি আদান-প্রদান হয়েছিল। একিউ খান তার দেশের নেতৃত্বের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর পশ্চিমাদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভাঙতে চেয়েছিলেন। তার প্রশ্ন ছিল যে, কেন কিছু দেশকে নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র রাখার অনুমতি দেওয়া উচিত, অন্যদেরকে কেন নয়?
১৯৯০ এর দশকে লিবিয়ান চুক্তিতে পাকিস্তান আর্থিকভাবে লাভবান হলেও সেটি তাদের পতন তরান্বিত করেছিল। ব্রিটেনের এমআর সিক্স এবং আমেরিকার সিআইএ খানকে ট্র্যাক করতে শুরু করেছিল। তারা তার সফরের ওপর নজর রেখেছে, ফোনকলে আড়ি পেতেছে। তারা খানের সংগঠনের সদস্যদের এজেন্ট হওয়ার জন্য প্রচুর অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।
জীবনের শেষদিনগুলোতে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভ্রমণ এবং কথা বলা বন্ধ করে দেন। তিনি এমন অদ্ভূত এক জীবন যাপন করেছিলেন। যেখানে তিনি মুক্তও নন আবার বন্দিও নন। কেন তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা কখনোই জানা যাবে না। তবে তিনি পাকিস্তানী জনসাধারণের কাছে নায়ক হিসেবে প্রশংসিত ছিলেন।
সূত্র: বিবিসি
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এক উ খ ন র পরম ণ ন র পর কর ছ ল র জন য ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম মেডিকেলে জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর সংকট, কিনে দিতে হয় ক্যানুলা, সিরিঞ্জও
মো. নাজমুলের স্ত্রী কাজল বেগম চার দিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৩ নম্বর প্রসূতি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। প্রতিদিনই তাঁকে জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী ক্যানুলা, সিরিঞ্জ ইত্যাদি কিনতে হয়। সঙ্গে গজ–ব্যান্ডেজ, ইউরিন ব্যাগ, কিছু ওষুধপত্রও কিনতে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নাজমুলের সঙ্গে কথা হয় হাসপাতালের নিচতলায় ন্যায্যমূল্যের দোকানের সামনে। এ সময় তিনি কিছু চিকিৎসাসামগ্রী কিনে প্রসূতি বিভাগে ফিরছিলেন।
নাজমুল বিল দেখিয়ে বলেন, ‘আমার স্ত্রী গর্ভপাত–সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছে। আজ ৯৭৭ টাকার ওষুধপত্র কিনেছি। গতকাল কিনেছিলাম ৮০০ টাকার। প্রতিদিনই কিনতে হচ্ছ। সামান্য সিরিঞ্জ, ক্যানুলা—সবকিছু বাইরে থেকে কিনে দিতে হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর তীব্র সংকট চলছে। মাসখানেক ধরে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সিরিঞ্জ, হ্যান্ড গ্লাভস, ক্যানুলাসহ জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী কিনে আনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। কখনো কখনো এ নিয়ে স্বজনদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
আমার স্ত্রী গর্ভপাত–সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছে। আজ ৯৭৭ টাকার ওষুধপত্র কিনেছি। গতকাল কিনেছিলাম ৮০০ টাকার। প্রতিদিনই কিনতে হচ্ছ। সামান্য সিরিঞ্জ, ক্যানুলা—সবকিছু বাইরে থেকে কিনে দিতে হচ্ছে।মো. নাজমুলহাসপাতাল সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে–পরে বেশ কিছুদিন সময়মতো দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। যাঁরা আগে চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করতেন, তাঁরাও সময়মতো তা দিতে পারেননি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমান সংকটের মূল কারণ ঠিকাদারেরা কিছু সামগ্রীতে অস্বাভাবিক মূল্য দাবি করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগের দামের ১০ শতাংশের বেশি মূল্যে সামগ্রী কিনতে পারে না। যার জন্য চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসামগ্রীর কার্যাদেশ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এক মাসের বেশি সময় ধরে সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২ হাজার ২০০ শয্যার। কিন্তু এখানে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী থাকে। হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৩ লাখ ক্যানুলা, ৫০ হাজার ইউরিন ব্যাগ, ৮ লাখ সিরিঞ্জ দরকার হয়। বর্তমানে চাহিদার ২৫ শতাংশের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটি ওয়ার্ডেই সংকট চলছে। মেডিসিন, শিশুস্বাস্থ্য, সার্জারি, নিউরোসার্জারি, অর্থোপেডিক, প্রসূতি বিভাগে এসব সামগ্রীর ব্যবহার বেশি হয়।
বাঁশখালীর শাহীন সুলতানা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মাসখানেক ধরে অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। ভর্তির পর থেকে কিছু ওষুধপত্র হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়। কিন্তু জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী কিনে নিতে হচ্ছে দোকান থেকে। শাহীনের মা তাহেরা বেগম ওষুধের ব্যাগ হাতে বিভাগে ঢুকছিলেন। তিনি বলেন, দু দিন পরপর ইনজেকশন, ব্যান্ডেজ, স্যালাইন ইত্যাদি কিনতে হয়। গতকাল এক হাজার টাকার ওষুধপত্র কিনেছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমান সংকটের মূল কারণ ঠিকাদারেরা কিছু সামগ্রীতে অস্বাভাবিক মূল্য দাবি করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগের দামের ১০ শতাংশের বেশি মূল্যে সামগ্রী কিনতে পারে না। যার জন্য চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসামগ্রীর কার্যাদেশ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এক মাসের বেশি সময় ধরে সংকট আরও তীব্র হয়েছে।বিষয়টি স্বীকার করে অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্রসহ নানা জটিলতায় সরবরাহ ঘাটতি হলে কিছু সামগ্রী বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয়। আবার সরবরাহ ঠিক হলে সংকট কেটে যায়।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস খালেদ জানান, তাঁদের বিভাগে ২০ ও ২২ সাইজের আইভি ক্যানুলার সংকট রয়েছে। রোগীর স্বজনদের এগুলো নিয়ে আসতে হচ্ছে।
কয়েক মাস ধরে সিরিঞ্জ আইভি ক্যানুলা ছাড়া আমরা দরপত্রের কার্যাদেশ দিচ্ছি। আমাদের শতাধিক সামগ্রী একসঙ্গে দরপত্র দিতে হয়। একক সামগ্রী দরপত্র করার উপায় নেই। তাই শতাধিক সামগ্রীর মধ্যে যেসব বেশি চলে, সেগুলোর দাম তারা (ঠিকাদারেরা) বেশি দিয়ে রেখেছে। যার কারণে আমরা নিতে পারি না। ১০ শতাংশের বেশি দরে নিলে অডিট আপত্তির মুখে পড়তে হবে।হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীনএ সংকটের কারণে হাসপাতালের ন্যায্যমূল্যের দুটি দোকানেও ভিড় দেখা গেছে। রোগীর স্বজনেরা ওষুধ ও জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর জন্য চাহিদাপত্র (স্লিপ) নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা মাত্র সিরিঞ্জ নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছিলেন মো. আলমগীর। তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী কাউছার বেগম প্রসূতি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। একটা সিরিঞ্জের জন্য পঞ্চমতলা থেকে নিচে এসেছেন তিনি। এটা নিয়ে গেলে ইনজেকশন দেবে।
জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে সিরিঞ্জ আইভি ক্যানুলা ছাড়া আমরা দরপত্রের কার্যাদেশ দিচ্ছি। আমাদের শতাধিক সামগ্রী একসঙ্গে দরপত্র দিতে হয়। একক সামগ্রী দরপত্র করার উপায় নেই। তাই শতাধিক সামগ্রীর মধ্যে যেসব বেশি চলে, সেগুলোর দাম তারা (ঠিকাদারেরা) বেশি দিয়ে রেখেছে। যার কারণে আমরা নিতে পারি না। ১০ শতাংশের বেশি দরে নিলে অডিট আপত্তির মুখে পড়তে হবে।’
হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, এ কারণে সিরিঞ্জ, আইভি ক্যানুলা ছাড়া কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে। তাই সংকট হচ্ছে কিছুটা। তবে এই জিনিসগুলোর দাম কম। তারপরও কীভাবে সমাধান করা যায় চেষ্টা করা হচ্ছে।