আম-লিচুতে ভরেছে রাজশাহীর বাজার, অনিশ্চিত ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’
Published: 23rd, May 2025 GMT
মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই রাজশাহীর বাজার ভরে উঠেছে আম ও লিচুতে। বাজারে গুটি জাতের পরিপক্ব আমের পাশাপাশি প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই মিলছে গোপালভোগ। সময়সীমা বেঁধে না দেওয়ায় লিচুও কিছুটা আগেভাগে নামানো হচ্ছে। এসব মৌসুমি ফল ঢাকায় পাঠানোর জন্য কয়েক বছর ধরেই ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে, এবার বিশেষ এই ট্রেন চালু হবে কি না, তা নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা।
চলতি বছরে রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন। এবার লিচুবাগান আছে ৫৩০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্য ৩ হাজার ৭৯৭ মেট্রিক টন। পরিপক্বতা নিশ্চিত করতে এবারও জাতভেদে আম নামানোর নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। তবে, লিচুর কোনো সময়সীমা নেই।
জেলা প্রশাসন ঘোষিত ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, গত ১৫ মে থেকে গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। উন্নত জাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ নামানো যাবে ২২ মে থেকে। লখনা বা লক্ষ্মণভোগ ও রানীপছন্দ ২৫ মে থেকে, হিমসাগর ও খিরসাপাত ৩০ মে থেকে, ল্যাংড়া ও ব্যানানা ম্যাংগো ১০ জুন থেকে, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন থেকে, বারি-৪ আম ৫ জুলাই থেকে, আশ্বিনা ১০ জুলাই থেকে এবং গৌড়মতি ১৫ জুলাই থেকে নামানো যাবে। গুটি আম নির্দিষ্ট সময়ে নামানো শুরু হলেও সময়ের আগেই কিছু কিছু চাষি গোপালভোগ নামিয়েছেন। বাজারে এ আম পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, রাজশাহীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জমজমাট হয়ে উঠেছে আম ও লিচুর বিকিকিনি। বিভিন্ন জাতের আম ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকায়।
ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, লিচু এখনো অপরিপক্ব, তাই কিছুটা টক। তবে, বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, অপরিপক্ব নয়, বরং দেশি লিচু বলে স্বাদে একটু টক। সময়মতোই টসটসে রসালো ও মিষ্টি বোম্বাই, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩ লিচু পাওয়া যাবে। দু’-এক দিনের মধ্যেই এসব লিচু বাজারে আসবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে ডালিতে লিচু সাজিয়ে বসে ছিলেন ব্যবসায়ী মিঠু আমিন। তিনি বলেন, “পাশের এক বাগান থেকে লিচু কিনে এনেছি। গতবারের তুলনায় লিচুর উৎপাদন এবার কম। আবহাওয়ার কারণে লিচুর উৎপাদন কমে গেছে। এ কারণে দাম একটু বেশি।”
সাহেববাজারের লিচু ব্যবসায়ী পিংকু ইসলাম বলেন, “গতবারের তুলনায় এবার ২৫ ভাগ লিচুও নেই। লিচুর দাম তাই বেশি। এ কারণে ক্রেতা কম। তবে, আমের দাম কম হওয়ায় এর ব্যবসা ভাল।”
বিনোদপুর বাজারের আম ব্যবসায়ী হৃদয় হোসেন বলেন, “প্রথম দিন বাগান থেকে বড় আকারের গুটি আম মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। এখন দাম একটু কমেছে। এখন ছোট আকারের আমের দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। গত বছরের তুলনায় এবার শুরুতেই দাম কিছুটা কম। পেকে যাওয়ায় এখন গোপালভোগ আমও আসছে।“
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা জানিয়েছেন, গতবারের তুলনায় এবার আমের উৎপাদন বেশি। তবে, লিচুর ফলন তুলনামূলক কম। এক বছর বেশি উৎপাদন হলে আরেক বছর কম হয়। এ কারণে লিচুর উৎপাদন কম, আমের বেশি।”
কয়েক বছর ধরে ঢাকায় আম পরিবহনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল’ ট্রেন পরিচালনা করছে। এ ট্রেনে অল্প টাকায় ঢাকায় আম পাঠানো যায়। তবে, চাষি ও ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম থাকে স্টেশনে যাতায়াতের ভোগান্তি চিন্তা করে। এ কারণে এবার এখনো এই ট্রেনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেছেন, “ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা খুব ভালো নয়। চাষিরা আম পাঠাতে আগ্রহী হন না। ফলে, এবার এখনো ট্রেনটি চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। মাঠপর্যায়ে সমীক্ষা চলছে। আমরা চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের যদি আগ্রহ থাকে, তাহলে ট্রেন চালু হতে পারে।”
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় ক বছর
এছাড়াও পড়ুন:
তিন কারণে রপ্তানিতে প্রণোদনা প্রত্যাহার ৫ মাস পেছাল
তিন কারণে রপ্তানিখাতে আর্থিক প্রণোদনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সময়সীমা আরো ৫ মাস পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। আগামী বছরের (২০২৬) জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার কথা ছিল। এখন তা পিছিয়ে আগামী বছরের নভেম্বর মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদনও করেছেন।
যে কারণগুলোর কারণে সময়সীমা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে তা হলো, আমেরিকা কর্তৃক বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অধিকহারে শুল্কারোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধ এবং গত বছরে রাজনৈতিক কারণে শিল্পখাতে অস্থিরতা। ইতোমধ্যে ২০২৪ সাল থেকে এই রপ্তানি প্রণোদনা ধাপে ধাপে কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।
বিগত সাত অর্থবছরে রপ্তানিখাতে প্রণোদনার দেয়ার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এই আর্থিক প্রণোদনা সিংহভাগ (৮০ ভাগেরও বেশি) পেয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরিপোশাক শিল্প।
আরো পড়ুন:
পাঁচ বছরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ২২৮ শতাংশ
জবিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী সংস্থাটির কমিটি ফর ডেভলেপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সুপারিশ অনুসারে আগামী ২৪ নভেম্বর ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পরবর্তী সময়ে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিস অ্যান্ড কাউন্টারভেলিং মেজারস (এএসসিএম) অনুসারে রপ্তানি নির্ভর সাবসিডি অর্থ্যাৎ কোনো আর্থিক প্রণোদনা দেয়াা যাবে না।
এ অবস্থায় রপ্তানিতে বিদ্যমান প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তা একসঙ্গে প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানিকারকেরা হঠাৎ করে চ্যালেঞ্জর সম্মুখিন হতে পারেন বা রপ্তানি বাণিজ্য নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে। সেই বাস্তবতায় ২০২৬ সালের মধ্যে রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা ধাপে ধাপে বা ক্রমান্নয়ে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত রয়েছে, যা পূর্ববর্তী সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত। উক্ত কর্মপরিকল্পনা অনুসারে প্রথম ধাপে সব পণ্যের (৪৩টি খাতের) রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা ২০১৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আংশিক হ্রাস করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে এ নগদ সহায়তা আরো কিছুটা হ্রাস করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে জানিয়েছে, এই কর্মপরিকল্পনা অনুসারে তৃতীয় ধাপে ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে রপ্তানি প্রণোদনা/নগদ সহায়তার যার আংশিক হ্রাস করার কথা ছিল। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা কর্তৃক বাংলাদেশের উপর প্রতিযোগী দেশের তুলনায় অধিক হারে শুল্ক আরোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে ভারত সরকার দেয় বিধিনিষেধ এবং গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শিল্পখাতে কিছুটা অস্থিরতা থাকার কারণে দেশের রপ্তানিখাত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। পরিবর্তিত এ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রপ্তানি প্রণোদনার হার এ মুহূর্তে আরো হ্রাস করা হলে রপ্তানিকারকেরা অধিকতর সমস্যার সম্মুখীন হবেন। এ পর্যায়ে তৃতীয় ধাপে নগদ সহায়তা হ্রাসের পরিকল্পনা ৬ (ছয়) মাসের জন্য বিলম্বিত করা যেতে পারে। সে প্রেক্ষিতে, নগদ সহায়তার তৃতীয় ধাপে হ্রাসের লক্ষ্যে ইতোপূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত শিথিল করে আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা যুক্তিযুক্ত হবে। একইভাবে, ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে চতুর্থ ধাপে নগদ সহায়তা হ্রাস কিছুটা বিলম্বিত করে এলডিসি উত্তোরণের দিন হতে অর্থাৎ এর ২০২৬ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা সমীচীন হবে।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হলে তিনি তা অনুমোদন করেছেন। ফলে রপ্তানি সহায়তা প্রত্যাহার প্রায় এক বছর পিছিয়ে গেল। এতে দেশের রপ্তানিকেরা বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আরো খানিকটা সময় পেলেন।
ঢাকা/হাসনাত/বকুল