‘টানা দশ মিনিট করতালির দৃশ্য কোনোদিন ভুলব না’
Published: 24th, May 2025 GMT
৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে ‘আলী’ সিনেমা। কানের স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রতিযোগিতা বিভাগে এটি বাংলাদেশের প্রথম অংশগ্রহণ। এটি পরিচালনা করেছেন আদনান আল রাজীব। সিনেমাটির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তরুণ অভিনেতা আল আমীন।
শুক্রবার উৎসবের পালে দ্য ফেস্টিভ্যাল ভবনের পাশে ক্লৌডে ডেবাসি থিয়েটারে হয় সিনেমাটির প্রদর্শনী। যেখানে সিনেমার সকল কলাকুশলী উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা আল আমীনও। প্রথমবার অভিনয়, এবং প্রথম সিনেমা নিয়ে কানের মতো উৎসবে আসা। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–
আজ কানে আপনার সিনেমা ‘আলী’ প্রদর্শিত হলো। অনুভূতিটা কেমন?
সত্যি বলতে, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি যে থিয়েটারে অস্কারজয়ী সিনেমা দেখেছি, সেখানে আমার সিনেমা চলেছে– এটি স্বপ্নের মতো। আমি কাঁপছিলাম যেন। সিনেমাটি শেষ হওয়ার পর সবাই দাঁড়িয়ে টানা দশ মিনিট অভাবনীয় করতালির মাধ্যমে যে অনুভূতি দেখালেন তা আমার জন্য সত্যিই অভূতপূর্ব দৃশ্য। এই দৃশ্য কোনোদিন ভুলব না। এখানে আলী এতটা সম্মান পাবে তা না দেখলে বিশ্বাসযোগ্য হতো না। পরে সবাই সেলফি তুললেন। কাছে এসে সবাই ভালোলাগার কথাও জানালেন।
প্রথমবার বিশ্ব সিনেমার এমন মর্যাদাপূর্ণ আসরে আপনার অংশগ্রহণ। বিষয়টি আপনার কেমন লাগছে?
আমার মনে হচ্ছে ঘোরের মধ্যে আছি। মাঝে মধ্যে অবিশ্বাস্য লাগছিল। গতকাল যখন নিজের সিনেমা প্রদর্শিত হলো, সবাই বাহবা দিলেন তখন নিজের ওপর বহুগুণ আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আসলে আনন্দ আর প্রাপ্তি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এখন যেমন লাগছে এ প্রতিক্রিয়াটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
আলী সিনেমাটা কেমন? কী গল্প বলা হয়েছে?
উপকূলীয় একটি শহরের গল্প, যেখানে গান গাইতে দেওয়া হয় না। সেখানে এক কিশোর গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে উপকূল ছেড়ে শহরে যেতে চায়। এ গান গাওয়া নিয়ে রয়েছে এক রহস্য।
সিনেমাটিতে আপনার যুক্ত হওয়ার গল্প জানতে চাই?
আমি নোয়াখালীতে থাকি। এই দ্বৈত কণ্ঠের গান গাইতে পারি আমি। এই গানের ভিডিও দেখে আলী টিমের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রথমে আগ্রহ পাইনি। তাই ভাবছিলাম অভিনয় করব না। পরে পরিচালকের ফেসবুক প্রোফাইল চাইলে দেখি আদনান আল রাজীব। সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গেলাম। এটিই ছিল আমার প্রথম অভিনয়। এখানেই শেষ নয়। এ সিনেমার মাধ্যমে আমার আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বেড়েছে। আমার বিশ্বাস অভিনয়ে কিছু করতে পারব।
কানে এসে কী শিখলেন বা নতুন কী দেখলেন?
এখানে এসে বুঝেছি, গল্পটাই আসল। আপনি যদি সৎভাবে নিজের সমাজ, আপনার অভিজ্ঞতা, আপনার মানুষকে তুলে ধরতে পারেন, বিশ্ব সেটি বোঝে। ভাষা কোনো বাধা নয়। আজকের প্রদর্শনীতে ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান থেকে দর্শক এসেছিলেন, সবাই বললেন, ‘তোমার গল্প ছুঁয়ে গেছে।’ এটি আমার জীবনের বড় পাওয়া। দেশে ফিরে একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার কাজ শুরু করব। নোয়াখালীর ভাষা, মাটি, মানুষ–সব থাকবে সেখানে। আমি চাই, আমাদের গ্রামগঞ্জের ছেলেমেয়েরা সিনেমায় নিজেদের দেখুক, নিজেদের গল্প শুনুক। শুভকামনা রইলো, আল আমিন। আপনার এই যাত্রা আরও বহু তরুণকে সাহস দেবে।
ধন্যবাদ। আমি কৃতজ্ঞ সবার ভালোবাসা আর প্রেরণার জন্য। আমি চাই, এই কান শুধু আমার নয়, আমাদের সবার হোক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব প রদর শ আপন র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ঠাকুরগাঁওয়ে শুক নদীর অভয়াশ্রমে মাছ ধরা উৎসব
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বুড়ি বাঁধ অভয়াশ্রম এলাকায় মাছ ধরা উৎসবে মেতেছে হাজারো সৌখিন মাছ শিকারী। অনেকে শুধু দেখতে ও মাছ কিনতে গিয়েছেন সেখানে।
শুক নদীর তীরে সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত বুড়ি বাঁধটি। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকালে বাঁধের গেট খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই শুরু হয় মাছ ধরা উৎসব।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সারাদিন জাল, পলো আর মাছ রাখার পাত্র খলই নিয়ে আগের রাত থেকেই বাঁধ এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন শত শত মানুষ। কেউ ভেলায়, কেউ ছোট নৌকায় করে মাছ ধরছেন। এ যেন এক প্রতিযোগিতা। আর বাঁধে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা।
মাছ ধরার জন্য আশপাশের কয়েক গ্রামের ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ যেন ভেঙে পড়েছে নদীর তীরে। কেবল পুরুষই নয়, নারী-শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। কারো হাতে খেওয়া জাল, কারো হাতে লাফি জাল, কারো হাতে পলো। অনেকেই কোনো সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাতেই নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে।
মাছ ধরা উৎসবকে ঘিরে বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে খাবারের হোটেল, ফলের দোকান, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। বাইরে থেকে আসা মানুষের মোটরসাইকেল ও সাইকেল রাখার জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী গ্যারেজও।
মাছ ধরতে আসা সকলেরই অভিযোগ, তারা মাছ পাচ্ছেন না। রাত থেকে জাল ফেলেও কাঙ্খিত মাছ মিলছে না। দেশীয় প্রজাতির মাছ এক প্রকার বিলুপ্তির পথে। গত কয়েক বছর আগেও এই বাঁধে প্রচুর দেশীয় মাছ ধরা পড়তো কিন্তু এখন মাছ নেই। কারেন্ট জাল, রিং জালসহ বিভিন্ন কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে মনে করেন মাছ ধরতে আসা অনেকে।
অপরদিকে শহর থেকে দেশীয় মাছ কিনতে যাওয়া ক্রেতারা অভিযোগ করেন মাছের দাম অনেক বেশি। দেশীয় মাছ তেমন পাওয়া যায় না এখানে। যা পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম অনেক। পুঁটি মাছ ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই অনেক ক্রেতাই মাছ কিনতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে খড়া মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম যাকারিয়া জানান, ১৯৫১-৫২ সালের দিকে বুড়ি বাঁধ সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। বাঁধটির সামনে একটি অভয়াশ্রম আছে। প্রতি বছর বাঁধটি ছেড়ে দেওয়ার পরে মাছ ধরার জন্য এখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। আমরা মনে করছি এটার মাধ্যমে আমিষের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে।
ঢাকা/হিমেল/এস