প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘দৃষ্টিনন্দন’ ভবন নির্মাণ নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। রাজধানী ঢাকায় একটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে তিন শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। শিশুদের জন্য আরও সুন্দর, নিরাপদ ও আধুনিক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে কোটি কোটি টাকার এই প্রকল্প সময়োপযোগী। কিন্তু প্রকল্পের ধীরগতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্কুলগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। বিষয়টি হতাশাজনক।

হাজারীবাগ বালিকা ও বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদাহরণ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় পরিকল্পনার ঘাটতি কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিদ্যালয়ের কাজ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি একটি স্থানে স্থানান্তরের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এক কিলোমিটার দূরে পাঠানো হচ্ছে শিশুদের, যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। যাতায়াতে সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে এবং অনেক অভিভাবক বাধ্য হচ্ছেন সন্তানদের স্কুল থেকে তুলে নিতে। পাশাপাশি বা কাছাকাছি স্কুলগুলোতে একসঙ্গে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত একেবারে অপরিণামদর্শী, তা বলতেই হয়। 

শুধু হাজারীবাগ নয়, একাধিক এলাকায় একই ধরনের পরিস্থিতি। যেসব স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে, সেখানে বিকল্প শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য ভাড়া করা ভবনের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। একদিকে সরকারি অর্থে কোটি কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন, অন্যদিকে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী বিকল্পের চিন্তা না থাকা—এটি প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনার সুস্পষ্ট অভাবেরই প্রতিফলন। এর ফলে শিশুর শিক্ষার অধিকার হরণের ঘটনা ঘটছে, সেটিও প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সঙ্গে শুরু থেকে যুক্ত সবার কাছেই গুরুত্বহীন থেকে গেছে। এটি কোনোভাবেই মানা যায় না।

শিক্ষাবিদেরাও বলছেন, ভবন নির্মাণের আগে ভালো করে পরিকল্পনা গ্রহণ, এলাকা অনুযায়ী বিকল্প স্থান নির্ধারণ এবং প্রয়োজনে পৃথক বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল।

আমাদের আহ্বান, এখনো যেসব বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি, সেসব ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। অস্থায়ীভাবে ভাড়া করা ভবনে পাঠদান চালু রাখা হোক। একই এলাকায় একাধিক বিদ্যালয়ে একসঙ্গে কাজ শুরু না করে ধাপে ধাপে করা হোক, যাতে শিক্ষার প্রবাহ বিঘ্নিত না হয়।

শিশুরা যেন বিদ্যালয়ের দূরত্ব ও যাতায়াতের খরচের কারণে শিক্ষা থেকে ছিটকে না পড়ে—এই ন্যূনতম নিশ্চয়তা সরকারকে দিতেই হবে। কারণ, একটি দৃষ্টিনন্দন ভবনের চেয়ে একটি শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে ধরে রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভবন ন র ম ণ প রকল প ব কল প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ