নারীরা তাদের স্বামীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারেন, সম্পর্কের বির্বতন নিয়ে অনুপম
Published: 1st, July 2025 GMT
১৯৮৪ সালে মহেশ ভাটের ‘সারাংশ’ সিনেমা দিয়ে রুপালি জগতে পদচারণা শুরু বলিউড অভিনেতা অনুপম খেরের। তারপর কেটে গেছে চার দশক। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে সাড়ে ৫০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার অভিনয়ে মুগ্ধ হননি, হিন্দি সিনেমার এমন দর্শক খুব কমই আছেন। ৬৯ বছর বয়সি অনুপমের যশ-খ্যাতিও কম নেই।
অভিনয় ক্যারিয়ারের বাইরে অন্য সবার মতো তারও ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে। তার প্রেম-বিয়ে-বিচ্ছেদের জার্নি নেহায়াত ছোট নয়। ইন্ডিয়া টুডেকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অনুপম। এ আলাপচারিতায় বিশ্বব্যাপী সম্পর্কের বিবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।
অনুপম খের বলেন, “সবখানে অদ্ভুত মানুষ রয়েছে। এই সমস্যা কেবল ভারতে নয়, এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও অদ্ভুত ঘটনা রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
কাদা ছোড়াছুড়ির পর ‘হেরা ফেরি থ্রি’ সিনেমায় ফিরছেন পরেশ
নতুন রূপে বক্স অফিসে কতটা সাড়া ফেললেন কাজল?
পর্যবেক্ষণের আলোকে অন্ধকার বাস্তবতা নিয়ে কথা বলতেও দ্বিধা করেননি অনুপম খের। এ অভিনেতা বলেন, “আপনি কি কল্পনা করতে পারেন, আজকাল নারীরাও তাদের স্বামীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে! আমি এটিকে অতিরঞ্জিত করতে চাই না। কিন্তু এটা ভীতিকর। পরিস্থিতি এত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে যে, মাঝে মাঝে এটি বোঝা কঠিন।”
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেম কী সাহচর্যে রূপান্তরিত হয়? এ প্রশ্নের জবাবে অনুপম খের বলেন, “উভয় ব্যক্তি যদি সক্ষম হন এবং পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন, তাহলে সহানুভূতি দেখানো কি দোষের! অথবা গভীর আসক্তি কেন নয়?”
হলিউডের আইকনিক অভিনেতা আল পাচিনোর উদাহরণ টেনে অনুপম খের বলেন, “মিস্টার আল পাচিনো ৮২ বছর বয়সে সন্তানের বাবা হয়েছেন। আর এই সন্তানের মা কম বয়সি একজন নারী। এখানে আবেগ থাকতে পারে। আবেগে সম্ভব। আপনার বয়স যাই হোক না কেন, যদি আপনি একজন পুরুষকে আকর্ষণীয় মনে করেন, তাহলে কি এতে আবেগের উপাদান থাকবে না? অবশ্যই, থাকবে।”
সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক তুলে ধরে অনুপম খের বলেন, “প্রশংসা করা এবং আকাঙ্ক্ষা করার মধ্যে পার্থক্য আছে। আমরা সকলেই প্রশংসিত হতে চাই, আবার আকাঙ্ক্ষিতও হতে চাই। সমস্যা হলো, কখনো কখনো মানুষ কেবল আপনার প্রশংসাই করেন। কিন্তু আপনাকে চান না।”
১৯৫৫ সালের ৭ মার্চ সিমলায় জন্মগ্রহণ করেন অনুপম খের। তার বাবা পুশকর নাথ খের ছিলেন বন বিভাগের ক্লার্ক। তার মা দুলারি খের ছিলেন গৃহিণী। ১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরু করেন।
১৯৭৯ সালে অভিনেত্রী মধুমালতিকে বিয়ে করেন অনুপম খের। বিয়ের কয়েক বছর পরই আলাদা হয়ে যান তারা। এ সংসারে তাদের কোনো সন্তান নেই। ১৯৮৫ সালে অভিনেত্রী কিরণ খেরকে বিয়ে করেন অনুপম। এ সংসারেও তাদের কোনো সন্তান নেই।
অনুপম খের অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো— ‘তেজাব’, ‘চালবাজ’, ‘বিজয়’, ‘রাম লক্ষ্মণ’, ‘ড্যাডি’, ‘দিল’, ‘সওদাগর’, ‘খেল’ প্রভৃতি। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন ‘পদ্মশ্রী’, ‘পদ্মভূষণ’সহ অসংখ্য পুরস্কার।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।
‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’
জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’
জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?
জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’
আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?
সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।
বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’
সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?
‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।
আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’
আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?
মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’
আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫