কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কণ্ঠস্বর নকল করার পর সেই ব্যক্তির আত্মীয় বা পরিচিতদের কাছে ফোন করে বিভিন্ন কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একদল প্রতারক। এআই প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ‘এআইপিআরএম’ জানিয়েছে, গত বছর দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া প্রতারণার মধ্যে ভয়েস ক্লোনিং অন্যতম। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টোফার সি সেম্পার বলেন, এআই দিয়ে কণ্ঠ নকল করে প্রতারণার জন্য প্রতারকদের তিন সেকেন্ডের একটি ভয়েস রেকর্ডই যথেষ্ট। কেউ ফোনে কয়েকবার ‘হ্যালো’ বললেই সেই কণ্ঠ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বাক্য তৈরি করে নিতে পারে তারা।

এআই দিয়ে কণ্ঠস্বর নকল করে কেউ প্রতারণা করছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য বেশ কিছু বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তাবিশ্লেষকেরা। এ বিষয়ে এআই ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ফিউচার শিফট ল্যাবসের সহপ্রতিষ্ঠাতা সাগর বিষ্ণয় বলেন, বর্তমানে কণ্ঠস্বর এত নিখুঁতভাবে ক্লোন করা যায় যে আবেগ, থেমে থেমে কথা বলা, এমনকি ব্যক্তিগত বাচনভঙ্গিও হুবহু মিলিয়ে ফেলা যায়। এতে মানুষ আবেগপ্রবণ হয়ে প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন।

আরও পড়ুনএআই দিয়ে তৈরি নিজের ছেলের নকল কণ্ঠ চিনতে পারলেন না পিতা০৪ অক্টোবর ২০২৪এআই দিয়ে তৈরি নকল কণ্ঠস্বর শনাক্ত করবেন যেভাবে

১.

এআই দিয়ে কণ্ঠস্বর নকল করা বেশ সহজ হলেও পুরোপুরি নিখুঁত হয় না। আর তাই ফোনে কথা বলার সময় বোঝার চেষ্টা করতে হবে, কণ্ঠস্বরে কোনো ধরনের কৃত্রিমত্তা রয়েছে কি না। এ ছাড়া কথা বলার সময় এমন কিছু জিজ্ঞাসা করতে হবে, যা কেবল সেই ব্যক্তি জানেন। প্রশ্নের উত্তর না দিলে বা এড়িয়ে গেলে বুঝতে হবে, কণ্ঠস্বরটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

২. সাধারণত প্রতারকেরা এআই দিয়ে তৈরি কণ্ঠস্বরের সংক্ষিপ্ত ভয়েস ক্লিপ ব্যবহার করে থাকে। এর ফলে খুব অল্প সময়ের জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তির কণ্ঠস্বর শোনা যায়। আর তাই কোনো বিষয়ে বারবার প্রশ্ন করার পরও যদি উত্তর না দেয়, তবে বুঝতে হবে কণ্ঠস্বরটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

আরও পড়ুনএআই দিয়ে ভুয়া ভিডিও কল, ২৭৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিল প্রতারকেরা০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

৩. ফোন নম্বর যাচাই
অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে অসময়ে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত ফোনকল আসে, তবে সতর্ক হতে হবে। প্রতারকেরা সাধারণত গভীর রাত বা ভোরে আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বর নকল করে প্রতারণা করার চেষ্টা করে থাকে। তাই অপরিচিত নম্বর থেকে অসময়ে প্রিয়জনের কণ্ঠস্বর শুনলে সাবধান হতে হবে। প্রয়োজনে কল কেটে সেই ফোন নম্বরে কল করে যাচাই করতে হবে। যদি সেই ব্যক্তি ফোন না ধরেন, তবে বুঝতে হবে কণ্ঠস্বরটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

৪. অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গোপনীয় বিভিন্ন তথ্যও ভুয়া ফোনকলের মাধ্যমে চুরি করছে প্রতারকেরা। তাই পরিচিত ব্যক্তির পরিচয়ে কেউ ভয়েস নোট বা ব্যক্তিগত ভিডিও পাঠানোর অনুরোধ করলে সতর্ক হতে হবে। বারবার একই ধরনের অনুরোধ করলে বুঝতে হবে, কণ্ঠস্বরটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত এআই দ য় পর চ ত

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।

আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।

বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।

অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।

আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ