পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে বিপৎসীমার ওপরে নদ–নদীর পানি, বন্যার শঙ্কা
Published: 20th, May 2025 GMT
ভারতের মেঘালয়ে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের বিভিন্ন নদ–নদীর পানি বাড়ছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য নদ–নদীর পানি বাড়ছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা তিনটায় চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে ভোগাই নদের পানি বিপৎসীমার ১৮৪ সেন্টিমিটার ও শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৬৬৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঝিনাইগাতীতে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি সকাল থেকে বাড়তে শুরু করেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, ২০ মে পর্যন্ত ময়মনসিংহ, সিলেট ও রংপুর বিভাগের নিম্নাঞ্চলগুলো সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে। এতে জনজীবনের পাশাপাশি কৃষি খাতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বন্যা মোকাবিলায় শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ের কৃষকদের দ্রুত আধা পাকা ধান কেটে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় যেসব ধান ৯৫ শতাংশের বেশি পেকে গেছে, তা দ্রুত কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এরই মধ্যে জেলার ৯০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাকি ধানগুলোও দ্রুত কেটে নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কয়েক দিন ধরে জেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সোমবার রাতে কয়েক দফায় ভারী ও মাঝারি বৃষ্টির কারণে ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলায় টানা বৃষ্টিতে জেলার চেল্লাখালী, ভোগাই, মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে ও উপচে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে ধারণা করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী।
সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের বাসিন্দা হুরমুজ আলী (৬৮) বলেন, ‘ভারতে মেঘ অইলে আমগর গাঙ্গে (নদী) ঢল নামে। আজ সহাল (সকাল) থাইকা গাঙে ঢল নামছে। পানিও বাড়তাছে। এই রহম বাড়লে বন্যা অইবো। তখন সবাইর বিপদে পড়ুন লাগব।’
ঝিনাইগাতীর ধানশাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো.
বাঘবেড় ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরে আলম বলেন, সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ভারতে বৃষ্টি হওয়ায় চেল্লাখালী নদীর পানি বেড়েই চলেছে। তবে এখনো নদীর বাঁধের কোথাও ক্ষতি হয়নি। তবে পানি বাড়তে থাকলে বাঁধ ভেঙে ও উপচে বন্যা হতে পারে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি রাত থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যার পূর্বাভাস পেয়ে উপজেলায় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সতর্কমূলক প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। নদীসংলগ্ন এলাকায় খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
নালিতাবাড়ীর ইউএনও ফারজানা আক্তার বলেন, দুটি নদীর পানি বেড়েছে। তবে এখনো বাঁধ ভেঙে বা উপচে পড়ার মতো পানি আসেনি। তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
পাউবোর শেরপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আখিনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জেলার চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতে টানা বৃষ্টি হওয়ায় গতকাল রাত থেকে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার চারটি নদীতে পানি বেড়েছে। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে ঢলের পানিতে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃষ্টি না হলে বন্যার আশঙ্কা থাকবে না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ম শ বর নদ র প ন বন য র র ওপর সতর ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টানা দুদিন ধরে দীর্ঘ যানজট
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩৪ কিলোমিটার অংশে টানা দুই দিন ধরে থেমে থেমে দীর্ঘ যানজট চলছে। আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল উপজেলার বেড়তলা, সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার এলাকায় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত থেমে থেমে এ যানজট চলছে। বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরে বড় বড় আকারের গর্ত এ যানজটের প্রধান কারণ।
সড়ক ও জনপথ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। কাজটি করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ছয় বছর ধরে তারা ধীরগতিতে কাজটি করছিল।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর ভারতীয় ঋণে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্মকর্তারা কাজ ফেলে দেশে ফিরে যান। তিন মাস পর তাঁরা বাংলাদেশে ফিরে এসে আবার কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে তাঁদের অনেক মালামাল খোয়া গেছে। ৫ আগস্টের পর কাজের গতি আরও কমে যায়।
আরও পড়ুনসরাইলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দিনভর যানজট, ভোগান্তি চরমে১৯ মে ২০২৫সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর এলাকায় কোনো সংস্কারকাজ না করায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এ গর্ত আরও বড় আকার ধারণ করে। বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের চারপাশে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহন মহাসড়কের গোলচত্বর এলাকায় এসে চলতে হচ্ছে ১ থেকে ৫ কিলোমিটার গতিতে। এসব গর্ত অতিক্রম করতে পণ্যবাহী যানবাহনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর এসব গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে। গোলচত্বরের তিন–চতুর্থাংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গোলচত্বর অতিক্রম করার জন্য যানবাহনকে থেমে যেতে হচ্ছে। চালকদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, রোববার দিবাগত রাত দুইটা থেকে বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর থেকে যানজট সৃষ্টি হয়। সোমবার সকাল ১০টার পর থেকে যানজট বাড়তে থাকে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল উপজেলার বেড়তলা, বিশ্বরোড মোড় ও কুট্টাপাড়া মোড় হয়ে বাড়িউরা পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার সন্ধ্যার পর জেলার আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের বিস্তৃতি ঘটে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সময়ে দেখা গেছে, মহাসড়কের সরাইল বেড়তলা বাজার থেকে বাড়িউরা বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট স্থায়ী আকার ধারণ করে। বাকি অংশে থেমে থেমে যানজট চলতে থাকে। গত দুই দিনে কয়েকবার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। শত শত নারী-পুরুষকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। মঙ্গলবার দিনভর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি কম চলাচল করতে দেখা গেছে। জেলার অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো নারী-পুরুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
হবিগঞ্জ থেকে যশোরগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক মামুন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা কারও কাছে জিম্মি হয়ে আছি। সামান্য একটু জায়গা ঠিক করে দিলে আমরা ভালো করে চলতে পারি, কিন্তু তা হচ্ছে না।’ ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তেলবাহী ট্রাকের চালক সেলিম মিয়া বলেন, ‘সব ঠিক আছে, শুধু এইখানে আসলেই আমাদের ঝামেলা হয়।’
মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সরাইল থানার পুলিশ ও সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার পুলিশকে মাঠে থাকতে দেখা গেছে। এর আগে সোমবার দিনভর মাঠে ছিলেন সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য।
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুন রহমান মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের চারপাশে যে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, তা ভরাট না করা পর্যন্ত যানজট শেষ হবে না। এখানে তিন ফুটের অধিক বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহনগুলোকে এখানে এসে প্রথমে থেমে যেতে হচ্ছে। এরপর ১ থেকে ৫ কিলোমিটার গতিতে চলতে হচ্ছে। আজ দুদিন ধরে সড়কের ওপর আছি। গর্ত ভরাট করে আমাদের বাঁচান।’
গর্ত ভরাটের উদ্যোগ
মঙ্গলবার শেষ বিকেলে গর্ত ভরাট করতে মাঠে নামেন সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএওন) মো. মোশারফ হোসাইন, সরাইল থানার ওসি মো. রফিকুল হাসান, সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. মামুন রহমান, ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্মকর্তারা। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁরা গর্তে খোয়া মিশ্রিত বালু ফেলার কাজ শুরু করেন।
ইউএওন মো. মোশারফ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জরুরিভাবে গর্ত ভরাটের জন্য ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে রাজি করিয়েছি। প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি থামলে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’