মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই রাজশাহীর বাজার ভরে উঠেছে আম ও লিচুতে। বাজারে গুটি জাতের পরিপক্ব আমের পাশাপাশি প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই মিলছে গোপালভোগ। সময়সীমা বেঁধে না দেওয়ায় লিচুও কিছুটা আগেভাগে নামানো হচ্ছে। এসব মৌসুমি ফল ঢাকায় পাঠানোর জন্য কয়েক বছর ধরেই ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে, এবার বিশেষ এই ট্রেন চালু হবে কি না, তা নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা।

চলতি বছরে রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন। এবার লিচুবাগান আছে ৫৩০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্য ৩ হাজার ৭৯৭ মেট্রিক টন। পরিপক্বতা নিশ্চিত করতে এবারও জাতভেদে আম নামানোর নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। তবে, লিচুর কোনো সময়সীমা নেই।

জেলা প্রশাসন ঘোষিত ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, গত ১৫ মে থেকে গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। উন্নত জাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ নামানো যাবে ২২ মে থেকে। লখনা বা লক্ষ্মণভোগ ও রানীপছন্দ ২৫ মে থেকে, হিমসাগর ও খিরসাপাত ৩০ মে থেকে, ল্যাংড়া ও ব্যানানা ম্যাংগো ১০ জুন থেকে, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন থেকে, বারি-৪ আম ৫ জুলাই থেকে, আশ্বিনা ১০ জুলাই থেকে এবং গৌড়মতি ১৫ জুলাই থেকে নামানো যাবে। গুটি আম নির্দিষ্ট সময়ে নামানো শুরু হলেও সময়ের আগেই কিছু কিছু চাষি গোপালভোগ নামিয়েছেন। বাজারে এ আম পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে, রাজশাহীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জমজমাট হয়ে উঠেছে আম ও লিচুর বিকিকিনি। বিভিন্ন জাতের আম ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকায়। 

ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, লিচু এখনো অপরিপক্ব, তাই কিছুটা টক। তবে, বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, অপরিপক্ব নয়, বরং দেশি লিচু বলে স্বাদে একটু টক। সময়মতোই টসটসে রসালো ও মিষ্টি বোম্বাই, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩ লিচু পাওয়া যাবে। দু’-এক দিনের মধ্যেই এসব লিচু বাজারে আসবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে ডালিতে লিচু সাজিয়ে বসে ছিলেন ব্যবসায়ী মিঠু আমিন। তিনি বলেন, “পাশের এক বাগান থেকে লিচু কিনে এনেছি। গতবারের তুলনায় লিচুর উৎপাদন এবার কম। আবহাওয়ার কারণে লিচুর উৎপাদন কমে গেছে। এ কারণে দাম একটু বেশি।”

সাহেববাজারের লিচু ব্যবসায়ী পিংকু ইসলাম বলেন, “গতবারের তুলনায় এবার ২৫ ভাগ লিচুও নেই। লিচুর দাম তাই বেশি। এ কারণে ক্রেতা কম। তবে, আমের দাম কম হওয়ায় এর ব্যবসা ভাল।”

বিনোদপুর বাজারের আম ব্যবসায়ী হৃদয় হোসেন বলেন, “প্রথম দিন বাগান থেকে বড় আকারের গুটি আম মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। এখন দাম একটু কমেছে। এখন ছোট আকারের আমের দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। গত বছরের তুলনায় এবার শুরুতেই দাম কিছুটা কম। পেকে যাওয়ায় এখন গোপালভোগ আমও আসছে।“

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা জানিয়েছেন, গতবারের তুলনায় এবার আমের উৎপাদন বেশি। তবে, লিচুর ফলন তুলনামূলক কম। এক বছর বেশি উৎপাদন হলে আরেক বছর কম হয়। এ কারণে লিচুর উৎপাদন কম, আমের বেশি।”

কয়েক বছর ধরে ঢাকায় আম পরিবহনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল’ ট্রেন পরিচালনা করছে। এ ট্রেনে অল্প টাকায় ঢাকায় আম পাঠানো যায়। তবে, চাষি ও ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম থাকে স্টেশনে যাতায়াতের ভোগান্তি চিন্তা করে। এ কারণে এবার এখনো এই ট্রেনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেছেন, “ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা খুব ভালো নয়। চাষিরা আম পাঠাতে আগ্রহী হন না। ফলে, এবার এখনো ট্রেনটি চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। মাঠপর্যায়ে সমীক্ষা চলছে। আমরা চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের যদি আগ্রহ থাকে, তাহলে ট্রেন চালু হতে পারে।”

ঢাকা/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় ক বছর

এছাড়াও পড়ুন:

এনবিআর এখনই বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই: অর্থ মন্ত্রণালয় 

রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করে জারী করা ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ-২০২৫’ প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

দুটি নতুন বিভাগের জন্য এলোকেশন অফ বিজনেস (কার্যপরিধি নির্ধারণ) এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এ সকল আইনের সাথে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হবে। এগুলো  সময়সাপেক্ষ। এ কাজ সম্পাদন না করে অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখনি বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

বৃহস্পতিবার (২২ মে) সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১২ মে জারি করা রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ-২০২৫ বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ২০ মে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ, সড়ক বিভাগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির ৫ সদস্য এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সভা অনুষ্ঠিত হয়।   

সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দুজন প্রতিনিধি, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। উপদেষ্টারা ধৈর্য্য ধরে তাদের কথা শোনেন এবং তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। আলোচনায় উত্থাপিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত দেন, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সকল অংশীজনের সাথে বিশদ আলোচনা করে জারী করা অধাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর উক্ত অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা হবে। 

ফলপ্রসু আলোচনার পর যে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে তা মেনে না নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ পুনরায় অসহযোগ আন্দোলনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। 

এতে বলা হয়েছে, অধ্যাদেশটি জারী করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কাজ যেমন, দুটি বিভাগের নতুন করে সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন, পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, সচিব কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন ইত্যাদি শেষ করতে হবে। যা সময়সাপেক্ষ।  

এ ছাড়া দুটি নতুন বিভাগের জন্য এলোকেশন অফ বিজনেস এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এ সকল আইনের সাথে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনতে হবে। এ কাজগুলোও সময়সাপেক্ষ। যেহেতু এই কাজগুলো শেষ না করে অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনি বিলুপ্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজস্ব বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত দুজন সদস্যের মধ্যস্ততায় সারাদিনব্যাপী দফায় দফায় আলোচনার একপর্যায়ে তাদের পাঠানো সমঝোতা প্রস্তাব সম্পূর্ণ মেনে নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে: 

১. যেহেতু অধ্যাদেশটি প্রয়োজনীয় সংশোধন করে বাস্তবায়ন করার কাজটি সময়সাপেক্ষ, সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে এবং কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যমান ব্যবস্থায় সকল কার্যক্রম সম্পাদন করবেন।

২, বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কীভাবে প্রণীত হবে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও গুরুত্বপূর্ণ সকল অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।

৩. বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে।

৪. কাস্টমস ও কর ক্যাডার সদস্যদের পদ-পদবি কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বরং সংস্কার কাজ সম্পাদন হলে তাদের পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সচিব পদে নিয়োগসহ পদোন্নতির সুযোগ আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। 

রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থবছরের শেষ সময়ে জাতীয় বাজেট কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিস সময়ে দপ্তরে উপস্থিত থেকে তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চালু এবং করাদাতাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেগবান করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অর্থ ছাড় ও বিল দাখিলের সময় বেঁধে দেওয়া হলো
  • এনবিআর এখনই বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই: অর্থ মন্ত্রণালয় 
  • সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে ৭ দিনের সময়সীমা তাজকিনের
  • অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে: অর্থ মন্ত্রণালয়
  • নওগাঁয় আম পাড়া উৎসব শুরু, এখনো জমেনি আমের হাট
  • ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার নতুন তারিখ প্রকাশ
  • শাবিপ্রবিতে অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন