ভারতীয় নাগরিকদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে
Published: 21st, May 2025 GMT
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ (ঠেলে পাঠানো) করা ব্যক্তিদের ‘পুশ ব্যাক’ (ঠেলে ফেরত পাঠানো) করার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, জানা নেই। তবে যাঁরা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত, তাঁদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে।
আজ বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথাগুলো বলেন।
বাংলাদেশে পুশ ইন করা ভারতের নাগরিক বা রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হবে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আমার কাছে এখন পর্যন্ত নেই। আমরা সাধারণত পুশ ব্যাক করি না। তবে বিষয়টি হলো, যাঁরা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত, তাঁদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে।’
পুশ ইন বন্ধে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দিল্লির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে এবং আমরা চেষ্টা করছি নিয়মের বাইরে যেন কিছু না ঘটে ।’
ভারতের কাছ থেকে কী প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, সে প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এক দিনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে, এটি আমরা প্রত্যাশা করি না। তারা তাদের অবস্থান কিছুটা জানিয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি—এভাবে দেওয়াটা (ঠেলে পাঠানো) ঠিক না এটা আমরা তাদের বোঝাচ্ছি। আমরা বলছি যে আমাদের একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (মানসম্মত পরিচালনা ব্যবস্থা) আছে। সেই প্রসিডিওর অনুযায়ী আমরা যাব। তারা তালিকা দিয়েছে। আমরা সেই তালিকাগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করছি।’
ভারতের সঙ্গে সই করা চুক্তি পর্যালোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ছোট ছোট বিভিন্ন চুক্তি বিভিন্ন সময়ে হয়েছে, সমঝোতা স্মারক হয়েছে এবং সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে আপনাদের জানানো হয়েছে। তার মধ্যে চুক্তিগুলো দুই পক্ষের সম্মতিতে বাতিল করতে হবে, অথবা বিধান থাকে যে যেকোনো এক পক্ষ যদি আপত্তি করে, তবে বাতিল করা যাবে ইত্যাদি। আমরা বাতিল কোনোটিই করিনি। আমরা আসলে চাই যে নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু এগিয়ে যাক।’
ভারতের সঙ্গে চুক্তিগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এবং কোথায় সমস্যা আছে, সেটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সময়মতো সেগুলো ভারতের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
ভারত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, নিয়মকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এখন ইতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, নেতিবাচকভাবেও ব্যাখ্যা করা যায় কখনো কখনো। সব মিলিয়ে আমাদের সেভাবেই এগোতে হচ্ছে। কেউ তো স্বীকার করে না যে সে নিয়মের বাইরে যাচ্ছে।
ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হচ্ছে। এটি বাণিজ্য উপদেষ্টা দেখছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে জ্যোতি মালহোত্রাকে ঘিরে বিতর্কে জড়িয়ে গেল কেরালা সরকার
পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে ভারতের হরিয়ানার সিরসা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে নিয়ে নতুন এক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই ট্রাভেলার ব্লগারকে দক্ষিণ রাজ্য কেরালার পর্যটন শিল্পের প্রচারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
সর্বভারতীয় এক গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, তথ্য জানার অধিকারের (আরটিআই) আওতায় পাওয়া এক প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে, কেরালা সরকার বিশ্বের পর্যটকদের কাছে রাজ্যের পর্যটন শিল্প তুলে ধরার জন্য নির্বাচিত ৪১ জন ইনফ্লুয়েন্সারের সফরের সম্পূর্ণ খরচ (যাতায়াত, থাকা ও খাওয়া) বহন করেছিল। এই প্রচারণার জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে ভিডিও ধারণের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। এই ৪১ জন ইনফ্লুয়েন্সারের তালিকায় জ্যোতি মালহোত্রার নামও ছিল।
এ ঘটনা সামনে আসার পর বিরোধী দলগুলো কেরালা সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছে। তবে কেরালার পর্যটনমন্ত্রী পিএ মোহাম্মদ রিয়াজ বলেন, “জ্যোতি মালহোত্রাকে অন্যান্য ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সবকিছুই স্বচ্ছতা ও সদিচ্ছার সঙ্গে করা হয়েছিল। এটা কোনো গুপ্তচরবৃত্তি সহায়তাকারী সরকার নয়। মিডিয়াকে বুঝতে হবে সরকার কীভাবে কাজ করে। এটা আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব ছিল না।”
আরো পড়ুন:
পাঞ্জাবে বাস উল্টে নিহত ১০
সীমান্তে দাদাদের বাহাদুরির দিন শেষ: নাহিদ
তিনি আরো বলেন, এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচারণা’ এবং ‘সরকার কখনও সচেতনভাবে কোনো গুপ্তচরকে আমন্ত্রণ করবে না।’
বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে কংগ্রেস এবং বিজেপি প্রশ্ন তুলেছে- ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যাকগ্রাউন্ড যথাযথভাবে যাচাই না করে কেন তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
বিজেপির মুখপাত্র শাহজাদ পুনাওয়াল্লা এক্স পোস্টে লিখেছেন, আরটিআই থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত জ্যোতি মালহোত্রাকে বামপন্থি সরকার রাজ্যের অতিথি হিসেবে পর্যটন দপ্তরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যখন ভারত মাতা অবরুদ্ধ তখন পাকিস্তানের গুপ্তচর লাল গালিচার সংবর্ধনা পাচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বিজয়নের জামাতা ও পর্যটন মন্ত্রী মোহাম্মদ রিয়াজকে বরখাস্ত করা উচিত।
কেরালা সফরের সময় জ্যোতি মালহোত্রা কোচি, কান্নুর, কোঝিকোড়, আলাপ্পুঝা, মুনার এবং তিরুবনন্তপুরম ঘুরে দেখেছিলেন। তিনি থেয়্যাম পারফরম্যান্স এবং রাজ্যের বিভিন্ন সৌন্দর্যপূর্ণ স্থান নিয়ে ভিডিও তৈরি করে সেগুলো তার ইউটিউব চ্যানেল ‘ট্রাভেল উইথ জো’ এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন।
তবে ৩৩ বছর বয়সী এই ভ্লগারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচর ভিত্তির অভিযোগ ওঠার আগেই তিনি কেরালা ভ্রমণে গিয়েছিলেন। পরে পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলা ও পাকিস্তানে অপারেশন সিঁদুর পরিচালনা করার পর তাকে গত মে মাসে গ্রেপ্তার করা হয়।
হরিয়ানা পুলিশ জানিয়েছে, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা তাকে ‘অ্যাসেট’ হিসেবে গড়ে তুলছিল। পাকিস্তানের লাহোরে তার কেনাকাটার একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে একে-৪৭ হাতে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য দ্বারা তাকে পাহাড়া দিতে দেখা গেছে, যা একজন সাধারণ ভ্লগারের জন্য অস্বাভাবিক।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন জ্যোতি মালহোত্রার ভিডিওগুলো নিয়ে তদন্ত করছে। মূলত ভিডিও করার আড়ালে তিনি পাকিস্তানের গুপ্তচর হয়ে কাজ করছিলেন কিনা তা জানার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে ভারতের পুলিশ তার বিরুদ্ধে পেহেলগামে হামলার আগে পাকিস্তান সফরের প্রমাণ পায়। ওই হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছিল।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ