টাঙ্গাইলের মধুপুরের শালবনকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। বনটির সীমানা চিহ্নিত করে সেখান থেকে আগ্রাসী প্রজাতির (ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি) গাছ পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত করা হবে। সেখানে শাল (গজারি) ও এর সহযোগী গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক শালবনটি আবার আগের রূপে ফিরিয়ে আনা হবে।

পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ কথা জানিয়েছেন। আজ রোববার মধুপুর বনে শালগাছের চারা রোপণ, বনের সীমানা চিহ্নিতকরণ কার্যক্রম উদ্বোধন এবং ময়ূর ও কচ্ছপ অবমুক্তকরণের মধ্য দিয়ে মধুপুর শালবন পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রকল্পের কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় তিনি এ কথা বলেন।

বনের টেলকী এলাকায় শাল ও এর সহযোগী গাছের চারা রোপণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শালবনে আবার শালগাছই ফেরত আনা হবে। সে কার্যক্রমটা শুরু করার একটি উপায় হচ্ছে বর্ষাকালে শালগাছ লাগিয়ে দেওয়া। সে কাজটা শুরু হলো। এটা টেকসই করার অনেক উপায় আছে। একটা উপায় হচ্ছে যাঁরা বনে বসবাস করেন, তাঁদের এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা। প্রথমে যে কাজটি করা হচ্ছে, সেটা হলো শালবনের সীমানা চিহ্নিতকরণ। অনেক জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। বেদখল অর্থ এই নয় যে এখানে যাঁরা বনে বসবাস করেন, তাঁরাও দখলদার।

শালবন থেকে ইউক্যালিপটাসগাছ ক্রমান্বয়ে সরিয়ে সেখানে শাল ও তার সহযোগী গাছগুলো ৭০/৩০ অনুপাতে আনা হবে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বনে বসবাসকারীদের সঙ্গে বন বিভাগের মামলা–মোকদ্দমা আছে। তিনি ১২৯টি মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। তারপর ক্রমান্বয়ে তাঁরা দেখবেন। অনেক মামলায় বন বিভাগের শুধু শুধু অনেক টাকা ও সময় ব্যয় হয়; কিন্তু ফল আসে না, সে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। তবে জমি দখলের মামলাগুলো প্রত্যাহার করা অত সহজ নয়, সময়সাপেক্ষ বিষয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, তাঁরা মনে করেন, বন বিভাগের সঙ্গে বনে বসবাসকারীদের দূরত্ব যদি তাঁরা ঘোচাতে পারেন, তাহলে তাঁরাই অংশগ্রহণ করে, তাঁরাই সতর্ক অবস্থান নিয়ে এ বনটিকে আবার ফিরিয়ে আনবেন।

শালগাছের চারা রোপণের পর সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মধুপুর বনাঞ্চলের রাজাবাড়ী এলাকায় সীমানা পিলার স্থাপনের মধ্য দিয়ে বনভূমির সীমানা চিহ্নিতকরণের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। পরে লুহুরিয়া এলাকায় হরিণ প্রজননকেন্দ্রে নির্মিত শেডে ১০টি ময়ূর এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে ৭৩টি কচ্ছপ অবমুক্ত করেন। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ময়ূরগুলো আপাতত শেডে আবদ্ধ করে রাখা হবে। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর উন্মুক্ত বনে ছেড়ে দেওয়া হবে।

দুপুরে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মধুপুরের দোখলা জাতীয় উদ্যান মাঠে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে বন বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন গারো জাতিগোষ্ঠীর প্রবীণ নেতা অজয় এ মৃ, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক, ছাত্রনেতা টনি রিছিল প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন্য প্রাণী–বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আলী রেজা খান, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.

নাভিদ শফিউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এম মাহমুদুর রহমান।

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক বলেন, ‘বনে বসবাসকারীদের সম্পৃক্ত করে মধুপুরের শালবনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ বন বিভাগ নিয়েছে। এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। এর মধ্য দিয়ে বনে বসবাসকারী আদিবাসীদের ভূমি সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র র শ লবন র জওয় ন পর ব শ বসব স

এছাড়াও পড়ুন:

বেতন বৈষম্য দূরীকরণসহ ছয় দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের বিক্ষোভ

বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, পদোন্নতিসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। রোববার সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন, কেন্দ্রীয় পরিষদ। দাবি আদায় না হলে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ইপিআইসহ স্বাস্থ্য সেবার সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন বন্ধের ঘোষণা দেন তারা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত সকল সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে বাস্তবায়ন করলেও দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সহকারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে সমাবেশে অভিযোগ করেন তারা।

অবস্থান কর্মসূচিতে হাজারও স্বাস্থ্য সহকারী অংশগ্রহণ করেন। এতে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মো. আখিল উদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য প্রদান করেন সদস্য সচিব মো. মোজাম্মেল হক, ওয়াসিউদ্দিন রানা, এ. কে. এম মাইনউদ্দীন খোকন, ১১-২০ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনস্থ দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় ২৬ হাজারের অধিক স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক কাজ করছেন। এই সংখ্যা সরকারী স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত মোট জনবলের ৩১ শতাংশ। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রোগ প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে স্বাস্থ্য সহকারীগণ মাঠ পর্যায়ে আন্তঃব্যক্তি যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেন। এছাড়াও সমাজের প্রচলিত রোগ হতে মুক্তির উপায় এবং নতুন রোগের আগমন প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরামর্শ প্রদান করেন। তারা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) বাস্তবায়ন, ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের টিটি/টিডি টিকা দান, গর্ভবতী মা ও শিশুদের সেবা প্রদান, গর্ভকালীন ৪টি চেকআপ নিশ্চিত করা, প্রসব-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সেবা প্রদান। মা ও শিশুর পুষ্টি, পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ দেয়া, জাতীয় ও বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা দেয়া, স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মায়েদের স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, পুষ্টি, পরিবেশ স্বাস্থ্য, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ,এলাকা ভিত্তিক জনগণের স্বাস্থ্য তথ্য সংগ্রহ ও হালনাগাদ করা, সংক্রামক, অসংক্রামক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিসহ স্বাস্থ্য সহকারীগণ সপ্তাহে ৩ দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকেন।

তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীরা অপ্রতুল সুযোগ সুবিধা ও সীমিত জনবল নিয়েও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে তারা প্রথম সারির যোদ্ধা হিসাবে জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় নিবেদিত থেকেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ পর্যন্ত তাদের পদে কোন পরিবর্তন হয়নি। বেতন কাঠামোতে রয়েছে চরম বৈষম্য। তবুও তারা থেমে থাকেনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে সাফল্য এসেছে, তার পেছনে স্বাস্থ্য সহকারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য এবং শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস, পোলিও নিয়ন্ত্রণ, বসন্ত নির্মূল এবং ১০টি মারাত্মক রোগে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে তারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য সহকারীদের বাস্তবসম্মত দাবি মেনে নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ৬ দফা দাবি জানান তারা। তাদের দাবিগুলো হলো-

১.নির্বাহী আদেশে নিয়োগ বিধি সংশোধন শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক/সমমান করে ১৪তম গ্রেড প্রদান করা।

২. ইনসার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টেকনিক্যাল পদমর্যাদাসহ বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণ।

৩.পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিতকরণ।

৪. স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ পূর্বের নিয়োগ বিধি দ্বারা নিয়োগ প্রাপ্ত হলেও সকলেই প্রশিক্ষণবিহীন স্নাতক পাশ স্কেলে আন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৫. বেতন স্কেল উন্নীতকরণের পূর্বে স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ যত সংখ্যক টাইম স্কেল, উচ্চতর স্কেল প্রাপ্ত হয়েছেন, তা উন্নীত পুনঃনির্ধারিত বেতন স্কেলের সাথে যোগ করতে হবে। 

৬.পূর্বে ইনসার্ভিস ডিপ্লোমা (এস.আই.টি) কোর্স সম্পন্নকারী স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ ডিপ্লোমাধারী হিসেবে গণ্য করার দাবি জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দৈনিক ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ নীতিমালা বাতিলের দাবি
  • ৮০ শতাংশ নারী ক্যানসার শনাক্তকরণ পরীক্ষার বাইরে
  • বেতন বৈষম্য দূরীকরণসহ ছয় দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের বিক্ষোভ
  • পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধে সিদ্ধিরগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান, জরিমানা
  • বিদ্যুৎ খাতে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছিল আ.লীগ: জুনায়েদ সাকি
  • সরকারি দিনমজুরের দৈনিক পারিশ্রমিক বাড়ল